দুটি কবিতা/ সাঈফ ফাতেউর রহমান

দুটি কবিতা

দুটি কবিতা

দুটি কবিতা/ সাঈফ ফাতেউর রহমান

 

 

 

 

 

 

কে বাজালো মোহন বাঁশি সোনার বাংলায়!

( শ্রদ্ধার্ঘ: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

 

সোনার বাংলায় কে বাজালো মোহন বাঁশি!

এমন সুরের ঐন্দ্রজালিকতা কার কণ্ঠে শোভনীয়! 

কে এমন আশায় ভাষায় সুরে সুরে ভাসায় জনগণমন!

তিমির বিদারী অভ্যুদয়ে কে জ্বালোলো সন্মোহনী আশাদীপ!

 

বীনার ঝংকারে জেগে ওঠে সমগ্র বাংলার সমতট

মাধুরী সম্পন্নতায় উদ্ভাস ছড়ায় আচক্রবাল বিস্তার

পুষ্পকোরক উন্মিলীত হয় বাংলার সমতল ছেড়ে দিগন্তরেও

মানবীয় অভ্যুত্থানের বিজয়রথ সূচিত হতে থাকে দিকে দিকে।

 

আকাশ ভরা সূর্য তারা বিস্ময়ে অবাক তাকিয়ে থাকে

নদী কলস্বরে বন বীথিকায় অনুরণিত হতে থাকে সুরধ্বনি

মাটির সুবাস সুহাস ছড়াতে থাকে অনিবার সকলের মনপ্রাণে

স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে সহসাই কি পাতলো আসন আমাদের অঙ্গনে!

 

রিনিকি ঝিনিকি বোলে ছন্দ ত্রিতাল তোলে অমিয় আস্থায়

মানবীয়তায় মনোবিন্যাসে অঙ্কিত হোল আল্পনা অপরূপতায়

গণমানুষের না হলেও মানুষের অন্তরের সুন্দর এলেন একজন

জনজাগৃতির সম্পন্ন বোধেপ্রদীপ্ত হলো সবারই মানস দিগঞ্চল।

 

কবিতা ও গানে মাটির স্পর্শ যদিও নূন্যতর

বৃত্ত ভাঙ্গার প্রয়াস নিয়েছেন  নিশ্চিতই

পরিখা থেকে উত্তরণের সুযোগ ছিলো না অবাধ

তবু মানুষের কথা মাটির গন্ধ স্পর্শ করেছে নিশ্চিতই।

 

সবার জন্য সবকিছু করণীয় নয়

শৃঙখল ভাঙ্গার মহামন্ত্র ছিলো না তার

তবু জনতার কাছাকাছি থাকবার প্রয়াস তো নিয়েছেন!

জীবন দীপ্তির পূর্ণ ঋদ্ধির শুভানুভবের মানস উজ্জ্বলতা তো ছিলো তার!!

 

 

 

 

 

 

 

২। রুদ্র বীণার ঝঙ্কারে কোমল বাঁশরী      

(শ্রদ্ধার্ঘ: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম )

 

রক্তের ভেতরে যুগল প্রণোদনা

কোমলে কঠোরে সহমর্মিতায় সহাবস্থান

জীবনের আনন্দময়তার নির্ঝর খুঁজে নাও

জীবন বিনাশী অপশক্তির প্রতিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোল।

বাজাও সুরেলা বাঁশরী, গাঁথো মালা ফুলদল দিয়ে, পুষ্প পুলকে সজ্জিত হও

গাও জীবনের গান সুস্বরে, উচ্চকিত উদ্ভাসে সুরের মাধুরী ছড়াও দিকেদিকে

প্রাণাবেগ আর প্রাণ প্রবাহের মিলিত ঐক্যতানে পুলকানন্দে মেতে ওঠো 

যদি আসে কোন স্বৈর পাশব, কোন অশীল দানব তেড়ে আসে হুঙ্কারে 

মুহূর্তের বিভ্রমে পড়োনা তুমি

তোমার হাতেই জীবনের চাবিকাঠি

তুমিই আনন্দ তুমিই বেদনা সব

তোমাকে তটস্থ করে তোমাকে সন্ত্রস্ত করে থাকতে পারবে না কেউই। 

 

রণতুর্য তোমার হাতে

বাঁশের কোমল বাঁশিও তোমার হাতে

তুমিই সৃজন সক্ষম আনন্দ আর বেদনার

তুমিই টলাতে পারো হিমালয় আর জাগাতে পারো বঙ্গোপসাগর উত্তালতায়

তোমাকে ধ্বস্ত করার নিরস্ত করার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কারও আছে না কী! 

 

বিদ্রোহের বীজ উপ্ত করে গেছো

অসত্য আর অন্যায়ের প্রতিপক্ষে সাম্য সুন্দরের ন্যায়ানুগ যুদ্ধ

শোষণ আর অপশাসনের নাগপাশ ছিড়ে ফেলার দুর্বার প্রত্যয়

তোমার শারীরিক অবর্তমানেও প্রাসঙ্গিকতা  যায়নি ফুরিয়ে

চিরায়ত দ্বন্দ্ব অবিনাশী চলতে থাকবে আবহমান

আর বঞ্চিত শোষিতের আলোক দিশারী তোমার 

প্রাসঙ্গিকতাও বহমান থাকবেই

মানবীয় কোমলানুভব আর দ্রোহের অগ্নিচেতনায়।

 

সাঈফ ফাতেউর রহমান
সাঈফ ফাতেউর রহমান