রুনার সন্তান হবে। সন্তান জন্ম নেয়া অতি স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রতিদিন ভাবি বোন পাড়া প্রতিবেশি কত শত নারীর সন্তান হচ্ছে । হ্যাঁ প্রথম সন্তানের বেলায় একটু বাড়তি উচ্ছ্বাস থাকে, প্রথম বলে কথা! নতুনের কদর বরাবরই একটু বেশি। কিন্তু যাদের দুই এর অধিক সন্তান তাদের পেটে কখন সন্তান আসে আর কখন ভূমিষ্ট হয় তার খবর অনেকেই রাখেনা। রুনা বাস করে গ্রামে। গ্রামের ঘরে ঘরে চার পাঁচটা করে সন্তান। গ্রামের মানুষ গোঁড়া, ধর্মভীরু। সন্তান জন্ম নেয়াকে তারা খোদার দান মনে করে। খোদার উপর খোদগারি করার সাহস ওদের নেই। তারপরও সন্তান নেই রুনার ঘরে।…
Read Moreলিখেছেন: আফরোজা পারভীন
মেলবন্ধনে রবীন্দ্র- সত্যজিৎ
সত্যজিৎ রায়ের জন্ম ১৯২১ সালের ২ মে , মৃত্যু ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মৃত্যুবরণ করেন ১৯৪১ সালে । সেই হিসেবে তিনি যখন মারা যান সত্যজিৎ রায় তখন ১৯ বছরের যুবক। তবে সত্যজিৎ রায়ের পরিবারের সাথে রবীন্দ্রনাথের নিবিড় যোগাযোগ ছিল। সত্যজিৎ এর পিতা ও পিতামহ দুজনই নামকরা শিল্পী ছিলেন। পিতামহের একটি ছাপাখানাও ছিল। সেখানে তিনি মুদ্রাকরের কাজ করতেন। তিনি ছোটদের জন্য একটা পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। সত্যজিৎএর লেখা ও ছবি সে কাগজে বের হত। বাবা সুকুমার রায়ও একজন বিখ্যাত শিশু সাহিত্যিক। তার মজার ছড়া পড়েনি সেকালে এমন কোন শিশু খুঁজে…
Read Moreসম্পাদকীয়
ঈদ শব্দটার মধ্যে যেন কি একটা আছে । কেমন এক রিনিক ঝিনিক বাজনা! কেমন যেন চঞ্চল হয়ে ওঠে মন। একটা উৎসব উৎসব দোলা লাগে মনে। যে যাই বলুক না কেন, এটা কিন্তু লাগেই। অনেকে বলেন, আমিও মাঝে মাঝে বলি, এখন আর কিসের ঈদ । ঈদ ছেলে-মেয়েদের জন্য । এটা ঠিক ছেলেবেলায় ঈদে আমরা উথাল পাথাল আনন্দ করতাম। সেই অবিরাম ঘোরাঘুরি, সেলামি নেয়ার প্রতিযোগিতা, সেমাই পোলাউ খাওয়ার ধুম এখন নেই। সম্ভবও না। নাগিরক জীবন এখন অনেক ব্যস্ত। কিন্তু এখনকার আনন্দটা অন্যরকম। ঠিক সেইরকম, আমাদের ছেলেবেলায় বাব-মায়েরা যেমন আনন্দ পেতেন । সন্তান…
Read Moreসম্পাদকীয়
আজ বাবা দিবস। বিশ্বের সব বাবার প্রতি অনি: শেষ শ্রদ্ধা। বাবা এক অপার ভালবাসা আর অসীম নির্ভরতার নাম। এ নাম নিজেকে উজাড় করে সন্তানের নিরাপত্তা বিধানের। এ এক উদার বটবৃক্ষ, যার স্নেহময় পত্রপুটের সুশীতল ছায়ায় আমরা নির্বিঘ্ন নিশ্চিন্ত নির্ভয়। আজ সেই বাবাদের স্মরণে একটি দিন। যদিও আমি বিশ্বাস করি, বাবার জন্য পৃথক কোন দিবসের প্রয়োজন নেই। বাবা সন্তানের প্রতি মুহূর্তের সাথি। সাথি আনন্দ-বেদনায়, চিন্তায়-বিনোদনে, প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তিতে।তাই একটি বিশেষ দিনে, বিশেষভাবে তাকে স্মরণ করে স্মরণের গন্ডিটাকে সীমাবদ্ধ করার কোন প্রয়োজন নেই। তারপরও কথা থেকে যায়। পৃথিবী আজ আগ্রাসী যন্ত্রদানবের চাকায়…
Read Moreবাবার হাসি
বাবা মোটেও হাসেন না এটা মিতুর একটা দুঃখের কারণ । হয়ত কোন মজার গল্প হচ্ছে, সে আর মা হেসে গড়িয়ে পড়ছে, কিন্তু বাবার মুখে হাসির লেশমাত্র নেই। বরং আচমকা ওদের হাসির মাঝেই বলে ওঠেন, ‘এত হাসির কি আছে শুনি ?’ ওরা থতমত খেয়ে থেমে যায়। এমন ঘটে প্রায়ই। হয়ত কোন বাড়িতে অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করেছে । ওরা গেছে সেখানে, সবাই হাসছে, গল্পে মেতে আছে, নানান রকম কথা বলছে, খুনসুটি করছে। বাবা কিন্তু নিশ্চুপ। শুধু নিশ্চিুপ থাকলেও এক কথা ছিল, রীতিমত গম্ভীর। আর তার গাম্ভীর্য এতটাই যে সবারই সেটা চোখে পড়ে। যে…
Read Moreএকজন লতিফুর রহমান মন্টুর কথা
জন্ম হয়েছিল টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরের এক ঐতিহ্যবাহী পরিবারে। নানা এবং দাদা দুজনই এক নাগাড়ে বহুবছর ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। প্রতিপত্তি আর লেখাপড়ায় পারদর্শিতার কারণে রাণী ভবাণী এ পরিবারকে খাশনবিশ উপাধী দিয়েছিলেন। সেই পরিবারের সন্তান লতিফুর রহমান। পিতা আফতাব উদ্দীন খাশনবিশ, মাতা বেগম লুৎফা। পিতা সরকারি চাকুরে। মা লেখাপড়া জানা আলোকপ্রাপ্ত নারী। আজ তাঁর কথা লিখছি । আজ তাঁর ৩য় মৃত্যুবার্ষিকি। বলতে পারেন, পৃথিবীতে কত লতিফুর রহমান আছেন। ইনি অবার কে যার কথা বিশেষ ভাবে লিখতে হবে? এ কথা ঠিক যে, অনেক মানুষ আছেন যারা বিশাল মাপের , যারা বিখ্যাত হয়ে আপামর…
Read Moreসম্পাদকীয়
যার চেতনার রংয়ে পান্না সবুজ আর চুনি লাল হয়ে ওঠে তিনি রবীন্দ্রনাথ। আমাদের চিরচেনা রবীন্দ্রনাথ। আমাদের রক্ত কনিকার বুদ্বুদে, নিঃশ্বাসের আন্দোলনে ,ঘুমের গাঢ়ত্বে, জাগরণের আনন্দে যিনি জেগে থাকেন তিনি রবীন্দ্রনাথ। আমাদের কবিগুরু, বিশ্বকবি, আমাদের সকল ধ্যান, সকল জ্ঞান সকল আবেগের কেন্দ্রবিন্দু। আমরা তাঁকে আশ্রয় করে বাঁচি, তাঁর প্রশয়ে বাঁচি। যে কোন জরা, প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি, বেদনায় ওপরতলার আমরা তথকে নিম্নতলায় অবস্থান যে রিক্সাওয়ালা, মজুরও জীবনের কোন না কোন সময় রবীন্দ্রনাথকে আশ্রয় করেন। গুণগুণিয়ে গেয়ে ওঠেন, ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশীনি’ কিংবা ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে।’ আজ সেই…
Read Moreসাঈফ মীজান আছে, নাকি নেই
কি বার ছিল সেদিন মনে নেই। তখন সময়ের হিসেব ছিল না। মুখ্য ছিল বেঁচে থাকা । যেন তেন ভাবে বেঁচে থাকা। দুঃসহ সময়টাকে পার করা। আর প্রতীক্ষা করা এক নতুন দিনের। যেদিন এদেশের আকাশে উড়বে নতুন পতাকা। স্বাধীন দেশের স্বাধীন পতাকা। সে পতাকা হবে একান্তই নিজের। তাতে ভাগ থাকবে না একহাজার মাইল দূরের বিজাতীয়দের। সেই কাল গোণার মুহূর্তে আমি স্কুলের উঁচু ক্লাসের ছাত্রী। নিজেকে নিয়ে সদা বিব্রত। এ বয়সের মেয়েরা পাকিস্তানী হানাদার আর তার দোসরদের চোখে নিতান্তই লোভনীয়। সর্বদা নিজেকে লুকিয়ে রাখি । মা থাকেন আমাকে নিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত। ভাইয়েরা…
Read Moreবিদেশীদের চোখে বাংলাদেশের গণহত্যা -৮
(পূর্ব প্রকাশিতের পর) অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের রিপোর্ট তিন গুলিতে একটি প্রাণ ঢ্যাঙা পাঞ্জাবি অফিসার ইফতেখার তার কাজের ফিরিস্তি দিতে চাইল। আরেক দিনের কথা। তার সঙ্গে গাড়িতে করে কুমিল্লা সার্কিট হাউসে যাচ্ছিলাম। ওই দিনই সে তার সর্বশেষ বীরত্বব্যঞ্জক কর্মের বর্ণনা দেয়। “আমরা এক বুড়োকে পাই,” সে বললো, “জারজটি দাড়ি রেখেছিল। ভাব দেখাচ্ছিল সে খাঁটি মুসলমান। নাম বললো আবদুল মান্নান। তৎক্ষণাৎ আমরা ডাক্তারি পরীক্ষায় নেমে পড়লাম এবং খেল খতম।” ইফতিখার বলে চললো, “আমি ওই মুহূর্তেই ওটাকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার লোকেরা বললো এই ধরনের একটি জারজের জন্যে তিনটি গুলির দরকার। প্রথম…
Read Moreবিদেশীদের চোখে বাংলাদেশের গণহত্যা -৭
(পূর্ব প্রকাশিতের পর) অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের রিপোর্ট ঠান্ডাপানিতে চুমুক এবং মৃত্যুদন্ডাদেশ ডাবের পানিতে চুমুক দিতে দিতে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয়া হল। আমাকে বলা হল যে, দু’জন বন্দি হিন্দু, তৃতীয়জন একজন “ছাত্র” এবং চতুর্থজন একজন আওয়ামী লীগ সংগঠক। আর “চোর”টি একটি কিশোর নাম-সিবাসতিয়ান। তাকে ধরা হয়েছে যখন সে তার এক হিন্দু বন্ধুর বাড়ির ঘরের মালামাল নিজের বাড়িতে নিয়ে আসছিল। পরে সন্ধ্যায় এই লোকদের দেখলাম। এক দড়ি দিয়ে তাদের হাত-পা আলগা করে বাঁধা। সার্কিট হাউজ চত্বরের রাস্তায় ওপর শুইয়ে রাখা হয়েছে। সান্ধ্য আইন বলবৎ হওয়ার কিছু পর, তখন সন্ধ্যে ছ’টা হবে, একদল ময়না তখন কর্কশ…
Read More