ধাওয়া (পর্ব-১১) / শাহানাজ শাহীন

ধাওয়া-7,8

ধাওয়া-5

ধারাবাহিক উপন্যাস 

ধাওয়া (পর্ব-১১) / শাহানাজ শাহীন 

 

টিনের দোচালা একটা লম্বা টানা ঘর । মাঝখান বরাবর ইটের সুরকি করা প্রবেশপথ। গ্রিলের জানালায়  জানালায় প্রিন্টের পর্দা ঝুলছে ।

বারান্দায় দরজার পাশে কাঠের সাদা রঙের একটা বেঞ্চ পাতা । দুপাশে দেয়াল ঘেঁষে ফুলের গাছ ।

সামনের উঠোন জুড়ে সবুজ ঘাসে মোড়া । যেনো মখমলের চাদর পাতা ।

মাঝ বরাবর ইট গাথা। রাস্তা দরজা পর্যন্ত এসে ঠেকেছে । ডান দিকে শওকত মিয়ার ট্রাকটি পার্কিং করে রাখা আছে । সূর্যের আলো পড়ে এসেছে । 

সুহাসিনী বাগানে ফুল গাছে ও সদ্য বোনা ঘাসের উপরে পানি দিচ্ছে । শুক্রবার এ বাড়িতে বিরাজ করে একটা শান্তি শান্তি ভাব ।

বাবা লম্বা সময় ধরে ঘুমাতে থাকেন । মায়ের নাস্তা বানানোর তাড়া থাকে না । ভাইয়েরা তাদের গানের দলে উন্মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠান করা নিয়ে ব্যস্ত থাকে ।

তারা সন্ধ্যা নাগাদ বাড়ি ফেরে । কিন্তু এই

শুক্রবারের সকালটা ছিল সুহাসিনীর কাছে একটু রহস্যময় । মাথায় থাকা মেঘের ভাবনা দূর করতে

তাকে কিছু একটার মধ্যে ব্যস্ত থাকতে হবে ।

সুহাসিনী লম্বা পানির নলটি হাতে নিয়ে ফুলের গাছ

ও ঘাসের উপরে পানি দিচ্ছে । তার মাথায় চলছে ভাবনা ।

 

শওকত মিয়া দরজা খুলে বের হলেন । তার হাতে একটি চটের ব্যাগ । তিনি গাড় নীল রঙের ফুল হাতা শার্টের সাথে খাকি রঙের একটা প্যান্ট পরেছেন ।

তিনি চারদিকটা একবার চোখ বুলিয়ে দেখলেন । বিস্মিত হয়ে কন্যার দিকে তাকিয়ে রইলেন ।

পুরো বাড়ি বদলে গেছে ।

কন্যার প্রতি তার ভালবাসা যেনো পূর্ণতা পেলো ।

সৃষ্টিকর্তার কাছে মনে মনে প্রার্থনা করলেন ।

অতি আশর্যের চোখে তাকিয়ে তিনি বললেন,

 

” বাড়িটা তো একেবারে বদলে দিলি মা, তাই না?

গর্ব হচ্ছে তোর জন্য । “

তারপর তিনি দ্রুত পায়ে ট্রাকের দিকে যাচ্ছেন ।

সুহাসিনী পিছন ফিরে বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,

 

” ধন্যবাদ বাবা ।”

শওকত মিয়া ট্রাকের দরজা খুলছেন । সুহাসিনী আশ্চর্যজনকভাবে পিছন থেকে বাবাকে বললো,

 

“কোথায় যাও?”

শওকত মিয়া ট্রাকের দরজা আধো খুলে ঘাড় ঘুরিয়ে মেয়েকে বললেন,

 

” মোতালেবকে দেখতে যাচ্ছি । আজ তার পঁয়ত্রিশতম জন্মদিন । “

 

তিনি ট্রাকের উপর উঠে চালকের আসনে বসলেন ।

দরজা বন্ধ করতে যাচ্ছেন । 

সুহাসিনী ছোট বাচ্চা মেয়ের মতো মুখ গম্ভীর করে বললো ,

” আমিও তোমার সাথে যেতে চাই । “

শওকত মিয়া ডান হাতে দরজার পাট্টা ধরে মেয়েকে বললেন,

” মাগো সকালটা আনন্দে কাটাও । বাড়িতে তোমার মায়ের সাথে থাক ।”

সে হন হন করে সামনে হেঁটে যেতে থাকল ।

মুখ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে । গম্ভীরতার শেষ পর্যায় চলছে । রাগি রাগি ভাব করে বললো,

 

” না , বাবা । আমি তোমার সাথে যাবো । “

শওকত মিয়া ট্রাক থেকে নেমে আসেন ।

 

” আমার লক্ষ্মী মা, শোন । মোতালেব কখনো কখনো….”

সুহাসিনী বাবার কথা শেষ করতে দেয় না ।

” আমিও যাচ্ছি বাবা ।”

শওকত মিয়া কিছুক্ষণ মেয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন,

” আচ্ছা । চল মাকে বলে আসি । “

শাহানাজ শাহীন
শাহানাজ শাহীন