নারী বৈমানিক /  রক্তবীজ ডেস্ক

বিমান চালনা পৃথিবীর অন্যতম সাহসী ও চ্যালেঞ্জিং কাজগুলোর একটি। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ, সাহসী ও দক্ষরাই কেবল বিমান চালনার জন্য নির্বাচিত হয়ে থাকেন। একটা সময় ছিল যখন বিমান চালানোর মতো চ্যালেঞ্জিং কাজটি পুরুষের পক্ষেই সম্ভব বলে মেনে নেওয়া হতো। নারীদের বিমান চালনায় দেখা যেত কম। কিন্তু এই ধারণাটি ভুল প্রমাণ করেছেন কয়েকজন নারী। ইতিহাসে এই নারীদের সাহসিকতা ও বিমান চালনায় দক্ষতার গল্পগুলো রোমাঞ্চকর ও অনুকরণীয় হয়ে রয়েছে। এখন ছোট বিমানই শুধু নয়, বড় যাত্রীবাহী ভারী বিমানও চালনা করে থাকেন এমন নামকরা নারী পাইলট রয়েছেন। এ ছাড়া সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে যুদ্ধবিমানে উড়ছেন অনেকে। প্রলয়ঙ্করী ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ থেকে শুরু করে শত্রুপক্ষের ওপর বোমাবর্ষণ সবই করছেন সফলতার সঙ্গে। নারী পাইলটদের মধ্যে যাদের বিশেষভাবে স্মরণ করা হয় তাদের একজন প্যাট্রিসিয়া। ঘানার এই পাইলট পশ্চিম আফ্রিকার প্রথম বেসামরিক নারী পাইলট ছিলেন। বলা যায়, ইস্টার মাবাজির কথা। রুয়ান্ডার প্রথম বাণিজ্যিক বিমান আকাশে ভাসিয়ে তিনি বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দেন। তার বাবা বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন বলেই বিমান উড়ানোর চ্যালেঞ্জটি নিতে প্রাণপণে নিয়েছিলেন। আলিয়া তাওয়েল জর্ডানের ২০ নারী পাইলটের একজন। মাত্র ৬.৩ মিলিয়ন মানুষের এই দেশে একজন নারীকে পাইলট হিসেবে গড়ে উঠার গল্প যেন রূপকথাকেও হার মানায়। তিনি যেদিন বিমানের ককপিটে চড়েন নারী পাইলটদের ইতিহাসে লেখা হয় আরেকটি সাফল্যের নাম। আফগানিস্তানের লতিফা ছিলেন প্রথম সামরিক হেলিকপ্টারের নারী পাইলট। যেখানে নারীদের পদে পদে রক্ষণশীলতার মুখোমুখি হতে হয়, শিক্ষা প্রসারে বাধা আসে, সেখানে এই নারী আকাশে উড়ে প্রমাণ করে দেন অসম্ভব বলে পৃথিবীতে কিছু নেই। আমেরিকান নারী পাইলট জ্যাকুলিনের কথাও বলতে হয়। তিনি বিশ্বের সেরা রেসিং পাইলটদের মধ্যমণি ছিলেন। আকাশে গতির ঝড় তুলতে পারঙ্গম এই নারী পাইলট আকাশে পুরুষ পাইলটদেরও পেছনে ফেলে দিতেন। তার গতির কাছে হেরে যেতেন পারদর্শী পাইলটরা। ১৯৫৩ সালে তিনি বিশ্ববাসীকে চমকে দেন। শব্দের চেয়েও বেশি গতিতে ছুটে চলা প্রথম নারী পাইলট তিনি। শব্দকে পেছনে ফেলে তিনি আকাশ জয় করেছিলেন। নারী পাইলটদের সাফল্যের গল্প বলে শেষ করা যাবে না। সময় যত গড়াচ্ছে বিমান নিয়ে আকাশজয়ের নেশা তাদের ততই বাড়ছে। কিন্তু একজনের গল্প আলাদা করেই বলতে হয়। তিনি অ্যামেলিয়া এয়ারহার্ট। একজন নারী পাইলট হিসেবে শুধু নয়, তিনি বিমানচালকদের ইতিহাসে লেখা অন্যতম এক রহস্য। ১৮৯৭ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তুখোড় নারী পাইলট অ্যামেলিয়া এয়ারহার্ট। অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তার ক্যারিয়ার ছিল নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ ঘটনায় অসাধারণ সম্মিলন। একক উড্ডয়নের নানা পরীক্ষায় তিনি এভিয়েশনে আনেন বৈচিত্র্য। তার উড্ডয়নে পরীক্ষা হয়েছিল লকহেড ভেগা ৫-বি। বিশ্বভ্রমণের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অ্যামেলিয়া পুরো বিশ্বের প্রথম নারী পাইলট, যিনি একক উড্ডয়নে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়েছিলেন। আমেরিকার পাইলটদের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি ফ্লাইং ক্রস অর্জন করেছিলেন তিনি। ১৯৩৫ সালে তিনি যখন পেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে আগ্রহী নারীদের পাইলট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন তখন তার খ্যাতি আকাশছোঁয়া। মিডিয়ার মধ্যমণি ছিলেন তিনি। পাইলট হিসেবে তার দক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না। বিশ্বভ্রমণের লক্ষ্য নিয়ে তিনি আকাশে ভেসে পড়েন। নেন লকহেড ১০ মডেলটি। ১৯৩৭ সালের ঘটনা। ধনী এই পাইলট আকাশে উড়ান বিমান। বিশ্বভ্রমণের কথা থাকলেও খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে আকাশে চিরদিনের জন্য হারিয়ে যান তিনি।

 

 

আফগান মিসাইল’ নিলুফার রাহমানি

নাম নিলুফার রাহমানি হলেও তাকে ডাকা হয় ‘আফগান মিসাইল’। তালেবানদের তাণ্ডবে পুরো আফগানিস্তান যখন ত্রাসের কবলে তখন যুদ্ধবিমান নিয়ে আকাশ কাঁপিয়েছেন নিলুফার। আফগান সেনাবাহিনীতে প্রথম নারী যোদ্ধা পাইলট হিসেবে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই বৈমানিক হতে চেয়েছিলেন। এজন্য বছরখানেক ইংরেজি শেখেন। তারপর বিমান বাহিনীতে নাম লেখান। সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে গ্রাজুয়েশন শেষ করেন ২০১২ সালে। পাইলট জীবনের শুরু এখান থেকেই। সি ২০৮ মিলিটারি কার্গো বিমান চালান। সে সময় নারী বৈমানিকরা সাধারণত যুদ্ধাহত বা মৃত সেনাদের নিয়ে আকাশে উড়তেন না। কিন্তু আদেশ অমান্য করে নিলুফার তালেবানদের হাতে আহত আফগান যোদ্ধাদের উদ্ধার করেন। এ খবর প্রচার পেলে সারা বিশ্বে তিনি প্রশংসিত হন। অবশ্য খুশি হয়নি তালেবানরা। তাকে ও তার পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দেয় তালেবানরা। এতেও থেমে থাকেননি তিনি। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনীতে যোগ দিতে চান ও সেখানে  আশ্রয় প্রত্যাশী— এমন বক্তব্য দিয়ে সমালোচিত হন নিলুফার।

 

বাংলাদেশের আকাশকন্যা

 

আকাশজয়ে ইতিহাস গড়েন বাংলাদেশের দুই নারী। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাইমা হক ও ফ্লাইং অফিসার তামান্না-ই-লুিফ বৈমানিক হিসেবে প্রথমবারের মতো যুক্ত হন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে। তারা যশোরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ১৮ নম্বর স্কোয়াড্রনে বেল-২০৬ হেলিকপ্টারে বেসিক কনভার্সন কোর্স সম্পন্ন করেন। নাইমা হক ও তামান্না-ই-লুিফ এর আগে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতেই যুদ্ধসংক্রান্ত নয়, এমন কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে বিমান বাহিনীতে প্রথমবারের মতো সামরিক পাইলট নিয়োগের পথ উন্মুক্ত হলে তারা এতে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে সফল হন। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী বৈমানিক হিসেবে বিমান চালানোর অনুমতি পান সৈয়দা কানিজ ফাতেমা রোকসানা। এছাড়াও উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে প্রথম দুই নারী পাইলট হলেন মেজর নাজিয়া নুসরাত হোসেন এবং মেজর শাহরীনা বিনতে আনোয়ার। আকাশজয়ী এই গর্বিত দুই নারী তেজগাঁও আর্মি অ্যাভিয়েশন গ্রুপে শিক্ষানবিশ পাইলট হিসেবে সফলভাবে প্রশিক্ষণ বিমান ‘সেসনা ১৫২ অ্যারোবাট’-এ একক ও দ্বৈত উড্ডয়ন পরিচালনা করেন।

 

বিশ্বের প্রথম

বিশ্বের প্রথম নারী বিমানচালক অ্যামেলিয়া এয়ারহার্ট। অ্যামেলিয়া প্রথমবারের মতো এককভাবে আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর দিয়ে বিমান চালিয়ে ইতিহাস তৈরি করেন। শুধু পাইলট হিসেবেই নয়, একজন লেখিকা হিসেবেও তিনি বিখ্যাত ছিলেন। তার উড়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা একাধিক বই ঠাঁই করে নিয়েছিল বেস্ট সেলারের তালিকায়। এর মধ্যেই এয়ারহার্ট বিমানে করে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। ঘটনাটি ১৯৩৭ সালের। প্রশান্ত মহাসাগরের হাওল্যান্ড  দ্বীপের কাছাকাছি গিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় তার বিমান। তিনিও নিখোঁজ হন। অ্যামেলিয়া না পারলেও পরবর্তীতে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে নারীর জয়গান অব্যাহত রাখেন ভেলেন্তিনা তেরেসকোভা।

 

আরব আমিরাতের বোমারু মরিয়ম

২০০৭ সালে আরব আমিরাতের বিমান বাহিনীতে প্রথম নারী পাইলট হিসেবে নাম লেখান মরিয়ম আল মুনসারি। ভয়ঙ্কর যুদ্ধবিমান ‘এফ সিক্সটিন’-এর পাইলট মরিয়ম সিরিয়া মিশনে আইএসের ওপর বোমা বর্ষণ করে বিশ্বজুড়ে আলোচিত হন। তার সাহসিকতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠে পশ্চিমা মিডিয়া। পশ্চিমা বিশ্ব তো বটেই, গোটা পৃথিবীতেই আইএসের ওপর যুদ্ধবিমান থেকে বোমা নিক্ষেপকারী এই নারী পাইলট সাহসিকতার প্রতীক হয়ে ওঠেন। কেউ তাকে বলছেন আয়রন লেডি, কেউ বলছেন আকাশের আতঙ্ক। যে বিশেষণই দেওয়া হোক না কেন, যুদ্ধবিমান নিয়ে আইএসের ওপর হামলা করা প্রথম নারী পাইলট হিসেবে তার ভূমিকা সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়। আরব মিত্রদের নিয়ে সিরিয়ায় বিমান হামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আইএস দমনে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এই অভিযানে রয়েছে সৌদি আরবও। সৌদি প্রিন্স স্বয়ং এই অভিযানে অংশ নিয়েছেন। ডেইলি মেইল অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে এ খবর নিশ্চিত করে ছবিও প্রকাশ করে। মজার ব্যাপার হলো, তার সঙ্গে ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম নারী পাইলট মেজর মরিয়ম আল মুনসরি। ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিদের দমনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের মুসলিম নারী পাইলট মেজর মরিয়ম আল মুনসরি।  কিশোরী বয়স থেকে মরিয়মের স্বপ্ন ছিল পাইলট হওয়ার। দ্য ন্যাশনালের প্রতিবেদনে জানা যায়, আমিরাতের বিমান বাহিনীতে একসময় নারীদের পাইলট হওয়ার সুযোগ ছিল না। কিন্তু সে সুযোগ এলে ভাগ্য খুলে যায় মুনসরির। আমিরাত মেডেলজয়ী আল মুনসরিই দেশটির প্রথম নারী পাইলট। সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে বিমান হামলায় মরিয়মের অংশ নেওয়ার খবর রাতারাতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক-টুইটারে রটে যায়।

 

ইউরোপের আকাশে উড়ছেন মাইরিয়ম আদনানি

ইউরোপের আকাশে মরক্কোর নাম লিখে দিয়েছেন মাইরিয়ম আদনানি। নেদারল্যান্ডে জন্ম নেওয়া মাইরিয়ম এখন মরক্কোর বাসিন্দা। ইউরোপে প্রথম মুসলিম নারী পাইলট হিসেবে তিনি আকাশে উড়ান বাণিজ্যিক বিমান। মাত্র ২৩ বছর বয়সে এই নারী অনবদ্য এই ইতিহাস লেখেন। যুক্তরাষ্ট্র ও বেলজিয়ামে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই পাইলট বোয়িং ৭৩৭ উড়িয়ে সবাইকে চমকে দেন। আমস্টার্ডামের অক্সফোর্ড অ্যাভিয়েশন একাডেমিতে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকেই পাইলট হওয়ার যাত্রা তার। মরক্কান নাগরিক হয়ে দ্বিতীয় নারী পাইলট হিসেবে প্রশিক্ষণ শেষে দুই বছরের মাথায় তিনি বাণিজ্যিক বিমান উড়ানোর সুযোগ পান। তার প্রথম সফল বাণিজ্যিক বিমান উড়ানোর খবর ছড়িয়ে পড়লে মুসলিম দেশগুলোর নারী পাইলটরা খুশির জোয়ারে ভেসে যান। ইউরোপের আকাশে নতুন ইতিহাস লিখেছেন মাইরিয়ম।

 

পাকিস্তানের ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আয়েশা

পাকিস্তানের বিমান বাহিনীতে নারী পাইলটদের অবদান বেশ উজ্জ্বল। অনুপ্রেরণীয় এমন কজনের নাম— শুকরিয়া খানম, মালিহা সামি, আয়েশা রাবিয়া, মরিয়ম মাসুদ, শাহনাজ লঘহরি, সাবা খান, মরিয়ম মুক্তিয়ার, আশেয়া ফারুক, শরিস্তা, আইমেন আমির। তবে গত কয়েক বছর ধরে আয়েশা ফারুক ও মরিয়ম মুক্তিয়ার নাম ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। সাহসী বিমানচালক হিসেবে তাদের আখ্যায়িত করা হয়। এদের মধ্যে আয়েশা ফারুক পাকিস্তানের বিমান বাহিনীতে প্রথম যোদ্ধা নারী বৈমানিক হিসেবে আকাশে উড়িয়েছেন চেংদু জে সেভেন মডেলের আধুনিক যুদ্ধবিমান। শত্রুর ওপর নিখুঁত বোমা বর্ষণ শেষে তিনি সহকর্মীদের বলেন, এখানে নারী-পুরুষ পাইলট বলে আলাদা কিছু নেই। বোমা বর্ষণের কাজ একই রকম। সন্ত্রাসী জঙ্গিদের মাথার ওপর দিয়ে বোমারু বিমান নিয়ে ছুটে চলা আয়েশা ফারুকের জন্ম ভাওয়ারপুরে। ২০১৩ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে প্রথম নারী যোদ্ধা পাইলট হিসেবে তিনি যোগ দিলে মিডিয়ার আলোচনায় চলে আসেন। সত্যিকারের যুদ্ধক্ষেত্রে আয়েশা কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন সে নিয়ে সমালোচনা হলেও, নিখুঁত বোমা বর্ষণের পর জবাবটা ঠিকঠাকই দিয়েছেন। তার সাহসিকতা আর সাফল্যের গল্প আরও রয়েছে। আয়েশা স্কোয়াড্রন টুয়েন্টির দলনেতা হিসেবে রয়েছেন। আরও ২৪ জন পুরুষ বিমানকর্মী ও পাইলটকে নিয়ে সাজানো তার স্কোয়াড্রন। শুধু পাকিস্তান নয়, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম যুদ্ধবিমানের নারী পাইলট হিসেবে চূড়ান্ত পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হন। আয়েশা ফারুকের পাশাপাশি বলা যায়, মরিয়ম মুক্তিয়ারের কথাও। মরিয়ম পাকিস্তানের প্রথম নারী পাইলট হিসেবে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ হারিয়েছিলেন। ২০১৫ সালে প্রাণ হারানো মরিয়মের বয়স ছিল মাত্র ২৩ বছর।

 

ভারতের প্রথম মুসলিম নারী পাইলট

ভারতের প্রথম মুসলিম নারী পাইলট সারাহ হামিদ আহমেদ। তিনি এখন ইতিহাসের অংশ। ভারতীয় মুসলিম সমাজের রক্ষণশীলতাকে অতিক্রম করে তাকে জয় করতে হয়েছে এ জায়গা। ব্যাঙ্গালুরুর ২৫ বছর বয়সী এই নারী ভারতের উড্ডয়ন খাতের ৬০০ নারীর মধ্যে এ মুহূর্তে একমাত্র মুসলিম নারী, যিনি পেশাদার পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সারাহর পথচলা যে খুব মসৃণ ছিল তা বলা যাবে না। তার বাবা হামিদ হুসাইন আহমেদ বলেছিলেন, আমরা শুরুতে তাকে নিরুৎসাহিতই করেছি। আমাদের মুসলিম পরিবারের মেয়েরা আসলে এমন কোনো পেশায় যায় না যেখানে তাকে পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয়, অথবা কোনো সঙ্গী ছাড়া হোটেলে থাকার প্রয়োজন পড়ে। সামাজিকভাবেই নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয় তাকে। কিন্তু বাবা হামিদ হুসাইন মেয়ের অনড় অবস্থান দেখে এরপর কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রে তার এক পাইলট বন্ধুর সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত তিনি সম্মতি দিলে সারাহ নতুন জীবন শুরু হয়। ২০০৭ সালে সারাহর বয়স তখন ১৮। ৯/১১ এর পর যুক্তরাষ্ট্রে বিমান প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মুসলিম হিসেবে সুযোগ পাওয়া বেশ কঠিন ছিল। কিন্তু ফ্লোরিডার এক ফ্লাইং স্কুলে নির্বাচিত হন তিনি। আর এটাই তার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। এখান থেকেই উড়াউড়ির হাতেখড়ি তার। পরবর্তীতে একের পর এক নতুন, আধুনিক মডেলের বিমান উড়িয়ে কোর্স সম্পন্ন করেন তিনি।

 

ত্রিশেই বোয়িং ৭৭৭ বিমানের পাইলট

৩৯৬ জন যাত্রী নিয়ে আকাশে উড়ে বোয়িং ৭৭৭ যাত্রীবিমান। কমার্শিয়াল ফ্লাইটে যে কোনো পাইলটেরই স্বপ্ন থাকে এই বিশাল বিমানের পাইলট হওয়ার। বিশ্বের সেরা ও অভিজ্ঞ পাইলটরাই এই সুযোগ পেয়ে থাকেন। কিন্তু ত্রিশ বছর বয়সেই বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী পাইলট হিসেবে বোয়িং ৭৭৭ উড়িয়ে ইতিহাসে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন অ্যানি দিব্যা। অন্ধ্রপ্রদেশের মেয়ে দিব্যা। আকাশে উড়ার শখ তার ছোটবেলা থেকেই। মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিমান চালনার প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। স্কুলে পড়ার সময় কিশোরী দিব্যা যখন সহপাঠীদের কাছে তার পাইলট হওয়ার স্বপ্নের কথা বলত, তখন তারা হেসে উড়িয়ে দিত। তবে দিব্যার মা-বাবা মেয়ের স্বপ্ন পূরণে সহায়ক ছিলেন। তারা তাকে উত্তরপ্রদেশের ফ্লাইট স্কুল ইন্দিরা গান্ধী উড্ডয়ন একাডেমিতে ভর্তি করে দেন। দিব্যার প্রশিক্ষণ যখন শেষ হয় তখন তার বয়স মাত্র ১৯ বছর। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর পরই এয়ার ইন্ডিয়ায় চাকরি পেয়ে যান তিনি।  তাকে স্পেনে পাঠানো হয় আরও প্রশিক্ষণ লাভের জন্য। আর ফিরে আসার পর পরই তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় বোয়িং ৭৩৭ বিমান চালানোর। এরপর আর পেছনে ঘুরে তাকাতে হয়নি। ২১ বছর বয়সে তাকে লন্ডনে পাঠানো হয় প্রশিক্ষণের জন্য। এটি শেষ করে ফেরার পর থেকেই বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ চালানোর দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।

 

রাজকুমারী যখন পাইলট

দুবাই রাজপরিবারে নারী পাইলটের খবরে নড়েচড়ে বসেছে সাধারণ মানুষ। দুবাই রাজপরিবারের এক রাজকুমারী শেইখা লতিফাকে দেখা গেছে পাইলটের পোশাকে। শেইখা লতিফা ছাড়াও রাজপরিবারের আরও এক তরুণী আছেন যিনি আকাশে বিমান উড়াতে পছন্দ করেন। ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করা একটি ছবি বলছে, শেইখা লতিফা মোজা আল মাকতুম রাজপরিবারের প্রথম নারী সদস্য হিসেবে বাণিজ্যিক বিমানের পাইলট হয়েছেন।

 

 

সৌদি আরবের হানাদি আল-হিনদি

এক নারী পাইলটকে প্রথমবারের মতো আকাশে উড়ার লাইসেন্স দিয়েছে সৌদি সরকার। হানাদি আল-হিনদি নামের ওই পাইলট কাজ করছেন কিংডম হোল্ডিং কোম্পানিতে, যার মালিক হলেন স্বয়ং সৌদি প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালাল। ৩৫ বছরের হানাদি এখন কোম্পানির ছোট আকারের এবং বিলাসবহুল বিমানগুলো চালাতে পারছেন। বাবার স্বপ্ন পূরণে ২০০১-এ জর্ডানের ‘মিডল ইস্ট একাডেমি অব অ্যাভিয়েশনে’ ভর্তি হন।

%d bloggers like this: