প্রথম প্রেমপত্র 

প্রথম প্রেমপত্র মধুছন্দা

সেদিনটার কথা খুব মনে পড়ে।  বড় হওয়ার সব প্রক্রিয়া তখন শুরু হয়ে গেছে আমার মধ্যে। এসেছে শরীরে মনে পরিবর্তন। পাড়ার ছেলেরা ভিন্নচোখে তাকায় । বড় ভাইরা অকারণে কাছে ষেঁষে আসে। বার বার জানতে চায়, কেমন আছি । আগে যারা ‘তুই’ করে বলত এখন ‘তুমি’ করে বলে। আর মা একদিন ঘরে ডেকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে বললেন, ‘সাবধান তুমি বড় হয়ে গেছ! এখন বুঝে  শুনে চলবে। পাড়া বেড়ানো চলবে না। ছেলেদের সাথে মিশবে না কিন্তু বলে দিলাম।’ কেন মিশব না সে কথা জিজ্ঞাসা করিনি মাকে। কারণে ততদিনে স্কুল বন্ধুদের কল্যাণে জেনে গেছি অনেক কিছু।

এমন সময় একদিন বিকেলবেলা পুকুরের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছি।  পাড়ার একটা বাচ্চা ছেলে দৌড়ে এসে আমার হাতে একটা কাগজ গুঁজে দিয়ে দৌড় দিলো। ‘কি দিলি, কি দিলি’ বলে চেঁচালে ও ছুটতে ছুটতে বলল, ‘পলাশ ভাই দিয়েছে । বলল, তোমাকে দিতে। আর  তোমাকে সাবধানে পড়তে।’ কেমন যেন পাকা হাসি ছেলেটার মুখে ।

আমি সাবধান হলাম। দ্রুত চিঠিটা চালান করে দিলাম কামিজের মধ্যে।  তখনও ব্রা পরা শুরু করিনি। চিঠিটা গলগল করে নামতে থাকল নিচে। কি করি কি করি! তাড়াতাড়ি ওটা গুঁজলাম পাজামায় । তারপর বাড়িতে ঢুকে সরাসরি দোতলায়। আর দরজা বন্ধ করে চিঠি খুলেছি কি খুলিনি বড়বোন দরজা ধাক্কাতে লাগল ।‘এই দরজা বন্ধ করে কি করছিস?  দরজা খোল।’

 দ্রুত চিঠি জায়গা মতো রাখলাম। তারপর বদনা হাতে ছুটলাম টয়লেটে। সেখানে দরজা বন্ধ করে কিছুটা নিশ্চিন্ত হলাম। দুরু দুরু বুকে খুললাম চিটিটা । ঝপ করে ঝরে পড়ল খানিকটা পাওডার। মৌ  মৌ গন্ধে ভরে গেল চারদিক। ছোট্ট চিঠি-

প্রিয়তমা,

‘তোমাকে খুব ভালবাসি। তোমাকে দেখলে আমার বুকের ভিতর দুরু দুরু করে। মনে হয় আমি তোমাকে নিয়ে কোথাও পালিয়ে যাই। যাবে নাকি আমার সাথে ? গেলে উত্তর দিও। ভয় নাই এখনই না বড় হয়ে । আর তোমার ভালবাসা চাই।

 তোমার প্রিয়তম’

পুনশ্চ: মায়ের পাউডারের কৌটো থেকে পাউডার ঢেলে দিলাম চিঠিতে । গন্ধটা ভাল না? বড় হয়ে তোমাকে অনেক পাউডার কিনে দেব। আর এর পরের বার মার কৌটো থেকে সেন্ট মাখিয়ে দেব তোমার চিঠিতে।

চিঠিটা বার বার পড়তে লাগলাম। আমার হাত কাঁপতে লাগল, বুক কাঁপতে লাগল। মনে হল, হাত থেকে ছিটকে প্যানের মধ্যে পড়ে যাবে চিঠিটা। প্রাণপণে চিঠিটা আঁকড়ে ধরলাম বুকে। আর একসময় খেয়াল হল অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে । সন্তর্পণে চিঠিটা পাজামায় গুঁজে বেরিয়ে এলাম। আর আধ ঘন্টার মধ্যে বার চারেক টয়লেটে গেলাম। বড়বোন বললেন, ‘হয়েছে কি, এত ঘন ঘন টয়লেটে যাচ্ছিস কেন? পেট গরম হয়েছে নাকি?’ আমি চেহারায় বেদনার ভাব ফুটিয়ে তুলে মাথা নাড়লাম।

কিছুক্ষণ পর মা টয়লেটে গেলেন ।  ফিরে এসে বললেন, ‘কী কান্ড সারাটা টয়লেট জুড়ে পাউডারের গন্ধ!’

 আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকালেন মা । আমি তাড়াতাড়ি সরে  গেলাম মার চোখের সীমানার নিরাপদ দূরত্বে।

 

মধুছন্দা