ধাওয়া (পর্ব-১১) / শাহানাজ শাহীন
ধারাবাহিক উপন্যাস
ধাওয়া (পর্ব-১১) / শাহানাজ শাহীন
টিনের দোচালা একটা লম্বা টানা ঘর । মাঝখান বরাবর ইটের সুরকি করা প্রবেশপথ। গ্রিলের জানালায় জানালায় প্রিন্টের পর্দা ঝুলছে ।
বারান্দায় দরজার পাশে কাঠের সাদা রঙের একটা বেঞ্চ পাতা । দুপাশে দেয়াল ঘেঁষে ফুলের গাছ ।
সামনের উঠোন জুড়ে সবুজ ঘাসে মোড়া । যেনো মখমলের চাদর পাতা ।
মাঝ বরাবর ইট গাথা। রাস্তা দরজা পর্যন্ত এসে ঠেকেছে । ডান দিকে শওকত মিয়ার ট্রাকটি পার্কিং করে রাখা আছে । সূর্যের আলো পড়ে এসেছে ।
সুহাসিনী বাগানে ফুল গাছে ও সদ্য বোনা ঘাসের উপরে পানি দিচ্ছে । শুক্রবার এ বাড়িতে বিরাজ করে একটা শান্তি শান্তি ভাব ।
বাবা লম্বা সময় ধরে ঘুমাতে থাকেন । মায়ের নাস্তা বানানোর তাড়া থাকে না । ভাইয়েরা তাদের গানের দলে উন্মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠান করা নিয়ে ব্যস্ত থাকে ।
তারা সন্ধ্যা নাগাদ বাড়ি ফেরে । কিন্তু এই
শুক্রবারের সকালটা ছিল সুহাসিনীর কাছে একটু রহস্যময় । মাথায় থাকা মেঘের ভাবনা দূর করতে
তাকে কিছু একটার মধ্যে ব্যস্ত থাকতে হবে ।
সুহাসিনী লম্বা পানির নলটি হাতে নিয়ে ফুলের গাছ
ও ঘাসের উপরে পানি দিচ্ছে । তার মাথায় চলছে ভাবনা ।
শওকত মিয়া দরজা খুলে বের হলেন । তার হাতে একটি চটের ব্যাগ । তিনি গাড় নীল রঙের ফুল হাতা শার্টের সাথে খাকি রঙের একটা প্যান্ট পরেছেন ।
তিনি চারদিকটা একবার চোখ বুলিয়ে দেখলেন । বিস্মিত হয়ে কন্যার দিকে তাকিয়ে রইলেন ।
পুরো বাড়ি বদলে গেছে ।
কন্যার প্রতি তার ভালবাসা যেনো পূর্ণতা পেলো ।
সৃষ্টিকর্তার কাছে মনে মনে প্রার্থনা করলেন ।
অতি আশর্যের চোখে তাকিয়ে তিনি বললেন,
” বাড়িটা তো একেবারে বদলে দিলি মা, তাই না?
গর্ব হচ্ছে তোর জন্য । “
তারপর তিনি দ্রুত পায়ে ট্রাকের দিকে যাচ্ছেন ।
সুহাসিনী পিছন ফিরে বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
” ধন্যবাদ বাবা ।”
শওকত মিয়া ট্রাকের দরজা খুলছেন । সুহাসিনী আশ্চর্যজনকভাবে পিছন থেকে বাবাকে বললো,
“কোথায় যাও?”
শওকত মিয়া ট্রাকের দরজা আধো খুলে ঘাড় ঘুরিয়ে মেয়েকে বললেন,
” মোতালেবকে দেখতে যাচ্ছি । আজ তার পঁয়ত্রিশতম জন্মদিন । “
তিনি ট্রাকের উপর উঠে চালকের আসনে বসলেন ।
দরজা বন্ধ করতে যাচ্ছেন ।
সুহাসিনী ছোট বাচ্চা মেয়ের মতো মুখ গম্ভীর করে বললো ,
” আমিও তোমার সাথে যেতে চাই । “
শওকত মিয়া ডান হাতে দরজার পাট্টা ধরে মেয়েকে বললেন,
” মাগো সকালটা আনন্দে কাটাও । বাড়িতে তোমার মায়ের সাথে থাক ।”
সে হন হন করে সামনে হেঁটে যেতে থাকল ।
মুখ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে । গম্ভীরতার শেষ পর্যায় চলছে । রাগি রাগি ভাব করে বললো,
” না , বাবা । আমি তোমার সাথে যাবো । “
শওকত মিয়া ট্রাক থেকে নেমে আসেন ।
” আমার লক্ষ্মী মা, শোন । মোতালেব কখনো কখনো….”
সুহাসিনী বাবার কথা শেষ করতে দেয় না ।
” আমিও যাচ্ছি বাবা ।”
শওকত মিয়া কিছুক্ষণ মেয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন,
” আচ্ছা । চল মাকে বলে আসি । “
Facebook Comments Sync