দীপু আর ছোট্ট চড়ুই ৩ – অনুপা দেওয়ানজী

দীপু আর ছোট্ট চড়ুই ১ - অনুপা দেওয়ানজী 

দীপু এসে দু’হাতে মাকে জড়িয়ে ধরতেই মা জিজ্ঞেস করলো, কিরে! বসতে না বসতেই পড়া হয়ে গেলো?

দীপু বললো, আজ আর পড়তে ইচ্ছে করছে  না মা।

মা বললো, তা আর ইচ্ছে করবে কেন? সারাদিন তো চড়ুই পাখির চিন্তায় তোর ঘুম আসে না।

দীপুর ইচ্ছে ছিলো মাকে বলে, একবার কাঁঠালগাছের নিচে গিয়ে চড়ুইপাখিগুলিকে দেখে আসবে কিনা? কিন্তু  মার এ কথার পরে তার আর সেকথা জিজ্ঞেস করার সাহস হল না।

দীপু  জানে একথা জিজ্ঞেস করলেই মা সাথে সাথে নির্ঘা’ বলে উঠবে, একদম না। ঝড় আসতে পারে দীপুসোনা। এই সময়ে বাড়ির বাইরে এক পাও দেবে না।

মা তাকে যতই আদর করে দীপুসোনা বলুক না কেন  দীপু মনে মনে বিরক্ত হয়ে ভাবে মাটা যে কি? এখনো তাকে সোনা, মনি  এসব বলে ডাকার দরকার কি? সে কি এখন আর ছোট আছে?এই তো সেদিন তার বন্ধু সাইদের সামনেই তাকে দীপুমনি বলে ডেকে তার প্রেস্টিজটাই পাংচার  করে দিয়েছে। আর সাইদটাও এমন পাজি পরদিনই কথাটা অন্য বন্ধুদের বলে দিতেই সবাই তাকে, দীপুমনি, দীপুমনি বলে খেপাতে লাগল।দীপুমনি যে মেয়েদের নাম মা কি জানে না?

দীপু রান্নাঘর থেকে আবার তার পড়ার ঘরে এসে জানালাটা ফাঁক করে বাইরের দিকে তাকালো।

পুকুর পাড়ের বাঁশবনটা থেকে হাওয়ায় কেমন যেন মটমট  আওয়াজ ভেসে আসছে।

বাবার আসতে আজ এত দেরি হচ্ছে কেন?আজ তো ছোটমামার কলেজও ছুটি।ছোট মামারও আসার কথা। মা তো সেজন্যেই খিচুড়ি রাঁধছে । খিচুড়ি দীপুও খুব ভালোবাসে। কিন্তু এই ঝড়ের মধ্যে মামা যদি

না আসে?

ঠিক এমন সময়ে সে দেখে বাবা আর ছোটমামা দুজনেই হন্তদন্ত হয়ে বাড়ির দিকে আসছে।

ছোটমামাকে দেখেই দীপু দৌড়ে তার পড়ার ঘর ছেড়ে  বেরিয়ে এলো।

আর তাকে পায় কে?ছোটমামার ভাঁড়ারে যে কত গল্প আছে তার কোন হিসেব নেই।

আগে দীপু খুব ভূতের ভয় পেতো।ছোটমামাই  গল্প বলতে গিয়ে তাকে বলেছে ভূত বলে কিছু নেই।এও বলেছে দেব,দানব,রক্ষ,যক্ষ,পরী,গন্ধর্বের যেসব গল্প পড়িস তারাও আসলে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মানুষ। এসব নাম আসলে তাদের গুণ বা পেশার  পরিচয়।যেমন যক্ষরা ছিলো খুব ধনী, গন্ধর্বরা ছিলো নাচ-গানে দক্ষ। কারণ তখন না ছিলো কাগজ,না ছিলো ফোন বা টিভি।তাই তাঁরা মুখে মুখে এসব সংকেতেই তাঁদের পরিচয় দিতেন। অজ্ঞ লোকেরা সেগুলিকেই নিজেদের মতো করে কল্পনায়  অনেক কিছু বানিয়ে নিতো আর তাতেই নানা রহস্যের সৃষ্টি হত।

বাবা ঘরে ঢুকেই বললো, মনে হচ্ছে জোর বৃষ্টি নামবে। এ কথা বলতে না বলতেই মেঘের গুড় গুড় শব্দ শোনা যেতে লাগলো । আর সেই সাথে শুকনো ধুলাবালি নিয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে   বাতাস সশব্দে আছড়ে পড়তে লাগলো। সেই সাথে বলা কওয়া নেই আচমকা টিনের চালে হুড়মুড়িয়ে শিলা বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।

দীপুদের বাড়ির জানালায় আকাশ থেকে সজোরে ছুটে এসে  পড়তে লাগলো সেই শিলা। দীপু জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে সারা উঠান, বারান্দা সব সাদা হয়ে যাচ্ছে বরফের টুকরাতে । এমন সময়  বিজলি চলে যেতেই পুরো বাড়িটা অন্ধকার হয়ে গেলো।

দীপুদের বাড়িতে আই পি এস নেই। মা বড় বড় মোমবাতি খাবার টেবিলে  জ্বালিয়ে দিয়ে তাদের খেতে ডাকছে।

দীপু জানালার ফাঁকে মুখটা বের করে  শিকে গাল চেপে সেই বরফের দিকে তাকিয়ে রইলো।

তার খুব ইচ্ছে করছে ওই বরফ কুড়িয়ে ঘরে নিয়ে আসে। সে জানালা থেকে সরে এসে ছোটমামাকে এ কথা বলতেই মামা বললো,  বরফ কুড়াবি? চল কুড়িয়ে আনি।