বিখ্যাতদের মৃত্যু/ রক্তবীজ ডেস্ক

গ্যালিলিও

গ্যালিলিও

গ্যালিলিও অন্ধ। যে চোখ দুটো দিয়ে তিনি দুরবীনে মহাকাশ আর নতুন নতুন গ্রহ-উপগ্রহ দেখেছেন, সেই চোখ দুটিই এখন অন্ধকার। আট বছর ধরে বন্দী। বয়স আশির কোঠায়। শরীর ভেঙে পড়েছে। জীবনের এই শেষ মুহূর্তে যদি আপনজনদের পাশে পেতেন। তা হওয়ার জো নেই। যাজকেরা তাঁর কাছে কাউকে ভিড়তে দেবে না। এভাবে আর কদ্দিন? ধীরে ধীরে অবহেলায়, বিনা চিকিত্সায় মারা গেলেন তিনি। একদিকে অবশ্য ভালোই হয়েছে, পেয়েছেন দীর্ঘ আট বছরের দুর্বিষহ বন্দিজীবন থেকে মুক্তি।

কী এমন দোষ করেছিলেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই বিজ্ঞানী? তিনি কোপার্নিকাসের মতবাদ প্রচার করেছিলেন। বলেছিলেন, ব্রুনোকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে মূর্খ যাজকেরা। এ জন্য তাঁকে একবার মাফ চাইতে হয়েছিল। ওয়াদা করতে হয়েছিল, চার্চ ও বাইবেলবিরোধী কিছু বলবেন না। কিন্তু সে কথা রাখতে পারেননি গ্যালিলিও। জ্বলজ্বলে তারার মতো সত্যকে তিনি কীভাবে মিথ্যা বলবেন? কীভাবে অসত্যের অন্ধকারকে আলো বলে চালিয়ে দেবেন। গ্যালিলিও সত্যের জয়গান গেয়েছিলেন আজীবন। বলেছিলেন সূর্য নয়, পৃথিবীই সূর্যের চারপাশে ঘোরে। দীর্ঘ আট বছর কারাগারে ধুঁকে অবশেষে মারা যান গ্যালিলিও।

লুইস স্লটিন

১৯৪৬ সাল। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটন প্রজেক্টে কাজ করেন বিজ্ঞানী লুইস স্লটিন। ম্যানহাটন প্রজেক্ট হলো যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা গবেষণাকেন্দ্র। এখান থেকে তৈরি বোমা দিয়েই আঘাত করা হয় জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে। স্লটিন খ্যাপাটে টাইপের লোক। তিনি তেজস্ক্রিয় পরমাণু নিয়ে খেলতে পছন্দ করতেন। পারমাণবিক বোমার অন্যতম উপাদান তেজস্ক্রিয় প্লুটোনিয়াম। কিন্তু প্লুটোনিয়াম যেখানে-সেখানে রাখলেই তা বিস্ফোরিত হবে না। এর জন্য নির্দিষ্ট ভরের প্লুটোনিয়াম একসঙ্গে রাখতে হয়। এ ভরকে বলে ক্রিটিক্যাল মাস।

ম্যানহাটনে কোনো জারেই ক্রিটিক্যাল ভরের সমান প্লুটোনিয়াম রাখা হয় না। ওই পরিমাণ প্লুটোনিয়ামকে দুটি ভাগে ভাগ করে আলাদা জারে রাখা হতো। যাতে ওগুলো বিক্রিয়া করে তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ করতে না পারে। কিন্তু স্লটিনের ছিল বদখেয়াল। তিনি প্রতিদিন একবার করে প্লুটোনিয়াম নিয়ে খেলতেন। এক জারে রাখা প্লুটোনিয়াম আরেক জারের প্লুটোনিয়ামের ভেতরে ঢালতেন। এতে দুই জারের প্লুটোনিয়াম একসঙ্গে হয়ে ক্রিটিক্যাল ভরে পৌঁছে যাওয়ার কথা। কিন্তু স্লটিন ছিলেন খুব সতর্ক। একেবারে শেষ মুহূর্তে তিনি জারের ভেতর একটা স্ক্রু ড্রাইভার ঢুকিয়ে খানিকটা প্লুটোনিয়াম আলাদা করে ফেলতেন। তাতে প্লুটোনিয়াম আর ক্রিটিক্যাল ভরে পৌঁছাতে পারত না। তাই নিরাপদেই খেলাটা দিনের পর দিন চালিয়ে গেছেন স্লটিন।

কিন্তু একদিন এ খেলার করুণ সমাপ্তি ঘটল। সেদিন স্লটিন সময়মতো জারের ভেতর স্ক্রু ড্রাইভার ঢোকাতে পারলেন না। তাতেই ক্রিটিক্যাল ভরে পৌঁছে শুরু হলো ভয়াবহ পারমাণবিক বিক্রিয়া। জারের ভেতর থেকে ঝলসে উঠল নীল আলোর বিকিরণ। খুবই ভয়ংকর সেই বিকিরণের শক্তি। মুহূর্তেই আগুনের হলকায় ঝলসে গেলেন স্লটিন। ঝলসে গেলেন সেখানে উপস্থিত বেশ কজন বিজ্ঞানীও। অন্যদের অবস্থা অত মারাত্মক নয়। এ দুর্ঘটনার পর স্লটিন দুদিন বেঁচে ছিলেন। কিন্তু সেই দুদিন না বাঁচলেই বরং কষ্ট কম হতো তাঁর। তাঁর শরীর ভেতর থেকে ঝলসে গিয়েছিল। তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে তিনি শেষ পর্যন্ত মারা যান।

ম্যাক্স ভন লু

ম্যাক্স ভন লু। ১৯১৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পান। জন্ম ১৮৭৯ সালে। ১৯৬০ সালে বয়স ৮১ বছর তাঁর। এ বয়সে মানুষ মরতেই পারে। কিন্তু লুর মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না। জার্মানির গটিনজেন শহরে থাকতেন তিনি। একদিন গাড়ি চালিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছিলেন। হঠাত্ এক আনাড়ি বাইকচালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারেন লুর গাড়িতে। বাইকের আরোহী ঘটনাস্থলেই মারা যান। লুকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। দুদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে শেষ পর্যন্ত হার মানেন তিনি। সদ্য লাইসেন্স পাওয়া এক মোটরবাইকচালকের ভুলে প্রাণ যায় মেধাবী এই বিজ্ঞানীর।

( সংহৃহীত) 

তথ্যসূত্র: নিউ সায়েন্টিস্ট

%d bloggers like this: