মানুষের বন্ধু বঙ্গবন্ধু – আফরোজা পারভীন

আফরোজা পারভীন

আফরোজা পারভীন

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শেখ লুৎফর রহমান গোপালগঞ্জ দেওয়ানি আদালতের সেরেস্তাদার ছিলেন। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে মুজিব ছিলেন তৃতীয়।

স্থানীয় গীমাডাঙ্গা স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন মুজিব। গোপালগঞ্জ মিশনারী স্কুল থেকে ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক, ১৯৪৪ সালে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে আই.এ এবং একই কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে বি.এ পাশ করেন।

পরাধীন দেশে জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু। দেশে তখন বৃটিশের শাসন চলছে। অনেক আন্দোলন সংগ্রামের পথ বেয়ে ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়। জন্ম নেয় ‘পাকিস্তান’ নামের এক নতুন রাষ্ট্র। যার এক অংশ পূর্ব পাকিস্তান।  দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানের (পূর্ববঙ্গের) বাঙালিরা এক ঝলক শান্তি পাবার আশা করেছিল। তাদের মনে ছিলো কর্মসংস্থান, বাসস্থান, সুশিক্ষা গ্রহণসহ হাজারো নতুন স্বপ্ন। কিন্তু প্রথম থেকেই সর্বক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানিদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছিলো। শিক্ষা স্বাস্থ্য কর্মসংস্থান আবাসন প্রতিটি ক্ষেত্রেই  বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছিল যা অসহনীয় হয়ে উঠেছিল মুজিবের কাছে।

ছেলেবেলা থেকেই ভয়-ভীতি ছিলো না তাঁর চরিত্রে। তাঁর চরিত্রে সাহসিকতা, স্পষ্টবাদিতা ও বলিষ্ঠতার সমাবেশ ঘটেছিল । অন্যায়ের বিরুদ্ধে বুক উঁচিয়ে দাঁড়াতেন, সত্য ও উচিত কথা বলতেন। এসব চারিত্রিক গুণাবলীর জন্য গোপালগঞ্জ মিশন হাইস্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে মুজিব খুবই জনপ্রিয় হয়ে হয়ে উঠেন। তাঁকে সবাই ‘মুজিব ভাই’ বলে ডাকতো।

স্কুলে পড়া অবস্থায় তাঁর মধ্যে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটতে থাকে। দুঃস্থ, গরীব, আর্তদের সেবা করার মধ্য দিয়ে মহানুভবতা আর  মানবতার আদর্শে দীক্ষিত হন। সাধারণ মানুষের প্রতি ভালোবাসা, দরদ, বিপদে-আপদে অকুণ্ঠভাবে সাহায্য-সহযোগিতা তাঁর জীবনের অনুপম  বৈশিষ্ট্য।

গৃহশিক্ষক হামিদ মাস্টার ছিলেন সেবা কাজে, সেবাধর্মে, দানশীলতায়  বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। ছেলেবেলাতেই হামিদ মাস্টারের অনুপ্রেরণায় গ্রামের বাড়ি বাড়ি থেকে মুষ্টি চাল সংগ্রহ করে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করতেন বঙ্গবন্ধু। শুধু তাইই নয়, বৃষ্টির দিনে ছাতা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলেও সে  ছাতা বাড়িতে ফিরে আসত কমই। কোনো বন্ধু বা কোনো দরিদ্র গ্রামবাসীকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখলে নিজের ছাতাটি দিয়ে আসতেন । এমন যে কতবার ঘটেছে তার কোনো হিসেব নেই্ । যে বন্ধুর জামা নেই, যে দরিদ্র ছেলেটির স্যান্ডেল বা শীতবস্ত্র নেই, যে ছাত্রটির বই খাতা কলম নেই নিজের জামা স্যান্ডেল বই পত্র তাকে দিয়ে আসতেন। শীতের দিনে তিনি শীতবস্ত্র পরে বের হতেন কিন্তু ফিরতেন শীতবস্ত্র ছাড়াই।

বাড়ির পাশের বাইগার নদীতে বন্ধুদের সাথে মাছ ধরতেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু বাড়িতে মাছ আসত না। যে বন্ধু মাছ পায়নি বা কম মাছ পেয়েছে তাকে নিজের মারা মাছগুলো দিয়ে হাসিমুখে বাড়ি চলে আসতেন। পথে কোনো ক্ষুধার্ত মানুষ দেখলে সাথে করে বাড়ি নিয়ে এসে ভাত খেতেন। ভাত কম থাকলে নিজের ভাত ভাগ করে খেতেন।

ছেলেবেলো থেকেই মানুষকে দিতে শিখেছিলেন তিনি। নিতে শেখেননি। তাঁর জন্মই যেন হয়েছিল দেবার জন্য। আর এখানে একটা বিষয় লক্ষ্যণীয়, তিনি যে দিতেন তাতে কোন বাধা দিতেন না তাঁর বাবা মা আত্মীয় স্বজন। বাধা দিলে, বকা ঝকা করলে বা কৈফিয়ৎ চাইলে তিনি এ দেওয়াটা চালিয়ে যেতে পারতেন না। কাজেই এ ব্যাপারে তাঁর পরিবার ছিল উদারতান্ত্রিক।

তাঁর ‘জাতির পিতা’ বা ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে ওঠার পেছনে টুঙ্গিপাড়ার মানুষের বড় ভূমিকা রয়েছে। ছোট্ট অনুন্নত গ্রাম ও  তার মানুষের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলার লক্ষাধিক গ্রাম ও কয়েক কোটি মানুষকে দেখেছেন তিনি। বাংলার সমস্যাক্লিষ্ট আর খাজনাদায়যুক্ত কৃষক,  আধপেটা খাওয়া শ্রমিক, অনাহারক্লিষ্ট হতদরিদ্র মানুষকে তিনি নিজ চোখে দেখেছেন। চিন্তা করেছেন বাঙালির সার্বিক মুক্তির কথা। নিজের দিকে ফিরে তাকাননি। জেল-জুলুম, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, শাসকগোষ্টীর অত্যাচার সহ্য করেছেন। তিনি চেয়েছিলেন বাঙালি উন্নত জীবনের অধিকারী হোক, বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। তিনি তখন স্কুলের ছাত্র। বাংলার প্রধানমন্ত্রী এ. কে. ফজলুল হক ও মন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক সফরে আসেন। মুজিব তাঁদের সামনে দাঁড়িয়ে স্কুলের ছাদ দিয়ে পানি পড়ার অভিযোগ তুলে ধরে মেরামতের দাবি জানান। তাঁর কথা বলার ভঙ্গি দেখে দুই নেতাই মুগ্ধ হন। সোহরাওয়ার্দী তাঁকে কাছে ডেকে কথা বলেন। তিনি এলাকার রাজনৈতিক খবরাখবর নেন। নিজের ঠিকানা দিয়ে চিঠি লিখতেও বলেন তিনি। শেখ মুজিবের সঙ্গে তাঁর  এই সম্পর্ক আজীবন ছিলো।

বঙ্গবন্ধু যখন যেখানে থেকেছেন সেখানেই নেতা। বেকার হোস্টেলেও নেতা, গ্রামের স্কুলেও নেতা, জেলখানায়ও নেতা, দেশে ফেরার পরও নেতা। এই নেতা হবার কারণ তিনি নিজের কথা না ভেবে যখন যেখানে থাকতেন সেখানকার মানুষের কথা ভাবতেন। জেলখানায় থাকার সময় রাজবন্দিদের কথা ভাবতেন। বঙ্গবন্ধুর  লেখা ‘কারাগারের রোজনামচা’ পড়ে আমরা জেনেছি জেলখানায় তিনি বাগান করতেন। আওয়ামীলীগ নেতা শামসুল হক বিয়ে করার পর পরই কারারুদ্ধ হন। তাঁর জন্য খারাপ লাগত বঙ্গবন্ধুর। তাই মিসেস হক যেদিন হক সাহেবের সাথে দেখা করতে আসতেন তিনি সেদিন ফুলের তোড়া বেধে বা মালা বানিয়ে তাঁকে দিতেন স্ত্রীকে দেবার জন্য। এই যে মানুষের জন্য ভাবা, তাদের জন্য কাজ করা এটা বঙ্গবন্ধুর চরিত্রের উজ্জ¦লতম  বৈশিষ্ট্য । তিনি নিজে কারাবন্দি অথচ নিজের কথা না ভেবে তিনি ভাবছেন আর এক বন্দি কীভাবে তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে খুশি করবেন সে বিষয়ে। এই ভাবনা বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই সম্ভব।

বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান চেয়েছিলেন শেখ মুজিব উচ্চশিক্ষা লাভ করুক। ম্যাট্রিক পাস করে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে আই.এ.পড়তে যান পিতার ইচ্ছেয়। বিএ পাশ করার পর ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন তিনি। উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ গর্জে ওঠে। তিনি ছিলেন এ আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। ১৯৪৮ সালে প্রথম প্রতিবাদ ও হরতাল পালিত হলে শেখ মুজিব গ্রেফতার হন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারিদের ন্যায়সঙ্গত দাবি সমর্থন করায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে বহিস্কার করা হয়েছিল। তাঁকে জরিমানা ও মুচলেকার প্রস্তাব দেয়া হয়। তাঁকে জানানো হয় তিনি যদি রাজনীতি না করেন, তাহলে ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেয়া হবে। তিনি  দৃঢ়ভাবে প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছিলেন।

পিতা চেয়েছিলেন তিনি লন্ডনে গিয়ে ব্যারিস্টারি পড়ুন। কিন্তু শেখ মুজিব প্রিয় বাংলার জনগণকে পাকিস্তানের শোষণের মধ্যে রেখে লন্ডনে  যেতে রাজি হলেন না। ৭ মার্চের ভাষণের পর অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, দেশ ছেড়ে যেতে বা অন্তরালে চলে যেতে। বঙ্গবন্ধু যাননি। তিনি জানতেন তিনি চলে গেলে নিরীহ বাঙালিকে মেরে ফেলবে পাকিস্তানিরা। তাই নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থেকে গিয়েছিলেন। তবে শেষরক্ষা হয়নি।১৯৭১ এর ২৫ মার্চে রাতের অন্ধকারে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর শকুনের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনা। শুরু করে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ড। অশীতিপর বৃদ্ধ থেকে কোলের শিশু কেউই রক্ষা পায় না  তাদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ থেকে। ওই রাতে মুজিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিয়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তানে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। আন্তর্জাতিক চাপে শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি লন্ডন হয়ে দেশে ফেরেন। সারা দেশ ভেসে যায় আনন্দ উচ্ছ¡াসে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে প্রথম সরকারের মাত্র সাড়ে তিন বছর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর সরকারকে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের অগণিত সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়েছিল। অসংখ্য সমস্যা তাঁর সরকারের সামনে সুবিশাল পাহাড়ের মতো  চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়য়েছিল। একে একে দেশ যখন ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, ঠিক তখনই আসে আঘাত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে একদল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা হত্যা করে শেখ মুজিব এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের। তাঁর দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান ।

গভীর দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর কাছে এদেশের মানুষই ছিল প্রথম আর শেষ কথা। আর সেই মানুষের মধ্যে সর্বাগ্রে ছিল খেটে খাওয়া মানুষ। বঙ্গবন্ধুর ভাষায়, ‘আমার দুখি মানুষ’। যে দুখি মানুষের জন্য সারা জীবন তাঁর দু হাত আর বুক ছিল প্রসারিত। দুর্ভিক্ষে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। দাঙ্গা মোকাবিলায় অংশ নিয়েছেন।

তিনি যখন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট, তখনও ৩২ নম্বরের বাড়িটি দেখার অনেকের মধ্যেই কৌতুহল ছিলো। ৩২ নম্বরের বাড়িটির দরজা সাধারণ মানুষের জন্য ছিলো সবসময় খোলা। কেউ সাহস করে বাড়িতে না ঢুকে উঁকিঝুঁকি মারলেই বঙ্গবন্ধু ডেকে নিতেন তাকে। পাশে বসিয়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে জানতে চাইতেন তাদের অভাব অভিযোগের কথা। আগন্তুককে কিছু না কিছু দিয়ে আপ্যায়ন করতেন, আপ্যায়ন করতেন নিজ হাতে। বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমানের চরিত্রে মানবিকতার সকল গুণাবলীই নিহিত ছিলো। তিনি মনে করতেন নেতার বাড়িতে যাবার অধিকার দেশের জনসাধারণের আছে। এটা তাদের মানবাধিকার। তারা ভোট দিয়ে নেতা বানায়, প্রধানমন্ত্রী বানায়।

বঙ্গবন্ধুর দর্শন ছিল মানবতাবাদ। সব ধর্ম আর সব  বর্ণের জনগণের প্রতি ভালোবাসার মধ্যেই শেখ মুজিবের অসাম্প্রদায়িকতার আদর্শ নিহিত ছিলো। পারিবারিক প্রণোদনা তাঁকে শিখিয়েছে বাংলার কৃষক তাঁর ভাই, নিরন্ন দুখি মানুষ তাঁর ভাই।

তিনি এতটাই ক্ষমাশীল আর দয়াশীল ছিলেন যে, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে নেবার কথা বলেছেন। পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিদের ফিরিয়ে দেবার কথাও বলেছেন।

বাংলার কৃষক, শ্রমিকের উন্নয়ন ছিল তাঁর ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে । তিনি বার বার বলতেন কৃষক  শ্রমিককে সম্মান করে কথা বলুন, মর্যাদার সাথে কথা বলুন। তারা আপনাকে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানায়। আপনি ইঞ্জিনিয়ার হন তাদের টাকায়। সেকথা মনে রেখে তাদের সাথে আচরণ করুন। তাদের নিজের পিতার মতো দেখুন।

জীবনের অধিকাংশ সময় জেলে কাটিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। পিতা শেখ লুৎফর রহমান ফজিলাতুননেসা মুজিবকে টাকা পাঠাতেন। সেই টাকায় অনেক কষ্টে সংসার চালাতেন বঙ্গমাতা। ছেলে মেয়েদের মানুষ করেছেন খুবই কষ্ট করে। বঙ্গবন্ধুর জীবনের অধিকাংশ সময় যদি জেলে না কাটতো তাহলে এদেশের  প্রতিটি মানুষের সুখে দুঃখে দাঁড়াতে পারতেন তাঁদের পাশে। কিন্তু তিনি তাঁর জীবনের অমূল্য সময় যৌবনটাই কাটিয়েছেন জেলে। তারপরও যখনই পেরেছেন দুহাত উজাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে এসে খালি হাতে বা শুকনো মুখে কেউ কখনই ফিরে যায়নি।

প্রতিটি বাঙালি জানতো ও বিশ্বাস করতো, বঙ্গবন্ধুর নিজের কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিলো নিপীড়িত মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। তিনি মানুষের ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই চান না। না প্রধানমন্ত্রীত্ব না প্রভুত্ব। তাঁর কাছে, অর্থ, সম্পদ, আড়ম্বরপূর্ণ জীবন ও ঐশ্বর্য সবই ছিলো তুচ্ছ। মানুষকে ভালবাসতেন বলেই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু থেকে গেছেন মানুষের কাতারেই।

২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মের শতবর্ষ পূর্ণ হয়েছে। আমরা ভাগ্যবান যে, এই কালজয়ী মানুষটির শততম জন্মবার্ষিকী পালনের সুযোগ আমরা  পেতে যাচ্ছি।

আমি শেষ করতে চাই বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনীর  অনুবাদক ইতালির গবেষক আন্না কোক্কিয়ারেল্লা এই কথাটি দিয়ে, ‘বাংলাদেশ সম্পর্কে পৃথিবীর সবাই জানবে, আমার ইচ্ছা। আর বাংলাদেশকে জানতে হলে বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমানকে জানতে হবে।” আমি তাঁর কথার সাথে সম্পূর্ণ একমত। ‘বাংলাদেশেকে জানতে হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জানতে হবে।’

 

%d bloggers like this: