আবার বাবা: আফসার উদ্দীন আহমেদ/ শারমিনা পারভিন

আবার বাবা: আফসার উদ্দীন আহমেদ

আবার বাবা: আফসার উদ্দীন আহমেদ

আবার বাবা: আফসার উদ্দীন আহমেদ/ শারমিনা পারভিন

 

বাবা মানে হাজার বিকেল

আমার ছেলেবেলা 

বাবা মানে রোজ সকালে 

পুতুল  পুতুল  খেলা

বাবা মানে কাটছে খেলা

যাচ্ছে  ভাল দিন 

বাবা মানে জমিয়ে  রাখা আমার অনেক ঋণ ।

বাবা মানে অনেক  চাওয়া, অনেক পাওয়া

বাবা মানে শূন্যতা, বাবা মানে পূর্ণতা ।

 

আজ বাবা দিবস ।

অন্যান্য দিনের  মতো  একটা দিন।

আমার কাছে বাবা মানে, বটবৃক্ষ । চিরন্তন  ভালবাসা।

উত্তপ্ত  সূর্যতলে সন্তানের জন্য  সুশীতল ছায়া।

বাবা মানে  নির্ভরকার আকাশ। আর নিঃসীম নিরাপত্তার  চাদর ।

 

আমি মনে করি, বাবা দিবস প্রতিটা দিন। তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে, কেন এ ঘটা করে লেখা?

তবে, এখানে আমার একটু কথা আছে । যান্ত্রিক  জীবনে  এই ছুটে বেড়ানোর মধ্যে আমরা বাবাকে কতটুকু  মনে করি!

তবে, যাদের  বাবা আছে, তাদের  চিত্রটা হয়তো ভিন্ন। তারা বাবাকে পাচ্ছে, ছুঁয়ে  দেখছে।

কিন্তু  আমরা? প্রতিদিন কতটা সময় বাবাকে মনে করছি?

 

তাই  আমি ব্যক্তিগতভাবে, মনে করি, হোকনা, একদিনই  বাবাকে ভালভাবে মনে করি।

স্মৃতি  হাতড়াই, কিছুটা  সময়ের জন্য,  বাবার কথা বলি, বাবাকে নিয়ে ভাবি, যে মানুষটা আমাদের  জন্য  জীবন  উৎসর্গ  করেছিলেন ।

যে মানুষটার হাত ধরে আমি পথচলা শিখেছিলাম, আমার বেড়ে উঠা, আমার সফলতায়  যার বুক ভরে উঠতো। আমার সামান্য  কষ্ট  যার বুকে শতভাগ হয়ে বাজতো।

 

সেই তো আমার বাবা। বাবা শুধু  একটা সম্পর্ক না, বিশালতার এক অদ্ভুত  মায়াবী  প্রকাশ

। অন্ধকারে  আলোর রেখা। যিনি শুধুই দ্যুতি ছড়িয়েছেন।

 

আমার বাবা, এ্যাডভোকেট  আফসার উদ্দিন  আহম্মেদ । আমার দেখা একজন জ্যোর্তিময় পুরুষ।

একজন মানুষের  মধ্যে  যে এত অসাধারণ  গুণ থাকতে পারে, তা ওনাকে না দেখলে বোঝা যাবে না ।

যদি ও জানি প্রতিটা  মানুষের  কাছে তারা বাবা সুপারম্যান।

আর এমনই তো হবার কথা!

 

আমার আব্বা  ছিলেন সদা হাসোজ্জ্বল, প্রাণোচ্ছল। ঠোঁটের  কোণে সব সময়ই  এক চিলতে হাসি উঁকি দিতো। সদালাপী, মিষ্টভাষী, পরোপকারী, বন্ধু বৎসল, সমাজহৈতেষী, শান্তশিষ্ট  নির্ভেজাল, ধীর স্বভাবের  একজন মানুষ  ছিলেন।

 

পৃথিবীতে  কিছু  মানুষ থাকে, যারা  অন্যের উপর  অসাধারণ প্রভাব ফেলে। আমার আব্বার এমনই  কিছু  অসাধারণ  গুণ ছিল। যেখানে যার সঙ্গে  আব্বার আলাপ হয়েছে,তার সাথেই  আব্বার আত্মীক  সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আব্বা  ছিলেন হ্যামিলনের বংশীবাদক। সবাই ওনার ব্যবহারে  মুগ্ধ  হতেন।

সবাইকে আকর্ষণ করার এক দুর্দমনীয় শক্তি  ছিল  আব্বার  মধ্যে। 

পিতা হিসেবে আব্বা  ছিলেন  খুবই  স্নেহময়। আমরা  ছয় ভাইবোন। আমি  সবার ছোট। ছোটবেলার অনেক  স্মৃতি  মন পড়ে। আব্বার সাথে চিত্রা নদীতে  গোসল করতে যেতাম। আব্বা  গা ঘসে ঘসে গোসল করিয়ে,পরম মমতায় মাথা মুছিয়ে  দিতেন। 

আমি  আব্বার কাছে ঘুমাতাম। আমি  যাতে বিছানা থেকে পড়ে না যাই,সেজন্যে  সারারাত আমার গায়ে হাত দিয়ে  রাখতেন।  বিদ্যুৎ  চলে গেলে সারারাত পাখা দিয়ে  বাতাস  করতেন। 

আব্বার তখন ছিল  প্রচুর পসার । অভাব  কী জিনিস  আমরা কোনদিনই  বুঝিনি। মৌসুমে  যখন যে ফল আসতো,আব্বা অনেক  করে নিয়ে  আসতেন। আর মাকে বলতেন,আমার ছেলে মেয়েরা চোখ ভরে খাক। যাতে ওদের  কোনদিনই  কোন জিনিসের প্রতি লোভ না হয়।

সত্যি  সত্যিই  আমাদের  ভাইবোনেরা  কোন কিছুর লোভ কোনদিনই   করিনি।

আব্বার বাজার করার নেশা  ছিল  খুব। বাজারের  সেরা মাছটা আব্বার চাই। বাজারে বড় মাছ এলে জেলেরা আব্বাকে খবর দিতো। বাসায় সকালে কলাপাতায় মাখন,আর বিকেলে গরম রসগোল্লা  আসতো। বাড়িতে  ভাই-,বোনেরা গেলে আব্বা  চার মুরগী নিয়ে  হাজির। আব্বা  ডালা ভরে মাছ কিনতেন। 

পাড়ার চাচারা  আব্বাকে ঠাট্টা  করে বলতেন, কি ভাইজান,ছেলে মেয়েরা বাড়ি এসেছে? আব্বা  স্বভাব সুলভ হাসতেন।

আব্বা যে শুধু  ছেলে মেয়েকে খাওয়াতেন,তা কিন্তু  নয়। আত্মীয়, অনাত্মীয়, পরিচিত, অপরিচিত, মক্কেল,প্রতিবেশী,সবার জন্য  সমান দরদ।

আমাদের  ছোটবেলায় দেখেছি, আমাদের  বাড়িটা ছিল  অভয়ারণ্য। মামা, খালা,চাচা,খালাতো মামাতো,চাচাতো ভাইবোন আত্মীয়, স্বজনে বাড়িটা ভরপুর থাকতো। বাড়িতে অনেক  আশ্রিত  থাকতো।

আব্বার আর একটা শখ ছিল, আত্মীয়  স্বজন,পরিজন, পরিচিতের বিয়ে দেয়া। দিয়েছেনও।

আর তারা সবাই  ভাল আছে।

পরবর্তীতে আমার বড় আপা সুফিয়া বেগম বুলবুল এ গুণটা পেয়েছিলেন। 

 

তখন নড়াইলে  পরীক্ষার  একটা মাত্র সেন্টার  ছিল। বৃত্তি  পরীক্ষা, ম্যাটিক পরীক্ষা, আই এ,বি,এ পরীক্ষার সময় অনেক  ছাত্র ছাএী আমাদের  বাড়ি থেকে পরীক্ষা  দিতো । আব্বা  ঝুড়ি  ঝুড়ি  বাজার করতেন,আর মা,পরম মমতায় রেঁধে  খাওয়াতেন।

এই কারণে আমরা ছোটবেলা থেকে এক অন্যরকম সামাজিক  পরিবেশে  বড় হয়েছি।

 

আব্বা  অংকে  খুব  ভাল ছিলেন, তেমন ভাল ছিলেন ইংরেজিতে। আমাদেরকে সব সময়ই  ইংলিশে  চিঠি  লিখতে বলতেন। জটিল  জটিল  অংক আব্বা  মুখে  মুখে  করে  ফেলতেন। আমরা কখনও অংক,ইংরেজি  টিচারের  কাছে পড়িনি। আমরা দুবোন বারান্দায়  বসে পড়তাম,আর আব্বা বৈঠকখানায় বসে উচ্চারণ  ঠিক  করে দিতেন। কোনো কথা কখনো  ভুলতেন না। একদম হুবহু যেকোনো ঘটনা বর্ণনা করতে পারতেন, দিন, সময়, তারিখ ধরে।

 

অসম্ভব  সুন্দর  বক্তৃতা দিতেন। স্পষ্ট  উচ্চারণ, অনর্গল   সাবলীলভাবে বলে যেতেন। যেটা পরবর্তীতে আমরা ভাইবোনেরা কম বেশি  পেয়েছি।

আব্বা  আবার খুব  কৌতুকপ্রিয় মানুষ  ছিলেন। যেকোনো কথা আব্বা  মজা করে বলতেন। অনেক  জোকস জানতেন।

যার কারণে আব্বা  যেখানে  যেতেন, সেই  জায়গাটা অনেক  আনন্দময়, প্রাণবন্ত হয়ে উঠতো।

 

আব্বা লেখাপড়ায়  ছিলেন  অনেক  মেধাবী। আব্বার  লেখা কিছু ইংরেজি  চিঠি  আমার কাছে আছে।

দাঁত  ভাঙা  ইংরেজি। আমার মনে হয়,কোন ইংরেজিতে  পাশ করা ছেলে মেয়ে এত সুন্দর  ইংরেজী জানে না।

আমার স্কুলের  পাশেই আব্বার  কোর্ট ভবন। টিফিনের  সময় হলেই  দৌড়ে চলে যেতাম আব্বার  কোর্ট ভবনে। আব্বা   সাথে সাথেই  মুহুরি রাজ্জাক ভাইকে বলতেন,  হ্যাপুকে চার আনা দিয়ে  দাও। 

তখন চার আনায় কত জিনিস  পাওয়া যেত!

আব্বার কাছে না পাওয়া কিছুই ছিল না। আব্বা যদি কোনও মিলাদে  যেতেন,আমাকে নিয়ে  যেতেন। তখন মিলাদে বাতাসা দিতো।  না গেলে মিলাদ থেকে এসে আমার হাতে বাতাসা দিতেন। আমি অপেক্ষা  করতাম,আব্বা  কখন বাতাসা নিয়ে  আসবেন।

আব্বা আমার মাকে চরম মূল্যায়ন করতেন। কোনদিন  দেখিনি, মার সাথে জোরে কথা বলতে। ঝগড়া ঝাটিরতো  প্রশ্নই ওঠে না। মা অসুস্থ  হলে আব্বাকে সারারাত  মাথার কাছে  বসে থাকতে দেখেছি। 

আর এখন? ঘরে বাইরে  দোস্ত  বন্ধু! 

কোথায় সেই  ভক্তি, শ্রদ্ধা! আমরা নিজেরা কি মায়ের  মতো হতে পেরেছি! 

একজন মানুষ যে সংসারে কতটা দায়িত্বশীল হতে পারে, সবার খেয়াল রাখতে পারে, ভালবাসতে পারে, আব্বাকে না দেখলে বোঝা যাবে না।

 

আব্বা  দেখতেও খুব  সুন্দর  ছিলেন। ফর্সা, লম্বা  নাক, চোখ  ভাসা ভাসা,বেশ পাতলা ছিপছিপে  ছোট  খাটো মানুষ। আব্বার বিশেষত্ব  ছিল রেশমের  মত সিল্কি চুল। সে চুল চিক চিক করতো।

আব্বাকে এই চুলে অসম্ভব  সুন্দর  লাগতো!

 

আব্বা  যখন কোট পরে কোর্টে যেতেন, অথবা শেরওয়ানী  পরে দাওয়াতে যেতেন মুগ্ধ  হয়ে  দেখতাম। মনে হতো পৃথিবীর  সবচেয়ে  সুদর্শন ব্যক্তি আমার আব্বা। 

সব মেয়ের কাছেই  বোধহয়  তার বাবা শ্রেষ্ঠ!

আব্বা  খুব  সৌখিন   ছিলেন। ভাল পোশাকের  প্রতি দূর্বলতা ছিল। 

কোনদিন  দেখিনি  হাত থেকে ঘড়ি খুলতে। শুধু  গোসল আর ওজুর সময় ঘড়ি খুলতেন।

যেদিন  আব্বা  মারা গেলেন,তখনও আব্বার  হাতে ঘড়ি পরা ছিল। এই ঘড়িটা ছোটআপু বৃত্তির টাকা দিয়ে  কিনে দিয়েছিল। মারা যাওয়ার আগ পযন্ত আব্বা  এই ঘড়িটাই,পড়তেন, আর সবাইকে  বলতেন,

আমার পপু বৃত্তির টাকা দিয়ে  এই ঘড়িটা কিনে দিয়েছে।

 

এ থেকে বোঝা যায়, আমার আব্বার  ভালবাসার গভীরতা! 

 

আমি যখন রোকেয়া হলে থাকতাম,আব্বা আমাকে সপ্তাহে  দুই  তিনটা চিঠি লিখতেন। সমস্ত  চিঠি থাকতো উপদেশে ভরা। সদালাপী  হও, মিষ্টভাষী  হও,তোমার ব্যবহারে কেউ যেন কষ্ট  না পায়,কখনও মিথ্যা কথা বলবে না,কারো অনিষ্ট  চিন্তা  করবে না। কারো  উপকার করতে না পারো, অপকার করবে না। নিয়মিত নামাজী হও। আব্বা  বলতেন,বাবা,মা মারা যাবার পর,কোন সন্তান  যদি  তার বাবা মায়ের কবরের  কাছে দাঁড়িয়ে  বলে, হে আল্লাহ  আমার বাবা মায়ের  গোনা মাফ করে দেন, আল্লাহ  তা কবুল করেন। কিন্তু  সেটা নামাজ ব্যতিরেকে হয় না। ফলে তুমি নামাজী হবে মা।

আজ যখন মাঝে মাঝে  নামাজে অনিয়ম করি, তখন নিজেকে  বড় অপরাধী  লাগে।

মনে হয় আব্বা  বড় কষ্ট  পাচ্ছেন। শুধু  তাই  নয়, আব্বা বলতেন, বন্ধুদের সাথে সদালাপী  হবে।

তাই  বোধহয়  আমরা এতটা বন্ধুবৎসল!

আব্বা  নিজেও খুব  নামাজী মানুষ  ছিলেন। জীবনে  কোনদিন  নামাজ কাজা করেননি।

যখন যে পরিস্থিতিতে থাকতেন,সেখানেই  নামাজ পড়ে ফেলতেন।

সকালে ঘুম  ভাঙতেো আব্বার সুমধুর  কন্ঠে কোরআান  তেলওয়াত শুনে। রাতে ঘুমাতে যেতাম,আব্বার জিকির শুনে।

 

আব্বা রাজনীতির  সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত  ছিলেন। বহুবার জেল খেটেছেন। নড়াইল মহকুমা আওয়ামী  লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি  ছিলেন। ছিলেন  ভাষাসৈনিক। ২০২১ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার আব্বাকে ভাষা আন্দোলন ক্ষেত্রে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করেছে। তেভাগা আন্দোলন, নীল  বিদ্রোহ,শিক্ষা  আন্দোলন, আরও অনেক  রাজনৈতিক  ব্যাপারে আব্বার  সম্পৃক্ততা  ছিল। 

আব্বার ছিল রাজনৈতিক  বর্ণাঢ্য জীবন । আব্বা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একান্ত অনুসারী।

বঙ্গবন্ধু  বেশ কয়েকবার  আমাদের  বাড়িতে  গিয়েছেন।মজলুম  জননেতা মওলানা ভাসানী  থেকে শুরু  করে , বহু গুণ  মানুষের  সমাগম ঘটেছে আমাদের  বাড়িতে। 

 

আব্বা  জন্মেছিলেন  চাঁচড়ার বিখ্যাত  বিশ্বাস  পরিবারে। আমার আব্বার বড় চাচা জমিদার ছিলেন। যদিও আব্বারা জমিদারি  ভোগ করতে পারেন নি। তবে আব্বাদের বিশ্বাস  বংশ অনেক  ঐতিহ্য  বহন করে।

 

পাশাপাশি আব্বার  ছিল  সমাজসেবামূলক কার্যক্রম। আব্বা  যশোর জেলা বোর্ডের সদস্য  ছিলেন। চাঁচড়া বালিকা বিদ্যালয়,তুলারামপুর স্কুল  প্রতিষ্ঠা, নড়াইল  জামে মসজিদের,সভাপতি (ছয় বার) মহিষখোলা মসজিদের  সাথে ছিল আব্বার  সম্পৃক্ততা।  একাধিকবার নড়াইল  বারের সভাপতি,পাবলিক লাইব্রেরির সভাপতি ছিলেন  কয়েকবার।

 ১৯৫২,১৯৫৬,১৯৫৮ সালে  গ্রেফতার হয়েছেন, পুলিশী নির্যাতন সয়েছেন, বের হয়েছে হুলিয়া

কয়েকবার। মুক্তিযুদ্ধের  সংগঠক ছিলেন।

সন্তান  হারিয়েছেন, বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে  দিয়েছে। বিনিময়ে  নেননি  কিছুই। শুধু  দিয়ে  গিয়েছেন।

 

নড়াইলের যে কেউ আব্বার কাছ থেকে খালি হাতে ফেরেননি। সবাইকে আব্বা  দু হাতে সাহায্য  করতেন। কখনও কথা দিয়ে, কখনও  টাকা দিয়ে। গরীব  মানুষের  কাছ থেকে টাকা না নিয়ে, বিনা পয়সায় মামলা করে দিতেন। কত মামলা যে আব্বা বিনা পয়সায় করেছেন,তার ইয়ত্তা নেই। 

যে যখন যেভাবেই  আসতো, আব্বা  উপকার করার চেষ্টা  করতেন।

তাইতো আব্বা  যেদিন চলে গেলেন,নড়াইলে জনস্রোত হয়েছিল। সবাই  বলছিল, বড় ভালো মানুষ  ছিলেন  ।  নড়াইল  একজন ভাল মানুষকে হারালো।

 

স্বাধীনতার পর আমরা সব হারিয়ে  নিঃস্ব হয়ে যাই। বড়দাকে  হারিয়ে  আব্বা হয়ে যান পঙ্গু। প্রাকটিস ছেড়ে দেন।জীবন হয়ে যায় স্থবির। 

আব্বার কথা লিখে বা বলে শেষ করা যাবে না।

মাঝে  মাঝে  যখন বড় কোন  সমস্যায় পড়ি,খুব  শরীর খারাপ লাগে, তখন মনে হয়, আব্বাতো সারারাত  মাথার কাছে বসে থাকতেন! গভীর  রাতে গিয়ে দোকানীকে ডেকে ওষুধ  নিয়ে  আসতেন। তখন বুকের  মধ্যে  বড় কষ্ট  হয়। হু হু করে মনটা!

সবাই  একে একে চলে গেল।ছোট  হয়ে আসছে পরিসর!

একটি কথা আজ খুব  মনে হচ্ছে। 

আমি  যত এলোমেলো 

ভুলের অভিধান 

বাবা তুমি  সময় মত,সহজ সমাধান 

জীবনের  টানাপোড়েন, কিছুই  না জানি 

বাবার কাছে হইনা,কালো আমি, কোনদিনই

বাবা ডাকে আদর করে হ্যাপু সোনামনি।

 

আব্বা  আপনি  ঘুমিয়ে  আছেন,,সুশোভিত  ফুলের বাগানে। মহান আল্লাহ  আপনাকে নিশ্চয়ই  বেহেশত  নসীব  করবেন!

আজকের  দিন নয়,সব দিনেই, আমার বাবাসহ পৃথিবীর  সব বাবাকে জানাই বিনম্র  শ্রদ্ধা।

শারমিনা পারভিন 
শারমিনা পারভিন