নীল সার্ট – ড. জাহিদা মেহেরুননেসা

নীল সার্ট - ড. জাহিদা মেহেরুননেসা

মানুষ যে মানুষকে অপমান করার জন্য, ছোট করার জন্য, আঘাত করার জন্য, অপদস্ত করার জন্য কত রকমের অস্ত্রে শান দেয় তা আর নতুন করে বলার কী ই বা আছে!

চন্দনা রহমান তার বন্ধু পারভীন আক্তারকে সাথে নিয়ে তার স্বামীর অফিসের গাড়িতে করে একটি শপিংমলে সার্ট কিনতে আসে । দুজনেই একই অফিসে চাকরি করে ।

পারভীন আক্তার যদিও চন্দনা রহমানের ঘনিষ্ট বন্ধু তবুও স্বামীর ব্যাপারটিতে চন্দনা রহমানের নাকটি সব সময়ই অনেক উঁচু । আর উঁচু হবে নাই বা কেন ?

চন্দনা রহমানের স্বামীর আয় রোজগার অনেক বেশি । তার উপরে অফিসের একটি গাড়ি দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা চন্দনার পেছনে সার্ভিস দেয়। এমন কী দুজনের অফিসেরও সময় সময় বিভিন্ন কাজে লাগে । এতে চন্দনা রহমান যদি একটু অহংকার করেনই তা তো করতেই পারেন । তাতে পারভীন আক্তারের এত গায়েই বা লাগে কেন? চন্দনা রহমান তো কিছুমাত্র কম করেন না কারো জন্য । পারভীন আক্তারের স্বামী তো আর তেমন কিছু না ।

দুজনেই দোকানে এসে হালকা কালারের দুটো সার্ট পছন্দ করেন ।

চন্দনা পারভীনকে বলেন,

: দেখ আমার হাসব্যান্ড তো অফিসের এক্সিকিঊটিভ ব, এই কালারটি ওকে মানাবে । আমি এটা ওর জন্য নেবো । তুই দেখ অন্য কোনটা নিবি। বুঝিস তো বসদের ব্যাপারটাই অন্য রকম । এক্সিকিউটিভদের এ রকম সার্ট মানায়। ভাই তো আর এক্সিকিউটিভ  না।

 

পারভীন আক্তারের বুকের কোথায় যেন কী একটা

বিদ্ধ হয়  । অনেক কষ্ট হয় । মনে হয় বিষকাঁটা ঢুকছে কোথাও । সে চন্দনা রহমানের কথাগুলোর অর্থ বোঝে ।

মনে হয় পারভীনের বুকের মধ্য অসংখ্য ভীমরুল হুল ফোটাচ্ছে । নানাবাড়িতে একবার ভীমরুলের আক্রমণের শিকার হয়ে সে বেঁচে গিয়েছিল । এবার বাঁচাটা খুব জরুরী । সে শপিংমল থেকে সোজা বাসার দিকে পা বাড়ায় । পিছনে কোলাহলমুখর শপিংমলে ঝুলতে থাকে এক্সিকিউটিভদের জন্য হালকা নীল রঙের সার্ট ।