আকাশ পাতাল
অনুগল্প
আকাশ পাতাল
মহিম বাংলাদশেরে এক প্রত্যন্ত গ্রাম কেবল একটা চিঠি ও মাত্র ৩৭ টাকা সম্বল করে ঢাকায় সর্ম্পূণ অজানা এক বাড়িতে এসে ওঠে। চিিঠ পড়ে বাড়িওয়ালা মহিমকে বলেছিলিনে, ছেলেবেলার বন্ধুর অনুরোধ তিনি ফেলতে পারলেন না। তবে এখানে এক সপ্তাহের বেশি তিনি তাকে রাখতে পারবেন না। সত্বর কোন কাজ না পেলে কি হবে এই শঙ্কায় পাশের গ্রামের যে বন্ধুটি খুলনায় নেহাত ছোটখাটো একটা কাজ করত, নিজেরে শোচনীয় অবস্থা জানিয়ে মহিম তাকে একটা চিিঠ পাঠিয়েছিল। সপ্তাহ পেরুবার আগেই দু’দুটো ঘটনা ঘটলো। এক, দিন দিনেরে মাথায় সে মোটামুটি ভাল একটা চাকরি পেয়ে গেলো। দুই, পাঁচদিনের মাথায় খুলনায় কাজ করা সেই বন্ধু, মেজবাহর কাছ থেকে ১০০ টাকার একটা টি এম, ও, পেয়ে গেল। ভাগ্য খুলে যাবার এখানেই শেষ নয়। চার বছর চাকরির মাথায় সে ডিভি লটারিতে চান্স পেলে সোজা আমরেকিা চলে আসল। অড্ জবের পাশাপাশি নাইটে পড়াশুনা শেষে সে এখন ভাল চাকরি করে। আয়টা ফ্যালনা নয়। তনি বছরের মাথায় সে আর পাঁচজনের মতো দেশে বেড়াতে আসলো।
ঢাকা পৌঁছানোর দু’দনি পরে মেজবাহ এলো মহিমের শশুরবাড়িতে দেখা করতে। মহিম বলল, ‘চল কোন রেষ্টুরেন্টে গিয়ে খেতে খেতে কথা বলি। আমার কাছে তো দেশি টাকা নেই,, ডলার ভাঙাতে হবে।। মহিম টাকাগুলো যখন ব্রিফকেেসে ঢোকাচ্ছলি, মেজবাহ কেমন যেন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়েছিল। রেস্টুরেন্টে খাবার ফাঁকে মহিম মেজবাহ্ ও ভাবির জন্য আমেরিকা থেকে আনা দুটো সুন্দর প্রজেন্টেশন ব্যাগ থেকে বের করতে গেল। আশা ছিল উপহার পেয়ে মেজবাহ খুব খুশি হবে। কিন্তু সেদিক তাকিয়ে মেজবাহ ভীষণ রাগী হয়ে বলল, “ও সব কি বের করছ? রাখো সব”। তারপর খাওয়াটা শেষ না করে উঠে পড়ল। মহিম কিছুই বুঝে উঠতে পারল না।
আমেরিকায় ফিরে আসার আগের দিন মেজবাহ আবার দেখা করতে এসেছিল। বলল, “মহিম, তুমি এক কাজ কর ভাই। তুমি আমাকে বরং একটা টয়োটা গাড়ি কিনে দিয়ে যাও। অফিসের জপিগাড়ি চড়া তোমার ভাবিরর একেবারই পছন্দ নয়। শুনে মহিমের আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা’। বলল, ‘ক্যাশ টাকায় গাড়ি? নিউইর্য়কে আমার নিজের গাড়ি তিন বছরের কিস্তিতে নিতে হয়ছে। শোধ দিতে এখনো দু’বছর বাকী। কি ভাবছ? আমেরিকায় যারা থাকে তারা সবাই রকফেলোর? তিন বছর চাকরি করে যে কটা পয়সা বেঁচেছিল আর বাদ বাকী ক্রেডিট কার্ডের ধারের টাকায় মানুষের জন্য উপহার আর প্লেনের টিকেট কেটে দেশে বেড়াতে আসা। ফেরত গিয়ে আরও দু’বছর কাজ করে ধার গুলো শোধ করতে হবে। মেজবাহ্ কিছু না বলে অবিশ্বাসের একটা ভঙ্গী দেখিয়ে বেরিয়ে গেল।
এরপর আরো দু’বার ঢাকায় গিয়ে মেজবাহ্র সঙ্গে দেখা হয়েছে। একবার সে এসেছিল যেদিন মহিমের শাশুড়ির কুলখানি। বাড়িতে সবাই ব্যস্ত, অন্য পরিবেশ। দারোয়ান বাইরের কাউকে ঢুকতে দিচ্ছিল না। সে জেদাজেদি করাতে দারোয়ান এসে মহিমের পারমশিান নিয়ে তাকে আসতে দিল। এসবের মধ্যেই তার চা নাস্তার ব্যবস্থা করতে হলো। সে বলল, “বুঝতে পারছি তোমাদরে ঝামেলা। তবে আমি বেশি সময় নেব না। আমার রিটায়ারমেন্টের সময় হয়ে এসেছে। গভর্নমেন্টে কোর্য়াটারে আর থাকতে দেবে না। তুমি ভাই যাবার আগে গুলশানে আমার জন্য একটা বাড়ি কিনে দিয়ে যাও”। তৃতীয়বার যখন দেখা হয় বলল, “আমার হার্টের ভাল্ব চেঞ্জ করতে হবে। তোমার ভাবির কিডনিটা একেবারে গেছে। কিডনি ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট লাগবে। তুমি ভাই আমেরিকায় নিয়ে গিয়ে আমাদের দুজনের চিকিৎিসাটা করিয়ে দাও”।
একসময় মহিম না চাইতেই মেজবাহ্ খুব বড় একটা উপকার করছিল যখন সে সত্যিই অসহায় ছিল। সেই ঋণটা মহিম সদাই মনে রেখেছে এবং তা শোধ করার জন্য আপ্রাণ চষ্টো করেছে। কিন্তু মেজবাহর সাধ ও মহিমের সাধ্যের মধ্যে তফাত আকাশ পাতাল । জীবনে মহিম বহুজনকে সাহায্য করে নানা ঋণজালে আবদ্ধ করেছে। কিন্তু এই একটা জায়গায় কিছুতেই থৈ না পাওয়ার যন্ত্রণাটা তাকে প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খায়।
(শিকাগো)
Facebook Comments Sync