ব্লু স্পাইডার
গান আর নাচের উত্তাল তরঙ্গে পুরো অডিয়েন্স মাতাল হয়ে উঠছে। ড্রামের জোরালো শব্দে নেচে উঠছে তরুণ দামাল ছেলে-মেয়েরা। যখনই গানের সুর ওপরে উঠতে উঠতে শিখরে পৌঁছায় জনতার আনন্দ তখন সকল মাত্রা ছাড়িয়ে বাধভাঙ্গা উল্লাসে ফেটে পড়ে। এটা কোন নতুন কিছু নয় নিলীয়ার জন্য। তার গানে মাতোয়ারা তরুণ প্রজন্ম তো অবশ্যই, মাঝ বয়সীরাও তার গান শুনে শরীর মন নাচিয়ে নাচিয়ে দোলে। রাত যত গভীরের দিকে যায় শব্দেরা সুরে সুরে আরও তীর্যক হয়ে উঠে। গানের স্বপ্নীল মায়াজালে আবিষ্ট হয়ে থাকে শত শত দর্শক শ্রোতা। এক সময় শেষ হয় গানের ধারা, শেষ হয় ড্রামের তাল, তৃপ্ত মনে ঘরে ফেরে হাজারো জনতা। আর নিলীয়া, কনসার্ট শেষ করে সকলের সাথে গল্পে মাতে। কেমন হল গানগুলো, কথার ফাঁকে ফাঁকেই ফিডব্যাক সংগ্রহ করতে থাকে সহকর্মীদের কাছ থেকে। ওর কোন ক্লান্তি নেই, এতগুলো উত্তাল চড়াসুরের গান একনাগাড়ে গাইবার পরও উচ্ছ্বল প্রাণবন্ত নিলীয়া। মায়ের সাথে ঘরের পথে, মাকে প্রতি সময়ই না করে আসতে, শোনে না মা।
বড় বড় সংগীতবোদ্ধারা অবাক বিস্ময়ে দেখেছে এতটুকু মেয়ের প্রতিভার দ্যুতি, একেই বলে ঈশ্বর প্রদত্ত ঐশ্বর্য। তখন নিলীয়ার বয়স কত হবে? তের কি চৌদ্দ। মা তো তখন থেকে আজ অব্দি মায়া নিয়ে, ছায়ার মতো মিশে আছে নিলীয়ার সাথে। এক পলকের জন্যও হারায় না নিলীয়াকে। বাবা পরিত্যক্ত মেয়েকে বাবার শূন্যতা ভুলিয়ে দেবার জন্য নিজের কোন জগৎ তৈরি না করে, নিলীয়ার জগতে নিজেকে পুরোপুরি দ্রবীভূত করেছে। নিলীয়ার সাফল্যে, ব্যার্থতায় নিজের অস্তিত্ব বিলীন করেছে। প্রথমদিকে মাকে ছাড়া একা চলতে না পারলেও ধীরে ধীরে দূর্গম পথে একা চলার পদ্ধতি নিজেই আবিষ্কার করে নিয়েছ নিলীয়া। গায়ে থাকে স্পাইক দেয়া চামড়ার জ্যাকেট, পায়েও থাকে হাঁটু পর্যন্ত লম্বা স্পাইক দেয়া চামড়ার জুতো। এসবের অস্তিত্ব সকলে দেখতে পায়। এছাড়া অদৃশ্য এক বর্মে নিলীয়া তার সারা শরীরকে আবৃত করে রাখে। পুরুষের চোখের ভাষা বুঝার অভিজ্ঞতা হয়েছে, প্রতিকূলতা জয় করতেও শিখেছে। তাই মাকে অনেকবার বলে দেখেছে, কিন্তু মা রাজি হননি।
মা আমি এখন বড হয়েছি ,নিজের ভালো মন্দ বুঝতে শিখেছি, তুমি শুধু শুধু আমার সাথে যেয়ে কষ্ট করো না তো। কত রাত অব্দি জাগতে হয়, পথের ধকল আছে, তোমার শরীর খারাপ করবে।
মায়ের সরল উত্তর,
তুই অনুষ্ঠানে যাবি আর আমি পড়ে পড়ে ঘুমাব? কি বলিস পাগলের মতো কথা! না তা কখনই সম্ভব নয়।
মা তোমার বয়স হচ্ছে, এখন থেকে সাবধানে থাকতে হবে। নাহলে অসুস্থ হয়ে পড়বে।
নিলীমনি, তুই তো আমার সব। তোকে ছাড়া আমার আলাদা কোন অস্তিত্ব নাই। আমি যতদিন বেঁচে থাকব তোর পাশে পাশেই থাকব। তোর কাছ থেকে সরিয়ে নিলে আমি যে শেষ হয়ে যাব। তোকে সর্বক্ষণ কাছে রাখতে পারলেই আমার আনন্দ, আমাকে আমার আনন্দ আহরণ থেকে বঞ্চিত করিস না মা।
নিলীয়া আর কথা বাড়ায়নি।
যে কোন প্রোগামে বিথী নিলীয়ার সাথে সাথে থাকে, টেলিভিশন অনুষ্ঠান হোক অথবা আউটডোর কনসার্ট এমন কি রেকর্ডিংয়ের সময়েও। তবে আউটডোর কনসার্ট থাকলে বিথীর অনেক টেনশন হতে থাকে। দর্শকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ, এরই মাঝে গান, কথা সবই একসাথে চালিয়ে যেতে হয়। নিজের মেয়ে বলেই হয়তো এত চিন্তায় থাকে। আর নিলীয়ার মাথায় অন্য সব চিন্তা ভাবনা বাদ, থাকে শুধু গান আর গান। বিথী গ্রীনরুমের এক কোনে নিবিষ্ট মনে বসে থাকে। হয়তো নিলীয়ার জন্য শুভকামনার ডালা গুছাতে থাকে। এমনকি নিলীয়া যখন বিভিন্ন কনসার্টে বিদেশে যায় তখনও বিথী নিলীয়ার সাথে সেসব জায়গায় যায়। আয়োজকরাও সেটা জানে। নিলীয়ার জন্য বিদেশে কোন কনসার্টের আয়োজন করতে চাইলে ওর মাকে সাথে নিতে হবে। সেইভাবেই ভিসা, টিকেটের ব্যবস্থা করে। সরকার থেকেও বাঁধা পায়নি আর আয়োজক দেশ থেকেও ভিসার সমস্যা হয়নি।
এবারও নিউইয়র্কে কনসার্টে যাবার জন্য নিলীয়ার সাথে ওর মায়ের সব কাগজপত্র ভিসা অফিসে জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সকলের ভিসার অনুমতি দেওয়া হল শুধু বিথীকে অনুমতি দিল না। আয়োজকরা এবার বিথীর অতীতের আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশের অনুমোদনপত্র সহ আবার জমা দিল। এবারও ‘না’ হয়ে ফেরত এল। আয়োজক প্রতিষ্ঠান নিলীয়ার কাছে করজোড়ে ক্ষমা চাইল…
ম্যাডাম, আমরা অনেকভাবেই চেষ্টা করলাম, কিন্তু আমেরিকান এ্যামবেসি কিছুতেই আন্টির ভিসা দিচ্ছে না। প্রথমবার রিজেক্ট হবার পর আগের সব রেফারেন্সসহ আন্টিরটা আবার জমা দিলাম। তবুও ওরা এ্যাকসেপ্ট করল না। আসলে ট্র্যাম্প ক্ষমতায় আসার পর বাঁধা নিষেধের মাত্রা আনেক গুণ বেড়ে গিয়েছে। আপনি নিজেই তো এর আগে আমেরিকায় কনসার্ট করলেন, তখনতো আন্টির ভিসা পেতে কোন ঝামেলা পোহাতে হয় নাই।
কিছুক্ষণ থেমে আবার শুরু করল,
ম্যাডাম,এদিকে নিউইউর্কে প্রচার আর প্রস্তুতি পুরোদমে শুরু হয়ে গিয়েছে। অঙ্গরাজ্যগুলোতেও ওরা কাজে নেমে পড়েছে। এ অবস্থায় কী যে করব !,আন্টিকে কি কোনভাবে বুঝিয়ে রাজি করানো যাবে না? একটু কি চেষ্টা করবেন ম্যাডাম! আমাদের অনেকগুলো টাকা লগ্নি করা হয়ে গিয়েছে।
(২)
নিলীয়া মাকে কি বুঝাবে, মা তো কেঁদে কেটে সারা। অবুঝ শিশুর মতো শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। মায়ের এই অবস্থায় ডিসিশন নেয়াটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে নিলীয়ার জন্য। নিলীয়া কর্মঠ একটা মেয়ে, পেশার সাথে কখনও উল্টা পাল্টা করেনি। সবসময় গানকেই সর্ব্বোচ গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। গানের সেটে সময়মতো পৌঁছানো, কথা দিয়ে কথা রাখা, সকলের সাথে সুসম্পর্ক রাখা। মোট কথা গানের প্রতি নিষ্ঠাবান ও নিবেদিত একজন শিল্পী। কিন্তু আজ কি এক দোদুল্যমানতার মাঝে পড়ল। কয়েকটা দিন হয়ে গেলো নিলীয়া বাসা থেকে তেমন বের হচ্ছে না। জরুরী ফোন ছাড়া রিসিভ করছেনা, চুপচাপ ঘরে বসে আছে।
নিলীয়া যেমন বুঝে, বিথীও তেমনি বুঝে সাতাশ বছরের একটা মেয়ে,যাকে কিনা কঠিন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বড হতে হয়েছে, প্রতি দিনকার দুঃখ কষ্টগুলোকে নিজের মনোবল দিয়ে জয় করতে হয়েছে, ঘাতে-আঘাতে ক্ষত বিক্ষত না হয়ে বন্ধুর পথ সাফল্যের সাথে অতিক্রম করতে শিখেছে সে। যার নিজের আয়ে দুজনের একটা সংসার মোটামুটি ভালোমতোই চলে যাচ্ছে। সেই স্বাবলম্বী মেয়েকে ‘একা ছাড়া না ছাড়া’ এটা কোন বিষয় হতে পারে না। কিন্তু ঘটনা অন্যখানে। বিথী যেন স্বর্ণলতা। নিলীয়াকে আঁকড়ে ধরে ওর বেঁচে থাকা। নিলীয়াকে সরিয়ে নিলে যেন প্রাণহীন নির্জীব অসাড় দেহটাই পড়ে থাকবে ।
এতবার জমা দেবার পরও ভিসা না হওয়াতে বিথী ঠিকই বুঝতে পারছিল -ছাড়তে হবে…ছাড়তে হবে কলিজার ধন ,বুকের মানিক, নয়নের মণিকে একাই ছাড়তে হবে সুদূর আমেরিকায়।
চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে কান্না আর ক্লান্তির দাগ মুছে ফেলার চেষ্টায় বিথী। নিজেকে অনেকটা স্বাভাবিক করে নিলীয়ার ঘরে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল-
নিলীমনি,তুই ওদের না করিস না। গানের ভুবনে তোর কোন খারাপ অধ্যায় নেই, কোন কালো দাগ নেই। আমি চাই না আমার কারণে এই ভুবনে তোর জীবনে সামান্যতম স্পট পড়ুক। তুই যা, আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারব রে, পারব…
বিথীর গলা ধরে আসলেও অসীম শক্তি দিয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে-
নিলীমনি, একটা কথা, তুমি কিন্তু খুব সাবধানে থাকবে, অপরিচিত কোন জায়গায় পা ফেলার আগে সাতবার ভেবে নিবে। মন সায় না দিলে সে কাজ কখনই করবে না, তা যতই আকর্ষণীয় হোক।
মা, মাগো তুমি তো সবরকম প্রতিকূলতা জয় করে কীভাবে সামনে এগিয়ে যেতে হয় তা আমায় শিখিয়েছ। আমার জীবনে তুমি ছাড়া অন্য কারো কোন প্রভাব কোনদিন পডেনি, পড়বেও না। মা, আমি তোমার শেখানো পথে পা ফেলব, তুমি একটুও চিন্তা করবে না। তুমি নিজের যত্ন নিবে, আমি নেই বলে রান্না না করে,না খেয়ে থাকবে না। এখন তোমার বয়স একটু হলেও হয়েছে, তোমার যত্ন দরকার, সারাটা জীবন তো কষ্ট আর সংগ্রাম করে গেলে মা…
এবার নিলীয়া কান্না আটকাতেই পারল না, মা মেয়ে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কেঁদে মন হালকা করল।
মা, তুমি আমাকে নিয়ে একটুও ভাববে না। আর তাছাড়া এবার আমার একটা পরীক্ষাও হয়ে যাবে। তোমাকে ছাড়া আমি একা চলতে পারি কিনা, আমি আমার কাজগুলো ঠিকমতো করতে পারি কিনা। মা, এবার ঘুরে আসি তোমার কষ্ট কমিয়ে দেবো। আমার সাথে ঘুরে ঘুরে রাত জেগে আর শরীর নষ্ট করতে দেবো না।
আচ্ছা সে দেখা যাবে। তুই আমার আরেকটা কথা মন দিয়ে শোন, প্রতিদিন দুইবার ফোন করবি ঘুম থেকে উঠে, আর রাতে সব কাজ শেষে ঘরে ফিরে। তুই এটা ভাববি না আমার এখানে গভীর রাত, আমি ঘুমিয়ে আছি? বা অন্য কিছু। তোর ফোন না পেলো আমি কিন্তু একটুও ঘুমাতে পারব না। কি মনে থাকবে?
অবশ্যই মনে থাকবে, তুমি ভেবো না, আমি পৌঁছেই একটা সিম নিয়ে নিব, তোমার নিয়ম মতো ফোন করব,তবুও কখনও মিস করলে তুমি টেনশন করবে না। পরের সুযোগেই তোমার সাথে কথা বলব মা।
নিলীয়ার এবারকার আমেরিকা সফর সব মিলিয়ে পনের দিনের। নিউইউর্কে দুটা স্টেজ পারফরমেন্স সেই সাথে একটা বাংলা চ্যানেলের সাথে সাক্ষাৎকার। এরপর চলে যাবে অঙ্গরাজ্য ম্যানহাটন, সেখানে একটা স্টেজ শো। তারপর শেষ স্টেজ শো হবে অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডায়। পারফরমেন্সের ফাঁকেই চলবে সাইট সিইং। কেনাকাটার জন্যও সময় বরাদ্দ আছে। এসবের বাইরে স্থানীয় বাঙালিদের আতিথেয়তার জন্য সময় নির্ধারিত আছে। মোটকথা সময় ধরে ধরে সিডিউল করা হয়েছে।
নিলীয়ার পুরো সময়সূচিটা আয়োজকরা সাগ্রহে বিথীকে বুঝিয়ে দিচ্ছে। বিথী যে শেষ পর্যন্ত মেয়েকে একা ছাড়তে রাজি হয়েছে তাতেই ওরা কৃতজ্ঞ। হঠাৎ ফ্লোরিডার নাম শুনেই বিথী খানিকটা অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল- উচ্চতর ডিগ্রি নিতে মূর্তজা যখন নিউইউর্ক গিয়েছিল নিলীয়া তখন দুই বছরের শিশু। কথা ছিল কিছুদিনের মধ্যে বিথী এবং নিলীয়াকে নিয়ে যাবে। অথচ যাবার কিছুদিন পর থেকে আর যোগাযোগ করেনি। এর পরপরই ডিভোর্সের কাগজ পাঠিয়ে দিয়েছিল। শুনেছে নিউইউর্কে এক বিদেশিনীকে বিয়ে করেছে। তবে সে সংসার বেশিদিন টেকেনি। লোকটির জন্য এখন আর এক বিন্দু মায়া অবশিষ্ট না থাকলেও বিথীকে পীড়া দিচ্ছে ‘ আমেরিকাই তো আমার স্বামীকে আমার কাছ থেকে নিয়ে নিল। আবার এখন মেয়েটাকে একা ছেড়ে দেব!’ লোক মুখে শুনেছে মূর্তজা বর্তমানে ফ্লোরিডায় থাকে। আবার একটা অজানা ভয় বিথীকে গ্রাস করতে থাকে – নিলীয়া মূর্তজাকে না চিনলেও, মূর্তজা তো ঠিকই জানে নিলীয়া তার মেয়ে। বাবা হয়ে কি মেয়ের খারাপ কিছু করবে! তা হয়তো করবে না। কিন্তু এতদিন পর যদি বাবার পরিচয় নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায় সেটাই নিলীয়ার জন্য যথেষ্ট কষ্টদায়ক হবে…বিথী নিজেকে বুঝাতে চায় – ‘না এমন কিছু হবে না। আমি নিলীয়াকে যতই আগলে রাখতে চেষ্টা করি না কেন, ও আসলে অনেক শক্ত মনের মানুষ, সহজে ভেঙে পড়ার মতো মেয়ে ও নয়।’
(৩)
নিলীয়া বিহীন একাকী জীবন দু’বেলা কথা বলার মাধ্যমে কোন রকমে কাটিয়ে দিচ্ছে বিথী। কর গুনে গুনে হিসেব রাখছে কবে ফিরবে তার বুকের মানিক। ক্যালেন্ডারের পাতায় সবুজ কালির দাগে রঙিন করে রাঙিয়ে রাখছে সেপ্টেম্বর মাসের পঁচিশ তারিখ সোমবার। আজ বাইশ, ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিন সকালের মতো আজও ক্যালেন্ডারের পাতায় টিক চিহ্ন দিয়ে হিসেব করে আরাম বোধ করে। আর তিনটি রাত পেরুলেই বহু কাঙিক্ষত সেই সকাল, যার প্রত্যাশায় প্রতি মুহূর্ত সময় গোনে বিথী। সকাল পেরিয়ে দুপুর অথচ নিলীয়ার কোন ফোন নেই। প্রতি সকালে নিলীয়ার সাথে কথা শেষ করে তবে বিথী তার নিজস্ব কাজ শুরু করে। থমথমে মুখে মোবাইল হাতে বসে থাকে, ফোনের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ক্লান্ত, বিষণ্ণ বিথী। কেমন ঝিম ধরা বিষাদ ওকে ঘিরে রাখে। বিকেল পেরিয়ে চারিদিক অন্ধকার করে সন্ধ্যা নামে। মনে কত রকম কুচিন্তা উঁকি দেয়, বিথী নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করে যায়। হঠাৎ মোবাইল স্ত্রিনে নিলীমনি নামটা ভেসে উঠে। বিথীর প্রাণহীন দেহে যেন প্রাণ ফিরে আসে। দ্রুত হাতে ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলার আগেই ড্রামার তন্ময়ের আকুল কান্না ছাড়া আর কিছুই শোনা গেলো না। প্রবল কান্নায় ভেঙে যেতে যেতে তন্ময়-
আন্টি গতরাতের কনসার্টের পর থেকে আপুনিকে কোথাও পাচ্ছি না। আমরা সবাই সবসময় আপুনির সাথে সাথেই থাকি, আজও ছিলাম। আপুনির গান শেষ হবার পর চেঞ্জের জন্য মনে হয় গ্রিনরুমে গিয়েছিল। এরপর থেকে আপুনিকে আর খুঁজে পাচ্ছি না। আন্টি কি হলো আমাদের আপুনির? কোথায় খুঁজে পাব আপুনিকে…
তন্ময় অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে, এই মানসিক অবস্থায় কথা বলা ওর জন্য খুব কষ্টকর, তারপরও নিজেকে সামলে নিয়ে আবার বলতে শুরু করল-
আন্টি, আমরা কেউই এখান থেকে একটু সরে যাইনি, যে করেই হোক আপুনিকে খুঁজে বের করে আপুনিকে নিয়েই বাংলাদেশে ফিরব। আপনি একটুও চিন্তা করবেন না, পুলিশকে খবর দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ এসে পুরো এরিয়া কর্ডন করে ফেলেছে। এখানের লোকাল লোকেরাও সহযোগিতা করছে। আন্টি যখনই কোন খবর পাব তখনই আপনাকে জানাব। আপনি দোয়া করেন আন্টি…আন্টি আপনি শুনতে পাচ্ছেন? আমি আপনাকে শুনতে পাচ্ছি না…আন্টি…
বিথীর কন্ঠ যেন কে চেপে ধরেছে, কিছুতেই কোন কথা বলতে পারছে না। হাত পা, ক্রমান্বয়ে সমস্ত শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে, নিশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। খোলা চোখেও চারপাশে অন্ধকার নামে… বিথী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। বিবশ নিথর দেহটা পড়ে থাকে বিছানায়, একটা হাত বিছানায়, খোলা করতলে মোবাইল,অন্য হাতটি ঝুলে পড়ে আছে..
ব্যান্ড দলের সদস্যদের মতো আয়োজকরাও অনেক মুষড়ে পড়েছে। এতো উন্নত দেশে এটা কি করে হয়! একটা জলজ্যান্ত মানুষ মুহূর্তের মধ্যে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো! যদিও ওপেন কনসার্ট তবুও কয়েক শত মানুষের মাঝ থেকে এমন করে নাই হয়ে যাওয়া, না মানতে পারছে না কেউ। অভিযোগ পেয়ে তৎক্ষণাৎ পুলিশ এসে সম্পূর্ণ এলাকাটা কর্ডন করে ফেলেছে। বাংলাদেশ থেকে আসা পুরো দলটিকেও কডা নজরদারিতে রাখছে। একটু পর পর সাইরেন বাজিয়ে পুলিশের গাড়িগুলো টহল দিচ্ছে।
ফ্লোরিডা এসেই ওরা শুনেছিল বৃষ্টি হলে নাকি এলাকায় কুমির চলে আসে। বুশ ভাইপারের মতো বিষাক্ত সাপের দেখা মেলে বসতি এলাকায়। বনাঞ্চল থাকায় ফ্লোরিডায় কুমির আর সাপের প্রাদুর্ভাব বেশি। কিন্তু হিসেব তো তাতেও মেলে না। কুমির বা বুশ ভাইপারের দ্বারা আক্রান্ত হলে চিৎকার শোনা যেতো। তাছাড়া আরেকটা বিষয়, আমেরিকা আসবার আগে আন্টি দলের সবাইকে সাবধানতার কথা বললেও ফ্লোরিডার কথা বিশেষভাবে বলে দিয়েছেন। নিলীয়ার কান বাঁচিয়ে ওর বাবা যে ফ্লোরিডায় থাকে তাও জানিয়ে দলের সদস্যদেরকে সাবধান করে দিয়েছিলেন । তবে কি নিলীয়ার বাবা কিছু করেছেন! কি করতে পারে যে নিঃশব্দে আপুনিকে নাই করে দিবে। নাকি অন্য কিছু! অশরীরী কিছুর আশঙ্কাও উডিয়ে দিতে পারছে না। নিজেদের অজান্তেই গা ছমছম করে উঠছে ওদের।
গা ছমছম করার কারণ আরো আছে, পুলিশ জানিয়েছে, ফ্লোরিডার রাস্তার একটু ভিতর দিকটায় নিলীয়ার মতো স্পাইকের কালো জ্যাকেট এবং কালো বুট পড়া একজন মেয়েকে দিকভ্রান্তের মতো হেঁটে যেতে দেখেছে। পুলিশ ফলো করে কাছে যেতে যেতে আর খুঁজে পায়নি, পাশের গাছপালার ভিড়ে হারিয়ে ফেলেছে নিলীয়াকে। তারা ধারণা করছে, আশেপাশেই কোথাও অবস্থান করছে নিলীয়া এবং তারা আরও আশঙ্কা করছে নিলীয়া মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। ব্লু স্পাইডার দলের সদস্যদের মধ্যে কেউ কেউ হোটেল লবিতে নিলীয়ার মতো কাউকে হেঁটে যেতে দেখেছে। তন্ময়, যাকে নিলীয়া ছোট ভাইয়ের মতো ভালবাসে, সে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না,ম্যানেজার অজয় ভৌমিককে কাতর গলায় বলেছে,
অজয়’দা আমার বিশ্বাস আপুনি বেঁচে আছে। আপুনিকে কেউ না কেউ আটকে রেখে অত্যাচার করছে। আপুনির অনেক কষ্ট হচ্ছে, অনেক কষ্ট। রাতে আমার কাছে এসে অনেক কান্নাকাটি করে বলেছে। অজয়’দা আপুনির জন্য একটা কিছু করেন অজয়’দা।
তুমি কিছু ভেবো না, অবশ্যই কিছু করতে হবে। তুমি রেষ্ট নাও।
ম্যানেজার তন্ময়কে ঘুমের ওষুধ দেবার কথা ভাবছে। ভালো ঘুম হলে এই কষ্টের সময়টা পার করা সহজ হবে। যত দ্রুত সম্ভব ফ্লোরিডা ছাড়তে হবে। পুলিশ তো আবার দেশে ফেরার ব্যাপারে অবজেকশন দিয়ে রেখেছে। গভীর চিন্তায় পড়ে গেছে ম্যানেজারসহ পুরো দল। এরই মধ্যে হঠাৎ পুলিশের ফোন
সমুদ্রের ধারে নিলীয়ার মতো কাউকে হেঁটে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে, তারা ফটোর সাথে মিলিয়ে দেখে শিওর হয়েই কল করেছে। ওদেরকে অতি দ্রুত বিচে যেতে বলেছে। পুরো টিম অতি দ্রুত বিচের উদ্দেশে রওয়ানা করল, সহায়তার জন্য পুলিশের কিছু সদস্য ওদের সঙ্গী হলো। বিচের দূরত্ব কম নয়, ঘন্টা দুয়েক পর যখন ওরা বিচে পৌঁছালো তখন অনেক মানুষের ভিড়ে নিলীয়াকে আর খুঁজে পাওয়া গেলো না। ব্যর্থ,হতাশ হয়ে ফিরে এলো পুরো দল।
তন্ময় মাঝে মাঝে ফোন করে বিথীকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে, কিন্তু এতে বিথী কি একটুও চিন্তামুক্ত হতে পারে!
আন্টি আপনি চিন্তা করবেন না, আমেরিকার পুলিশ বলে কথা, ওরা ঠিকই আপুনিকে খুঁজে বের করবে। ভালো খবর আন্টি, আপুনিকে ওরা ট্রেস করতে পেরেছে, বেশ কয়েকবার ওরা আপুনিকে দেখতে পেয়েছে। এখন শুধু দরকার ব্যাটে বলে এক হওয়া।
পুলিশের বাধ্যবাধ্যকতায় আরও কিছুদিন ফ্লোরিডায় কাটিয়ে দেশে ফিরে এলো দল। নিলীয়ার হদিস আর মিলে নাই। পুলিশ তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে, কোথাও পায় নাই। পুলিশ ব্যান্ড দলের সব সদস্য এবং আয়োজকদের সকল তথ্য রেখে ওদেরকে ছেড়ে দিয়েছে। সবার ভাবনা বাংলাদেশে যেয়ে আন্টির মুখোমুখি কিভাবে হবে! হাসিখুশি প্রাণোচ্ছ্বল মেয়েটি চোখের পলকে উবে গেলো কিভাবে এর ব্যাখা দিবে, তা ওরা জানে না। এমন কি পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ আমেরিকার পুলিশ বাহিনীর কাছেও তা জানা নেই। আপুনীকে ফিরে পাবার জন্য ওরা চেষ্টার কোন কমতি করে নাই। লোকাল গভর্নমেন্টের সাথে দেখা করে আবেদন করেছে, তারা আশ্বস্ত করেছিল যত দ্রুত সম্ভব এর ফয়সালা করবেন। সিটি মেয়রের কাছে নিলীয়াকে উদ্ধারের জন্য আবেদন করেছে। না কেউই কোন ফয়সালা করতে পারে নাই। এত ঘোরাঘুরি খোঁজাখুঁজির পরও আপুনিকে জীবিত বা মৃত কোনভাবেই পেলো না দলের সদস্যরা। তবে এত খোঁজাখুঁজিতে আতংকিত হবার মতো কিছু তথ্য উপাত্ত ওদের সামনে এসে গেলো। ফ্লোরিডায় এর আগেও এমন হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তার চাইতেও ভয়ংকর কথা এর বেশির ভাগেরই কীভাবে হারলো, কোথায় হারালো কিছুই জানা যায় নাই। এই মিসিং কেইসগুলোর কোন উপযুক্ত ব্যাখা খোদ পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছেও নেই।
এখন আর কারো মুখোমুখি হবার মতো অবস্থায় নেই জীবন্মৃত বিথী। ঘরেই থাকে দিনরাত, খাওয়া দাওয়া তেমন করে না। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হয় না। কারো সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে না, কোন ভাবে বেঁচে আছে। বিথীর ভাইবোনেরা চেষ্টা করেছিল এই বাসা থেকে সরিয়ে নিজেদের কাছে নিয়ে যেতে, কিছুতেই রাজি হয়নি বিথী। বাসাটার যে দিকে চোখ যায় সেখানেই নিলীয়ার জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। নিলীয়ার জিনিস একটাও কাউকে ছুঁতে দেয় না। যেখানে যা ছিল তাই রেখে দিয়েছে। প্রতিদিন মুছে পরিষ্কার করে রাখে। যে কেউ বাসায় আসলে মনে হবে না নিলীয়া নেই।
নিলীয়ার আলাদা রুম থাকলেও রাতে বিথীর সাথেই ঘুমাতো। একদিনের জন্যও নিজের ঘরে রাত কাটায়নি। ক্লাসিক্যাল গান দিয়ে শুরু করেছিল আর নজরুলগীতি গাইতে খুব ভালোবাসত। কিন্তু ওর দরাজ ভরাট উচ্চস্বরের কন্ঠে উচ্চতালের গানগুলো খুব ভালো যায় এই মত এক সিনিয়র শিল্পীর। তার অনুরোধেই দুই একটা ব্যান্ডের গান গাইল। ব্যান্ডের গানগুলো ভীষণ জনপ্রিয় হলো। এরপর একটা ব্যান্ড দলের অনুরোধে তাদের সাথে যোগ দিল। ভোকাল হিসেবে বেশ অনেকগুলো জনপ্রিয় গান গেয়ে দর্শক শ্রোতার মন জয় করে নিল। সেই শুরু আর কখনই পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। গান গাইবার তীব্র ক্ষুধা থেকে নিজেই নিজেদেরএকটি ব্যান্ড দল তৈরী করল। গান গাইবার সময় পরিচয় এমন পাঁচজনের সাথে নিলীয়া, ছয়জনের দল। ভোকাল মুলত নিলীয়া অন্যরা ইন্সট্রুমেন্ট বাজানোর জন্য। ওদের ব্যান্ড দলের নাম দিল ‘ব্লু স্পাইডার’। দলের নামের সাথে মিল রেখে সকল সদস্যই ব্লু স্পাইডারের ট্যাটু এঁকেছে গায়ে, হাতে,পায়ে এমন কি মুখের কিছু অংশেও। নিলীয়ারও হাতে নীল রঙের ব্লু স্পাইডার আঁকা। আর একটা বেশ বড আকারের ব্লু স্পাইডারের উল্কি আছে বুকের উপরের অংশ থেকে গলা হয়ে থুতনি অব্দি । বিথীর একটুও ভালো লাগে না শরীরে উল্কি করা, কিন্তু মেয়েকে না করতে পারে না -‘থাক মেয়েটা যে ভাবে ভালো থাকে থাকুক, তাছাড়া নিলীয়া তো খারাপ কিছু করছে না।’
হাড্ডি চর্মসার দেহ নিয়ে বিছানায় জডোসডো হয়ে পড়ে আছে বিথী। এখন প্রতি রাতেই নিলীয়া আসে বিথীর কাছে। বিথীর বিছানায়,পায়ের কাছে অনেক অনেকগুলো ব্লু স্পাইডার গুটিসুটি হয়ে শুয়ে থাকে। ঘন নীল রঙের মাকড়সাগুলো প্রতিটার মুখ নিলীয়ার মুখ। রাত যত গভীর হয় মাকড়সাগুলো ক্রমেই সরব হয়ে উঠে। ওদের করুণ কান্নায় বিথী ভেঙে চুরে গুড়িয়ে গেলেও উঠে বসে বিছানায়, দুহাতে জড়িয়ে ধরে অগুণিত নিলীয়াকে। ওদের গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিতে থাকে। মিহি একটানা সুরে নিলীয়ার কন্ঠে কাঁদতে থাকে ব্লু স্পাইডারগুলো-
মা মাগো,আমাকে ওরা মেরে ফেলছে, মা আমাকে বাঁচাও…
নিলীয়ার সাথে বিথীও সুর মিলিয়ে কাঁদতে থাকে। কখনও কখনও কাঁদতে কাঁদতে নিলীয়াদেরকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ে বিথী, নিলীয়ারাও পরম নির্ভরতায় ঘুমিয়ে পড়ে বিথীর কোলে। বিথী কোল থেকে নামাতে ভয় পায়, যদি ওদের ঘুম ভেঙে যায়, তাহলে তো আবার কান্না শুরু করবে। এভাবে একসময় রাত শেষ হয়।
(৪)
এখন কাঙিক্ষত রাতের প্রতিক্ষায় বিথীর প্রতিটা দিন কাটে। কখন চারদিক অন্ধকার করে রাত নামবে আর বিথীর অন্ধকার ঘর আলোর বন্যায় ভেসে যাবে। তীব্র অপেক্ষার প্রহর গুনতে কখনই ক্লান্তি বোধ করে না বিথী। সারাদিনের কাজ গুছিয়ে ফেলে দ্রুত হাতে, কাজই বা কি থাকে ওর। প্রতিদিন বিছানায় পরিষ্কার চাদর, টান টান করে বিছিয়ে রাখে। দিনের শেষে সূর্য ডোবার প্রতীক্ষায় থাকে বিথী। ধীরে ধীরে রাত নামে বিথী বিছানায় যায়। রাত গভীর থেকে গভীর হয়, চুপ করে শুয়ে থাকে দু’চোখে ঘুম আসে না। দু’চোখ বেয়ে গডিয়ে পড়ে ফোটায় ফোটায় নোনা জল, যেন হৃদয়ের গভীর থেকে নিঃসৃত। নিঃশ্বাস বন্ধ করে শব্দহীন নিঃশ্বাড় পডে থাকে বিছানায়, নিলীয়ার আসতে যেন কোন কষ্ট না হয়। প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হয়। আসে, নিলীয়া আসে, এক নয় আসে অসংখ্য নিলীয়া। বিথীর শূন্য বিছানাটা ভরে উঠে ওদের সরব উপস্থিতিতে। ওদের কান্না, হাসি কথায় গমগম করে উঠে বিথীর চারপাশ। নিলীয়ার সাথে দুঃখ-বেদনা ভাগাভাগি করে নিজেকে অনেক হালকা লাগে বিথীর। নিলীয়াকে বুকে জড়িয়ে নেয়, দু’হাতে যত নিলীয়াকে একসাথে বুকে নেওয় যায় যেন ততই শান্তি। এবার শান্তির ঘুম ঘুমায় ক্লান্ত শ্রান্ত পর্যুদস্ত বিথী। অপার শান্তির ঘুমের কোলে বিথী। গভীর রাতের এ সময়টা বিথীর, একান্তই বিথীর। এ সময়টা নিলীয়ার, এ সময়টা বিথীর বুকের মানিক নিলীমনির। একসময় চারদিকে আলো ফোটে, শব্দেরা জেগে উঠে রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে। জাগে না, ঘুমের কোল থেকে উঠে দাঁড়ায় না শুধু বিথী।
Facebook Comments Sync