আত্নহত্যা মহাপাপ 

আত্নহত্যা মহাপাপ আরজুমান্দ আরা বকুল

আত্মহত্যা মহাপাপ, নাকি স্বল্প পাপ,সেই বিচারে পরে আসি। আসল কথা হল,আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়। সমস্যার শুরু মাত্র। আর তাই এমন সিদ্ধান্ত নেবার আগে ভাবুন। বেশি বেশি ভাবুন।

 

আজ দুদিন হল একটি আত্মহত্যার খবর আমাকে মানসিকভাবে অনেকটাই কাবু করে ফেলেছে। অনেকটা না পারি কইতে না পারি সইতে!

 

ঘটনার কিছুটা শুনলে মনে হবে এটাই স্বাভাবিক। আসলে অস্বাভাবিকত্ব দিয়েই শুরু হয় সূচনাপর্ব।

যেমন,  অনেক ছেলের মা বাবাই মনে করেন,ছেলেরা একটু অমনই ।অমনটা কি?

 

দুষ্ট হবে, রাগি হবে, জেদি হবে, বয়সের সাথে সাথে বহুগামী হবে, যা নাকি স্বাভাবিক।

অথচ  এটি দারুণ রকম অস্বাভাবিক স্বভাব। যা শুধুমাত্র পারিবারিক ও সামাজিক স্বীকৃতির একটি মন্দ প্রভাব।

 

ফলশ্রুতিতে বাবা মা যখন অনন্যোপায়, তখন বিয়ে দাও। বিয়ে দিলে সুন্দরী বউ ঘরে এলে ঠিক হয়ে যাবে। ছেলে ভাল চাকুরি  করে এটিই তার বড় গুণ। স্বভাবের খোঁজ খবর কে নেয়। তাছাড়া স্বয়ং ছেলের মা বাবাই তো গোপন করছে নিজ দায়িত্বে। অপরাধের শুরু তো গোঁড়াতেই।

 

অতএব এইত নিয়ম মেনে, ঘটা করে বিয়ে। নম্র ভদ্র,বংশীয় এবং সুন্দরী পাত্রী পেয়ে আহ্লাদে আটখানা হয়ে ছেলের মা বাবা,বউ নিয়ে বাড়ি ফিরল।

আর ছেলে,কয়েকদিন তরতাজা লকলকে ঘাস আর কাঁঠাল পাতা হাতের নাগালে পেয়ে বেশ কচকচিয়ে খেল। জাবর ও কাটল হয়ত।

 

তারপর সব পানসে। ফিরে গেল কুস্বভাবে।

‘কি গো মা,তুমি এত সুন্দরী গুণবতী আর আমার ছেলেকে আটকাতে পারনা ?গেল সব রসাতলে! ‘

‘কি করব মা, এ তো আপনার ছেলের পুরনো অভ্যেস।অন্যের ক্ষেতে মুখ দেয়া। আপনি মা হয়ে যা পারেননি তা আমি কি করে অপরিচিত একজন হয়ে পারব বলুন ?’

 

ব্যাস,নম্র ভদ্র মেয়েটি নিমিষেই সকলের কাছে বেয়াদব হয়ে গেল। আর তাদের ছেলের পুরনো পাপের সকল বোঝা মেয়েটির ঘাড়ে চাপানো হল!

 

হায়রে মেয়ে মানুষ। তার পিতা মাতাও বুঝি খাইয়ে পরিয়ে একজন কুলাংগার ছেলের পাপের বোঝা টানার জন্য বড় করেছিল!

 

ঘরে আনা কাঁঠাল পাতা পড়ে থাকে ঘরে। শুকিয়ে বিবর্ণ হতে থাকে। আর ছাগল ছেলেটি ইউক্যালিপটাস খুঁজতে থাকে আকাশে। দিনের পর দিন মেয়েটি তার চোখ মাটিতে ফেরাতে না পেরে অভিভাবক এর কাছে বলতে বাধ্য হয় ছাগলের স্বভাবের খবর।

 

এবার আর অপবাদ নয়, এবার একটু নরম তারা।‘ কি করবে মা,ছেলে মানুষ একটু আধটু ওরকমই হয়’!..

‘তাহলে কি হবে এখন?’

 

‘বাচ্চা নাও, বাচ্চা নিলেই ঠিক হয়ে যাবে সব ‘

‘তা বাচ্চা কি একজনের?’

 

বাচ্চা তো হবে দুজন মানুষের মিলিত প্রয়াসে। সেখানেও দায় ওই মেয়ের । তা যে ছেলে পরের বাড়ির কাঁঠাল পাতা খেয়ে ঘরে ফেরে,সে কি আদৌ বাচ্চা নেয়ার জন্য প্রস্তুত আছে? মানসিক হোক আর শারীরিক হোক, ইচ্ছা এবং যোগ্যতা দুইই থাকতে হবে তো নাকি?

 

তো যাইহোক, পরিশেষে ছেলের মা বাবাকে বলব,  আপনারা পুরোনো মুল্যবোধহীন ধ্যান ধারনাকে ঝেড়ে ফেলুন।পুরুষ মানুষ এমন একটু হবেই মানে কি? আপনি নিজে সায় দিচ্ছেন তাকে ।কত বড় অন্যায় করছেন ভেবে দেখেছেন কি? কত বড় পাপকে  প্রশ্রয় দিচ্ছেন স্নেহে অন্ধ হয়ে ভেবেছেন কি?

 

আর আপনি যে অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে বড় করলেন ,তা কিনা অন্য বাড়ির মেয়ে এসে থামাবে ,এত বড় দুঃসাহস কি করে করলেন? জীবন তো একটাই নাকি? একটা মেয়ের জীবন কত কমদামি করে ফেললেন তা কি ভাবলেন? সময় আছে ভাবুন।

 

আর মেয়ের মা বাবাকে বলছি, ছেলের যোগ্যতা চাকুরি নয়, তার স্বভাবের ভাল করে খোঁজ খবর নিন। তারপরই বিয়ে দিন। আর বিয়ের পর কেমন আছে জেনে নিন ।সময় থাকতে ঘরের মেয়েকে ঘরে ফিরিয়ে নিন।জীবন একটাই,গেলে আর ফিরবেনা। আপনার মেয়ে কি অতটাই সস্তা? বিয়ে করতেই হবে,আর সে বিয়ে টেকাতেই হব! ,এত দায় কি শুধু মেয়েটির একার?

 

ভাবুন, খুব ভাল করে ভাবুন। লাল শাড়ি পরে যে মেয়েটি শশুরবাড়ি গেল দু বছর আগে ,তার কি দুবছরের মাথায় গলায় দড়ি দিয়ে অথবা বিষ খেয়ে সাদা কাফনে ফেরার কথা ছিল আপনার বাড়িতে?

আপনি কি এই চেয়েছিলেন?

 

আর হ্যাঁ ওই ছেলে কিন্ত আবার বিয়ে করবে,আবারো কোন মেয়ের কপাল পুড়বে। তার কিছুই হবেনা,সে পুরুষ মানুষ যে, একটু আধটু ওরকম থাকবেই!

 

পুনশ্চঃ এই যে মেয়েরা,হ্যাঁ তোমাদেরই বলছি। সময় থাকতে সত্য প্রকাশে সচেষ্ট হও ।বিয়ের আগেই ছেলেটির সাথে কথা বলতে চাও। তাকে বুঝে নাও।

যদি তা নাও পার, তবে বিয়ের পরও যদি তার স্বভাব চরিত্রের খবর পাও সোজা নিজ পরিবারের কাছে অভিযোগ দাও। তারা যদি না মানে তবে দেশে আইন আদালত আছে, বিচ্ছেদ দাও। তবুও আত্মহত্যার মত পরাজয় আর নয়। সে জন্যে মনের জোর চাই।হেরে গেলে হবে না,জীবন একটাই।

নিজের পায়ে দাঁড়ানো চাই।

আত্মহত্যা যেমন বিবাহ পরবর্তী জটিলতার সমাধান নয়, তেমনিভাবে  বিয়েও মেয়ে হয়ে বেঁচে থাকারএকমাত্র যোগ্যতা নয়।মানুষ হয়ে জন্ম নিয়েছ ,মানুষের মত বাঁচো। মৃত্যু আসবে তার মতো। তাকে আসার আগেই ডাকা নয় ।বোনেরা আমার মেয়েরা আমার ,এই সিদ্ধান্ত একমাত্র তোমার। তোমাকে তোমার মত করেই বাঁচতে হবে, অন্যের দয়া বা করুণায় নয়

জীবন তো একটাই।

নিজে বাঁচি, অপরকে বাঁচাই

 

 

%d bloggers like this: