চৈত্রের সীমানায় বৈশাখের শুরুতে কিছুটা সময়
“মা আমার সেকেলে তাই মানুষ হতে কয়
বলুন দেখি একালে কি মানুষ হওয়া যায়,
মানুষ নামে হায়নাগুলো মানুষ ধরে খায়,
এই হায়নার ভিড়ে কি আর মানুষ হওয়া যায়?”
হ্যাঁ যায়, কারণ যারা মানুষ তারা চিরকালই মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন মানুষ। নতুন করে তাদের মানুষ হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু যারা জন্ম থেকেই আজন্ম পাপের মধ্যে পবিত্র আত্মাগুলোকে গুলিয়ে ফেলছে পাপের সীমাহীন পরিক্রমায়। পার্থিবতায় পবিত্র আত্মাগুলি কলুষিত হচ্ছে অপবিত্র ছত্রছায়ায়, চিল-শকুন যেমন করে ছোঁ মেরে তার ইচ্ছাগুলো পূরণ করে, তেমনি সমাজে চিল শকুন হায়নার মতো কিছু মানুষরূপী প্রাণি আজ মানুষের মনুষ্যত্বকে মেরে নিজেদের ইচ্ছে পূরণে সদা মত্ত। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য কথা এই যে, এ সমস্ত প্রাণিরূপি মানুষের সংখ্যা খুব কম কিন্তু তার প্রকাশ এত বেশি যে, মানুষ খারাপ শুনতে শুনতে ভালো ভুলেই গেছে। এই টানাপোড়নের সময়ে আমার দেখা একটি দল বা গোত্র এক বলয়ে অবস্থিত কিছু ভালো মানুষ যাদের না দেখলে আমার দেখা এই মস্ত বড় পৃথিবীর সরিষা কণাও দেখা পূর্ণ হতো না। আমি অবাক হয়ে যাই কত পবিত্র সেই আত্মাগুলো আসলে শুরুটা ছিলো এমন স্বনামধন্য কবি খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন যার লেখাÑ“ঐ দেখা যায় তাল গাছ ঐ আমাদের গাঁ, ঐ খানেতে বাস করে কানা বগির ছা।” এই ছড়া কবিতা পড়েনি বা শুনেনি এমন কোন মানুষ কিংবা বাঙ্গালি আছে কি না আমার যানা নেই তবে যাই হোক তাঁর মেয়ে শামসুয জাহান নূর তিনি কোন অংশে কম নয়, তাঁর লেখা অসংখ্য কবিতা গল্প ছড়া আমরা পড়েছি। অনেক ভালো লেখেন তিনি এবং একজন সাহিত্যরসিক মানুষও বটে। তার অনুপ্রেরণা এবং বকা দুটোই আমার জন্য খুবই প্রেমময় ফলপ্রসূ ও প্রেরণাদায়ক। তিনি আমার খুব প্রিয় মানুষ আমি ও তার খুব প্রিয় এক কথায় অসম বন্ধুত্ব যা প্রায় সব সময় তিনি বলেন। কিন্তু আমার মনে হয় বয়স কোন ব্যাপার নয়, ব্যাপার হলো মন মানুষিকতা আর মননশীলতা, মনের সাথে যদি মনের মিল হয়ে যায় তবে বেজে উঠে আনন্দ ঘণ্টা, সৃষ্টির শক্তি অদম্য সাহস আর দুর্বার গতি যা রোধ করার ক্ষমতা সাধারণত মানুষের থাকে না। তেমনি আমারও নেই, তাই তাঁর সাথে গড়ে ওঠে আমার অসম বন্ধুত্ব হৃদয়ের সম্পর্ক। প্রিয় সখি যাকে একদিন না দেখলে মনে হয় কত জনম তাকে দেখিনি। এক বার নয় এভাবেই বার বার যেন তাঁর সাথে দেখা হয় হৃদয়ের বন্ধনে আত্মিক মিলনে। এভাবেই তার সাথে আমার আত্মার লেনা দেনা অসম বন্ধুত্ব চলমান এরই মধ্যে একদিন তিনি আমাকে বলে বসলেন আগামী তের তারিখ চৈত্রের শেষ দিন, তুমি আমার সাথে যাবে। আমরা প্রতিবছর পুরাতন বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছর বরণ করি ডিইউ ৬৭ ক্লাব এর আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে। তিনি বলেছেন বলে কথা, আমার সব কাজ বন্ধ। আমাদের একটি সংগঠন আছে, যার নাম বাংলাদেশ নারি ও শিশু কল্যাণ ফাউন্ডেশন, যার প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আমি কামরুন্নেছা, আপা, উপদেষ্টা শামসুয জাহান নূর আপা এবং প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি শিকদার মকবুল হক স্যার আমরা প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ পালন করি সকালে পান্তা ইলিশের সাথে নাচ-গান, হই-হুল্লোর, আনন্দ-ফুর্তি, কবিতা, গল্প ও আলোচনার মাধ্যমে কিন্তু আজ সব কিছুকে উপেক্ষা করে আমি ছুটলাম তার সাথে যার জন্য হৃদয় নাচে, মনে প্রাণে দোলা লাগে আরো দোলা, নেচে ওঠে নন্দিত নন্দিনী নিপুণ নিপুণতায় তিনি আর আমি একত্রিত হয়ে তাঁর বাসা থেকে একসাথে রওনা দেব আমাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। উনি আমাকে আগের দিন বলেছিলেন যে আমি যেন ৪টার মধ্যে তাঁর বাসায় পৌঁছে যাই। অথচ আমি ৪ টার মধ্যে নয় আরো আগেই তার বাসায় চলে এলাম। আমি আসার কিছুক্ষণের মধ্যে মানিকগঞ্জের “শতমানিক” এর লেখক আজহারুল ইসলাম সেখানে আসলেন তাকে দেখে শামসুয জাহান নূর আপা তাঁর “লেখা প্রকাশনী”র ম্যানেজারকে ডেকে বললেন আজহার সাহেবকে তরমুজ কেটে দাও ম্যানেজার ফরিদ সাহেব আজহার সাহেবকে তরমুজ কেটে দিলেন। অবশ্য আপা আমাকে আরো আগে থেকেই তরমুজ খেতে বলছিলেন, কিন্তু আমার তখন তরমুজ খেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না, ভেতরে ভেতরে ভীষণ উত্তেজনা কাজ করছিল কখন আমরা রওনা দিব সেই স্বপ্নের রাজ্যে যেখানে সবকিছু রঙ্গীন সবকিছু সুন্দর, সবকিছু স্বপ্ননীল, আত্মার সাথে আত্মা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। স্বপ্নীল মানুষগুলো একত্রিত হয় সত্ত¡ার ভিতরে আত্মিকলী আত্মার বন্ধনে। সেখানেই আমার মন পড়ে আছে। মনের মধ্যে তখন টানটান উত্তেজনা কাজ করছিল ইতোমধ্যে কয়েকবার জিজ্ঞাসাও করে ফেললাম আমরা কখন যাচ্ছি উত্তরে উনি বলেছিলেন উনার এক বন্ধু আসবেন গাড়ি নিয়ে উনি যদি ৫ টার মধ্যে না আসেন তবে আমরা রওনা দেব, আমরা অপেক্ষা করছি কখন ৫টা বাজবে। অপেক্ষার সময় যেন পার হতে চাচ্ছে না। অনেক কষ্টে পাড় করলাম সেই প্রতিক্ষার সময় ৫টা বেজে গেছে অথচ যার জন্য অপেক্ষা করছিলাম তিনি এখনও আসলেন না বা জ্যামের কারণে তার আসতে আরো অনেক সময় লেগে যেতে পারে তাই আমরা আর দেরি না করে বেড়িয়ে পড়লাম। ইতোমধ্যে আজহার সাহেব একবার বলেই বসলেন “আপনারা পৌঁছাতে পৌঁছাতে তো বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাবে। যাইহোক মানিকগঞ্জের স্বনামধন্য মানিককে বিদায় দিয়ে আমরা রিকশার অপেক্ষায় লেখা প্রকাশনীর সামনে দাঁড়ালাম কিন্তু দুঃখের বিষয় একটি রিকশাও পাচ্ছিলাম না। এদিকে সময় এখন টাট্টু ঘোড়ার মতো ছুটে চলছে আমরা দুজন আস্তে আস্তে হাঁটা শুরু করলাম একটু সামনে যেয়ে যদি একটি রিকশা পাওয়া যায় সেই উদ্দেশ্যে, যদিও নূর বা বেবি আপা মানে আমার প্রাণের মানুষটির ডাকনাম বেবি। ওনি এখন ঠিকমতো দেখতে পান না সেই জন্য হাঁটতেও তাঁর খুব কষ্ট হচ্ছিল। একটু সামনে যেতেই আল্লাহর অসীম কৃপায় একটি রিকশা পেয়ে গেলাম। রিকশায় করে আমরা বাংলাবাজার পার হয়ে নর্থব্রæক হল রোড দিয়ে ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে যেয়ে উঠলাম। রিকশাওয়ালাকে বললাম, বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দিতে আমরা বাসে করে বারিধারা যাব। আগে বারিধারায় কোন বাস সরাসরি যেত না এখন “সুপ্রভাত স্পেশাল” নামে একটা বাস ছেড়েছে ঐ ভরসায় আমরা বাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম যদিও আমি কএকবার বলেছিলাম সিএনজি কিংবা রিকশায় যাওয়ার জন্য কিন্তু ওনি যেহেতু বাসে যেতে চাইলেন তাই আমি আর কিছু বললাম না। ওনাকে রিকশা থেকে নামিয়ে এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে বললামÑআপনি এখানে দাঁড়ান আমি বাসে উঠে আগে সিট নিয়ে নেই তা না হলে আমরা সিট পাবো না। যেমন কথা তেমন কাজ, আমি বাসে সিট নেওয়ার জন্য, রাস্তা পার হয়ে দ্রæত বাসে উঠে পড়লাম এবং সামনের দুইটা সিট আমাদের জন্য নিয়ে নিলাম। বাসটা ভিক্টোরিয়া পার্কের রাস্তা ঘুরে যখন তাঁর পাশাপাশি এসে পৌঁছালো তখন আমি তাঁকে বাসে উঠিয়ে নিলাম। এবার আমাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হলো ১৩ই এপ্রিল চৈত্রের শেষ দিন বুধবার আমরা যাচ্ছি। রাস্তায় প্রচুর জ্যাম, বাস ড্রাইভার একটু বুদ্ধি করে খিলগাঁও ওভার ব্রিজ এর উপর দিয়ে আসলো সময় বাঁচানোর জন্য। কিন্তু সবে তো যাত্রা শুরু, আগেই বলেছি আমরা ৫টায় রওনা দিয়েছি, এখন বাজে ৭টা আমরা খিলগাঁও ওভার ব্রিজ দিয়ে মাত্র মালিবাগ রেলগেটে এসে পৌঁছলাম রাস্তায় প্রচুর জ্যাম। জ্যাম শেষ হয় না গাড়িও আর চলতে চায় না। এভাবে আমরা এগোচ্ছি সময় চলে যাচ্ছে রাস্তা শেষ হচ্ছে না। তখন অবশ্য তিনি বার বার বলছিলেন তোমার কথা কেন যে শুনলাম না, যদি শুনতাম তাহলে হয়তো এই বিপদে পড়তে হতো না। জ্যামের মধ্যে একটু একটু করে গাড়ি চলছে আর তিনি বারবার সময়ের কথা জিজ্ঞাসা করছিলেনÑআর বলছিলেন আর কতদূর আর কতক্ষণ লাগবে। আমি তাকে সময়ের কথা বলছিলাম আর আশ্বস্ত করছিলাম যে, তিনি যেন চিন্তা না করেন রাস্তায় যেহেতু জ্যাম তাহলে শুধু আমাদের নয় সবার দেরি হবে এই বলে বার বার তাকে শান্ত¡না দিচ্ছিলাম। এভাবে কখন যে সাতটা পেরিয়ে সাড়ে সাতটা, সাড়ে সাতটা পেরিয়ে আটটা, আটটা পেরিয়ে সাড়ে আটটা বেজে গেলো তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অবশেষে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বাসের স্টার্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন ধাক্ক দিয়ে বাস চালু করতে হলো। বাস জ্যাম পেরিয়ে ধিক ধিক করে এগিয়ে যাচ্ছে আর উনি বার বার হেলপার এবং কন্টাক্টরের কাছে জিজ্ঞাসা করছেন আর কতদূর আর কতক্ষণ লাগবে। ওরা বিরক্ত বোধ করছিল কিন্তু মুরুব্বি, বলে কিছু বলতে পারছিলো না, কিন্তু এক পর্যায়ে বারবার জিজ্ঞাসা করায় বিরক্ত হয়ে বলেই বসলো আপনি চুপ করে বসে থাকেন, সময় হলে আমরাই নামিয়ে দেব। অবশেষে সেই সময় হলো সাড়ে নয়টার দিকে আমরা নতুন রাস্তায় এসে পৌঁছালাম। নতুন রাস্তায় নেমে রিকশা নিয়ে যেতে হবে কসমোপলিটান ক্লাব, ক্লাবের ঠিকানাটা বাড়ি নং-৫৯, বøক-কে, পার্ক রোড, বারিধারা, ঢাকা-১২১২। নিয়তি সেখানেও খেললো আর এক নিষ্ঠুর খেলা বাস থেকে অনেক উৎসাহ নিয়ে তাকে নামালাম ভাবলাম এবার তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে পারলেও সার্থক কিন্তু কি আর করার রিকশা তো মেলে না। উঁচু ফুটপাতের উপর তাকে দাঁড় করিয়ে আমি রিকশার জন্য চেষ্টা করছি। তিনি বাস থেকে নেমে একটু অস্বস্থি বোধ করছিলেন। একে তো সময় নেই তার উপর রিকশা পাচ্ছিলাম না, তাই আমি উদভ্রান্তের মতো রিকশা খুঁজছিলাম হঠাৎ করে আমার ডান পায়ে হোঁচট লেগে একটা নখ উল্টে যায় আমি পড়ে যাই রাস্তায়। আমার এ অবস্থা দেখে এক স্বহৃদয়বান ব্যক্তি আমাদের উপকারের জন্য এগিয়ে আসেন। তিনি একটা রিকশাওয়ালাকে এক পর্যায় জোর করে আমাদের জন্য ঠিক করলেন এবং রিকশাওয়ালাটাও ভাল ছিল বিধায় রিকশাটা ঘুরিয়ে উঁচু জায়গায় এনে দাঁড় করালেন আমি এবং সেই সহৃদয়বান ব্যক্তি মিলে আমরা দুজন তাঁকে ধরে রিকশায় উঠালাম। আমি ওই ব্যক্তিকে ধন্যবাদ জানালাম আর বেবি আপা তার মাথায় হাত রেখে দোয়া করে দিলেন। অবশেষে আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হলাম কিন্তু ঘড়িতে তখন ফেরার সময় হয়ে গেছে। যাই হোক যখন ৬৭ ক্লাবের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য কসমোপলিটন ক্লাবে এসে হাজির হলাম তখন অনুসন্ধান ডেক্সে যিনি বসেছিলেন তিনি আমাদের বললেন, লিফটে তিনতলায় নামবেন ওখান থেকে এক সিঁড়ি উপরে উঠবেন ওখানেই অনুষ্ঠান হচ্ছে। আমরা ওনার কথামতো লিফটে ৩য় তলায় নেমে আরও এক তলা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যখন ৬৭ ক্লাবের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে পৌঁছলাম তখন কি যে ভাল লাগলো আমার কেমন করে বলি। আমি প্রথমে বিস্মিত হলাম একটু হকচকিয়ে গেলাম কারণ ৬৭ ক্লাব সম্পর্কে আমার কোন ধারণাই ছিল না কেমন যেন গুলিয়ে ফেলছিলাম। কি যে আন্তরিকতা সবার ভেতরে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মধ্যবয়সী নয় শেষ বয়সে এসে হাজির হয়েছেন সবাই। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো এই যে, সবাইকে দেখে মনে হচ্ছেÑসদ্য ফোটা গোলাপের ন্যায় বালকগুলো এইমাত্র সতের পেরিয়ে আঠারোয় পা রেখেছে, লকলকে যৌবন, যত্রতত্র ছোটাছুটি অশান্ত বালকের ন্যায়, তারুণ্যের উন্মাদনায় সৃষ্টির উল্লাসে। বালিকাগুলো সদ্য ষোড়শী প্রতিমাকেশী পদ্মলোচন হরিণীর মতন। নীয়ন আলোয় কি ভাল লাগছে তাদের বলতে উপমা পাচ্ছি না। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে তাদেরকে অবলোকন করছি আর ভাবছি। যার সাথে এসেছি তাকে ৭০ বছরের মহিয়সী নারী বলে জানতাম আজ দেখছি সত্তর নয় সতেরও নয় সদ্য ষোড়শী যত দেখছি ততই অবাক হচ্ছি। বিস্ময়ে আমার দু’চোখ স্থির হয়ে যাচ্ছে যে দিকে তাকাই সে দিকেই আটকে যাচ্ছে চোখ। চোখ যেন চোখ নয় এক নতুন পৃথিবী দেখার যন্ত্র সেই যন্ত্র আমি পেয়ে গেছি, যন্ত্রের মাধ্যমে একটি নতুন পৃথিবী দেখছি। সত্যি আমি চিন্তা করতে পারছি না এই বয়সের বালক বালিকারা যেমন করে আনন্দ উল্লাস কোরে, নাচানাচির মাধ্যমে, একটি বছরকে বিদায় দিয়ে আর একটি নতুন বছরকে বরণ করে তাদের চেয়ে কোন অংশে তারা কম নয় বরং একটু বেশিই বটে। যারা হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা দিয়ে বর্ষবরণ উদযাপন করছেন, তাদের সবার নাম আমার জানা নেই থাকলেও লিখবো না কারণ তাদের নাম লেখার সাহস আমার নেই আমি শুধু শ্রদ্ধা আর ভালবাসার দাবিতে সাহস স য় করে এতটুকু লিখলাম মাত্র। আগেই বলেছি ডিইউ ৬৭ ক্লাব সম্পর্কে আমার কোন ধারণা ছিল না তাই আমি নূর আপার কাছে জানতে চাইলাম ডিইউ ৬৭ ক্লাব কি? ওনি তখন আমাকে বিস্তারিত বললেন। আর আমি তা শোনার পরে আরো আশ্চর্য হলাম, আরো বিমোহিত হলাম, আরো বিস্মিত হলাম আর ভেতরে ভেতরে আরো আন্দোলিত হলাম এবং ভাবছিলাম আল্লাহ যদি সত্যি সত্যি এদেরকে ১৬-১৮ বছরের বালক বালিকা করে দিতেন তাহলে হয়তো এ পৃথিবীতে আরো কিছু ভাল কাজ করা সম্ভব হতো। আরো কিছু মানুষ আলোর পথ দেখতে পেত, যারা এখনো অন্ধকারে ডুবে আছে। এতসব আলোকিত মানুষ যাদের হৃদয় ভরা আলো সে আলোয় স্নান করার সৌভাগ্য এখনো যাদের হয় নাই, যারা বি ত তাদের এ আলোয় আলোকিত হওয়া দরকার। যারা অন্ধকারে ডুবে হাবুডুবু খাচ্ছে তাদের বাঁচানো দরকার। যারা আলোর মিছিলে আলোকিত মানুষ তাদের আলো ছড়িয়ে যাক দেশ থেকে দেশান্তরে। যারা বন্দি হয়ে আছে অন্ধকারে তারা এবার মুক্ত হোক। তাদের আলোর বন্যায় ভেসে যাক সমস্ত অন্ধকার। তাদের আলোয় আলোকিত হোক বিশ্বভুবন। আলোকিত হোক অন্ধকারে বন্দি থাকা সমস্ত মানুষ। দূর হয়ে যাক সমস্ত অশুভ অন্ধকার। সৃষ্টি হোক মুক্তির পথ। পথ হারা মানুষেরা পাক পথের দিশা। আমার সৌভাগ্য যে আমি তাদের খুব কাছাকাছি যেতে না পারলেও যতটুকু তাদেরকে দেখেছি তাতে আমার জনম সার্থক হয়েছে তারা সবাই এত নিবেদিত প্রাণ, এত প্রাণবন্ত এত সাহসী এত সুন্দর এত সুভাসিত যে আমি মুগ্ধ। এবং নিজেকে তৈরি করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি তাদের কাছ থেকে সামান্য কিছু নিতে পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কিছু তো দিতে পারবো সেই প্রত্যাশায় আমি প্রতিজ্ঞা করলাম, এই আলো থেকে আমাকে আলো নিতেই হবে। আমি দুএকজন ম্যাডামের একটু কাছাকাছি যওয়ার চেষ্টা করলাম, তখন আরো আন্দোলিত হলাম আরো বেশি অবাক হলাম আরো আশ্চর্য হলাম যে, তাঁরা কত সহজে আমাকে আপন করে নিলেন, আমার ভীষণ ভাল লাগছিল তখন। কারণ আমি এত যে কষ্ট করে এখানে এলাম, আগেই বলেছি রাস্তায় আমার একটা নখ উল্টে গিয়েছিল। একটা নখ উল্টানোর ব্যথা যেন তেন ব্যথা নয়, তবে আশ্চর্যের বিষয় হল সেই উল্টানো নখ অসহ্য ব্যথা এবং সদ্য রক্ত বন্ধ হওয়া আঙ্গুলের কথাও আমি ভুলে গেলাম। এক পর্যায়ে গানের তালে তালে তাদের সাথে নাচতে শুরু করলাম। আমি যেন এক নতুন ভুবন পেয়ে গেলাম। মনে হচ্ছিল প্রত্যেকের সাথে যদি একটু সময় কাটাতে পারতাম তবে আমার খুব ভাল লাগতো। কিন্তু দুর্ভোগের বিষয় হলো আমাদের অনেক দূরে যেতে হবে সেই বাংলাবাজার। তাই নূর আপা আমাকে তাড়া করলেন যাতে করে তার বান্ধবীর গাড়িতে আমরা কিছুটা পথ এগিয়ে নিতে পারি। সেই জন্য আমি খাওয়া দাওয়া ফেলে তাড়াতাড়ি তার সাথে বের হয়ে এলাম। আমরা লটারির টিকিট কিনেছিলাম কিন্তু তার ড্রও দেখার মত সময় ছিল না আমাদের হাতে নাই। এক ম্যাডামের হ্যাজব্যান্ড এর সাথে নিচে দেখা হয়েছিল উনি উপরে যাচ্ছিলেন তখন টিকিট দুটো তার হাতে দিয়ে বলেছিলাম ড. রওশন আরা ম্যাডামের কাছে যেন দয়া করে পৌঁছে দেন। তারপর আমরা মাহফুজা খানম ম্যাডামের গাড়িতে করে ইন্দ্রিরা রোড পর্যন্ত এসেছিলাম, উনারও খুব তাড়া ছিলো কারণ পরের দিন উনার অনেকগুলো প্রোগ্রাম ছিলো তার উপর উনি ১৫ দিনের জন্য বিদেশ যাবেন সেই ব্যস্ততার জন্য ওনি আমাদের ইন্দ্রিরা রোডেই নামিয়ে দিলেন। আমরা একটি সিএনজি করে ইন্দ্রিরা রোড থেকে বাংলাবাজর চলে এলাম। বাংলাবাজার চলে এলাম। যখন সিএনজিতে ছিলাম তখন মোবাইলে অনেকবার ফোন আসছিল। বর্ষবরণের শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য। প্রথম যে কলটা রিসিভ করে বর্ষবরণের শুভেচ্ছা আদান প্রদান করেছিলাম তিনি হলেন একজন হাফেজ সাহেব আমার ছোট ভাই কিন্তু আমাদের পরিবারের সাথে তার সম্পর্ক বন্ধুর মত তিনি হলেন হাফেজ মোহাম্মদ সানোয়ার হোসেন তার সাথে কথা শেষ করে আমি আমার মোবাইললের রিংটোনটা অফ করে রাখি। এই রাখাই সারাদিন বহাল তবিয়তে ছিল। যাইহোক নূর আপাকে তার প্যারীদাস রোডের বাসায় নামিয়ে দিয়ে যখন আমি আমার বাসায় পৌঁছলাম তখন রাত পৌঁণে ১টা। আমার হ্যাজব্যান্ড অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন ইতিমধ্যে কয়েকবার ফোন করেছেন কখন আমি ফিরবো। যদিও যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিলাম আমাদের ফিরতে দেরি হবে। তাই অপেক্ষা করছিলেন। আমি কলিংবেল টিপলাম তখন আমার প্রাণের মানুষটি বর্ষবরণের সাথে সাথে আমাকে বরণ করে নিলেন তার দেওয়া উপহারের মাধ্যমে। এই স্মৃতি আমি যেন আমরণ লালন করতে পারি সেই আশা ব্যক্ত করে সকলের শুভ কামনা প্রার্থনা করে নববর্ষকে হৃদয়ে গ্রহণ করে সকলের মঙ্গল কামনায় আগামির পথযাত্রী। পরে অবশ্য জানতে পেরেছিলাম আমাদের সেই লটারিতে আমরা প্রাইজ পেয়েছিলাম যদিও সেটা এখনো হাতে পাই নাই কিন্তু সেদিন গিফট হিসেবে দুজন লেখকের ৩টি বই আমরা হাতে পেয়েছিলাম। বই তিনটি পড়ে আমি আরো বেশি অনুগত হয়ে গেছি তাদের প্রতি। আগুনঝরা সেই দিনগুলি পড়ার পর আমি বেবি আপাকে বলেছি যদি ওনি অনুমতি দেন তবে মুক্তিযুদ্ধের নাটক হিসেবে আগুনঝরা দিনকে আমরা “নারী ও শিশু কল্যাণ থিয়েটার” (ঘঙঝঞ) থেকে মুক্তিযুদ্ধ অবলম্বনে নাটক “আগুনঝরা দিন” ম ায়ণ করতে পারি। নাট্যরূপ আমি নিজেই দিতে পারবো। ওনি বলেছেন হায়দার সাহেব মানে বইটির রচয়িতা ওনার সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করবেন সর্বোপরি ডিইউ ৬৭ ক্লাবের সভাপতি যিনি চিরসবুজ তার চেহারায় বয়সের কোন ছাপ নেই, সাদা চুলের অনিন্দসুন্দর চিরসবুজ চিরতরুণ চিরযুবক, সংগ্রামী নেতা চিরপ্রেমিক প্রেমময় উপস্থাপনা বার বার হৃদয় টানে আমি আন্দোলিত হই অভিভ‚ত হই আর বার বার তাঁর প্রেমে পড়ি। আর যিনি পুরো অনুষ্ঠানটা স ালনা করেছিলেন তার কথার যাদু দিয়ে, তিনি আর এক জাদুকর হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো। তার অপূর্ব সুরেলা কণ্ঠ বাচনভঙ্গি এবং কি আশ্চর্য এক ব্যঞ্জনায় তার নাক মুখ চোখ একসাথে কথা বলে। অপূর্ব যাদুকর যাদুর ছোঁয়ায় মন কেড়ে নেয়। হৃদয়ের খাঁচা থেকে, কিভাবে মনকে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে আনতে হয় তা তিনি ভাল করেই জানেন, কি এক অপরূপ ভঙ্গিমায় পুরো অনুষ্ঠানটা তিনি মাতিয়ে রেখেছিলেন তা বর্ণনা করার ভাষা আমার জানা নেই। সর্বোপরি সকলের এক অতৃপ্ত প্রেমে আমি হাবুডুবু খাচ্ছি। স্মৃতির পাতা থেকে একটি মাস অতিবাহিত হয়ে গেল, তবুও তাদেরকে ভুলতে পারছি না। ইতিমধ্যে নূর আপার মুখে মালেকা আপার নাম বহুবার শুনেছি বহু প্রসঙ্গে কিন্তুতাকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয় নাই তাই আগামিতে যাতে তাকে দেখতে পাই সেই ইচ্ছাও মনে মনে পোষণ করছি। আর এই অনুভ‚তিটাকে স্মৃতির এ্যালবামে রাখার জন্য লেখার সাহস দেখালাম। পরিশেষে প্রতিনিয়ত প্রতিক্ষায় রইলাম, ডিইউ ৬৭ ক্লাব এর সদস্যদের আগামি বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে তাদের জ্ঞানভাÐারে হাবুডুবু খাওয়ার প্রত্যাশায়। সকলের প্রতি শ্রদ্ধা ভালবাসা এবং কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে তাদের সকলের মঙ্গল কামনায় আগামীর প্রতীক্ষায়।
Facebook Comments Sync