ভালোবাসা দিবসের ভাবনা/ ছন্দা দাশ

ভালোবাসা দিবসের ভাবনা

ভালোবাসা দিবসের ভাবনা

ভালোবাসা দিবসের ভাবনা/ ছন্দা দাশ

 

আজ ভালোবাসা দিবস।  তাহলে প্রশ্ন আসে অন্য দিনগুলো কী ভালোবাসাহীন? সত্যিই তো একটি বিশেষ দিনকে কেন ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে বলবে, “রাঙিয়ে দিয়ে  যাও যাও!” এনিয়ে অবশ্য অনেক তথ্য, অনেক ইতিহাস আমাদের জানা। কারো মতে গ্রীক কবি সাফো প্রথম তাঁর কবিতায় প্রকৃতির প্রতি প্রথম ফাগুনে ভালোবাসার কথা ব্যক্ত করেছিলেন ।সে ভালোবাসা ছিলো সর্বজনীন। এরপরে ক্রমে ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস হিসেবে সবাই  পালন করতে দেখা যায়।  আবার এও কথিত আছে, রোমে সেন্ট ভেলেন্টাইন নামে এক  পাদ্রি অন্ধ এক মেয়ের চোখ ভালো হওয়ার জন্য সবাইকে নিয়ে প্রার্থনা করে তার দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে এনেছিলেন। অন্ধ মেয়েটি দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার পর সেই পাদ্রির সাথে দেখা করে এবং ভালোবেসে বিয়ে করে। তার অপরাধে রাজা তাদের মৃত্যুদণ্ড দেন। দিনটি ছিলো ১৪ই ফেব্রুয়ারি। তারপর থেকে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভেলেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা দিবস হিসেবে বিভিন্ন দেশে  পালন  করা হয়। আবার অন্য অনেক কাহিনিও প্রচলিত আছে।  কোনটা যে সঠিক তা নিয়ে মতবিরোধ আছে।  আমি নিজে মনে করি টানা দুমাস শীতের রুক্ষ আবহাওয়া, প্রকৃতির কাঙাল, রিক্ত মুখখানা  মানুষকে প্রকৃতির মতোই অনেকটা নির্জীব আর প্রাণহীন  করে রাখে। পৌষ আর মাঘের পর যেই ফাল্গুনের আগমন হয় অমনি যেনে জেগে ওঠে সমস্ত জগৎ সংসার। সে আনন্দ আকাশে বাতাসে, জলে-স্থলে, গাছের পাতায় পাতায় যেন ছড়িয়ে পড়ে । মানুষ কী আর তখন ঘুমিয়ে থাকতে পারে? অবধারিত ভাবে সেও গেয়ে ওঠে

” আজ দক্ষিণ দুয়ার খোলা “।

 

প্রকৃতির প্রভাব জীবনকে প্রভাবিত করবেই এ সহজ সত্যটা কে না জানে? বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। ছয়টি ঋতুর মধ্যে বসন্ত হচ্ছে ঋতুর রাজা।  কারণ এই ঋতুতেই

তো প্রকৃতি সাজে অপরূপ সাজে। মরা ডালে জেগে ওঠে নবীন সবুজ পাতা। গাছে গাছে অজস্র ফুল ফোটে, পাখির কলকণ্ঠে মিলনের মধুর আহ্বান, প্রজাপতি ফুলে ফুলে ছন্দ তোলে। এ সময় ঘটে পরাগায়ন। মানুষও এই সময় হয়ে ওঠে যেন প্রমিক। সে প্রেম প্রকৃতির প্রতি হোক বা মানুষের প্রতি। কবি, লেখক, শিল্পীর চেতনায় তার প্রকাশ সমুজ্জ্বল।

বাংলাদেশ কিন্তু এই ভালোবাসা দিবসের কথা মানুষ জানতো না। কিন্তু ফাল্গুন এলেই যেন বলে দেয়, “ওরে গৃহবাসী, খোল দ্বার খোল, লাগলো যে দোল”।

অশোক,পলাশ, শিমুলের রক্তিম বনে কোকিলের কুহু ডাক সবই যেন মন রাঙানোর ফাঁদ।

আমাদের সময় অর্থাৎ শৈশবে ভালোবাসা দিবস বলে কোন দিবস পালন করা দূরে থাকুক, নামও শুনিনি। ভালোবাসা শব্দটাই মুখে আনা ছিল অপরাধ। বড়দের সামনে এমন কিছু বলবো বা করবো তা আমরা ভাবতেই পারতামনা। অথচ কয়েক যুগের ব্যবধানে কতো বিশাল পরিবর্তন। আজকের প্রজন্ম এদিক দিয়ে অনেক বেশি ভাগ্যবান। এই দিনে এখন ভালোবাসার জোয়ারে ভাসছে তরুণ, তরুণী, কিশোর, কিশোরি।তারা তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করছে কতো সহজ সাবলীল ভাষায়। ওদের জন্যে দোকান পাট সাজছে নতুন সাজে। বিনোদনের মাধ্যমগুলোও প্রচার করছে  বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। আমি ফিরে যাচ্ছি  পেছনের দিকে। কারণ ভালোবাসা এ শব্দটাই ছিল আমাদের প্রজন্মের কাছে গভীর গোপন  মধুর একটা শব্দ। যা প্রকাশ করার নয়, শুধুই অনুভবের। আজকের এদিনে পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা, টিভিতে বিশেষ অনুষ্ঠান বিচিত্র পোশাক, কার্ড, উপহার কার না মন রাঙ্গায়? কাল রাত থেকেই টেলিফোন, মোবাইলে লাইন পাওয়া ভার আজ বিশেষ  কথাটি বলার জন্যে। আমরা যখন একটা বিশেষ লাইন লেখার জন্যে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দের বই ঘেঁটে হয়রান,  এ প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা কেনা কার্ড কিংবা মোবাইলে তৈরি করা মেসেজ পাঠিয়ে দেয় কতো সহজে। প্রযুক্তিও ওদের জন্য তৈরি। আমাদের অবশ্য ক্ষতি কিছু হয়নি। এই সুযোগে পড়া হয়ে গিয়েছে কত কবিতা, কত লেখা। গড়ে উঠেছে সাহিত্যের সাথে বন্ধন। এমনি করেই অনেকে হয়েছেন লেখক । কিন্ত হয়নি বলা সেই বিশেষ কথাটি।  আমাদের দেশে আজ “আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে”। ভালোবাসাহীন জীবন কেইবা চায়?তাই সবাই আজ ভালোবাসার রঙ্গে রাঙ্গিয়ে বলি “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।”

ছন্দা দাশ 
ছন্দা দাশ