ধাওয়া (পর্ব: ১২-১৩) / শাহানাজ শাহীন
ধারাবাহিক উপন্যাস
ধাওয়া (পর্ব ১২-১৩) / শাহানাজ শাহীন
১২
দুই পাশে ধানি জমি । সোনালী রঙের ধান বাতাসে দুলছে । রাস্তার দুপাশে সারি সারি গাছ ।
শওকত মিয়ার ট্রাকটি চলছে । সুহাসিনী পাশের সিটে আরাম করে বসে আছে । তাঁর মনে হচ্ছে সে কোনো দুঃসাহসিক অভিযানে যাচ্ছে । এতো বছর পার হলো সে কখনোই তার চাচা মোতালেবকে দেখতে যায়নি । এমন কি তার মাকেও দেখেনি যেতে । প্রতিবারেই বাবা একা যান । মা বাবার মধ্যে মোতালেব চাচাকে নিয়ে বার কয়েক ঝগড়া বাঁধে ।
সুহাসিনী জানে না কেনো বাবা সবসময় একা যান ।
বাবা কন্যা দুজনেই চুপচাপ আছে ।
সুহাসিনী একটি হাত জানালার উপর রাখে ।
সে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে । গাড়ি বড় রাস্তা ধরে চলছে ।
গন্তব্য পাবনা মানসিক হাসপাতাল । বাবা ভীষণ রকমের চুপচাপ আছেন । তাতে অবশ্য সুহাসিনীর কিছু যায় আসে না । সে যেতে পারছে এটাই আসল ।
তার কেবল মাত্র প্রয়োজন বাবার সঙ্গ ।
যাইহোক নীরবতা মনে হচ্ছে আমাদের মাঝে কথা হয়ে কাজ করছে যা ভাষায় প্রকাশ
করা যায় না ।
বাবা আমার দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসলেন ।
আমিও হাসলাম । আমরা কথা বলছি হাসিতে । পৃথিবীর মধুরতম সম্পর্কগুলোর একটি হলো কন্যা
ও পিতার সম্পর্ক । এর তুলনা কোনো কিছুতে হয় না ।
একটা বড় গাছের তলায় বাবা গাড়ি রাখলেন ।
কেমন ভেজা ভেজা একটা পরিবেশ । গাছগুলো দেখে মনে হচ্ছে কতোদিন এরা ভালবাসা পায়নি ।
অনাদরে অবহেলায় বেড়ে উঠেছে । কি এক বিষাদের ছায়া পুরো জায়গাটিতে ।
কিছু লোক কাজ করছে । দেখেই বোঝা যাচ্ছে বহুদিন ধরেই তারা আছেন এখানে । বেশ বয়স হয়েছে উনাদের । আমি দেখছি মানুষগুলোকে ।
বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
: এঁরা এখানকার বাসিন্দা । থেরাপির অংশ হিসেবেই উনাদের কে দিয়ে কাজ করানো হয় । এতে তাদের জন্য ভালো হয় ।
আমরা হেঁটে যাচ্ছি করিডোর দিয়ে । বাবাকে এখন খুব খুশি খুশি লাগছে । বাবা দাঁত বের করে হাসছেন ।
এই দিকটা বেশ নীরব । সিড়ির পাশে একটি দরজার সামনে এসে অপেক্ষা করছি । দরজায় উপরের দিকে নেটের জাল দিয়ে ছোট ফাঁকা জায়গা । সেদিক দিয়ে ভিতরে দেখা যায় । বাবা আমার মাথায় হাত রাখলেন । বললেন,
“এখানে যাঁরা কাজ করছেন তাঁরাও ভালো মানুষ । এই অসহায় মানুষগুলোকে দেখে রাখেন ।”
বাবা আমার মাথায় চুমু খেলেন । আমি শীতল অনুভূতি অনুভব করলাম । আমার শ্রেষ্ঠ বাবা ।
বাবা দরজার নেট দেওয়া ছোট অংশ দিয়ে ছোট চাচার নাম ধরে ডাকছেন,
” মোতালেব, মোতালেব?”
একজন মানুষের দেহের কিছু অংশ দেখতে পেলাম ।
ভিতর থেকে আওয়াজ শুনতে পেলাম,
” মিয়া ভাই! মিয়া ভাই আইছে । মিয়া ভাই ।
আজকে ঈদ কী মজা । কী মজা । “
আমি দেখতে পেলাম মানুষটিকে । উনার চোখে মোটা চশমা । বাবার মুখের সাথে অনেক মিল ।
তিনি দরজা খুললেন । শিশুদের মতো আচরণ করছেন ।
” ঈদ ঈদ , আজকে ঈদ । মিয়া ভাই আইছে ।”
আমাকে দেখে তিনি চুপ করে গেলেন ।
মাথা নিচু করে আছেন । আর বিড় বিড় করে বলছেন,
” কে কে , কে এটা , কে কে কে ? মিয়া ভাই কে, কেনো ? কে ?”
তিনি ভিতরে চলে যাচ্ছেন । আমি বাবার পিছনে আসলাম। বাবা মোতালেব চাচার কানের কাছে মুখ এনে ফিস ফিস করে বললেন,
” মোতালেব , মোতালেব, ও সুহাসিনী । আমার মেয়ে । তোমার ভাতিজি । “
মোতালেব চাচা আমাকে দেখছেন গভীর দৃষ্টিতে ।
আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না আমার কী বলা উচিত । তিনি তোতলাতে তোতলাতে বললেন,
“সুহাসিনী । সুহাসিনী । “
চাচা আমাকে জড়িয়ে ধরলেন । আমি চাচার বুকে মাথা রেখে বললাম,
” শুভ জন্মদিন চাচা । “
তিনি এবার বাবাকে জড়িয়ে ধরলেন । বললেন,
” মিয়া ভাই । আমার মিয়া ভাই । “
বাবা মোতালেব চাচাকে বললেন,
” আজ তোমার জন্মদিন । মনে আছে?
” আমার জন্মদিন ? জন্মদিন । ওহ হ জন্মদিন । “
মোতালেব চাচা বলছেন ,
” সুহাসিনী তোমার ছবি আছে আমার কাছে , তোমার ছবি আছে । “
মোতালেব চাচার আনন্দে আমার চোখে পানি এসে গেল ! আমি আড়ালে লুকিয়ে চোখ মুছলাম ।
মোতালেব চাচার ছোট্ট একটা কেবিনরুম ।
ভিতরেই সব কিছু রয়েছে । বাবা এর জন্য প্রতি মাসে খরচ পাঠান । উনাকে দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি একজন বিশেষ মানুষ । বুদ্ধি প্রতিবন্ধী । কিন্ত অধিকাংশ মানুষই তাদের ক্ষেত্রে পাগল কিংবা মানসিক ভারসাম্যহীন এই শব্দগুলি ব্যবহার করেন।
আমি বলতে চাই না ওসব শব্দের একটিও ।
বিশেষ শব্দটি আমার বলতে ইচ্ছা করছে ।
বেশ পরিচ্ছন্ন মানুষ । শুধু কথা বলতে গেলে বুঝতে পারা যায় উনি অন্য সবার মতো নন । বাবা তার হাতের ব্যাগটি এগিয়ে দিলেন । বললেন, ” আমরা তোমার জন্য উপহার এনেছি । এই নাও ।”
চাচা লাফাতে শুরু করলেন। দুহাতে তালি দিচ্ছেন ।
” কি এনেছ মিয়া ভাই? কি এনেছ? দেখি দেখি । একটা গাড়ি এনেছ? একটা গাড়ি, মিয়া ভাই? “
বাবা ব্যাগ থেকে ছোট একটি খেলনা গাড়ি বের করতে করতে বললেন,
” শুধু কি গাড়ি এনেছি? আরো আছে । এই দেখো তারাবাতি ।”
শওকত মিয়া ব্যাগ থেকে তারাবাতি বের করে মোতালেবের হাতে দিলেন । হলুদ আর লাল রঙের মিশ্র পাখা । গোড়ায় কাঠের লম্বা হাতল ।
মোতালেব তারাবাতি হাতে নিয়ে মুখ দিয়ে বাতাস দিতে থাকে । একটা করে ফুঁ দিয়ে মুখের সামনে এনে ধরে রাখে । তারাবাতিটি কয়েক মিনিট উড়ে থেমে যায় । সে আবার মুখ ফুলিয়ে বাতাস দিতে থাকে ।
” কমলা রঙ , বাইরে? বাইরের দিকে কমলা রঙ? “
সে মিয়া ভাইকে বলতে থাকে ।
মিয়া ভাই বুঝতে পারে বাইরে কমলা রঙের অর্থ কী ।
তিনি বাইরের দিকে ইশারায় দেখিয়ে বললেন, তুমি বাইরে যেতে চাও? বেশ চল যাই ।
আমরা হেঁটে হেঁটে যাব, হাওয়াই মিঠাই কিনতে ।
হাওয়াই মিঠাই!
মোতালেব চাচা দুহাতে উঁচুতে তুলে চিৎকার করে বলতে থাকল, আইসক্রিম । ওহ ,হো , না , না , আমি যামু না ।
শওকত মিয়া বললেন,
” আরে তাইত । মোতালেব তো আইসক্রিম খায় না ।
না ,না, না আমরা যাচ্ছি না ।
সুহাসিনী আমতা আমতা করে মাথা হেলিয়ে বলল,
” আহ, হুম ।”
এবার মোতালেব গম্ভীর হয়ে যায় । সে দু হাত কচলাতে থাকে । একবার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে । পরক্ষণে সুহাসিনীর দিকে ।
” আমি আইসক্রিম পছন্দ করি, মিয়া ভাই ।
শওকত মিয়া ভাইয়ের পিঠে একটা আলতো চড় মেরে বললো,
” মজা করছি । আমি জানি তুমি আইসক্রিম পছন্দ কর । হুম! “
মোতালেব খিল খিল করে হেসে ভাইয়ের বুকের মধ্যে এসে মুখ লুকায় । তিনি দুহাতে জড়িয়ে ধরলেন মোতালেবকে । অতি আহ্লাদের সুরে বললেন,
” আরে আরে কর কী! ঠিক আছে । আমরা এখনি যাচ্ছি । সুহাসিনী চল চল চল । “
তাঁরা হাঁটতে হাঁটতে হাসপাতালের সামনে একটি কনফেকশনারিতে আসে । দোকানে পুরি, সিংগাড়া
,সমুচা বিক্রি করে । দুপুরে ভাতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে । দোকানের সামনে চট দিয়ে বেড়া দিয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে । শওকত মিয়া তার ভাই, মেয়েসহ বসলেন একটি টেবিলে । পঁচিশ টাকা করে তিনটি
কোন আইসক্রিম কিনলেন । প্রথমেই ভাইকে দিলেন ,
” ধর, এটা তোমার । ঠিক আছে না? “
আহ ! আহ! আইসক্রিম ।
মোতালেব ভাইয়ের হাত থেকে আইসক্রিমটি নেয় । সে দুহাতে আইসক্রিমের নিচের অংশটিতে ধরে । এক পাশ থেকে খেতে থাকে ।
” মিয়া ভাই, আজকে আমার জন্মদিন ? ” হি ,হি, হি।”
সুহাসিনী মুচকি হাসে, সেও স্বাদ করে আইসক্রিম খাওয়ায় মনোযোগ দিল ।
” আহ, আজকে আমার জন্মদিন । “
সুহাসিনী একবার চারিদিকে দেখে নিল । কেউ তাঁদের লক্ষ করছে কিনা । তার ধারণা যদি চাচা কথা না বলেন ,তাহলে কেউ টের পাবেন না তিনি একজন বিশেষ মানুষ ।
কথা না বললে চাচাকে একেবারে আট দশজন সাধারণ মানুষের মতোই মনে হয় । কিন্তু সে যতই ইতস্তত বোধ করছে , তার চাচার কথা বলা ,অঙ্গভঙ্গি ও হাসি উঁচুতে উঠছে । সুহাসিনী দেখল আশেপাশের সকল মানুষের মনোযোগ তাদের দিকে ।
শওকত মিয়া ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
” আইসক্রিম মজা? ওহ” !
তিনি আঁতকে উঠলেন । মোতালেবের হাত থেকে আইসক্রিম অর্ধেক মাটিতে পড়ে গেছে ।
” ঠিক আছে , ঠিক আছে । না না । মাটি থেকে তুলো না ।”
মোতালেব টেবিলের নিচে ঢূকে পড়ল । সে তাঁর পড়ে গলে যাওয়া আইসক্রিম তুলতে চেষ্টা করছে ।
তার এখন রাগ লাগছে । সে কাঁপছে রাগে । উঠাতে না পেরে রাগে দুহাতে আইসক্রিম লেপে দিচ্ছে মেঝের সাথে ।
” আমার আইসক্রিম । আমার আইসক্রিম । ওহ !
আমার আইসক্রিম । “
” ঠিক আছে । মোতালেব । চুপ চুপ । কিছু হয়নি । “
মোতালেব চেঁচামেচি করতে শুরু করলো । সে মাটিতে হামাগুড়ি দিতে থাকে । আইসক্রিম গলে মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ল ।
” মোতালেব ফেলে দাও । এটা তুলতে যেও না ।
আমি আরেকটি—–”
মিয়া ভাইয়ের কথা মোতালেবের কানে পৌঁছে না ।
সে ক্রমাগত চেঁচিয়ে যাচ্ছেন । শওকত মিয়া মেয়েকে বললেন,
” তুমি কি একটা আইসক্রিম নিয়ে আসতে পার ? যাও । তাড়াতাড়ি কর ।”
চোখের পলকে মোতালেব মেঝেতে পাতা টেবিল ছুঁড়ে মারল । সে জোড়ে চিৎকার করে বলতে থাকল,
” না না । আমার জন্মদিন । আমার জন্মদিন
আজকে ।”
সে মিয়া ভাইকে সজোরে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় ।
মিয়া ভাই পড়ে যায় মাটিতে । লোহার টেবিলের কোণা তার মাথায় লাগে । মোতালেব থামে না । ভাইয়ের উপর সে ঝাঁপিয়ে পড়ে । দোকানে থাকা অন্য ক্রেতাগণ যে যার মতো নিরাপদে থাকার চেষ্টা করছে । এদের মধ্যে কেউ একজন বলে উঠলেন,
” এই মিয়া পাগল লইয়া খাইতে আইছেন?
মিয়া ফাজলামি শুরু করছেন?
হালারে দিওন দরকার ।”
সুহাসিনী ঝড়ের বেগে এগিয়ে আসল । সে ভুলে গেছে মোতালেব চাচা তাকেও আঘাত করতে পারেন ।
তার বুক ফেটে যাচ্ছে বাবার জন্য । কী ভয়াবহ ব্যাপার চোখের সামনে দেখছে সে !
শওকত মিয়া মাটি থেকে কোনো মতে উঠলেন ।
বয়স ও সংসারের ভারে তার আগের শক্তি এখন আর নেই । শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে মোতালেবকে জাপটে ধরলেন । ক্লান্ত সুরে বললেন, “ভাই শান্ত হ । শান্ত হ । আমি আর পারতেছি ন “ ।
সুহাসিনী চাচার হাতে আইসক্রিম দেয় । মোতালেব শান্ত হয় ।
সুহাসিনী বাবার মুখে প্রায় শুনতে পেত চাচার এই কষ্টকর জীবনের কথা ! আজ সে স্বচক্ষে দেখল ।
বাবা এ কারণেই একা আসেন । তিনি চান না কেউ তার জন্য অসহায় বোধ করুক । এই মুহূর্ত পর্যন্ত সে বুঝতেই পারেনি কতোটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে তার বাবা যাচ্ছেন । মোতালেব এখন একদম ফুরফুরে । তাকে দেখে বুঝার উপায় নেই কিছুক্ষণ আগে কী তুলকালাম কাণ্ড সে করেছে ।
” চাচা দেখো তোমার কমলা রঙের তারাবাতি । “
“আহা হা । কমলা রঙ । “
রোদের আলোয় তারা রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে হাসপাতালের দিকে । মোতালেব জানে না কবে তার মুক্ত জীবন শুরু হবে । সে চিন্তার জায়গাটিতে সে নেই ।
১৩
বাড়িতে ফেরার পথে বাবা মোতালেব চাচা সম্পর্কে বললেন,
আমার জন্মের আগে মোতালেব চাচা বাড়িতে থাকতেন বাবা মায়ের সাথেই । কিন্তু কিছুদিন বাদে
এটি হয়ে উঠলো ভয়াবহ রকমের । যখন আমরা বাড়ি ফিরলাম, সবকিছুই দেখতে স্বাভাবিক । কিন্তু কার্যত তা ছিল না । আজকের আগ পর্যন্ত মোতালেব চাচা ছিল কেবলই একটা নাম আমার কাছে । কিন্তু এখন!
অনেক কিছু । এখন আমার কাছে সেও পরিবারের একজন ।
শওকত মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম ঘরের কাজ করছেন । প্রতিদিনের চেয়ে শুক্রবার কাজ বেশি থাকে । ছেলেমেয়েরা বাড়িতে থাকে । স্বামী হাসপাতালে গেলে মোতালেবের জন্য ভালো মন্দ কিছু রান্না করে পাঠান । দরজায় শব্দে ফরিদা বেগম হাতের কাজ রেখেই দরজার সামনে গেলেন । খেয়াল করলেন দরজায় টোকার শব্দ । তিনি দরজা খুললেন ।
স্বামী ও কন্যাকে দেখে হাসি মুখে বললেন,
” ওহ তোমরা চলে এসেছো? মোতালেবকে কেমন দেখে আসলে? “
শওকত মিয়া এগিয়ে যায় স্ত্রী কাছে । স্ত্রীর কাঁধে মাথা রাখেন । বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে ব্যাথা ।
চেপে ধরার চেষ্টা করেন । ফরিদা বেগম স্বামীর পিঠে হাত বুলান । সুহাসিনী ড্রেসিংটেবিলের পাশে উপুড় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে । সে মুগ্ধ হয়ে তার চোখের সামনে দৃশ্য দেখছে । অসাধারণ দুজন মানুষ । কী গভীর মমতায় একে অপরের পাশে আছেন । এতো মহত্ব সে কারো মধ্যে দেখেনি । যতোটা তার বাবা মায়ের মধ্যে দেখেছে । নিজেকে নিয়ে গর্ব হয় ।
ফরিদা বেগম এবার মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,
” কেমন দেখলে চাচাকে? “
” আমার খুব ভালো লাগছে মা ।”
” আমিও খুশি হয়েছি তুমি গিয়েছ বাবার সাথে । “
” তোমাকে না বলেছি শুক্রবারে বাড়ির কাজ করবে না । কথা শোনো না কেনো বউ? “
সুহাসিনী মুখ চেপে হাসে । তার ভালো লাগে বাবার মুখে মাকে বউ বলে সন্মোধন করা । বাবা দরিদ্র ।
তবে ধনী মনের মানুষ । পয়সাওয়ালা মানুষদের কতো কী শেখার আছে এই মানুষটির কাছে ।
ফরিদা বেগম কথা এড়িয়ে বললেন,
” মিসেস ফাহমিদা এসেছিলেন । আমাদের সপরিবারে দাওয়াত করে গেছেন আগামীকালের জন্য ।”
” কিসের দাওয়াত? “
” কোনো উপলক্ষ নেই । “
” তাদের বাড়িতে কাজ করার জন্য বলেছে?নাকি পুরো পরিবার কাজের জন্য ধার নিতে চায় ? “
ফরিদা বেগম মেয়েকে লক্ষ্য করে বললেন,
“দেখ তোমার বাবা ভয় পাচ্ছেন ।”
” তিনি কি আসলেই আমাদের সবাইকে যেতে বলেছেন মা ।”
” হুম, তিনি বলেছেন । “
” আমাদের বিড়াল দুটিকেও বলেছেন? “
ফরিদা বেগম স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
” তুমি ! সব সময় ইয়ার্কি কর । “
“কেনো , এতো বছর পরে দাওয়াত করলেন ? “
স্বামীর কথার প্রতি উত্তরে ফরিদা বেগম বললেন,
ভালো কথা,
“তিনি বলেছেন আমাদের আরো আগেই দাওয়াত দেয়া উচিত ছিল । কিন্তু তাঁরা সেটি করতে পারেননি । “
আমার মনে হচ্ছে উনারা আমাদের সম্পর্কে ভালো করে জানতে চান ।
” তুমি কি যেতে চাও? ” শওকত মিয়া স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলেন ।
“বেশ, তিনি অনুরোধ করে বলে গেছেন । আর আমি মনে করি আমাদের যাওয়া উচিত । “
” ঠিক আছে । আমরা যাচ্ছি । ” শওকত মিয়া যেতে যেতে বললেন।
বাকের পরিবারে দাওয়াত খেতে যাচ্ছি ,এটি আমাকে রোমাঞ্চিত করল না । কিন্তু আমার মায়ের মধ্যে ভয়াংকর আগ্রহ লক্ষ্য করলাম ।
Facebook Comments Sync