হতাশা ও আশায় ভ্যালেনটাইনস ডে

পান্থ রহমান​ হতাশা ও আশায় ভ্যালেনটাইনস ডে

স্কুলে ইসলাম ধর্ম স্যার বলেছিলেন​, ‘নাউজুবিল্লাহ… হে মোর খোদা, মোরে মাডি থে উডায় লে। ফায়ের হামনে মাডি ফাক করি দে, মুই হান্দায় যাই। এই নাপাক হুনার আগে আমার মরণ কেবা দিলি না। তওবা তওবা।’

 

কিছুক্ষণ​ বিড়বিড় করে আবার বলা শুরু করলেন​, ‘হোন বাবারা বালেন​টাইনের মত নাপাক ও নফরমানির কাম​ আর নাইক্কা। তুমরা কিন্তু কহ​নো ওমন​ কাফেরগো দিবসে শামিল হোবা না। হোন বাবারা মুসলমানের বালেনটাইন হইলো বাসর রাইত​, এই রাইতে যে শুরু হ​য়​, হের​পর চলছে গাড়ি যাত্রাবাড়ী, চলত্যেই থাকে।।’ কথাটা বলেই তিনি কোথায় যেন হারিয়ে গেছিলেন​, তখন মনে শ​য়তানি ছিল, যে যার মত অনেক কিছু ভেবে নিয়েছিলাম​। এখন অনেক বিবাহিত বন্ধুদের দুদর্শা দেখে বুঝি যে আমরা সেদিন কতটা ভুল ভেবেছিলাম​।

 

১ বছর পর​ ধর্ম স্যারের কথায় নতুন মাত্রা যোগ করেছিলেন রসায়ন স্যার​। তার মতে ‘আইন’ গোত্রের কোন কিছুর সাথে সম্পর্ক করা দুরুহ কাজ​। ‘অ্যালকাইন’ একটি অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন যে এক বা একাধিক (অন্তত একটি) কার্বন-কার্বন ট্রিপল বন্ড ধারণ করে। ‘আইন (অ্যালকাইন)’ গোত্রকে তিন হাত দিয়ে ধরে রাখতে হ​য়​।’ হাত আমাদের ২টা, প্র​য়োজনীয় একটি হাতের অভাব থাকায় তিনি ফতোয়া দিয়েছিলেন​​, ‘ভ্যালেনটাইন, অ্যালকাইন গ্রুপের অতি বিপদজনক সদস্য;  আর যেহেতু তোমরা অন্তত একটি কার্বন-কার্বন ট্রিপল বন্ড তৈরি করতে পারবো না, তাই ভ্যালেনটাইন বা প্রেম বাদ দিয়ে প​ড়তে বস​।’ 

 

তখন ১০ম শ্রেণিতে প​ড়ি, যথেষ্ট ব​য়স হ​য়েছে, স্যারদের ফাপরে ভুলার সম​য় অনেক আগেই শেষ​। তৃতীয় হাতের অভাব হবে না তা ক্লাসের ফার্স্টবয় বাদে কারো বুঝতে অসুবিধা হল না। 


স্কুল ও কলেজের সবকটি ভ্যালেনটাইনস ডে ই কেটেছিল​ মিরপুর রোডে ক্রিকেট খেলে, কারণ নিজ দলের কর্মীরা যেন ভালবেসে বখে না যায় সেকথা স্মরণ রেখে বিশ্ব ভালবাসার দুই মুর্ত প্রতিক দুই দলনেত্রি হরতাল\ধর্মঘট\ রাজপথ ছাড়ি নাই ইত্যাদির জন্য লাগাতার ৬\৭ বছর এই দিনটিকেই বেছে নিয়েছিলেন। একবার ভুল করে তাঁরা হরতাল করেননি, কিন্তু সেদিন ছিল শুক্রবার​। ভালবাসা দিবসকে স্কুল\কলেজ প​ড়ুয়া ছাত্রদের হাজতদিবসে ফেলে ইচ্ছে করে গুটিবাজি করে সব মজাটাই দিয়েছিলো নষ্ট করে। সেদিন এক বন্ধু রাগ করে বলে ফেলেছিল, ‘হেরা বুড়া হইছে তো, এক্কেরে নিরামিষ হই গ্যাছে (আসল উক্তিটি সেন্সর করা হয়েছে)।’ 

 

এরপর প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে এসেই ভ্যালেনটাইনস ডে তে দৈনিক আল ইহসানের বিশেষ সংখ্যা দেখে মাননীয় স্পিকার হয়ে গেলাম​। যেখানে মোটা হরফে লেখা ছিল​, ভ্যালেনটাইনস ডে`র নানা অ ইসলামী দিক ও পালনের ফলে কবরের আযাবসমুহ​। আর এসব পড়েও যেসকল বান্দারা রুখে যাবার পাত্র নন হ​য়তো তাদের জন্যই শেষ লাইনটি লেখা হত​, এই দিবসে মত্ত ব্যক্তিদের সেক্স পাওয়ার কমে যায়​।  প্রথমে ব​য়েজ স্কুল ও পরে ব​য়েজ কলেজ​, পাওয়ার পরখ করার তো সম​য়-সুযোগই পেলাম না, আর ভ্যালেনটাইন পালন করলে কমে যাবে? এতো দেখি মহা মুশকিল! 

 

অগ্যতা কবি হেলাল হাফিজকে স্মরণ করে ছাত্রফ্রন্টের মিছিলে স্লোগান দিয়েই প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে আমার প্রথম ভালবাসা দিবসে ভালবাসার বহি:প্রকাশ​ করলাম​। অবশ্য আমি আজো জানি না মিছিলটা কি উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল​।

সেদিন আমার যেসব বন্ধুরা মিছিলটা একটু ব​ড় দেখানোর জন্য আমাকে ও আশেপাশে পরিচিত সবাইকে মিছিলে চালান করে দিয়েছিল আজ তারা সবাই বিবাহিত ও ধর্ম স্যারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চলছে গাড়ি যাত্রাবাড়ী… প্রতিদিনই ভালবাসা দিবস​। এদিনটির প্রতি তাদের কোন আবেগ-অনুভূতি নেই। 

অবশ্য কিছু ব্যতিক্রমও আছে, যেমন অনেক এক্সপার্টদের অবস্থা এখন 

‘গাড়ি চলে না, চলে না, চলে না রে, গাড়ি চলে না।’ 

আর আমাদের ফার্ষ্টব​য়? গোপনসূত্রে (ভাবি মারফত​) পাওয়া খবর অনুযায়ী তার অবস্থা শোচনীয়​। একেবারে দলছটের গানের মত তার অবস্থা, 

‘ইঞ্জিনে ময়লা জমেছে, 

পার্টসগুলো ক্ষয় হয়েছে, 

ডায়নামো বিকল হয়েছে, 

** দুইটা কাজ করে না।’

 

কেউ কেউ আবার অতি পাওয়ারে ইঞ্জিনে ব্যতিক্রম করে, ব্রেকফেল করে দুর্ঘটনাও ঘটিয়ে ফেলেছেন বেশ ক​য়েকবার​, আমি আরো আশাবাদী। 

 

যাই হোক নিপাতনে সিদ্ধ বিবাহিত বন্ধুরা কিন্তু স্যারের কথা ও পত্রিকার প্রচারণায় যথেষ্ট সতর্ক হ​য়েও নিজ নিজ জীবনে শক্তির অবিনাশী সূত্রকে ভুল প্রমাণ করে ফেলেছেন, তাই ভ​য় পাওয়াটা বোধহ​য় যুক্তিসংগত হবে না। তারচেয়ে ছোট্টভাইবোনেরা যেন হেলাল হাফিজের কবিতা জোড়াতালি দিয়ে প​ড়ে । মানে, 

‘এখন যৌবন যার​, ভালবাসার শ্রেষ্ঠ সময় তার’ 

প​ড়ে সফলতার সাথে ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ রচনা করতে পারে সেই প্রত্যাশা করছি। সবাইকে ভালবাসা দিবসের শুভকামনা।

পান্থ রহমান​