দীপু আর ছোট্ট চড়ুই (২) – অনুপা দেওয়ানজী
দীপু ঘরে এসে দুধের মগটা মার হাত থেকে নিয়ে এক ঢোঁক দুধ খেয়েই মগটা নামিয়ে রেখে হাত দুটো দুদিকে ছড়িয়ে চোখ বড় বড় করে বললো, জানো মা একটু আগেই কাঁঁঠাল গাছে অ্যাত্তো বড় বড় দুটো কাঠবেড়ালি দেখেছি। ওরা না ওদের কানগুলিকে খাড়া করে চারিদিকে কি যেন খুঁজছিলো।আচ্ছা মা ওরা কাঁঠালগাছে অমন করে কি খুঁজছিলো বলতো?
দীপুর মা দুধের মগটা দীপুর মুখের কাছে আবার তুলে ধরতেই সে বাঁ হাত দিয়ে মগটাকে সরিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ওরা চড়ুই পাখির বাচ্চাগুলিকে মেরে ফেলবে নাতো মা?
দীপুর মা দীপুকে দুধটা খাইয়ে দিতে দিতে বললো, না মারবে না। চিল বা বাজপাখিদের ছোবল থেকে বাঁচার জন্যে কাঠবেড়ালিরা চড়ুই পাখিদের কথা আড়ি পেতে শুনতে আসে । কারণ চড়ুই পাখিরা আগে থেকেই বুঝতে পারে কোন বিপদ আসছে কিনা?
গল্প করতে করতে মা তাকে দুধটা খাইয়ে দিয়ে বললো , নাও এবারে পড়তে বোস দীপু।
দীপু মার কথায় লক্ষীছেলের মতো পড়তে বসলো বটে কিন্তু আজ তো দীপুর স্কুল ছুটি। মাটা যে কি? ছুটির সময়েও পড়তে বসা চাই। বাবারও তো আজ অফিসের ছুটি। বাবা তো ঠিক বন্ধুদের সাথে গল্প করতে গেছে? বড়রা একদম ছোটদের মনের কথা বুঝতে চায় না।
দীপু মন খারাপ করে পড়ার টেবিল ছেড়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো।
কাজের মাসির মেয়ে মুন্নি উঠানে ঘুরে ঘুরে কি একটা ছড়া বলছে । ছড়াটার মাথামুন্ডু কিছু বোঝার উপায় নেই। দীপুর ভারি হাসি পেয়ে গেলো ছড়াটা শুনে,
শ্যামের ঘড়া ভাইংগেন না।
শ্যামের ঘড়া ভাইংগেন না।
শ্যাম যাইবো নদীর পাড়
নিয়া আইবো সামবা পুর
আসল জামাইর আনন্দ
নকল জামাই ব্যাধির বান।
সামবা পুর আবার কি? আসল জামাই বা নকল জামাইই বা কি?
মাকে জিজ্ঞেস করতে হবে।
তবে মুন্নিকে তার ভারি হিংসে হয়।লেখাপড়া নেই।সারাদিন মার সাথে সাথে এ বাড়ি ওবাড়ি বেড়ায়।
না, দীপু কিছুতেই আজ পড়ায় মন দিতে পারবে না। পড়ার বই বন্ধ করে সে জানালার কাছে এসে জানালার শিক ধরে দাঁড়িয়ে রইলো।
আকাশটা আজ কেমন যেন মুখটা গোমড়া করে রেখেছে। দূরে বড় বড় গাছগুলিকেও কালো কালো ছায়ার মতো দেখাচ্ছে। এই সময়টা তার বড্ড মন কেমন করে। ঝড় আসবে নাতো আবার?
ঝড়ের কথা মনে হতেই তার চড়ুই পাখির কথা মনে হল। যদি সত্যি সত্যি ঝড়, বৃষ্টি আসে তাহলে চড়ুই পাখিগুলি কাঁঠাল গাছে ভিজে যাবে নাতো?
আবদুল চাচা না ওটা? হাতে একটা পাচনবাড়ি নিয়ে গরুর পেছন পেছন ছুটছে যে? দীপু একথা ভাবতে ভাবতেই দেখে আকাশে কালো কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে । জোরে জোরে বাতাস বইছে। দূরের ওই গাছগুলি প্রবল বেগে মাথা ঝাঁকাতে শুরু করেছে।
কাজের মাসি ছুটে এসে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করতে করতে বললো, অ দীপুদাদা জানালা থাইক্যা সইরা আস দিকিনি। ঘরে যে বিষটি ঢুইক্যা সব ভিইজ্যা যাইতাছে।
রান্নাঘর থেকে খিচুড়ির গন্ধ ভেসে আসছে। মা নিশ্চয় আজ খিচুড়ি রাঁধছে। দীপু জানালার কাছ থেকে সরে গিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখে সত্যিই মা খিচুড়ি রাঁধছে। আগুনের আঁচে মার মুখটাকে কী সুন্দর দেখাচ্ছে। ঠিক যেন দুগগা প্রতিমার মতো।
Facebook Comments Sync