মানবিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা/ তাজনাহার মিলি
জনপ্রিয় কবি শাহাজান আবদালীর ভাষায় বলি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান/তোমার কথা কোনদিন ভুলবে না, কেউ/যতোদিন এই হাওয়া /প্রাণ খুলে গান গাওয়া /যতোদিন এ নদী তোড়পাড় ঢেউ/ যতোদিন এই ভাষা আমাদের মুখে/যতোদিন এই হাসি মুক্তির সুখে। তোমার স্মৃতি কখনোই হবে না সুদুর, সেই প্রিয় নাম শেখ মুজিবুর।
সম্ভবত: ৭৩ এর মাঝামাঝি বঙ্গবন্ধু সাতক্ষীরা সফরে গিয়েছিলেন। আমি ক্লাস থ্রিতে পড়ি তখন। নৌকায় বসেছিলেন, । আমি গলায় মালা দিয়েছিলাম। আমি তখন ছোট।
উচ্চমাত্রায় হৃদয়বান মানুষ ছিলেন। জীবন বাজি রেখে বিভিন্ন আন্দোলনের নেতৃত্ব থেকে জেল জীবন কাটিয়েছেন জীবনের অর্ধেক সময় হাসিমুখে। সবার জন্য, সবকিছু চাই। হয়ত বিভিন্ন সময়ে তা ভিন্ন মতে পড়লেও আজকের হিংসার উন্মত্ত পৃথিবীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চিরন্তন আলোক দিশারী। আধুনিক সভ্যতার নির্যাস।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কথা বলি। ভাবগর্ভ ও ভাবদীপ্ত, কুটনৈতিক প্রভাব, সবকিছুর উর্দ্ধে স্থান দিয়েছেন মানুষকে । প্রয়োজনে কঠোর হওয়া, যে ধরণের নেতৃত্বে দরকার তিনি তা নির্ভীকভাবেই দেখিয়েছেন।
সরলতা, নারীত্বের মমতাবোধ বজায় রেখে দুরুহ কাজ করছেন তিনি। জীবনের বহুমুখিতাকে পারঙ্গম করার ক্ষমতাই যে অন্তরের শক্তির উৎস, তা প্রমাণ করে দিচ্ছেন বার বার।
সরকারি ফরমে মায়ের নাম প্রদান বাধ্যতামূলক করার নীতিমালা প্রচলন করেছেন তিনি। তাঁর এই অনন্য কাজের মূল্যায়ন করে লেখার ভাষা আমার জানা নাই। আমি অনুভব করছি। তিনি যার যা পাওনা তার থেকে অনেক বেশি দিতে চেষ্টা করছেন। তাই মনের পরতে পরতে জমেছে দীর্ঘদিন ধরে ভালবাসা, শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা।
রাজার নীতিকে আত্মস্থ করে দক্ষ প্রশাসক হয়ে উঠেছেন তিনি। ১০/১২ লক্ষ রোহিঙ্গাকে আশ্রয়দান করেছেন নিজেদের সমস্যা সত্ত্বেও। নিজেদের সীমাবদ্ধতার পরও করোনা ভাইরাস মোকাবিলার জন্য চীনে ১০ লক্ষ গ্লাভস ও ৫ লক্ষ মাক্স প্রেরণ করেছেন।
দুরদর্শী নেতৃত্ব, মেধামনন, সৃজনশীলতা, নিষ্ঠায় সুনিপম কারিগর তিনি। যোগ্য কুটনৈতিক তৎপরতা, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান প্রক্রিয়া, খাদ্য,বস্ত্র শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করে বিশ্বে মানবিক প্রধানমন্ত্রীর হিসেবে পরিচিত হয়েছেন। নারীর উন্নয়ন/নিরাপত্তায় তাঁর সুদুরপ্রসারী কার্যক্রম অসাধারণ।
শেখ হাসিনা একটি রাজনৈতিক আবহে, রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করে বেড়ে উঠেন। তাই রাজনীতির গলি তার নিত্য সহচর। স্বাধীনতা আন্দোলনের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর আত্মজা তিনি। পিতার দেখা স্বপ্ন পূরণে তাই আলোর মশাল নিয়ে পথ হাঁটছেন। ১৯৮১ সালের ১৭ই মে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। এ দীর্ঘ বছরে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাংলাদেশের তথা বিশ্ব নেতায় পরিণত হয়েছেন। নুতন মেরুকরণ প্রত্যয়ে পদ্মা সেতু গড়তে উদ্যোগ নিয়েছেন। শেখ হাসিনা চিরকালের বাংলার মুখ। বিধস্ত আওয়ামী লীগকে একত্রীকরণ করে, ১নং দলে পরিণত করেছেন। তার দূরদর্শী নেতৃত্বে দল বলিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ১৯৯৬ সালে প্রথম এবং এবারসহ চারবার সরকার গঠন করেছে। যা বিশ্ব ইতিহাসের জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ।
মাদক দূরীকরণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছেন। নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশের স্বপ্ন বিরল। পদ্মা সেতু মাথা উঁচু করে দক্ষিণ বঙ্গকে সম্মানিত করেছে।
হৃদয়ের রক্তক্ষরণ নিয়ে পথ হাঁটছেন শেখ হাসিনা । সবাইকে সাথে নিয়ে পথ চলছেন তিনি। করছেন অক্লান্ত পরিশ্রম । বাবা না থাকার বেদনা কঠির। আমার ৩ বছরের মুন্নী, তাঁর আব্বা মারা যাওয়ার পর থেকেই আব্বার জন্য আকুতি ঝরত তার। চারবছর বয়সে স্কুলে ভর্তি করার সময় বাবার নাম চাই। ও দিতে চাইলো আমার দুলাভাইয়ের নাম। আবার ক্লাস নাইনে/ ম্যাট্রিক পরীক্ষার ফরমফিলাপে আমার ২য় স্বামীর নাম দিতে চাইতো। আমি তীব্র ব্যথায় কুঁকড়ে যেতাম। পবিত্র কোরান মজিদে আছে, পিতার নাম ছাড়া অন্য কোন পিতার নামে ব্যবহার করো না। এ রক্তাক্ত যন্ত্রণায় আমি ১৯৯৬ সালে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’ শিরোনামে পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখি। পিতার নামের পাশে মায়ের নাম লেখার ব্যবস্থা হোক। ১৯৯৭-৯৮ সালে সাবেক মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরে আমি সহকারী একান্ত সচিব থাকাকালীন সময়ে, মন্ত্রী মহোদয়কে বিষয়টি অবহিত করি। মন্ত্রী মহোদয় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে ডেকে মার নাম প্রচলন এর উদ্যোগ নেন। তখন থেকে পিতার নামের পাশে/ মাতার নাম লেখা প্রচলিত হয়। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দূর্যোগজনিত সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে বিশ্বসভায় দাঁড়িয়ে সমাধানের পরিকল্পিত টেকসই নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় প্রধনিমন্ত্রী।অসীম সাহস, দৃঢ় মনোবল ও অভীষ্ট লক্ষ্যে অবিচল নেতা জাগ্রত জনতার। ভালবাসার মধ্যমনি। তাই কবি শাহাজান আবদালীর চোখে, পিতৃহারা দেশ কেঁদেছে একাকী/আধারে থেকেছে ছেয়ে/দীর্ঘ শোকের হাহাকার ভেঙ্গে এলো জনকের মিষ্টি মেয়ে। জাতির পিতার কন্যা। তোমাকে স্যালুট জানায় জাতি। আলোয় আলোয় ঘুচলো আঁধার/ কাটলো দুঃখের রাত্রি।
Facebook Comments Sync