ঈদ এখন ইদ হয়ে গেছে/ মিথুন খান
ঈদ এখন ইদ হয়ে গেছে/ মিথুন খান
কোরবানির ঈদ মানেই ছিল আমাদের লাল গাভী । আমার আব্বা যতদিন বেচেঁ ছিলেন ঈদের চার পাঁচ দিন আগেই একটা লাল গাভী আর একটা কালো ছাগল কিনে আনতেন গাবতলীর হাট থেকে। গরু নিয়ে মজার স্মৃতি হল, একবার আমাদের গরু ছুটে গিয়েছিল। সবাই মিলে অনেক ঝামেলা করে ধরতে হয়েছে গরুকে। আরএকবার গরু হেটে আসবে না। তখন ঠেলাগাড়ি ছিল তাতে করে আনতে হল। আর পাড়ার ছেলে পেলেরা সব আমাদের ভেঙ্গাতে লাগলো, ‘তোমাদের গরু নেংড়া নুলা’ বলে। আর একবার আমাদের গাভীর দুধ দিয়ে আম্মা সেমাই রান্না করলেন। আমার ছোট ভাই প্রতি বছর গরুর জন্য কাঁদতো ও পালবে জবাই করতে দিবেনা এই বলে। আব্বা চলে যাবার পর কোরবানির গরু কেনাকে নিয়ে কোন আনন্দ পাই না। তখন রাত জেগে গরু পাহারা দিতে হত। সেকি আয়োজন ছিল কোরবানি ঈদ কে নিয়ে! বড় ঈদ বলা হত। বিশাল আয়োজন। হৈচৈ, বড় বড় হাড়িপাতিল, প্রচুর লোকজন। আম্মা বড় হাড়িতে টকদই দিয়ে মাংস চুলায় বসিয়ে দিতেন। কসাইরা খাবে। ভুড়ি ধোয়ার ও একটা আয়োজন। থাকতো । চুন ভিজিয়ে রাখা হত ভুড়ি ধোয়ার জন্য। মাংস বিলি করার পর জ্বাল দিয়ে রাখতো। সারাদিন দেখতাম আম্মাসহ কাজের লোকদের ব্যস্ততা। একটা গরীব মানুষও খালি হাতে ফিরে যেত না। এখনও কোরবানি হয়। আব্বার মত এত আয়োজন করে গরু কিনতেও যাওয়া হয়না। এত আনন্দ ও হয়না। আম্মার হাতের ঝুরা মাংস ভুড়ি, জ্বাল দেয়া মাংসের স্বাদও এখন নাই। আম্মা এখন আর পারেন না। জীবন থেকে ঈদ পানশে হয়ে গেছে। আমার মেয়েও কোন আনন্দ পায় না। আমার কোরবানি হয় শশুর বাড়িতে। মন পড়ে থাকে মায়ের বাড়িতে। তাই ঈদ এখন ইদ হয়ে গেছে।
Facebook Comments Sync