খনা ও তার বচন

খনা ও তার বচন রক্তবীজ ডেস্ক

আজ থেকে ১৫০০ বছর পূর্বে জন্ম নেওয়া ইতিহাসের এক কিংবদন্তি ‘খনা’ বা ‘ক্ষণা।‘ কোন এক শুভক্ষণে তার জন্ম বলে নাম দেওয়া হয় ‘ক্ষণা।‘ আর ‘ক্ষণা’ থেকেই ‘খনা’ নামের উৎপত্তি বলে মনে করা হয়। খনা ছিলেন সিংহল রাজার কন্যা। কথিত আছে, খনার আসল নাম লীলাবতী। তিনি ছিলেন জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী। তাঁর রচিত ভবিষ্যতবাণীগুলোই মূলত ‘খনার বচন’ নামে আমরা জানি। খ্রিস্টীয় ৫০০ অব্দে প্রাচীন ভারতবর্ষের অবন্তী রাজ্যের রাজা ছিলেন ‘বিক্রমাদিত্য।‘ তার রাজপ্রাসাদের প্রসিদ্ধ জ্যোতির্বিদ ছিলেন ‘বরাহমিহির।‘ বরাহেরঘরে পুত্রসন্তান জন্ম নিলে নাম রাখেন ‘মিহির।‘ জন্মের পর কষ্ঠি বিচার করে তিনি দেখলেন, শিশুটির পরমায়ু মাত্র এক বছর। তাই বরাহ একটি পাত্রে মিহিরকে রেখে সমুদ্রজলে ভাসিয়ে দেন। পাত্রটি ভাসতে ভাসতে এসে উপস্থিত হয় সিংহল দ্বীপের উপকূলে। পরে রাজা তাকে তুলে নিয়ে লালন-পালন করেন এবং খনার সঙ্গে বিয়ে দেন। দু’জনই জ্যোতিষশাস্ত্রে পারদর্শিতা লাভ করেন। মিহির খনাকে নিয়ে নিজ জন্মভূমিতে ফিরে আসেন। পিতার মতো মিহিরও বিক্রমাদিত্যের রাজসভায় প্রতিপত্তি লাভ করেন। সাধারণ্যে এই ইতিহাস প্রচলিত থাকলেও, খনার জন্ম নিয়ে নানা ধরনের কিংবদন্তি চালু আছে। তার কোনটা সত্যি তা আজও সঠিকভবে নির্ণিত হয়নি।খনার বিখ্যাত কিছু বচন যা এখনো বাঙালির ঘরে ঘরে প্রচলিত…

আলো হাওয়া বেঁধো না। রোগে ভোগে মরো না। পুবে হাঁস পশ্চিমে বাঁশ। উত্তরে বেড়ে, দক্ষিণে ছেড়ে, ঘর করগে পুতা জুড়ে। অধিক খেতে করে আশ। এর নাম বুদ্ধি নাশ। মুড়ি আর ভুড়ি । সকল রোগের গুড়ি।বারো মাসে বারো ফল। না খেলে যায় রসাতল। ফল খেয়ে জল খায়। যম বলে আয় আয়। ফল খেয়ে খায় পানি। জির বলে মইলাম আমি।- জির মানে কৃমি। আম খেয়ে খায় পানি। পোঁদ বলে আমি ন জানি। শুধু পেটে কুল। ভরা পেটে মূল। খানা খায় করে শব্দ। অলক্ষী খুশী লক্ষী জব্দ। দিনে বালিশ। রাতে চালিশ। দুগ্ধ শ্রম গঙ্গাবারি, এ তিন উপকারী। ভোরের হাওয়া, লাখ টাকার দাওয়া। অক্ষর দ্বিগুণ চৌগুণ মাত্রা। নামে নামে করি সমতা। তিন দিয়ে হরে আন। তাহে মরা বাঁচা জান। এক শূন্যে মরে পতি। দুই থাকলে মরে যুবতী। তাল বাড়ে ঝোপে, খেজুর বাড়ে কোপে। মাংসে মাংস বৃদ্ধি, ঘিতে বৃদ্ধি বল। দুধে বীর্য বৃদ্ধি, শাকে বৃদ্ধি মল। তেল তামাকে পিত্ত নাশ। যদি হয় তা বারো মাস। রবিতে বিধবা হয় সোমে পতিব্রতা। মংগলেতে বেশ্যা, বুধে সৌভাগ্য সংযুক্তা। বৃহস্পতিবারে স্বামী লক্ষীবন্ত হয়। শুক্রবারে পুত্র দীর্ঘজীবি হয়। শনিবারে বন্ধা হয় জ্যোতিষির মতে। অতএব লিখি দোষ কাটিবে যাহাতে। সবল গরু গভীর চাষ। তাতে পুরে মনের আশ। গাই দিয়ে বায় হাল। দুঃখ তার চিরকাল। গরুর মুখে ঘাস পানি। হাল গৃহস্থি পরে জানি। বাপ বেটায় চাষ চাই। তদ অভাবে সোদর ভাই। কার্তিকের ঊনজলে। খনা বলে দুনো ফলে। চাঁদের সভার মধ্যে তারা। বর্ষে পানি মুষল ধারা। মাঠে গিয়ে আগে দিক নিরূপণ। পূর্ব দিক হতে কর হাল চালন। পূর্ণিমা আমায় যে ধরে হাল। তার দুঃখ সর্বকাল। তার বলদের হয় বাত। ঘরে তার থাকে না ভাত। খনা বলে আমার বাণী। যে চষে তার হবে হানি। নখানা ছখানা ভাগ্যে পাই। সাতের কাছেতেও না যাই। জাতের গরু জিহ্বা কালা। লাউ গাছে মাছের জল। ধেনো মাটিতে ঝাল প্রবল। ব্যাঙ ডাকে ঘনঘন। শীঘ্র বৃষ্টি হবে জেনো। ডাহিনে ফণী বামে শিয়াল। দহিলে দহিলে বলে গোয়ালী। তবে জানিবে যাত্রা শুভালী। হাঁচি টিকটিকির বাধা। যে না মানে সে গাধা। শুধু পেটে কুল। ভরা পেটে মূল। (ক্রমশ)

%d bloggers like this: