করোনা রাজ্যে অবরুদ্ধ দিন-রাত – শারমিনা পারভিন
অবরুদ্ধ দেশ,অবরুদ্ধ মানুষ, অবরুদ্ধ গোটা পৃথিবী।
কেমন করে কাটছে আমাদের দিন, জীবন যাপন!
একশ বিরাশি ঘন্টা, সাত সাতটা দিন ঘরবন্দী।
কেন?কারণটা সবারই জানা।
করোনা ভাইরাস সংক্রামিত এক আতংকের নাম। নামটা শোনার সাথে সাথেই ভয়ে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। চলমান জীবনযাত্রা থমকে গেছে, স্থবির হয়ে গেছে দেশের অথনীতি। নিত্য নৈমিত্তিক রুটিন আর কারো বেলায়ই প্রজোয্য নয়।এখন শুধু অনিশ্চিত ভয় নিয়ে সময়ের অপেক্ষা।
করোনা ভাইরাস (কোভিট নাইন্টিন) বৈশ্বিক দুর্যোগ। পৃথিবীর দুইশোটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও এই ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন।। বাংলাদেশে এই ভাইরাস ভয়াল থাবা বসিয়েছে।
চারিদিকে ঘোর অমানিশা, যতটা না রোগের ভয় তারচেয়ে বেশি ভয় কি হবে? কি হবে? যদি হয়? তাহলেতো গোটা দেশ উজাড় হয়ে যাবে!
মানুষের কোন কাজ নেই। নিম্নবিত্ত মানুষ ঘোরতর কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। অনেকে বাসা ভাড়া দিতে পারছে না। ঘরে খাবার নেই,। চারদিকে অভাব,দুশ্চিন্তা, অজানা আশঙ্কা। ভয়ে সিঁটকে আছে সবাই । অনেকের ঘরে অসুস্থ বয়স্ক মানুষ, শিশু বাচ্চা। কবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে এরা!
সেদিন একজন রিকশাওয়লা বলছিল, আমি করোনা ভাইরাসে মরবো না, আমি মরবো খিদেয়। কী মর্মান্তিক কথা!
বিল গেটস তার বক্তব্যেব বলেছেন, আগামী দশকে কোনো কারণে যদি লাখ লাখ মানুষ মারা পড়ে, তাহলে তার কারণটি মোটেও যুদ্ধ হবে না। মানুষ মারা পড়বে ভীষণ এক ভাইরাসে।
মানুষ মিসাইলের আঘাতে প্রাণ হারাবে না, প্রাণ হারাবে জীবাণুতে। এর কারণ হল আমরা পারমাণবিক প্রতিরোধ তৈরিতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছি, অথচ মহামারী ঠেকানোর সিস্টেমের বেলায় সত্যিকার অর্থে আমাদের বিনিয়োগ খুব সামান্যই।
আমরা মহামারির জন্য কখনো প্রস্তুত নই।
ভাবতে অবাক লাগে, মেডিসিনের শহর সুইজারল্যান্ড অসহায়, প্রযুক্তির শহর জার্মানি নিরুপায়,
মানবতার শহর ইতালি কাঁদছে, দম্ভের শহর আমেরিকা দিশাহারা,স্পেনে ঘরে ঘরে লাশ,পঁচে দূর্গন্ধ ছড়াছে!
লাশবাহী গাড়িগুলো থরে থরে দাঁড়িয়ে আছে। আর বুঝি ভার নিতে পারছে না। বড় বেশী ক্লান্ত।
সেখানে বাংলাদেশ!
গোটা দেশ ঝুঁকিতে, বিশ্ব ঝুঁকিতে।
আমাদের দেশে মারা গিয়েছে পাঁচজন। আক্রান্ত অনেকে। অনেকেই ঝুঁকিতে। নেই কোনো প্রতিষেধক, অচিরে পাবার কোনো সম্ভাবনাও নেই।
গোটা বিশ্ব জুড়ে করোনার মিছিল। চীনে মহামারি হয়ে, গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে ঘরে ফিরলেও, লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে মৃতের সংখ্যা
সুরা বাকারায় বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মশা কিংবা এর চাইতে তুচ্ছ বিষয় দিয়ে , উদাহরণ বা চিহ্ন প্রকাশ করে আমাদের পরীক্ষা করেন।
সুরা আসহাবে আল্লাহ এরশাদ করেছেন, তারপর আমি তোমাদের শক্রুদের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছি,কিসের কারণে?মানুষের শক্তি সামর্থ এবং উপকরণের মহড়া, এত এটম বোমা,পারমাণবিক অস্ত্র, এত অহংকার, এত দাম্ভিকতা?
যারা মানুষ হত্যার মহোৎসব করে নিত্যদিন তারা কেন আজ এত ভীত শংকিত?
আল্লাহ আরো বলেছেন, এক বায়ু,এক বাহিনী, এমন এক বাহিনী যা তোমরা চোখে দেখতে পাও না?
আজ ও আমাদের বোধদয় হয়নি।
এই দেশ শ্রমজীবি মানুষের দেশ। মেহনতী মানুষের দেশ। ইউরোপ আমেরিকার মতো বৃহৎ অর্থনীতির দেশ নয় যে জি,ডি,পির পঞ্চাশ পার্সেন্ট দিয়ে মাসের পর মাস মানুষকে খাইয়ে বাঁচাতে পারবে।
মাঝে মাঝে ভাবতে অবাক লাগে, প্রিয়তম মানুষটি রোগে আক্রান্ত হয়ে তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটির কাছে যেতে পারছে না। তাকে ছুঁতে পারছে না। সবচেয়ে প্রিয় সন্তান সেও অনেক দূরে। মৃত্যুর সময় না পেলো কোনো প্রিয় জনের ভালবাসা। না পেলো সন্মান। শুধু পেলো ভয়াতুর কিছু চাহনি।
আমি নৈরাশ্যবাদী নই। ইতালিতে মাক্স পাঠাচ্ছে চীন। সেখানে বাক্সের উপর লেখা থাকছে একটা কবিতার অংশ,
দিনশেষে আমরা একই সাগরের ঢেউ
উহানে আটকে পড়া মানুষের জন্য সাহায্য পাঠিয়েছে জাপান, সেখানে লেখা,
নদী আর সাগরের দিক থেকে হয়তো আমরা আলাদা
একই আকাশ একই বাতাস,আর একই সূর্য চাঁদের নীচে
আমাদের বসবাস।
মানুষের জন্য মানুষের বন্ধুত্বের এই চমৎকার প্রাপ্তি আমাদের আশা জাগানিয়া করে তোলে।
পাঁচশ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন, জনস্বার্থে সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জানাই অশেষ ধন্যবাদ। সেই সাথে সাথে ধাপে ধাপে লক ডাউনের পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সবিনয় অনুরোধ করছি।
চীন খুব তাড়াতাড়ি করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পাচ্ছে। একের পর এক অস্থায়ী হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গোটা চীনে অল্প কিছু সংখ্যক মানুষ এখন আক্রান্ত।
এটা কিভাবে সম্ভব! কিউবা প্রতিষেধক আবিষ্কার করেছে বলে শোনা যাচ্ছে।
বাংলাদেশে সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে এসেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, লায়ন্স। সবচেয়ে বেশি এগিয়ে এসেছে তরুণ প্রজন্ম। যাদের ভূমিকা সব সময়ই ছিল।
গনস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ড. মোহাম্মদ জাফরউল্লা চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল ডাক্তার অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। স্বপ্না ভৌমিক, ড.বিজন তাদের জানাই শ্রদ্ধা।
ইনশাল্লাহ কয়েক মাসের মধ্যে ঔষধ বাজারে আসবে। আশা করি অচিরেই বাজারে প্রতিষেধক চলে আসবে।
তবে জন সমাবেশ এড়িয়ে চলবেন। অযথা টো টো করে ঘুরে বেড়াবেন না । ঘুরে বেড়িয়ে ভাইরাস নিয়ে ঢুকে,কাউকে এই রোগে আক্রান্ত করবেন না। বাঙালি কৌতূহলী জাতি। ভাবখানা এমন, দেখি না কি হয়। হোম কোয়ারেনটাইনে না থেকে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন, চা,খাচ্ছেন, বিয়ে খাচ্ছেন, বিয়ে করছেন, কক্সবাজার যাচ্ছেন। হোম কোয়ারেনটাইনে থেকে অন্যর সাথে সেলফি তুলছেন, সে ছবি পোস্ট ও দিচ্ছেন।
তাই বোধহয় কবি গুরু বলেছেন,
সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী,
রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি।
যত দেখছি,ফেরি,বাস, ষ্টেশনে মানুষের ছবি, তত ভয় বাড়ছে। দেখার পর আশংকা, হতাশা, ভয় ভর করছে।
আসুন আমরা বিপদকে করি জয়। সচেতন হই। আমি ভাল থাকলে আমার পরিবার ভাল থাকবে। আপনি ভাল থাকবেন, গোটা দেশ ভাল থাকবে,বিশ্ব ভাল থাকবে। সবাই একসাথে বাঁচবো ইনশাল্লাহ।
আমরা সবাই এমন একটা ভোরের অপেক্ষাতেই আছি।
যেদিন ঘুম থেকে উঠে শুনবো পুরো পৃথিবীটা সুস্থ আছে, মহামারি করোনার ঝড় থেমে গেছে।
ততোদিন সাবধানে থাকুন, নিজেকে বাঁচান, পরিবারকে বাচান, দেশকে বাঁচান, দেশের সমস্ত মানুষকে বাঁচান।
দয়া করে নিয়ম মানুন, সহযোগিতা করুন।
Facebook Comments Sync