ভালোবাসার গল্প / আমিনুল ইসলাম
ভালোবাসার গল্প / আমিনুল ইসলাম
বাংলা, তোমাকে ভালোবাসি অন্য সব ভাষার চেয়ে বেশি
সেটা একারণে নয় যে-
জগতের সকল সোনাদানা কেবল তোমার আঁচলে
আর অন্যসব ভাষার ভান্ডারে শুধু
লোহা তামা, ব্রোঞ্জ ও পিতল;
তোমাকে বেশি ভালোবাসি একারণে যে,-
পৃথিবীতে এসে যে শব্দটি প্রথম উচ্চারণ করেছিলাম,
সেই একটিমাত্র শব্দ ছিল তোমার স্বরবর্ণ আর
ব্যঞ্জনবর্ণের বৃক্ষে রচিত সাতরঙা বাগান
যার ছায়া ও মায়া, রস ও কষ
আমাকে দিয়েছিল ভালোবাসায়
বেড়ে ওঠার সহায় ও সাহস, দেশ ও দুনিয়া।
অতঃপর তোমাকে সাথে নিয়ে মক্তবে আরবি শিখেছি,
পাঠশালায় ইংরেজি; সিনেমা দেখে হিন্দি:
‘পেয়ার কিয়া তো ডরনা কিয়া!’
কোনোটাই খারাপ লাগেনি;
তাদের প্রেমেও পড়েছি যদিও আমার
প্রথম ভালোবাসা হয়ে রয়ে গেছো তুমি
ঠিক যেমন মলি, আঁখি, ইতিদের ছাপিয়ে
ভালোবাসার সবুজ ক্যানভাসে
দিনেরাতে ভেসে ওঠে
সপ্তম শ্রেণির বই হাতে মহুয়ার মুখ।
হয়তো মনে আছে তোমার, হয়তো-বা ভুলে গেছো,
স্কুল যাওয়ার পথে
হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ একদিন চুমু খেলাম
মহুয়ার প্রভাতি রঙের গালে;
সেদিন তার গাল ফোলানো কাঁদন থামাতে
অব্যর্থ যে শব্দগুলো উচ্চারণ করেছিলাম,-
সেসব শব্দ ছিলো একটু ভিন্ ধরনের,
বলা যায়, তোমার প্রাপ্তবয়স্ক বর্ণমালার বাগান
যা বাইবেলের গন্দম বাগানের চেয়েও সুন্দর
এবং রসে-গন্ধে, সৌন্দর্যে-সম্মোহনে টইটম্বুর;
তার স্রোত আজও বহমান
আমার বাকল-ফাটা সত্তায়;
সেই ফল্গুধারা মাঝে মাঝে বাইরে আসে
কখনো কবিতা হয়ে
কখনো-বা হয়ে গান
যেভাবে পাহাড়ের অন্তরধারা
প্রকাশের বেদনায়
কোথাও ঝরনা, কোথাও-বা স্রোতস্বিনী।
আচ্ছা, স্বর্গের ভাষা কি—- হিব্রু, আরবি অথবা সংস্কৃত?
হয়তো হবে এ তিনটির কোনো একটি! অথবা একাধিক!
তা সে যাই হোক,
মধ্যপ্রাচ্যের অভিবাসী দুজন বাঙালির দেখা হলে
রাস্তায় কিংবা রেস্তোরাঁয় ,
অথবা বহুভাষী শব্দে সচকিত কোনো এয়ারপোর্টে,
তাদের ঠোঁটে যেমন ফুটে ওঠে বাংলাভাষা,
স্বর্গে যদি ঠাঁই হয় এই আমাদের,
স্বর্গীয় ভাষার সিলেবাস লংঘন করে,
এই আমি সেদিনও বলবো, ‘তোমাকে ভালোবাসি মহুয়া!’
Facebook Comments Sync