আশা পূর্ণ হল না

আশা পূর্ণ হল না

‘যখন সময় থমকে দাড়ায়, নিরাশার পাখি দুহাত বাড়ায়, খুঁজে নিয়ে মন নির্জন কোন কি আর করে তখন স্বপ্ন স্বপ্ন স্বপন দেখে মন।’ নচিকেতাকে আমার ভালো লাগে, ভালো লাগে তার চিন্তা চেতনা। কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয় তার এই প্রতিবাদ  মানুষ শোনে আর ভাবে, আহারে পৃথীবিতে কত অনিয়ম হচ্ছে। কিন্তু এই ভাবনা দিয়ে না কিছুই হয় না । যে যাই বলুক ভাই ডাক্তারের ভিজিট কিন্তু ১২০০ টাকাই চাই। আগে ডাক্তার মহাশয়েরা দ্বিতীয়বার ভিজিট কম নিতেন, এখন তাও যেন নিতে চান না। সবচেয়ে বড় কথা,  তাদের টাকা ছাড়া ভাবনাতে যেন কিছুই নেই। দোকানদার যেমন খদ্দেরকে দেখে অনুমান করে আগেই বাজেট জানতে চায় । ডাক্তার মহাশয়েরাও তেমনি আগে ভাগেই রোগির অর্থনৈতিক অবস্থা টেষ্ট করে নিয়ে তারপরে চিকিৎসায় মনোনিবেশ করেন। আগে ডাক্তাররা রোগীকে বাঁচাতে চাইতো আর এখন আই,সি,ইউতে রেখে দিয়ে আত্মীয়দের টাকা পয়সা যোগাড় করার অগ্নিপরীক্ষা নেয়। এসব কারণে আত্মীয়তা পর্যন্ত এখন টিকতে চায় না। এরকম হাজারো উদাহরণ আছে, তা আর নাই বা বললাম। বর্তমানে আমাদের দেশে যে অবস্থা তাতে যে যাই বলি আর টকশোতে মেয়রদের যতই গালাগালি করি সমাধান কিন্তু কিছুই হবে না। প্রত্যেক বছর মেয়র মহোদয় ঘোষণা দেন যে, আগামী বছর বৃষ্টির পানি জমতে দেয়া হবে না। আমরাও নিশ্চিন্তে বাড়ি চলে যাই। কিন্তু পরের বছর যখন আবার পানি জমে তখন তারা আবার প্রতিশ্রুতি দেন আমরা আবার বাড়ি চলে যাই। এক সময় আমরা আশা ছেড়ে দিয়ে মনের সুখে গান ধরি, আশা পূণ হল না, আমার মনের বাসনা। 

সামনে কোরবানি ঈদ । গরু কেনাবেঁচা নিয়ে গরু ব্যবসায়ী আর ক্রেতা যতটা ব্যস্ত গরুর হাটের দালালরা তার চেয়েও বেশি ব্যস্ত । হয়ত ছিনতাইকারীও ব্যস্ত হতে চাইছে।  কিন্তু ধরা পড়লে জামিন নাই এই ভয়ে মাঠে নামছে না। এবার আসি গরুর চামড়ার দাম বিষয়ে। প্রতি বছর গরুর চামড়ার দাম যেভাবে কমছে তাতে প্রত্যেকটা চামড়া হয়ত একদিন নিজ খরচে ট্যানারিতে পৌঁছে দিতে হবে। ট্যানারী ব্যবসায়ীদের চামড়া দাম দিয়ে কিনলে পোষায় না। আবার  ট্যাাঁরী মালিকদের সস্তা দামের ফাঁকে চামড়া বেশি দামে ভারতে পাচার হয়ে যায় বলেও গুজব শুনতে পাই। এরপরে আবার সরকারি লোন ছাড়া ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনবে না। এ যেন কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা তার মেয়েকে সম্প্রদান করছে । সব কিছু ছাপিয়ে এডিস মশা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।  এডিস মশাকে ভেজাল ঔষধ দিতে দিতে এখন তাকে মশারির মধ্যে আটকে রেখে র্নিভেজাল ঔষধ দিয়েও মারা যাচ্ছে না । সে হয়ত মেয়রদের কাছে তার স্বাভাবিক মৃত্যু আশা করেছিলো অনেক আগেই। কিন্তু ভেজাল ঔষধ তাকে সে সুযোগ দেয়নি। সে জানতে চায় তার নামে বরাদ্দকৃত টাকাগুলো কেন যথাযথ প্রয়োগ হলো না। আমাদের বাড়ির মশার দায়  যেমন সিটি কর্পোরেশন নিবে না, তেমনি শহরের রাস্তাঘাট, ড্রেনের ময়লা পরিষ্কারের দায়ও আমরা নেব না। শহর বা গ্রামে যে যেখানেই থাকি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন তাকেই রাখতে হবে। তাহলে কেন আমরা সরকারকে ট্যাক্স দেব? লুটপাটের জন্য? প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান তার পূর্ববর্তী বছরের লাভ লোকসান যেভাবে হিসেব করে আবার পরবর্তী বছর তার কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে।  সরকারি কাজে যদি তেমন হয় তাহলে একটা রাস্তা ছয় মাসের মধ্যে কিভাবে নষ্ট হয়ে যায়? ব্রিজ নির্মাণ শেষ হবার আগেই কেন ভেঙ্গে পড়ে? জানি এভাবেই চলবে। তবুও তারা বলবে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যে এগিয়ে যেতে চায় তাকে যেতে দিন । কিন্তু যদি সে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে তখন তাকে লালন পালন করার মত সামর্থ্য থাকবে কি না সেটাও কিন্তু প্রশ্ন। সবশেষে কোরবানি নিয়ে বলি, দাম দিয়ে গরু নয়, মন দিয়ে গরু কিনে, মনের পশুত্বকে কেরবানি দিব এই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।  আল্লাহ আমাদের কোরবানি কবুল করুন আমিন।

ফিরোজ শ্রাবন
ফিরোজ শ্রাবন