বাংলাদেশের পাখি/ রক্তবীজ ডেস্ক

বাংলাদেশের পাখি

বাংলাদেশের পাখি

বাংলাদেশের পাখি/ রক্তবীজ ডেস্ক

রাঙা মানিকজোড়

রাঙা মানিকজোড়
রাঙা মানিকজোড়

রাঙা মানিকজোড় (বৈজ্ঞানিক নাম: Mycteria leucocephala) (ইংরেজি: Painted Stork), রঙ্গিলা বক বা সোনাজঙ্ঘা। বড় আকারের জলচর পাখি। মানিকজোড় জাতীয় পাখিদের মধ্যে এরাই সবচেয়ে সুন্দর। পাখিটি দক্ষিণ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার স্থানীয়। সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস, প্রায় ১৯ লাখ ৩০ হাজার বর্গ কিলোমিটার।বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা আশংকাজনক হারে কমে যাচ্ছে

একসময় দক্ষিণ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অধিকাংশ দেশে সচরাচর রাঙা মানিকজোড় দেখা যেত। পাকিস্তানে এরা খুব কম সংখ্যায় রয়েছে। এদের বিচরণ কেবল সিন্ধু উপত্যকায় সীমাবদ্ধ। গ্রীষ্মকালে নেপালের তেরাই অঞ্চলে এদের দেখা যায়। ভারতে এদের সচরাচর দেখা যায়। এককালে বাংলাদেশে এরা খুব ভাল অবস্থায় ছিল, বর্তমানে উপকূলীয় এলাকায় কদাচিৎ দেখা যায়। শ্রীলঙ্কায় শুষ্ক মৌসুমে এদের দেখা যায় না। মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম লাওস একসময় প্রচুর রাঙা মানিকজোড়ে আবাস প্রজননস্থল ছিল বর্তমানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছোট দল বা দুএকটি রাঙা মানিকজোড় দেখা যায়

রাঙা মানিকজোড় বেশ বড়সড় সাদা জলচর পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ৯৩ সেন্টিমিটার, ডানা ৫০ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ২৬. সেন্টিমিটার, লেজ ১৬ সেন্টিমিটার পা ২৪. সেন্টিমিটার। ওজন কেজি।[] প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মুখ পালকহীন চামড়া কমলাহলুদ। চামড়া প্রজনন মৌসুমে লালচে রঙ ধারন করে। ঘাড়, গলা পিঠ সাদা। দেহতলও সাদা, কেবল বুকে আড়াআড়ি কালো ডোরা থাকে। ডানার প্রান্তপালক মধ্যপালক কালো। ডানার কালো পালকঢাকনিতে সাদা ডোরা দেখা যায়। লেজের পালক টকটকে লাল বা গোলাপি। কিছু কালচে পালকও থাকে। চোখের রঙ খড়হলুদ। লম্বা ঠোঁটের গোড়া কমলাহলুদ। নিম্নমুখী ঠোঁটের আগা পাটকিলে। পা পায়ের পাতা মেটে বাদামি থেকে লালচে। স্ত্রী পুরুষ মানিকজোড় দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি মলিন সাদা। মাথা, ঘাড় ডানার ভেতরের পালকঢাকনি বাদামি

রাঙা মানিকজোড় নদীর পাড়, জলমগ্ন মাঠ, হ্রদ, কাদাচর, লবন চাষের জমিতে নদীর মোহনায় বিচরণ করে। সচরাচর জোড়ায় কিংবা ছোট দলে থাকে। অগভীর পানিতে হেঁটে ঠোঁট খুলে কাদায় ঢুকিয়ে এরা খাবার খুঁজে বেড়ায়। ঠোঁটে মাছ বা অন্যান্য খাবারের অস্তিত্ব টের পেলেই এরা সাথে সাথে ঠোঁট বন্ধ করে ফেলে। খাদ্যতালিকায় রয়েছে মাছ, ব্যাঙ, চিংড়ি, কাঁকড়া, জলজ পোকামাকড় ছোট সরীসৃপ। পানির ধারে এরা প্রায়ই একপায়ে ঠায় দাঁড়িয়ে বিশ্রাম করে।ওড়ার সময় প্রলম্বিত পা গলা কিছুটা নিচের দিকে ঝুঁকে থাকে। বৃত্তাকারে ধীরলয়ে ওড়ে, ক্রমে ওপরে উঠে যায়। গলায় তেমন শব্দ নেই। ভয় পেলে, উত্তেজিত হলে, আনন্দিত হলে বা বিপদে পড়লে দুঠোঁটে বাড়ি মেরে ঠক ঠক শব্দ তোলে

রাঙা মানিকজোড়
রাঙা মানিকজোড়

জুলাই থেকে অক্টোবর মাস এদের প্রজনন ঋতু। পুরুষ মানিকজোড় নেচে নেচে, লাফিয়ে সঙ্গিনীর মন জয় করার চেষ্টা করে। পুর্বরাগে এরা নিচু স্বরে গোঙানোর মত শব্দ করে ডাকে। উঁচু গাছে বা পানির নিকটবর্তী গাছে বিশাল বাসা করে। কাঠিকুঠি, শুকনো, সরু ডালপালা সাজিয়ে মাচার মত বাসা বানায়। পুরুষ মানিকজোড় বাসার বেশিরভাগ উপকরণ জোগাড় করে, স্ত্রী মানিকজোড় বাসা বানায়। বাসার মাঝখানের নিচু জায়গায় জলজ উদ্ভিদের পাতা, কচুরিপানার শুকনো শিকড়, শুকনো জলজ শ্যাওলা ইত্যাদি দিয়ে গদির মত বানায়। এক গাছে বা পাশাপাশি একাধিক গাছে অনেকগুলো পাখি মিলে কলোনি করে বাসা করে। এসব কলোনিতে পানকৌড়ি অন্যান্য বকও বাসা করে। বাসা বাঁধতে এরা তাড়াহুড়ো করে না; সেজন্য বাসা বানাতে ১৫ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়

এরা ডিম পাড়ে বিরতি দিয়ে ১০১২ দিন ধরে এরা ৫টি ডিম পাড়ে। সে কারণে ছানাও ফোটে বিরতি দিয়ে। ডিমগুলো বাদামি লম্বা দাগযুক্ত অনুজ্জ্বল সাদা। ডিমের মাপ . × . সেমি। মাবাবা দুজনেই ডিমে তা দেয়। ২৮৩২ দিনে ডিম ফুটে ছানা বের হয়। ছানরা উড়তে পারে ৫৫৬৫ দিনে। সদ্যোজাত ছানাদের রঙ তুলোট সাদা। বাবামা অর্ধেক হজম হওয়া খাবার সন্তানদের সামনে উগরে দেয়। ছানারা তাই খায়

তথ্যসূত্র ছবিঃ উইকিপিডিয়া