আকাশের ঠিকানা/ অনুপা দেওয়ানজী
আকাশের ঠিকানা/ অনুপা দেওয়ানজী
আকাশে তুমুল মেঘ জমেছে আজ।
দরজা জানালাগুলি সপাটে আনন্দ হিল্লোল তুলেছে।আবৃতা ত্রস্ত হাতে সেগুলি বন্ধ করতে করতে ভাবে, অনেকদিন পরে আকাশে এমন ঘন কালো মেঘ জমেছে।
সে গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠলো
” মেঘের পরে মেঘ জমেছে আঁধার করে আসে
আমায় কেন বসিয়ে রাখো একা দ্বারের পাশে। “
আবৃতা দরজা জানালা বন্ধ করতে না করতেই
আকাশ পাতাল কাঁপিয়ে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নেমে আসলো।
শোবার ঘরের বন্ধ জানালার এপারে এসে সে দাঁড়ালো বৃষ্টি দেখবে বলে।
বহুদূর পর্যন্ত আকাশ জুড়ে ঘন মেঘের দল বৃষ্টি ঝরিয়ে যাচ্ছে।
দেখে মনে হচ্ছে বৃষ্টি যেন ঘন ঝালরের মতো দিগন্ত জুড়ে দুলছে।
কি অপূর্ব সুন্দর দেখাচ্ছে!
উদাস দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে আবৃতা ভাবে,
বিশাল ওই আকাশটা একদিন যে তাকে চিনিয়েছিলো সে নিজেই এখন ওই আকাশের গভীরে হারিয়ে গেছে। আবৃতা তাই আকাশের ঠিকানাতেই মাঝে মাঝে তার কাছে চিঠি পাঠায়।
যদিও সে জানে না সে চিঠি তার কাছে আদৌ পৌঁছে কিনা।
জানার কোন উপায় তার নেই।
তাদের জগৎটাই যে এখন ভাগ হয়ে গেছে।
শ্রাবণের বৃষ্টি।
বৃষ্টির থৈ থৈ জলে পথঘাট সব ভেসে যাচ্ছে।
বৃষ্টি বিলাসী সে চিরকাল। বিশেষ করে শ্রাবণের বৃষ্টি যেন কোন এক বিরহীর কান্না।
জীবন, বন্ধন,জগৎ সংসারের পিছুটান সব যেন ম্লান হয়ে যায় এই কান্নার কাছে।
আবৃতা জানালার কাঁচটা সামান্য সরিয়ে মুখটা একটু বাড়াতেই অবাধ্য এক ঝলক হাওয়া এক মুঠো বৃষ্টি এনে তার চোখে, মুখে,বুকে ছুঁড়ে দিয়েই পালিয়ে গেলো।
মুহূর্তে কী এক শিহরণ যেন ছড়িয়ে গেলো তার সারা শরীরে। সে জানালার ধার থেকে সরে এসে দরজার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।
শ্রাবণের ওই আকাশ বুঝি তাকে ডাকছে। এই আমন্ত্রণ সে কীভাবে ফেরাবে?
আজ সে ওই আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে ওই বৃষ্টিতে ভিজবে।
কী এক মুগ্ধ আবেশে সে একটু আগেই নিজের হাতে বন্ধ করে দেয়া দরজার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো!
Facebook Comments Sync