এক কাপ চা / অপু চৌধুরী

এক কাপ চা

অপু চৌধুরী

 

মীরা বাংলা সমকালীন গদ্য সাহিত্যে গল্পকার হিসেবে পরিচিত একটি নাম। তার লেখা গল্প ঘুনপোকারা কেটে যায়, রক্তাত্ব করে আবার কখনো অবোধ আক্রোশে ফেটে পড়ে চেতনা । তার গল্পে নারীরা বড্ড ঋজু বড্ড টনটনে। খাপছাড়া তরবারির মতো।

 

এ বছর মীরা তার গল্পগ্রন্থ ‘বিশাখা এবং কয়েকজন’-এর জন্য নারী গল্পকার হিসেবে পুরস্কার অর্জন করেছেন। শিকড়ের সম্পাদক আকাশের সাথে তার অনুভূতি ও আলাপচারিতার চুম্বক অংশ পাঠকের কাছে তুলে ধরা হল।

 

আকাশ- আপনি সেরা নারী গল্পকারের পুুরস্কার অর্জন করেছেন। আমাদের পক্ষ থেকে আপনাকে ফুলেল শুভে”ছা। পুরস্কার পেয়ে আপনার অনুভূতি কেমন?

 

মীরা- আমি খুবই আনন্দিত। আমার পরিশ্রম আর কাজের মূল্যায়ন। এই  প্রাপ্তি আমাকে লেখার অনুপ্রেরণা জাগাবে।

 

আকাশ- একটি মানবিক সমাজ বিনির্মাণে প্রধান অন্তরায়গুলো কী বলে আপনার মনে হয়?

 

মীরা-অনেক কিছুই হতে পারে। এক কথায় নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। তারপর ও বলা যায়, আমাদের চেতনায় প্রোথিত বদ্ধমূল ধারণা। সে নারী হোক আর পুর“ষ হোক।

 

আকাশ- আপনার সৃষ্ট পুরুষ চরিত্রগুলো মনোযোগের অভাবে আপনার নারী চরিত্রের মতো বিকশিত হতে পারে না। সমালোচকরা বলেন, আপনি নাকী বড্ড পুরুষ বিদ্বৈষী?

 

মীরা- শুনুন, ভাবনার ও বলবার অনেক কিছুই থাকতে পারে। আমি বিষয়টিকে সেভাবে দেখি না। আমি একজন নারী। এই জন্য নারীকে আমি অন্তর থেকে উপলব্ধি করি। নারীকে জানি বলেই, নারী চরিত্র নির্মাণে আমি স্বাছন্দ্য বোধ করি।

 

কলিংবেলের শব্দে মীরা সোফা থেকে ওঠে। দরজা খুলে দেয়। সুর্দশন পুরুষ রুমে প্রবেশ করেন।

 

 আকাশ, উনি হচ্ছেন  অনিমেশ বাবু। আমার পতিদেবতা। এই তোমার আসতে এত দেরি হলো কেন? এবার প্রশ্ন করলেন মীরা তার স্বামীকে।

 

অনিমেশ- আমার কী দোষ বলো, অফিস থেকে বের হবো তখনি বস ডেকে আমাকে কিছু কাজ ধরিয়ে দিলেন। অফিসের ম্যাডামরা বস হলে, কাজ আর……….

 

মীরা- তোমার উপর ম্যাডামের নেকনজর পড়েছে। তোমাকে ওভারটাইম দেয়, ডিনার পার্টিতে নিয়ে যায়। 

অনিমেশ- কি যে বলো না তুমি। রাখো এসব কথা। অযথাই টেনশন করো।

 

মীরা-আকাশ আমরা কি বিষয়ে কথা বলছিলাম? মাঝ পথে পতিদেবতা মীরাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন,  তুমি কিচেনে যাও তো সোনা আমাদের জন্য চা-নাস্তা নিয়ে এসো। চা-টা খেলে একটু ফ্রেশ লাগবে। আকাশের নিকটে এসে চোখে চোখ রেখে মীরা বললেন, বুঝলে আকাশ যতোই চেষ্টা করো না কেন ভিতরের প্রোথিত চেতনা তাড়িয়ে তোমাকে নিয়ে যাবেই তোমাদের গন্তব্যে। তারপর হনহন করে কিচেনের দিকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন পুরস্কারপ্রাপ্ত গল্পকার।