দুপুরচন্ডির প্রতীক্ষা পর্ব ৮

দুপুরচন্ডির প্রতীক্ষায় আফরোজা অদিতি

     একটা লোন প্রোপজাল তৈরি করছিল ইথিকা। আজকেই ডিজিএম সাহেবের কাছে দিতে হবে। পাঠাতে হবে হেড অফিসে। পার্টি এসে তাগাদা দিয়ে গেছে। খুব নাকি প্রয়োজন তার। ক্যাশ ক্রেডিট লোন। লোন প্রোপজাল তৈরি করতে গিয়ে দেখে জমি মর্টগেজ রাখবে পার্টি তার সব কাগজ পত্রের ঠিক নেই। প্রোপজাল সরিয়ে রাখে ইথিকা। ড্রয়ার থেকে কার্ড বের করে পার্টিকে টেলিফোন করে আসতে বলে তাকে। কি কি কাগজ পত্র লাগবে তার একটা লিস্ট দিয়ে দিবে। কাগজপত্র ঠিক না হলে প্রোপজাল রিগ্রেট হয়ে যাবে।

পার্টির সঙ্গে কথা শেষ করে ফোন রাখতেই কথাগুলো কানে আসে ওর।

: ডিজিএম সাহেবেরে চেম্বার কোনটা?

মুখ না তুলেই হাতের ইশারায় দেখিয়ে দেয় ইথিকা।

চেম্বার দেখানেরা পরেও প্রশ্নটা করে প্রশ্নকারী। মুখ তোলে ইথিকা।

: আরে তুমি! বিস্মিত ইথিকা।

রাকিব।

ওদের গ্রামের ছেলে। প্রায় চার বছর পর দেখা। পড়তো ওর দুই ক্লাস ওপরে। পাশাপাশি বাড়ি। দুজনে বন্ধুর মতো।

: আরে,  বস। সামনের চেয়ার দেখিয়ে দেয় ইথিকা।

: কি ব্যাপার। ব্যাংকে এসেছ যে…’

: জয়েন করতে এসেছি। রাকিব বলে। 

: কেন, আগের অফিস? 

: ঐ চাকরি তো ছেড়েছি কবেই। এতদিন রাজশাহী রিজিওনাল অফিসে ছিলাম। আজ এখানে।

বিস্মিত ইথিকা প্রশ্ন করে,

: অতো ভাল চাকরিটা ছাড়লে কেন’

: এমনি। সাদামাটা ভাবে কথা বলে রাকিব।

    ঐ চাকরিটা ভাল লাগেনি রাকিবের। ভাল লাগেনি শুধু ইথিকার জন্য। ইথিকা জানে না রাকিব ভালবাসে ওকে। যেদিন রাকিব চাকরি পেয়ে ওর কাছে চাকরির খবর আর বিয়ের প্রস্তাব দিতে এসেছিল তার দুই দিন আগেই বিয়ে হয়ে ছিল ইথিকার।

রাকিব কিছু বলার সুযোগ পায়নি। বিয়ের পর মাত্র একবার দেখা হয়েছিল নিউ মার্কেটে। ওকে ছাড়া রাকিবের দিন অসহ্য হয়ে উঠেছে। যত দিন যত সময় যাচ্ছে বুকের ভেতর শূন্যতা ততই বাড়ছে। কেবলই মনে হয় ইথিকাকে একবার না দেখলে ওর প্রাণটা চলে যাবে ছোট এই বুকের খাঁচা ছেড়ে। ওর এই ছোট প্রাণটার কোন মূল্যই নেই ইথিকাকে ছাড়া। 

     রাকিবের শুধু মনে হয় ইথিকাকে ছাড়া ওর জীবন অর্থহীন! ওকে ছাড়া ও এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে যেখান থেকে মাটি দেখা যায় না, সব শূন্য গহবর আর অন্ধকার, শুধুই অন্ধকার খাদ। এই জীবন থাকা না থাকায় কোন পার্থক্য নেই ও ছাড়া! রাকিব ইথিকার মুখে চেয়ে থাকে; ভাবে; নিজের মনেই কথা বলে, ইথিকা তোমাকে ভালবাসি ভালবাসি। শুধু তোমার জন্য আমি এসেছি এখানে। কোথাও ভাল লাগে না। তোমার স্বামী, সংসার আছে, আছে ছেলে,  তবুও আমি তোমাকে চাই। অনেক যুদ্ধ করেছি ইথিকা কিন্তু হেরে গেছি আমি। যতই ভাবি মনে করবো না তোমার কথা, চলে যাব অনেক দূরে তোমাকে ছেড়ে ততোই ফিরে আসতে হয় তোমার কাছে। ফিরে আসি বারবার।

ইথিকার পিয়নকে ডেকে চায়ের অর্ডার দেয়। নিয়ে যেতে বলে ডিজিএম সাহেবের চেম্বারে। ইথিকার কথায় কেটে যায় ভাবনার রেশ।

 রাকিব প্রিন্সিপাল অফিসার।

ডিজিএম সাহেবের সঙ্গে দেখা করে এসে ইথিকার সঙ্গে চা খায় রাকিব। তারপর কাজ বুঝে নেয়। ওকে কাজ বুঝিয়ে দেয় এজিএম একরাম উল্লাহ। এটা ব্যাংকের শাখা অফিস। ব্যাংকের শাখায় নানা ধরণের কাজ। এখানে বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগে এলসি খোলা হয়।

আমদানি-রফতানির লেনদেন হয়। ব্যাংক গ্যারান্টি হয়। আছে জেনারেল ব্যাংকিং। নগদ অর্থ আদান-প্রদানের জন্য ক্যাশ-সেকশন আছে, আছে-বিলস সেকশন, ঋণ-দান সেকশন। ব্যাংকের নানা রকম কাজের মধ্যে রাকিব পায় ঋণ-দান সেকশনের কাজ। ইথিকা ঋণ-দান সেকশনে কাজ করে; রাকিবও যুক্ত হয় সেখানে। 

     রাকিব আগে কাজ করতো একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে। সেখান থেকে ব্যাংকের এ্যাডভারটাইজমেন্ট দেখে ইন্টারভিউ দেওয়ার পরই চাকরি হয়ে যায় ওর, কিন্তু প্রথম জয়েনিং হয় রাজশাহী রিজিওনাল অফিসে। রিজিওনাল অফিস, হেড অফিস থেকে শাখা অফিসের কাজ সম্পূর্ণ ভিন্ন। রাকিবের প্রথম প্রথম বুঝতে অসুবিধা হলেও, ইথিকার সাহায্যে এক সপ্তাহের মধ্যেই সবকিছু শিখে যায় ও।

কাজ করে ভাল, ডিজিএমসহ সকলেই খুশি ওর ওপর। রাকিবেরও ভালই লাগে এই প্রশংসা। প্রশংসা পেলে মানুষের কাজ এগোয় ভালো। রাকিবেরও তাই। মন দিয়ে কাজ করে রাকিব।

     অফিসে খুব কাজের প্রেসার গেছে আজ। অফিস থেকে ফিরে কাপড় চোপড় চেঞ্জ না করেই রাহাকে ডাকে ইথিকা।

: রাহা, রাহা।

: রাহাতো নাইকা ভাবী। দাদা নিয়ে গেছে।  হাসুনির কথায় ওর দিকে ফেরে ইথিকা। বলে,

 : কোথায় নিয়ে গেছে? আর তোর ভাইজান আসেনি।

: না ভাবী

   চলে যায় হাসুনি। 

 

     ইথিকা শুয়েই থাকে, ওর ভাল লাগেনা। রাহাকে ডাকলে কাছে পায়না। এই রকম অবস্থা চলছে সেই রাহার জন্মের পর থেকেই। কিন্তু আজ ওর কষ্ট হয়, ক্ষোভ হয়। কষ্টে দুঃখে চোখে জল আসে। কতক্ষণ কাঁদে। 

: কি ব্যাপার শুয়ে আছে যে?  একটু চা কর খাই।

 কাপড় চেঞ্জ করতে করতে বলে তমিজ। ইথিকা শুয়ে থাকে; উঠতে ভালো লাগে না। শুয়ে থেকেই হাসুনিকে ডেকে বলে,

 : হাসুনি। এই হাসুনি চা কর। 

: তুমি উঠতে পারছো না, চা বানাতে পারছো না! কী রাজকার্য করে এসেছ শুনি? 

 তমিজের কণ্ঠে ঝরে পড়ে রাগ। 

: আমার ভালো লাগছে না। তমিজের কথায় রাগ হলেও কোন কথা বলে না ইথিকা। 

হাসুনি চা দিয়ে যায়। তমিজ চা না খেয়ে চলে যায়। হাসুনিকে চা দেওয়ার কথা বলা পছন্দ হয়নি তার। চা খেতে ইচ্ছা করে না ইথিকারও। ও শুয়েই থাকে। জানালা দিয়ে চেয়ে থাকে আকাশের দিকে। ওই আকাশ ওকে খুব কাছে টানে আজকাল। মন খুব খারাপ থাকলে আরও বেশি টানে ওই আকাশ। এক টুকরা আকাশের অশেষ ক্ষমতা। আকাশের মেঘগুলি ওকে নিয়ে যায় দূর থেকে দূরান্তে। অজানা অচেনা কল্পনার দেশে ও ভেসে ভেসে যায় পরীদের মতো।

তমিজ চলে গেছে অনেকক্ষণ। শুয়ে আছে ইথিকাও। ওর যে কি হয়েছে, কিছুই ভালো লাগছে না। চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল। রাহা কখন এসেছে টের পায়নি। রাহার ডাকে চমকে ওঠে।

: আম্মু। কচি কন্ঠে ডাকে রাহা।

: তোমার সঙ্গে কথা বলবো না রাহা। অভিমানী কন্ঠে কথা বলে ইথিকা।

: কেন মামনি?

: থাকলে না কেন তুমি?  অফিস থেকে এসে পেলাম না তোমাকে। তোমার আব্বুও পেল না তোমাকে।

: না তো, আব্বু পেয়েছে তো।  রাহার ছোট্ট মনে কোন রাখঢাক নেই।

: আব্বু পেলো কেমন করে?

: ফুপ্পির ওখানে আব্বু চা খাচ্ছে।  মায়ের কথায় সোজা জবাব দেয় রাহা।

ও!  অকস্মাৎ একটা কষ্ট এসে হানা দেয় ওর বুকে। প্রথমে ছোট পিনের খোঁচার মতো ব্যথা। তারপর আস্তে আস্তে ছড়িয়ে যায় ওর হৃদয়ের প্রতিটি আনাচে কানাচে। ও প্রচন্ড অভিমানী হয় ছেলের সঙ্গে,

 : তুমি গেলে কেন ফুপ্পির ওখানে?

: ফুপ্পি নিয়ে গেল যে।

: ফুপ্পি নিয়ে গেলেই যাবে তুমি? না করবে না। তোমার আম্মু যে অফিস থেকে আসবে তা মনে রাখবে না তুমি? 

: আর যাবো না আম্মু। তোমার কাছে থাকবো। কাঁদো কাঁদো কন্ঠে কথা বলে দুহাতে জড়িয়ে ধরে মাকে।

ছেলেকে কোলে নেয় ইথিকা। ছেলের সঙ্গে কথা বলছে ইথিকা। ডোর বেলের ট্রিলং ট্রিলং আওয়াজ। হাসুনি দরোজা খুলে দেয়।

ভেতরে এসে বলে,

 : আফনের অফিস থেইকা ভাবী।

: কে?

: চিনি না। নাম কইল রাকিব সাব।

অবাক ইথিকা। অফিস থেকেই তো এসেছে। এসেছেও তো এই মাত্র। এখন আবার কি দরকার। অফিসে কিছু অসুবিধা হল কিনা।

রাহাকে কোলে নিয়ে ড্রইংরুমে এসে দাঁড়ায় ইথিকা।

 : কি ব্যাপার।

: কিছু না এমনি।

 জবাব শুনে এমন অবাক হয় ইথিকা যে কথা বলতে ভুলে যায়! এ কেমন কথা! সারাদিন অফিসে কথা হলো, কাজ হলো আবার এমন কি ব্যাপার যে বাসায় চলে আসতে হলো। মনের মধ্যে অশান্তির সৃষ্টি হয় ওর। কিছু একটা হওয়ার আগে বুঝতে পারে ও। মন উচাটন হয় ওর। এমন মনে হওয়ার কারণও আছে।  ইদানিং লক্ষ্য করেছে কিছু যেন বলতে চায় রাকিব।

অফিসে টেবিলের সম্মুখে এসে দাঁড়ায়,  আবার চলে যায়। জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয় না। আজও টেবিলের সামনে এসে কথা না বলে চলে গিয়েছিল । এখন আবার বাসায় এলো। আবার কিছু না বলে চলে গেল। কেন এল? কেন চলে গেল ভাবনাটা অবশ্য বেশিক্ষণ মনে থাকলো ইথিকার। ও ভুলেই গিয়েছিল, কিন্তু কথাগুলি মনে করিয়ে দিল তমিজ এবং তা আবার বিশ্রিভাবে।

রাতে খেতে বসে ভাত মাখতে মাখতে বলে,

 : অফিস থেকে কে এসেছিল? 

তমিজের কথা শুনে অবাক হয় ইথিকা।

 : একথা কে বলল তোমাকে?

: যেই বলুক, কে এসেছিল তাই বল?  তুমি লুকাতে চাইলে কি হবে, লুকাতে তো পারবে না।

তমিজের কথার মধ্যে এমন কিছু ছিল যে কথা বলার ভঙ্গিটা ভাল লাগে না ইথিকার। ইথিকা তাকায় ওর মুখের দিকে,  কিন্তু জবাব দেয় না। : জবাব দিলে না! 

: জানোই তো, আবার কি বলব!

: তাও শুনবো, বল।

: অফিসের লোক।

: অফিসে কি দেখা সাক্ষাতের কমতি হয়েছে যে বাসা পর্যন্ত ধাওয়া করতে হবে।

: এসব কি কথা। বাসায় এলেই ধাওয়া করা হলো নাকি। বন্ধু-বান্ধব থাকলে, কলিগ থাকলে বাসায় আসবে না। আসাটা কী দোষের?

: যাকে তাকে ঠিকানা দিয়েছ কেন? বাসাটা কি তোমার?

মনের মধ্যে ক্ষোভ ছিল সেই সন্ধ্যা থেকেই।  এবারে রাগ হয়ে ফেটে পড়লো সেই ক্ষোভ।

 : এই বাসাটা শুধু তোমার একলার নয়, আমারও। আর যাকে তাকে আমি দেইনি ঠিকানা। যাকে ভাল বুঝেছি তাকেই দিয়েছি।

একটু চুপ করে থাকে ইথিকা। তারপর বলে,

 : তুমি কি একটুও ভালো কথা বলতে পারো না আমার সঙ্গে।’

: না পারি না। আমার কথা শুনতে ভালো না লাগলে চলে যাও এ বাড়ি থেকে।

 তমিজ গজগজ করতে করতে চলে যায় বাইরে।

ইথিকা খাওয়ার টেবিল গুছিয়ে ঘরে এসে সেলাই নিয়ে বসে। 

     প্রায় বছর ঘুরতে চলেছে রাকিবের এই অফিসে। রাকিব কাজ করে ভাল। মেধাবী। ইংলিশও জানে ভালো। ওর কাজের প্রশংসা করে ডিজিএম যখন তখন। রাকিব ওর ব্যবহারে পিয়ন মেসেঞ্জারদেরও মন জয় করেছে। স্যার ডাকলে আর কোন কথা নেই। সকলের কাজ ফেলে রেখে রাকিব  স্যারের কাজ করে। ডিজিএম সাহেব একদিন রাকিবকে ডেকে বলেছে,

 : আপনার কাজে খুব সন্তুষ্ট আমি। এসিআর দিব, যাতে প্রমোশন হয়। তাছাড়া এবার আপনাকে যাতে ট্রেনিং এ পাঠায় তাও দেখব।

     লেন্ডিং রিস্ক এনালাইসিসের উপর ট্রেনিং। মিরপুর থাকতে হবে। বি, আই, বি, এম-এর হোস্টেল আছে।  ওখানে রাতে থাকতে হবে। রাতে অবশ্য না থাকলেও চলে। তবে থাকলে ভাল। অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয়, আলাপ পরিচয়ের মাধ্যমে ভাবের আদান প্রদান যেমন হয় তেমন পড়াশোনার অগ্রগতিও হয়। চিঠি পাওয়ার পর থেকেই মন খারাপ ওর। ও ট্রেনিং-এ যাবে না। ট্রেনিং-এ যাবে না শুনে রাগ করে ইথিকা।

 : অমন ছেলেমানুষ কেন তুমি? ট্রেনিং এর সুযোগ কেউ পায় না আর তুমি নতুন এসে সেই সুযোগ পাচ্ছ আর গ্রহণ করতে আপত্তি; এই ট্রেনিং নিলে কতো ভালো হবে তা জানো।

: জানি। কি হবে ট্রেনিং দিয়ে। ওখানে যা শেখাবে তাতো জানিই’

:শেখাবে তো লোন দেওয়ার আগেই কাগজপত্র দেখে এনালাইসিস করা যে লোনটা দিলে অনাদায়ের কতোখানি রিস্ক থেকে যাবে।

: সেটা তো ঠিক আছে। কিন্তু যে সার্টিফিকেটটা পাবে তার কতো মূল্য জানো। একটু হেসে বলে,

 : আর হ্যাঁ , মজার মজার খাওয়া দাওয়া দেবে।

:দূর তোমার খাওয়া দাওয়া। রাগ করে উঠে চলে যায় রাকিব।

ইথিকার কথা ওর মোটেও ভাল লাগে না। ওর চাকরির তো উন্নতির প্রয়োজন নেই। ওর প্রয়োজন ইথিকার সামনে থাকা। ইথিকা তোমাকে না দেখলে উচাটন মন নিয়ে আমি পাগল হয়ে যাই!

তুমি তো ভালোবাসনি তাই বুঝবে না। রাকিব ট্রেনিং-এ চলে যায়। রাকিব নেই। ইথিকারও কেমন শূন্য মনে হয় অফিসটা। কাজে কর্মে মন লাগাতে পারে না। কাজ করতে গেলে কেবলই মনে এই রাকিব এসে বলছে কি করছো। রাকিবের এই এক অভ্যাস। ওর মাঝে মধ্যে রাগও হয় আবার ভালও লাগে। কাজের মাঝখানে মাঝে মধ্যে ও চমকে ওঠে। ওর চমকে ওঠা দেখে রাকিব হেসে ওঠে।  এতো মনোযোগ দিয়ে কাজ করছিলে যে, আমার কথায় চমকে উঠলে। কাজ তো মন দিয়ে করতে হয় নাকি। এভাবেই কথার পৃষ্ঠে কথা হতো ওদের।

আজ কয়েকদিন রাকিব নেই। কেউ এসে দাঁড়ায়নি, কথা বলেনি আর চমকে ওঠেনি। ইথিকা কাজ ফেলে রাকিবের কথাই ভাবছিল। হাসতে হাসতে এসে দাঁড়ায় রাকিব।

 : কি ব্যাপার কাজ রেখে বসে আছো তুমি?

চোখে মুখে হাসি উপচে ওঠে ইথিকার। কথা না বলে তাকিয়ে থাকে। ওর দিকে তাকিয়ে বলে রাকিব,

 : হ্যাঁ। তোমাদের দেখতে এলাম। 

:যেতে হবে না আবার?

: যাব।

কিছুক্ষণ কথা বলে, দেখা করে ডিজিএম-এর সঙ্গে। ছুটির পর একত্রে বের হয় দুজন। রিকশা না নেওয়া পর্যন্ত দু’জনে হাঁটে। ইথিকার খুব ভাল লাগছে; কেন লাগছে ইথিকা নিজেও জানে না। ওর মনে হচ্ছে পৃথিবীতে আজ সোনা ঝরা রোদ; কনে দেখা আলো। একটাও গাছ দেখতে পাচ্ছে না তবুও মনে হচ্ছে গাছে গাছে ফুল ফুটেছে। ফুল আর পাতার ফাঁকে এক জোড়া কোকিল দম্পতি ডাকছে কুউ কুউ কু উউ।

যদিও শরৎ তবুও ওর মনে হয় এসেছে বসন্ত। মনে পড়ে কবিতা ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত।’ ইথিকার কেন যেন রাকিবকে একটু ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে; আলতো করে ওকে ছুঁয়ে যায় ইথিকা। এই ছোঁয়াটুকু ওর ভালো লাগে। রাকিবেরও।