ভাষা আন্দোলন ও বিশ্বায়ন – তাজহানার মিলি

তাজহানার মিলি

প্রায় দু’যুগ আগে বাংলাভাষা আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃত পায়। খবরটা শুনেছিলাম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১৮ তলার অফিসরুমে বসে। অন্য রকম আনন্দের অনুভূতিতে আপ্লুত হয়েছিলাম তখন।

এটা সম্ভব হয়েছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক  চেষ্টায়। সাথে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী জনাব এইচ কে সাদেক , শিক্ষা সচিব ও সংশ্লিষ্টরা। অজানা অসংখ্য কর্মীও নিবেদিতভাবে  কাজ করেছিল এ বিষয়ে । বাংলা আমার প্রাণের ভাষা, মায়ের ভাষা। অস্তিত্বের ভাষা । তাই আনন্দে কান্না পেয়েছিল। মনে হচ্ছিল পাখির মত ডানা মেলে দিই। উথাল-পাতাল আনন্দের টেউয়ে চারিদিকে মুগ্ধতা ছড়াই। ১৯৫২ সালে ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গীকৃতদের মনে মনে সালাম জানাই।

ভাষা শহিদ রফিক উদ্দিন আহমেদ, আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, শফিউর রহমান, আব্দুস সালাম,  আব্দুল আউয়াল, অহিউল্লাহসহ জানা অজানা অসংখ্য শহিদের উদ্দেশ্যে সালাম জানাই। তাঁরা সবাই  শ্রদ্ধাভরে স্মরণীয়।

তারপর এক অনুষ্ঠানের কথা মনে আছে। পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল সে অনুষ্ঠানে। ধর্মীয় বাণী পাঠ হয়েছিল। পাঠ হয়েছিল বিভিন্ন প্রবন্ধ । অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা উচ্চারিত হয়েছিল। স্থায়ী ইস্টিটিউটের দাবী উঠে। পরবর্তীতে সে দাবী পূরণ  হয়েছে। প্রধান অতিথি ও সভাপতি তাদের বক্তব্যে বাংলা ভাষার জন্য আত্মবির্সজন-এর ইতিহাস বর্ণনা করেছিলেন।

অপরিসীম যন্ত্রণা আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পার করার কথা। আমরা যারা স্বাধীন দেশে জন্মেছি, তারা ভাষা আন্দোলনের ত্যাগের কোটিভাগের একভাগও অনুভব করতে পারি না। বইতে পড়ি মাত্র। গল্প শুনে এরকম ভয়াবহ কষ্টের অনুভূতির সম্পূর্ণ তীব্রতা কল্পনায় পাওয়া যায় না। বাংলা ভাষা এক বুক রক্তের স্রোতের উপর অর্জন। স্বাধীন দেশে বাংলাভাষায় বসে কথা বলা, দাপ্তরিক কাজ করা, বিদ্যা/শিক্ষা করা এ সবই সম্ভর হয়েছে অনেক রক্ত ঝরিয়ে।

এ অর্জরঅত্যন্ত সম্মানের। রক্ত, স্বেদ ও বেদনায় অর্জিত ভাষা নিঃশ্বাসের মতই প্রয়োজনীয়। অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আগামী প্রজন্মকে এ অর্জন রক্ষা করার জন্য  সচেষ্ট থাকতে হবে। বাংলা তাই বিদেশে বাংলাদেশের সকল দুতাবাসের উদ্যোগে বাংলায় লেখাপড়া করার ব্যবস্থা থাকা উচিত। বাংলা শেখার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করা উচিত।

বাংলা  যেন শুধুই ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে সীমাবদ্ধ না হয়। সরকারী চাকরির ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা জানা আবশ্যিক করা দরকার। ইংরেজি/ অন্য ভাষার স্কুলগুলোতে বাংলা ভাষা পড়ানো বাধ্যতামূলক করা দরকার। সবার সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে হবে। উচ্চশিক্ষার বইগুলোতেও ইংরেজির সাথে বাংলায় লেখানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

দেশে প্রচুর সমস্যা আছে। জিনিসপত্রের কৃত্রিম দাম বাড়ানো, দেশী বিদেশী চক্রের ষড়যন্ত্র, শিশু ধর্ষণ, রোহিঙ্গা সমস্যা, করোনা সমস্যা, জটিল জটিল বহুমুখী সমস্যার মধ্যেও বাংলা ভাষার ব্যবহার/প্রয়োগ জরুরী। এ সংস্কৃতির সংকট কাটিয়ে নবীন প্রজন্মের মনে নিজের মাতৃভাষা সংস্কৃতি মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা জরুরী।

৫২ এর ভাষা আন্দোলনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ১৯৯৮ সালে আমরা পেয়েছি। শহীদদের আত্মা শান্তি পেয়েছে। মাতৃভাষাকে ভালবাসা, মাতৃঋণ শোধ/প্রতিপালনের মতই। পৃথিবীতে অসাম্য থাকা স্বাভাবিক। ছিদ্রগুলি ভরিয়ে সাম্য প্রতিষ্ঠা দরকার। চেতনা দরকার। বর্তমানে বিশ্বায়ন একটি প্রক্রিয়া। বাংলাকে তথ্যনিষ্ঠ ও যুক্তিসংগতভাবে উপযোগী করে তুলতে হবে।

বাংলাভাষাকে উন্নয়নশীল থেকে উন্নত করে সর্বোচ্চ গৌরবে প্রতিষ্ঠিত করা দরকার।  আমরা সবার মুখে মুখে বাংলাভাষায় কথন শুনতে চাই। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

%d bloggers like this: