আমার যত চাওয়া –  ফিরোজ শ্রাবন

ফিরোজ শ্রাবন

আমার ছোট্ট এই জীবনে যত চাওয়া, যত পাওয়া সব তোমার জন্য। বিশ্বাস করো, তোমাকে পাবার জন্য আমি সব কিছু করতে পারি। আমি সাগর সেচেঁ মুক্তা এনে দিতে পারি । আরও কত কিছু..। কিন্তু আমি ভেবে পাই না এত সব কিছু রেখে তুমি কেন অন্যের পেছনে ছোটো। তোমার কি আমার প্রতি কোন ভালবাসা নেই?  তুমি কিন্তু আমাকে আর আগের মত ভালবাস না। আমি জানি তুমি স্বার্থের কারনণ আমাকে ব্যবহার করেছ। আজ আমার কাছে তোমার পাওয়ার কিছু নেই। তাই আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছ ।

জীবনের এই রঙিন দিনগুলো আর সমস্যার বেড়াজাল থেকে বের হয়ে আজ অনেকেই সংসার জীবনে বিচরণ করছেন। সেই না পাওয়া ভালবাসার স্মৃতি আজ আর আপনাকে কষ্ট দেয় না।  হয়ত আনন্দ দেয়। আবার অনেকে হয়ত এখনও তাকে ভুলতে পারেন না। তাহলে ধরে নিব হয়তো বাকি জীবনে তাকে ভুলে যাওয়া আর আপনার পক্ষ সম্ভব না। পৃথিবীতে আমরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি তার ধারে কাছেও আমরা না থেকে শুধু আশেপাশেই সময় কাটিয়েছি প্রতিনিয়ত। একজন নেতা বা একজন ভাইয়ের দেখা পাবার আশায় কত বিনিদ্র রাত কাটিয়েছি  তা ডায়েরির পাতা সাক্ষী হয়ে আছে। সামান্য ক্ষমতাবান মানুষের সাথে শুধু একখানা ছবি ফেসবুকে আপলোড দিয়ে বন্ধুদের জানিয়ে দিলাম, প্রিয় ভাইসব, আজ আমি বড় ভাইয়ের সাথে একান্ত আলাপচারিতায়। আমার ভাবখানা এমন যে, সৌভাগ্য আমার তা যেন আর কারোরই নেই। কিন্তু আফসোস পরের দৃশ্যপটের ব্যপারে আমি কতটা উদাসীন। যদি এই দৃশ্যাট বদলে যায় তাহলে এই ছবি ও হতে পারে আমার বিপদের কোন কারণ।  এমন হয়েছে ও যে, একসময় যারা ছিল ভাই-এর কাছের মানুষ আজ তারা আর ভাইয়ের কাছের মানুষ নেই । আবার এমনও হতে পারে ভাই সম্বোধন ঠিকই আছে, শুধু ভাইয়ের নামটা বদলে গেছে। এই ভাইয়ের নাম কখনও হাবিল অথবা কাবিল। আমরা খুব ছোট্ট একটা জনম নিয়ে দুনিয়াতে আসলাম। স্কুল কলেজে পড়ালেখায় যতটা মনযোগী তার চেয়ে বন্ধু-বান্ধবীদের খেদমতে ব্যয় করলাম প্রায় স্কুল কলেজের পুরোটা সময়। সামনের দিনের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে যখন আমি অসহায় তখন ভাইদের কল্যাণে কোন চাকুরি বা ব্যবসা তারপরে নিজের পছন্দমত বিয়ে করে সংসার করা। আর পেছনে পড়ে রইল বাবা মা। আমার বাবা মায়ের যত অবদান তা আমাকে আটকাতে না পারলেও বউয়ের আবদার আর শশুরবাড়ির সন্মান রাখতে যেয়ে আমি আমার জীবনটাকে সঁপে দিয়েছি ভাগ্যের হাতে।  আমি যখন আমার প্রভুর সামনে দাঁড়াতে যাই তখন দেখি যে আমার ষোল আনা জীবনের আর সামান্য বাকি আছে। এখন আমার রবের কাছে কি জবাব দেব? আমার রব কিভাবে সন্তুষ্ট তা না জানলেও আমাকে তার সান্নিধ্য পেতেই হবে। নিশ্চয় কোন আলেম-এর কাছে গেলে বা ওয়াজ মাহফিলে গেলে আমি আমার প্রভুর সান্নিধ্য পাব। কিন্তু কোন মাওলানার ওয়াজ শুনবো? এক একজন মাওলানার কাছে এক এক রকম দিকনির্দেশনা? আমি কোন পথে হাঁটবো? আমার পা অসম্ভব রকমের নাজুক । আমার যত্নে গড়া শরীরকে আমি বাইরের ধুলা বালি থেকে বাঁচিয়ে রেখেছি আজীবন। আজ আমি কিভাবে এত পথ পাড়ি দেব ? আমার শৈশব কৈশর সব কিছু আমি পার করে এসেছি। আজ অনেকেই আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন পরপারে। এখন কেন আমার বারবার মনে হচ্ছে, আমার রবের কাছে ফিরে যেতে হবে । যাদের সাথে আমার এত বন্ধুত্ব তারা কি আমাকে মনে রাখবে ? তারা কি আমার কবরের কাছে যাবে আমার জন্য দোয়া করতে ? অহ হো আমিতে  এতদিন ভুলেই গিয়েছিলাম বাবা মায়ের কবরের কাছে যেতে । আমাকে তাদের কবরের কাছে যেতে হবে। তাদের জন্য দোয়া করতে হবে । হায় আফসোস জীবদ্দশায় তাদের জন্য সময় দিতে পারিনি । হই হুল্লোড়ে কত সময় কাটিয়েছি। কখনও স্থির হয়ে বসে মা-বাবার দুঃখ সুখের কথা শোনার সময়ও আমার ছিল না। আজ আমার বৃদ্ধকাল এসে পড়লো বলে । আচ্ছা আমার সন্তানরা কি আমাকে বুকে আগলে রাখবে যেভাবে আমি তাদের বড় করেছি? নিশ্চয়ই তারা আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে না। কিন্তু আমার বাবা মাও তো আমাকে বুকের রক্ত পানি করে মানুষ করেছে । তার প্রতিদান আমি কি দিতে পেরেছি? আমার জীবনের সবগুলো বাঁকে আমি কি তাহলে শুধু ঋণের বোঝা বাড়িয়েছি শুধু! আমি কার কাছে যাব? আমার গ্রাম আমার স্মৃতি বিজড়িত সেই পুকুর আমাকে ডেকে ডেকে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। তারা আমাকে ভীষণ মিস করে। কিন্তু আমার তো বয়স হয়েছে। আমিতো আর আগের মত চলতে পারি না। আমার সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা না দিয়ে আমি কি তাহলে ভুল করেছি । তারা শুধু টাকা দিয়ে আমার মমতার প্রতিদান দিতে চায়। আমার পাশে বসে আমার দুচোখ জুড়ানোর এতটুক সময় তাদের হাতে নেই । আজ তারা ভীষণ ব্যস্ত,  যেমন আমিও ছিলাম । কিন্তু সেই ব্যস্ততা আমাকে আজ আর ডাকে না বলে তুমি এসব ঝুঝবে না। আমি আসলেই আর বুঝবো না। বোঝার বয়স আমার আগেই পার হয়ে গেছে । আমি যা পেরিয়ে এসেছি তা আবার ফিরে পাবো না। প্রাইমারী স্কুলের স্যারের সামনে পড়লে আমি আর পালাতে চাই না । আমি তার পা ধরে সালাম করতে চাই। আমি পরম যত্নে বাবা মায়ের পাশে বসে তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে চাই। আমি ফিরিয়ে দিতে চাই জোর করে ছিনিয়ে নেয়া বন্ধুর দোকান। আমি ব্যথা পেয়ে গালি না দিয়ে হাসিমুখে বল কুড়িয়ে ফেরত দিতে চাই। তাদের ক্ষমা করে দিতে চাই যারা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলো। আমি আমার জীবনকে আবার ফিরে পেতে চাই। ইয়া আল্লাহ আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমাকে আপনার ছায়াতলে আশ্রয় দিন প্রভু। আজ আমি অসহায়। কেউ না শুনলেও নিশ্চয়ই আপনি আমাকে শুনবেন। আমি আপনার সেই বান্দা যাকে আপনি বারবার ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

%d bloggers like this: