লবস্টার বিভ্রাট
বেশ কিছুদিন হয়ে গেলো ফেসবুকে নিজের একটা রান্নার পেজ খুলেছে প্রিয়দর্শিনী। প্রচুর গ্রাহকও হয়েছে তার।
অনেকেই তার বৈচিত্রময় সব রান্নার ভক্ত। নূতন কোন রান্নার পোস্ট দিলেই রেসিপি দেবার জন্যে সাথে সাথে অনুরোধের পর অনুরোধ আসতেই থাকে।
প্রিয়দর্শিনী খুব উপভোগ করে তার ভক্তদের এই অনুরোধ।
সেদিনও সে লবস্টার থার্মিডোর রান্না করে চমৎকার ভাবে পরিবেশন পাত্রে তা সাজিয়ে ছবিসহ তার পেজে পোস্ট করার পরদিন নিজের পেজটা দেখছিলো।
হঠাৎ ইনবক্সের মেসেজ বক্সের ঘুন্টিটা পিং করে বেজে উঠতেই সে চেক করতে গিয়ে দেখে তার ফ্রেন্ডলিস্টের এক ভদ্রলোক তার কাছে মেসেজ পাঠিয়েছেন। তিনি নাকি তার লবস্টার থার্মিডোর রান্নার ছবিটা দেখে একেবারে যাকে বলে অভিভূত হয়ে গেছেন।
প্রিয়দর্শিনী তাকে ধন্যবাদ দিতেই ভদ্রলোক জানতে চাইলেন, লবস্টার থার্মিডোর ছাড়া সে লবস্টার রান্নার আর কত রকম প্রণালী জানে?
প্রিয়দর্শিনী তো হেসেই আকুল।
সে ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলো, লবস্টারের কি ধরণের রান্না আপনি জানতে চাইছেন?
তার উত্তরে একটা ঝুড়িতে বিশাল সাইজের দুটো লবস্টারের ছবি তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। আর সেই সাথে ছবির নিচে লেখা,
‘আসলে ম্যাম আজ ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে এই লবস্টার দুটো কিনে আমি মহাবিপদে পড়েছি। লবস্টার রান্না তো দূরের কথা, কীভাবে কাটতে হয় আমি তো তাও জানি ন ‘।
প্রিয়দর্শিনী বললো, জানেনই না যখন তখন খামোকা এই ঝামেলা করতে গেলেন কেন?
– না ম্যাডাম আপনার রান্না দেখে খুব ইচ্ছে করলো আমিও লবস্টার রান্না করবো। আসলে আমি রসায়ন খুব ভালো জানলেও রসুইটা ঠিক ততটা বুঝি না। তা ছাড়া বাড়িতে আমি একা থাকি। সাহায্যকারীও কেউ নেই। ম্যাম যদি কিছু মনে না করেন একটা অনুরোধ রাখবেন?
– বলুন। সম্ভব হলে নিশ্চয় রাখবো।
– আপনি কি কিছুদিনের জন্যে আমার ঘরের কুক হবেন?
প্রিয়দর্শিনী ভদ্রলোকের এ কথায় মনে মনে খুব চটে উঠলো। সাহস তো কম নয় এই ভদ্রলোকের?
কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে সে ভাবতে লাগলো, এর উত্তরে এই তথাকথিত ভদ্রলোককে কি বলা যায়?
একটু পরেই কিবোর্ডে বিদ্যুতগতিতে তার আঙ্গুল চালিয়ে সে লিখলো,
– কুক হতে আমার মোটেই আপত্তি নেই, তবে আমার একটা সমস্যা আছে সেটা নিয়ে আমি খুব টেনশনে আছি।
– কি সমস্যা ম্যাম?
– আমার ঘরের ক্লিনারটা ছুটিতে সেই যে গেছে এখনো কেন যে ফিরে আসছে না বুঝতে পারছি না।
সে না আসা পর্যন্ত আপনাকে আমি ক্লিনারের পদে রাখতে চাই। তখন না হয় আমার ঘরে লবস্টারের যে সব পদ রান্না হয় সেসব আপনি শিখে নেবে,? রাজি আছেন তো?
এরপর ওপাশ থেকে আর কোন উত্তর নেই।
প্রিয়দর্শিনী মুচকি হেসে সেই তথাকথিত ভদ্রলোকটিকে আনফ্রেন্ড করে নিজের পেজে আবার ফিরে গেলো।
Facebook Comments Sync