ভাষা আন্দোলনে নারী / আফরোজা অদিতি

ভাষা আন্দোলনে নারী

ভাষা আন্দোলনে নারী

ভাষা আন্দোলনে নারী / আফরোজা অদিতি

 

১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তখনকার পূর্ব বাংলায় সংঘটিত সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল বাংলা ভাষা আন্দোলন। ১৯৪৭ সালে বৃটিশ ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান ও ভারত দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। কিন্তু এখানে একটা কথা থেকে যায়; পাকিস্তান রাষ্ট্রকে যে দুটি অংশে ভাগ করা হয় তার একটি পূর্ব পাকিস্তান ও অন্যটি পশ্চিম পাকিস্তান। কিন্তু এই দুটি অংশ এমনভাবে ভাগ করা হয় যে দুটি অংশের মাঝে ভারত অবস্থান করে অর্থাৎ ভারতকে মাঝখানে রেখে এদিকে পশ্চিম পাকিস্তান ও অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তান ভাগ করা হয়।  প্রায় দুইহাজার কিলোমিটার (১২৪৩ মাইল) দূরত্বের এই দুটি অংশের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগলিক ও ভাষাগত দিক থেকে বিস্তর মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান ছিল। মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান থাকায় পাকিস্তান সরকার যখন ঘোষণা করে “উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা”  পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষাভাষী জনগণ এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি। ফলে বাঙালি জনগণের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয় এবং তার ফলে বাংলাভাষার দাবিতে আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে। এই আন্দোলন দমনে ১৪৪ ধারা জারি করে সরকার ঢাকা শহরে মিছিল সমাবেশ ইত্যাদি বেআইনি ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন যখন পল্টন ময়দানে এক জনসভায় মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ্-এর ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করেন তখন এই বক্তৃতার প্রতিবাদে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ধর্মঘট পালন করে। ছাত্রসমাজ মিছিল করে এবং তাঁদের ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগানে শ্লোগানে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে উঠে। ১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার লাইব্রেরি হলে অনুষ্ঠিত এক সভায় মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে  ৪০ সদস্যের ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদ’ গঠিত হয়। সভায় বাংলার রোমানীকরণ এবং আরবিলিপিতে বাংলা লেখার সরকারি প্রস্তাবের বিরোধিতা করা হয় এবং ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত সমর্থন করা হয়। এই পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল, স]মাবেশ ও মিছিলের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে যে আন্দোলন শুরু হয় তার চরম প্রকাশ ঘটে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। সরকার স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সভা, সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং ১৪৪ ধারা জারি করে । ছাত্রসমাজ সরকারের জারি করা ১৪৪ ধারা ভেঙে পথে  নেমে এবং মিছিল করে। ঐ মিছিলে পাকিস্তান সরকারের পুলিশ ফোর্স গুলি চালায়  এবং রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়ে তরুণ বাঙালি প্রাণ। পুলিশ গুলি চালালে আবদুল জব্বার, রফিকউদ্দিন আহমেদ, আবুল বরকত, আবদুস সালামসহ আরও অনেকে নিহত হন। ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে ২২ ও ২৩ ফ্রেব্রুয়ারি ছাত্র-শ্রমিক-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষক সমাজ  হরতালের ডাক দেয়।   হরতালের মধ্যেই ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিটিং ও মিছিল করে।  ২২ ফেব্রুয়ারি শফিউর রহমান শফিক, আবদুল আউয়াল এবং অহিউল্লাহ্ নামের এক কিশোর নিহত। ভাষা আন্দোলনে কতোজন মারা গিয়েছিল তার সঠিক হিসাব জানা যায়নি; জনশ্রুতি আছে, সেই সময় পুলিশ কিছু লাশ কৌশলে সরিয়ে নিয়েছিল।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এই দাবির আন্দোলনে ছাত্রদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মিছিলে যোগ দিয়েছে এবং পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙেছে ছাত্রিরা। ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার মূল কাজটিই করেন ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চুসহ আরও কয়েকজন নারী। পাকিস্তান আর্মি ও পুলিশের বন্দুকের নল উপেক্ষা করে মিছিলের সম্মুখভাগে ছিলেন নারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা রাতের বেলা নানান  স্লোগান সম্বলিত পোস্টারও এঁকেছেন। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রীরা। ভাষা আন্দোলনে জড়িত থাকার অপরাধে জেল খেটেছেন মেয়েরা, কারও বা সংসার ভেঙেছে ; নারায়নগঞ্জের মমতাজ বেগমকে ভাষা আন্দোলনে জেল খাটার অপরাধে তালাক দেন তাঁর স্বামী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলন করার অপরাধে কেউ বা বহিস্কার হয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। শুধু তাই নয় ভাষা আন্দোলনের কর্মীদের লুকিয়ে রেখেছেন অনেকে। পুলিশের লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেলে রওশন আরা বাচ্চু, সুফিয়া ইব্রাহীম, সারা তৈফুর, বোরখা শামসুন, সুরাইয়া ডলি, সুরাইয়া হাকিমসহ অনেক ছাত্রীই আহত হন সেসময়। আন্দোলনের খরচ চালানোর জন্য চাঁদা তুলেছেন। মেয়েরা তাঁদের গায়ের গহনা খুলে দিয়েছেন। শুধু ঢাকাতে নয় ঢাকার বাইরেও নারীরা ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম ও সক্রিয় ছিলেন। অনেক মেয়ে ভাষা আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য বহিস্কৃত হয়েছিলেন। অনেকে রান্না করে খাইয়েছেন। বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন। ভাষা আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য নারী কর্মীরা হলেন, রওশন আরা বাচ্চু, হালিমা খাতুন, চেমন আরা, মমতাজ বেগম, সুফিয়া কামাল, ড. শাফিয়া খাতুন, লায়লা নূর, প্রতিভা মুৎসুদ্দি, রওশন আরা বেনু, কামরুন নাহার লাইলি, ফরিদা বারী, জহরত আরা, ফরিদা আনোয়ার, শামসুন নাহার আহসান, তালেয়া রহমান, শরিফা খাতুন, রিজিয়া খাতুন,  কে এফ সুফিযা বেগমসহ আরও অনেকে। ভাষা আন্দোলন রাজশাহীতে যারা গুরুত্বপূর্ণ  অবদান রেখেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ড. জাহানারা বেগম বেনু, মনোয়ারা বেগম বেনু, ডা. মহসিনা বেগম, ফিরোজা বেগম, হাফিজা বেগম টুকু, হাসিনা বেগম ডলি, খুরশিদা বানু টুকু, আখতার বানু প্রমুখ। এখানে ভাষা আন্দোলনের অমর কয়েকজন নারীর স্বল্প পরিচিতি তুলে ধরা হলো :

রওশন আরা বাচ্চু : ১৯৩২ সালে মৌলভী বাজার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন ভাষা সৈনিক রওশন আরা বাচ্চু। ১৯৪৭ সালে বি.এম. কলেজ বরিশাল থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পরে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন তিনি। ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাষ্টভাষা বাংলার দাবিতে মিটিং-মিছিলে অংশ নেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয় সমাবেশে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে আহত হন। তবে আন্দোলন থেকে পিছিয়ে আসেননি তিনি।

মমতাজ বেগম : ১৯১৬ সালে তিনি এক হিন্দু পরিবারে  জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নাম ছিল কল্যাণী রাণী। পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মমতাজ বেগম নাম নিয়ে ভাষা আন্দোলনের কিংবদন্তী হয়ে রয়েছেন। ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য তিনি গ্রেফতার হন। মুচলেকা দিয়ে জেল থেকে বের হতে অনীহা প্রকাশ করেন। ভাষা আন্দেলনে সম্পৃক্ত থেকে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।

ড. শাফিয়া খাতুন : ১৯৩১ সালে লালমানরহাটে জন্মগ্রহণ করেন । ১৯৫১-৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উইমেন্স স্টুডেন্টস ইউনিয়নের ভিপি ছিলেন।  তিনি ছাত্রীদের নিয়ে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে এক দূর্জয় প্রতিরোধ সৃষ্টি করেন। পরবর্তীতে তিনি রোকেয়া হলের প্রভোষ্টের দয়িত্ব পালন করেছেন। ড. শাফিয়া খাতুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনের একজন সদস্য ছিলেন।

অধ্যাপক শরীফা খাতুন : অধ্যাপক শরীফা খাতুন একজন শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মী। তিনি ১৯৩৬ সালে ৬ ডিসেম্বর ফেনি মহকুমার জাহানপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা ভাষাকে পাস্তিানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণার দাবিতে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি সব সময় মিটিং-মিছিলে অংশ নিয়েছেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী শরীফা খাতুন এবং আরও কিছু ছাত্রী গাছ বেয়ে দেয়াল টপকে আমতলায় চলে যান। কারণ ছাত্রীরা যাতে আমতলায় যেতে না পারে সেজন্য ইডেন কলেজের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৪৪ ধারা ভাঙার জন্য সেদিন গ্রেফতার হন তিনি। তিনি ২০১৭ সালে একুশে পদক পান।

চেমন আরা : ভাষা সৈনিক চেমন আরা ১৯৩৫ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রামের চান্দগাঁও উপজেলার মৌলবী পরিবাওর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় ইডেন কলেজের ছাত্রী ছিলেন তিনি। তার স্বামী জনাব শাহেদ আলীর অনুপ্রেরণায় ভাষা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন । তিনি তমুদ্দুন মজলিস ছাত্রী পরিষদের সভাপতি ছিলেন। তিনি ছিলেন শিক্ষক, সাহিত্যিক, ডানপন্থী রাজনীতিবিদ।

হামিদা রহমান : বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভাষা সাব-কমিটিতে সদস্য মনোনীত হন তিনি। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ তাঁর নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল বের হয়। “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই”  স্লেগানে মুখর করে তুলেছিলেন চারদিক। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী হয়। তিনি ছেলেদের পোষাক পরে কলেজ বৈঠকে যোগ দিতেন।

জুলেখা হক : তিনি প্রথম থেকেই উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ছিলেন। ছাত্র জনতার সমাবেশে জুলেকা হক অং গ্রহণ করেন।

ড. হলিমা খাতুন : ১৯৩৩ সালে আগস্ট মাসে জন্মগ্রহণ করেন । ১৯৫১ সালে বাগরহাট প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন লাভের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বাংলাভাষা আন্দেলনের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৪৪ ধারা ভাঙা এবং একুশের সকালে পিকেটিং করার দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপর। আহত ভাষাসৈনিকদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করা এবং চাঁদা তোলার কাজ করেছেন। ড. হালিমা খাতুন শিশু-কিশোরদের জন্য বই লিখেছেন।

কমলা ভট্টাচার্য : এখানে আমরা স্মরণ করি আরও একজন ভাষা শহিদ নারীর কথা। তিনি আসামের শিলচর বাংলা ভাষা আন্দোলনের প্রথম এবং শেষ নারী শহিদ। আসামের ভাষা আন্দোলনের ১১ জন শহিদের মধ্যে তিনিই একমাত্র নারী শহিদ। পাকিস্তান সরকার যেমন ঘোষণা দিয়েছিল “উর্দুই হবে রাষ্ট্রভাষা” তেমনি ব্রিটিশ ও আমেরিকানদের ইন্ধনে  উগ্রবাদী অসমিয়াদের আন্দোলনের মুখে ১৯৬০ সালে ৩ মার্চ আসামের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিমল প্রসাদ চালিহা বিধান সভায় অসমিয়া-ভাষাকে আসাম রাজ্যের সরকারি ভাষা হবে বলে প্রস্তাব করেন। ১৯৫২ সালে ঐতিহাসিক বাংলাভাষা আন্দোলনে উত্বুদ্ধ আসামের বাংলাভাষা-ভাষীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিধান সভার ভাষা প্রস্তাবের প্রতিবাদে ১৬ এপ্রিল শিলচরে এক নাগরিক সভা আহ্বান করেন। ঐ সভাতে অধ্যাপক শরৎচন্দ্র নাথকে আহ্বায়ক নির্বাচিত করে ভাষা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে আন্দোলনের একটি প্রস্তুতি কমিটি গঠন করেন। মিটিং-মিছিল চলতে থাকে; ১৯৬১ সালের ১৯ মে ভারতের আসাম রাজ্যের শিলচরে বাংলাকে সরকারী ভাষার মর্যাদা দেওয়ার লক্ষ্যে আন্দোলন চলাকালে  ১১ জন শহিদ হন। সেই ১১ ভাষা শহিদদের একজন কমলা ভট্টাচার্য।

১৯৫২ সালের বাংলা ভাষা আন্দোলন সাহস জুগিয়েছে, প্রেরণা দিয়েছে ভাষা আন্দোলন অব্যাহত রাখার। ১৯৫৬ সালে মানভূমে বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনেও নারীরা ছিলেন অগ্রগামী। হেমচন্দ্র মাহাতোর নেতৃত্বে ৯ জানুয়ারী রঘুনাথপুরে “লোক সেবক সংঘ” এর সদস্যরা টুসু গান গেয়ে শহর পরিক্রমা শুরু করে। বিহার সরকার নিরাপত্তা আইনের অজুহাতে সত্যাগ্রহী-আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার শুরু করে। অতুলচন্দ্র ঘোষ আন্দোলনকারীদের সরকারী বাধা উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলেন এবং বেশি বেশি টুসু গান গাওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর আন্দোলনরত কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া ও ধরপাকড় শুরু হলে লাবণ্য প্রভা ঘোষ, ভজহরী মাহাতো, সমরেন্দ্র ওঝা, কালীরাম মাহাতো ও ভবানী দেবী স্বেচ্ছায় কারাবরণ করেন।  মানভূম বাংলা ভাষা আন্দোলন সবচেয়ে দীর্ঘতম সময়ের ভাষা আন্দোলন। এই আন্দোলনে নারীরা অগ্রগামী।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারীর মহান ভাষা আন্দেলনের যে সকল  নারী জীবন বাজী রেখে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষাকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করেছেন এবং আমাদের কথা বলার অধিকার দিয়েছেন আমরা তাঁদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। শুধু ১৯৫২ নয় ১৯৫৬,  ১৯৬১ সময়ের ভাষা আন্দোলনের আন্দোলনকারী সকল ছাত্র-জনতাকে সশ্রদ্ধ স্মরণ করি, সম্মান জানাই। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। আমাদের ভাষার নামে আমাদের এই দেশ । আমরা ভালোবাসি বাংলা, আমরা ভালোবাসি বাংলাদেশ, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি।

আফরোজা অদিতি
আফরোজা অদিতি