পাতি মাছরাঙা

পাতি মাছরাঙা বা ছোট মাছরাঙা  ( Alcedo atthis) (ইংরেজি Common Kingfisher)  আলসেডিনিডি গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত আলসেডো গণের অন্তর্গত রঙচঙে ক্ষুদে মৎস্যশিকারী পাখি।পাতি মাছরাঙার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ আত্তিসের মাছরাঙা  যা এসেছে লাতিন শব্দ: alcedo = মাছরাঙা, atthis = আত্তিস, লেসবস নগরীর সুন্দরী, কবি সাফোর প্রিয়জন থেকে । এরা বাংলাদেশের স্থানীয় পাখি । এদের দেশের সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায় । আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Least Concern বা আশংকাহীন বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে এরা Least Concern বা আশংকাহীন  বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত নয় ।

পাতি মাছরাঙা ছোট আকারের পাখি । এরা লম্বায় ১৬ সে মি হয়ে থাকে । পাখার বিস্তৃতি ২৫ সে মি এবং এদের ওজন ৩৪ থেকে ৪৬ গ্রাম হতে পারে ।  মাছরাঙার কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে যা এই প্রজাতিতেও দেখতে পাওয়া যায় । এদের লেজ আকারে ছোট, দেহ বেঁটে ও মোটা, মাথার আকার বড় এবং ঠোঁট লম্বা হয় । দেহের উপরিভাগ নীল বা নীলচে সবুজ এবং দেহতল কমলা রঙের । ঠোঁট চোখা, লম্বা এবং কালো বর্ণের হয়ে থাকে । ঘাড়ে নীলচে সবুজ দাগ থাকে এবং গলা সাদা রঙের হয় । পা এবং পায়ের পাতা উজ্জ্বল লাল । স্ত্রী পাখি দেখতে পুরুষ পাখির মতো কিন্তু এদের নিচের চোয়াল কমলা লাল রঙের সাথে কালো দাগ দেখতে পাওয়া যায় । অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি অনেকটা প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মতো দেখতে । তবে এরা কিছুটা অনুজ্জ্বল এবং দেহের উপরে অংশ সবুজাভ এবং নিচের অংশ মলিন বর্ণের । এদের ঠোঁট এবং পা কালো রঙের হয়।

গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের স্বচ্ছ ও ধীরগতির ঝর্ণা, নদী ও লেকের পানিতে পাতি মাছরাঙাকে দেখতে পাওয়া যায় । এইসব জলাধারের মধ্যে থাকা ছোট ঝোপঝাড়ের ডালে মাছরাঙা বসে থাকে । সুযোগমতো স্বচ্ছ জলে থাকা মাছ এরা শিকার করে । এরা সাধারণত একাকী থাকে । এদের প্রধান খাদ্য মাছ হলেও ব্যাঙাচি, জলজ পোকা ইত্যাদিও এরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে । পানিতে ঝাঁপিয়ে এরা মাছ ধরে । পানির নিচে শিকার দেখার জন্য এরা বিশেষভাবে অভিযোজিত ।

এদের প্রজনন মৌসুম শুরু হয় শরৎকালে । এসময় এরা জোড় বেঁধে একত্রে থাকে । এরা জলস্রোতের পাড়ের গর্ত করে বাসা  তৈরি করে । বাসা বানানোর জন্য এরা একে অপরকে সাহায্য করে । বাসা তৈরি হলে স্ত্রী পাখি ডিম পাড়ে । এরা একসাথে ৫ থেকে ৭ টি ডিম পাড়ে । ডিমগুলো দেখতে চকচকে সাদা । বাবা ও মা পাখি উভয়ই ডিমগুলিতে দিনের বেলা তা দেয় । তবে রাতের বেলায় শুধু মা পাখি ডিমগুলিতে তা দেয় । ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ১৯ থেকে ২০ দিন সময় লাগে । বাচ্চারা আরো ২৪ থেকে ২৫ দিন বাসায় থাকে ।

( সংগৃহীত)