আপনি মূল্যবান নাকি মূল্যহীন:! / ফিরোজ শ্রাবন

ফিরোজ শ্রাবন

প্রিয় বন্ধুগন, আমরা এই পৃথিবীতে এসেছি মাত্র কয়েকটা দিনের জন্য তা আমরা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। সত্যি কথা বলতে, করোনা ভাইরাস আমাদেরকে নতুন করে আবার মনে করিয়ে দিল। আমরা যারা গর্ব করে বলতাম, আমাকে চিনিস আমি কে? দূর্ভাগ্য যে করোনা ভাইরাস তাদের কাউকেই চিনে না, শুধু জানে তার মালিকের হুকুম। আমরা মানি বা যারা না মানি আমরা কিন্তু সবাই কমবেশী জানি যে, পৃথিবীটা মহাশূনে ঘূর্ণ্যমান একটি গ্রহ মাত্র। যেটা আল্লাহর হুকুমে কোন একদিন ধ্বংস হবে, যার নাম কেয়ামত। মাঝে মাঝে আমাদের অবস্থা দেখে মনে হয় যে, আমরা সারাজীবন এই পৃথিবীতে থাকবো । প্রিয় ভাইসব, আমি আপনি কেউ থাকবো না এটাই সত্যি। আপনি যদি এই সত্যিটা মেনে নেন তাহলে আপনার জন্ম সার্থক, কারণ আমরা পৃথিবীর ক্ষনিকের অতিথি। তাই আমরা যে যত বেশী আল্লাহর ইবাদত করবো, ততই আমাদের নাজাতের ফয়সালা হবে। প্রিয় ভাইসব, সমালোচনা আজ আমাদের প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সরকার থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটা মূল্যবান মানুষ আজ সমালোচনায় জর্জরিত। কিন্তু আমি আপনি কি একবারও আত্মসমালোচনা করছি, যে আমার প্রতিটা দিন কিভাবে যাচ্ছে? গতকালের তুলনায় আজকের দিনটা আমার বেশি ইবাদতে এবং ভালো কাজে কেটেছে কিনা তার হিসেব কি মেলানোর সময় আমার হাতে আছে? প্রিয় ভাইসব, প্রত্যেকটা মানুষ যেভাবে তার একাডেমিক পরীক্ষার প্রস্তুুতি নেয় আমরা কি পরকালের সেই প্রস্তুুতি নিচ্ছি? নাকি অন্যের সমালোচনা করে মূল্যবান সময়গুলো পার করছি! জনৈক ব্যক্তি এক আলেম এর কাছে গেলেন । জানতে চাইলেন, আমার ইবাদত কেমন হওয়া উচিত?  উত্তরে তিনি বললেন, মৃত্যুর পূর্বদিনের মত। তিনি বললেন, আমি তো জানি না আমি কবে মারা যাব, আমি তো আজ বা আগামীকালই মারা যেতে পারি। তখন তিনি বললেন,  উত্তর তো আপনি নিজেই পেয়ে গেলেন। আর সেটা হচ্ছে, যে কোন দিনই আমাদের শেষ দিন হতে পারে। যারা আল্লাহর সন্তুুটির জন্য ইবাদত করছেন তারা নিশ্চয়ই পরকালের নাজাতের জন্য ইবাদত করছেন । কিন্তু আপনি যদি সাথে সাথে অন্যের সমালেচনাও চালু রাখেন  তাহলে কিন্তু আপনারই ক্ষতি। কারণ পরকালে যদি এমন হয় যে আপনি যার সমালোচনা করছেন আপনার নেকি গুলো তার মিজানের পাল্লা ভারি করছে তাহলে কিন্তু আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। একটা গল্গ বলি, এক লোক দীর্ঘদিন বিদেশ করে বাংলাদেশে এসেছেন।  বিমানবন্দরে এক ভিক্ষুক তার কাছে ভিক্ষা চাইলে তিনি ভাবলেন দেখি আমার দেশের মানুষ কতটা উদার হতে পেরেছে। তো তিনি ভিক্ষুককে একটা শর্ত দিলেন যে, আমি তোমাকে যা ভিক্ষা দিব তোমার পাশের ভিক্ষুককে তার দিগুণ ভিক্ষা দিব। বল, তুমি কত টাকা ভিক্ষা চাও ? তখন সাথে সাথে সে বলে উঠল, তাহলে আমার একটা চোখ অন্ধ করে দেন। কারণ আমার একটা চোখ অন্ধ করলে তো শর্ত অনুযায়ী তার দুইটা চোখই অন্ধ হবে।’ এই যদি হয় অবস্থা, এই যদি হয় উদারতার নিদর্শন তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কোথায় আছি আমরা। আমাদের যে উদারতার ঘাটতি আছে এটা বলা যেতেই পারে। তাহলে অন্যের সমালোচনা আসলে আমাদের ক্ষতিই বয়ে আনছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। একজন মূল্যবান মানুষ কখনও অন্যকে মূল্যহীন মনে করে না।  যারা মূল্যহীন তাদেরই সময় থাকে অন্যকে মূল্যহীন ভাবার। এবার মিলিয়ে নিতে পারেন আপনি কোন দলের। এই পৃথিবী  ছেড়ে যারা চলে যাচ্ছেন তারা আমাদেরকে কি বলে গেলেন তা নিয়ে আমরা ভীষণ স্মৃতিকাতর এবং সামাজিক মাধ্যমেও তার বহিঃপ্রকাশ বারবার ঘটে চলেছে। সাথে সাথে  আমি বা আমরা আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছি, ইয়া আল্লাহ আপনি তাকে কবরে নাজাতের ফয়সালা করে তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন,”আমীন” । সেটা কিন্তু বেশী জরুরী। আপনি হয়ত ভাবছেন এত ব্যস্ততার মাঝে তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করলাম, যথেষ্ট হয়েছে। প্রিয় ভাইসব, মোটেও যথেষ্ট হয়নি। কারণ আপনি তো সেটাই পাবেন যেটা আপনি কারো জন্য করবেন। মাঝে মাঝে এমনও হয় যে, তার জন্য দোয়া করা হয় যে, উপরে ভাল থাকবেন স্যার। ভাল থাকাটা যদি তার নিজের উপর নির্ভর করতো তাহলে তো কোন চিন্তাই ছিল না। সে তো আর হজ্জ বা ওমরাহ করতে যাচ্ছে না যে সব কিছু তার নিজের ইচ্ছায় হব।, যেমন সে যে হোটেলে থাকবে সেটা পাঁচতারা মানের হোটেল কিনা। এসি, ফ্রিজ সুবিধাসহ উন্নত মানের খাবারের ব্যবস্থা আছে কি না ইত্যাদি ইত্যাদি। পরকালে আমি আপনি যে সুযোগ বা সুবিধা পাবো তা কেবলমাত্র আল্লাহর করুণায় হবে। আমাদের ইচ্ছায় নয় । আবার কেউ কেউ বলে তার চলে যাওয়াটা অপূরণীয় ক্ষতি। বন্ধুগণ, এই ক্ষতিটা কিন্তু আমাদের না।  আমরা যারা বেঁচে আছি। ক্ষতিটা কিন্তু তারই, যিনি আজকে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন। কারণ তার বন্ধু বা স্বজনদের এমন সহানুভূতি বা দোয়া, সে যে দূর্ভাগা সেটাই প্রমাণ করে। সামাজিক মাধ্যম বা বন্ধুমহলে আপনি যা বলেন আর নামাজে দাড়িয়ে আপনি যা কিছু বলেন আল্লাহ সর্বজ্ঞ,, সর্বজ্ঞানী।

 সবশেষে বলবো যারা মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন পরকালে নাজাতের জন্য। তার অন্তরের খবর আমি আপনি না জানলেও যার জানা দরকার তিনি অর্ন্তযামী, তিনি সব জানেন। তাই আসুন প্রিয় ভাইসব, সবাই উদার হবার চেষ্টা করি। সময় যতটুকু হাতে আছে, নিজের কল্যাণের পাশাপাশি অন্যের জন্যও কিছুটা ব্যয় করার চেষ্টা করি। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হন, আমিন।

%d bloggers like this: