আজ মা দিবস মাকে নিয়ে দুটো শিক্ষামূলক গল্প/ রক্তবীজ ডেস্ক

আজ মা দিবস মাকে নিয়ে দুটো শিক্ষামূলক গল্প

আজ মা দিবস মাকে নিয়ে দুটো শিক্ষামূলক গল্প

আজ মা দিবস মাকে নিয়ে দুটো শিক্ষামূলক গল্প/ রক্তবীজ ডেস্ক

 

গল্প – ০১ :   বিখ্যাত বুজুর্গ বায়জীদ বােস্তামীর শৈশবের একটি ঘটনা। মাকে প্রচণ্ড রকম ভালােবাসতেন তিনি। কখনাে মায়ের অবাধ্য হতেন না। মনপ্রাণ ঢেলে মায়ের সেবা করতেন। সবসময় ভাবতেন, কিভাবে মাকে আরাে খুশি করা যায়।

 

এক শীতের রাতের ঘটনা। মায়ের শরীরটা কদিন ধরেই ভালাে নেই। সারাক্ষণ অসুস্থ মায়ের আশেপাশেই থাকেন বায়জীদ। মন দিয়ে মায়ের সেবা করেন। এক রাতে মায়ের পানির পিপাসা পেল। চোখ মেলে দেখলেন আদরের ছেলে পাশেই বসে আছে। বললেন,

বাবা, একটু পানি খাবাে।

 

মায়ের জন্য পানি আনতে গেল বায়জীদ। দেখলাে কলসিতে কোন পানি নেই। বায়জীদ তাড়াতাড়ি কলসি নিয়ে গেল কুয়াের পাড়ে। কলসিতে পানি ভরে ঘরে ফিরে দেখে মা ঘুমিয়ে পড়েছে। সে গ্লাসে পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাে মায়ের পাশে। অসুস্থ মাকে ডাকার সাহস হলাে না তার, যদি মায়ের কষ্ট হয়? আবার শুতেও যেতে পারছিল না, যদি সে ঘুমিয়ে পড়ে আর মা তখন পানি খেতে চান? সারা রাত ওভাবেই মায়ের পাশে বসে রইলাে বায়জীদ। ভাের রাতে ঘুম ভাঙলাে মায়ের। দেখলাে, ছেলে তার পানি নিয়ে বসে আছে।

 

মায়ের প্রতি ছেলের এই মাতৃভক্তি দেখে মায়ের মন আনন্দে ভরে গেল। তিনি আল্লাহর কাছে প্রাণ ভরে দোয়া করলেন তার ছেলের জন্য। তিনি বললেন, হে আল্লাহ, তুমি আমার বায়জীদকে অনেক বড় আলেম এবং বুজুর্গ বানিয়ে দাও। আল্লাহ তায়া’লা মায়ের দোয়া কবুল করে নিলেন। বায়জীদকে আল্লাহ অনেক জ্ঞান দিলেন। তাকে বানিয়ে দিলেন বিশ্ববিখ্যাত দরবেশ। আজো মানুষ তার কথা স্মরণ করে।

 

গল্প – ০২ :   মহানবীর (সা:) হাদিস সংগ্রহে যারা আজীবন পরিশ্রম করেছেন ইমাম বুখারী ছিলেন তাঁদের অগ্রণী। তাঁর পুরাে নাম ‘ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল বুখারী’ । তাঁর বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থের নাম সহীহ আল বুখারী’ । সংক্ষেপে আমরা একে বলি ‘বােখারী শরীফ’। শৈশবে তিনি কঠিন অসুখে পড়েন। অসুখ ভালাে হলেও তাঁর চোখ আর ভালাে হয়, তিনি অন্ধ হয়ে পড়েন।

 

ছেলে চোখে দেখতে পায় না এই দুঃখে অস্থির হয়ে পড়েন বুখারীর মা। অনেক চিকিৎসা করান, কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। মা দুর্ভাবনায় ছটফট করেন। সারাজীবন কি ছেলে দৃষ্টিহীন থাকবে? ছেলের চিন্তায় রাতে তাঁর ঘুম হয় না।

 

একদিন গভীর রাতে মা সিজদায় গিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর দরবারে কাতরভাবে মুনাজাত শুরু করলেন। বললেন, হে পরােয়ারদিগার, তুমি আমাকে একটি সুন্দর ছেলে দিয়েছিলে। সােনার টুকরাে ছেলের মুখ দেখে কত যে খুশি হয়েছিলাম আমি! আজ সেই ছেলে অন্ধ। ছেলের মুখের দিকে তাকালে কলিজা ফেটে যায় আমার । হে আল্লাহ, তুমি আমার ছেলেকে ভালাে করে দাও। তার চোখে আলাে দাও। তার অন্ধত্ব দূর করে দাও।’ কাঁদতে কাঁদতে রাত প্রায় শেষ হয়ে এলাে। এক সময় জায়নামাজেই ঘুমিয়ে পড়লেন মা।

 

ঘুমের ঘােরে স্বপ্ন দেখলেন তিনি। দেখলেন হযরত ইবরাহীম (আ:) তাঁর সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। বলছেন, “হে পূণ্যময়ী মা, আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করেছেন। আপনার ছেলে ভালাে হয়ে গেছে।’ জেগে উঠলেন তিনি। দেখলেন ফজরের সময় হয়ে এসেছে। অজু করে নামাজে দাঁড়াবার আগে তিনি ছেলেকে ডাকলেন। বললেন, “এসাে বাবা, অজু করবে, নামাজ পড়বে।

 

মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙলাে শিশু বুখারীর। চোখ মেলে তাকিয়েই সে চিৎকার করে উঠলাে, “মা, আমি দেখতে পাচ্ছি! সব দেখতে পাচ্ছি।

 

আমি ভালাে হয়ে গেছি মা!’ আনন্দে, খুশিতে, আবেগে মা আবার সেজদায় লুটিয়ে পড়লেন। চোখের পানিতে শােকর আদায় করলেন আল্লাহর।

 

কী অমােঘ শক্তি মায়ের দোয়ার। এক রাতের প্রার্থনায় দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছে তাঁর আদরের দুলাল। যে মায়ের দোয়ার এত মূল্য আল্লাহর দরবারে, আমাদের উচিত সেই মায়ের সেবা করা, তাঁর মনে কোনাে ধরনের কষ্ট না দেওয়া।