ধাওয়া-৭ ও ৮/ শাহানাজ শাহীন
ধারাবাহিক উপন্যাস
ধাওয়া-৭ও ৮ / শাহানাজ শাহীন
ডিম আমার কখনোই পছন্দের ছিল না । আমি শুধু dbতাম । কখনো খেতাম না । একদিন স্কুলে প্র্যাকটিকাল ক্লাসে আমরা । একটি পুরুষ সাপের খাঁচায় একটি ডিম দেয়া হলো । সাপটা ডিমটি খেয়ে ফেলে । একসময় ডিমের খোসা উগলে দেয় ।
দেখে আমার গা গুলিয়ে উঠে । ডিমের প্রতি চরম অনীহা চলে আসে । এরপর এলো বাস্তবে দুঃস্বপ্ন।
সকালবেলা । আমি তখনো বিছানায় শুয়ে আছি । দরজায় টোকা । আমি দরজা খুলি। সুহাসিনী । তার হাতে একটি বাক্স । সেটা ভর্তি ডিম ।
” কেমন আছ? তোমাদের সবার জন্য ডিম নিয়ে এলাম। আমাদের মুরগির ডিম। “
ডিমের বাক্সটি মেঘ হাতে নেয় । তার মুখে বিস্ময়কর হাসি । সে সুহাসিনীর দিকে তাকায় । আশ্চর্য হয়ে বলে,
“কি? “
“তোমার কি টুকি, টুকটুক, পিউ পিউ, নোনা, কুটি আর পুচুর কথা মনে আছে?
” না নেই । তারা কে? “
“আমার মুরগি । ওদের থেকে একটিকে বিজ্ঞানের ক্লাসে নিয়েছিলাম । “
ও, কি করে ভুলবো? পরিষ্কার মনে আছে । সাপে খাওয়া ডিম । তারপর তাপের মাধ্যমে ছানা ফোটানো । এসব কি করে ভুলবো । ভোলা যায়!
স্কুলের পুরো প্রজেক্টটি তার কারণে ভেস্তে গেছে । সম্পূর্ণ নিরামিষ । মুরগি কি করে বাচ্চা দেয়,
এই ছিল সুহাসিনীর বিষয় ।
এদিকে আমার বিষয় ছিল সরাসরি সম্প্রচার । আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত । মজার একটা ব্যাপার ।
সুহাসিনীর বিরক্তিকর মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানো যে কেউ করতে পারবে । একেবারেই নিরামিষ একটা বিষয়। মেয়েটি পুরোfই গ্রাম্য স্বভাবের।
সুহাসিনীর মুরগির ডিম থেকে এক একটা বাচ্চা ফুটছে । শেষের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটেছে ।
ছাত্রছাত্রীদের ভিড় তার প্রজেক্টের কাছে।
কেনো সবাই ডিম ফুটানো দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে বুঝলাম না।
আমি কোন আগ্রহ খুঁজে পায়নি । সুহাসিনীর বিরক্তিকর বিষয় জিতে গেল , দুঃখ শুধু এখানেই !
তার মানে এই নয় যে, তার জঘন্য ডিম এখন আমার খেতে হবে । আমার মা নাস্তার টেবিলে সুহাসিনীর প্রশংসায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন । কারণ আমরা এখন সবাই সুহাসিনীর মুরগির ডিম দিয়ে নাস্তা করছি । আমাকে মধুর করে যনতরণা দিতেই সে ডিমগুলো এ বাড়িতে দিয়ে গেছে ।
সুহাসিনী অসাধারণ এক মেয়ে । আমাদের ডিম দিয়ে উত্তম প্রতিবেশীর প্রমাণ দিল ।
মার এরকম প্রশংসা নিতে পারছিলাম না । রাগে ফেটে যাচ্ছি আমি ।
ইচ্ছে করছে ডিমের বাটিটি টেবিলে তুলে ধরে আছাড় মারি । যতোসব । আমি মাকে বললাম,
” দেখবে আমার জন্য সে নিয়মিত ডিম দিয়ে যাবে মা ।”
“এই ডিমগুলোর মধ্যে যে স্কুলের প্রজেক্টের জন্য বাচ্চা ফুটানো ডিম নাই বুঝব কেমন করে? “
বাবার অভিমত ।
দাদাজান একটা রুটির ভিতরে ডিমভাজা পীরে খেতে খেতে বলছেন ,
“আমি সেই ছোটবেলায় তাজা ঘরের ডিম খেতে পারতাম । সেগুলো ছিলো খেতে অতি সুস্বাদু ।
বাবা রাগের সাথে বললেন দাদাজানকে, “আব্বা ,আচ্ছা এই ডিমে কোনো সমস্যা নেই ।
সব ভালো । আপনি মন ভরে খান।
কিন্তু বিষয় হলো, যদি একটা ডিম ফেটে বাবা বাচ্চা বেরিয়ে আসে? “
“বাবা বাচ্চা? আমি বেকুব হয়ে গেলাম ।
দাদাজান আমার দিকে লক্ষ্য করে জানতে চাইলেন,
” তাদের কি রাতা মোরগ আছে? যদি মোরগ না থাকে তাহলে ডিমে বাচ্চা থাকবে না । “
দাদাজানের প্রশ্নের উত্তরে মা বললেন,
“তাদের মোরগ থাকলে আমরা জানতাম । আশেপাশের প্রতিবেশীরা জানতো । সকালে মোরগের ডাক শুনতে পেতাম । “
এ বাড়িতে সুহাসিনীর পক্ষ নিতে দুইজন আছেন । দাদাজান ও আমার মা ।
এতোক্ষণ ভালবাসা, মেঘের বড় বোন চুপচাপ ছিল । এখন সে দুম করে বলে বসলো,
” ওদের বাসায় একটা পোষা বিড়াল আছে । সেটা নারী না পুরুষ?
কথা হচ্ছিল মোরগ নিয়ে । সেখানে বিড়াল কিভাবে আসে আলম সাহেবের মাথায় ঢুকছিল না । সে মেয়ের দিকে বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে বললো,
“কি সব যা-তা বলছো ? “
” আমি বলছিলাম মোরগের কাজটি তো পুরুষ
বিড়ালটি করতে পারে । “
“মানে ……., তুমি কি দিন দিন বোকা হচ্ছ? “
আলম সাহেব মেয়েকে থামিয়ে দেন । মেয়েটি বোকা গোছের । তা তার কথাবার্তা থেকে আন্দাজ করতে পারেন তিনি। বোকা মেয়ে রূপবতী হলেও কদর নেই । আলম সাহেবকে এই চিন্তা প্রায় গ্রাস করে ।
তিনি টেবিলের সবার দিকে ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন ।
কারো মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই ।
এক বিচিত্র পরিবারে আছেন তিনি !
মিসেস তাহমিনা ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“মেঘ তুমি সুহাসিনীকে জিজ্ঞেস করো, তাদের মোরগ আছে নাকি । “
মেঘ ছোট্ট করে হাসি দিয়ে বললো,
” মা আমার মনে হয় না সেটির দরকার আছে । “
” তুই কি সুহাসিনীর সাথে কথা বলতে ভয় পাস?” ভালবাসা বললো ।
“না । ভয় পাব কেনো। তার সাথে কথা বলতে ভয়ের কি আছে । সেকি সাপ নাকি যে ছোবল দেবে!
ভালবাসা ভেংচি কাটে। বলে,
“আমি জানি তুই ভয় পাস । আচ্ছা যদি আমি বলি?
আলম সাহেব ধমক দিয়ে বললেন,
“চুপ কর তো । মেঘ তুমি মেয়েটির সাথে কথা বলে বিষয়টি পরিষ্কার করবে । “
৭
মেঘ ও মৃদুল স্কুল শেষে বাড়ি ফিরছে ।
মৃদুলের সাথে মোরগের ব্যাপার নিয়ে কথা হচ্ছে নিজেদের মধ্যে।
মেঘ বুঝতে পারছে না কিভাবে সুহাসিনীকে জিজ্ঞেস করবে মোরগের বিষয়টি। সে সুহাসিনীকে ভালো করেই জানে ।
একটু এদিক সেদিক হলে চড় খাবার সম্ভাবনা প্রবল । সে দ্বিতীয়বার এই অবস্থার মধ্যে যেতে চায় না ।
এদিকে বাবার হুকুম পালন কলতেই হবে।
মৃদুল বললো, ” তুই কি করে সুহাসিনীকে জিজ্ঞেস করবি মোরগের কথা ? “
” আমি জিজ্ঞেস করবো তোকে বলেছি ?”
ওদের উঠোনে মুরগিগুলো থাকার একটা ঘর আছে । এখন আমরা সেদিকেই যাচ্ছি । সুহাসিনীদের বাড়িতে । চুপি চুপি বেড়ার ফাঁক দিয়ে দেখবো মোরগ আছে কিনা। শোন সাবধানে থাকবি । যেনো সুহাসিনী আমাদের না দেখে ফেলে । “
“ভালো কথা, সেখানে মোরগ আছে বুঝবি কি করে?”
“মোরগ চেনার কি আছে? দুধের বাচ্চাও চেনে ।
তাছাড়া মোরগ আকারে বড় । পালক লম্বা । হুম । আর মাথার উপরে ঝুটি আছে ।
গলার নীচেও আছে । এটা বের করা সহজ । তুই একটা গাধা ।”
“কিছু মুরগিও এমন দেখতে । চিন্তা কর । তবে খুব বেশি নেই । “
মেঘ আর মৃদুল সুহাসিনীদের বাড়ির বাইরের উঠোনের দিকে উঁকিঝুঁকি মারছে বেড়ার ফাঁক দিয়ে । মোরগ আছে কিনা দেখার চেষ্টা করছে । গুপ্তচর প্রশিক্ষণে নেমেছে তারা।
” আয় আয় । এদিকে । “
দুজন গোজা হয়ে দৌড়চ্ছে বেড়ার পিছন দিয়ে । ঝোপঝাড়ে ভর্তি । মেঘ ইশারায় মৃদুলকে কথা বলতে নিষেধ করল । আয় এখানে ।
তারা এক কোণায় এসে থামল ।
ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে মেঘ বললো,
” কিরে মরার মুরগি মোরগ কিছুই দেখছি না । “
একটা ঢিল ছুঁড়ে মার । দেখবি দৌড়ে আসবে ।
মৃদুল একটা ইটের টুকরো ছুড়ে মারল।
মুরগিগুলো ক-কক-ক শব্দ করে ডাকতে শুরু করে ।
একটা ঝুটওয়ালা মুরগি খোয়াড় থেকে বেরিয়ে আসে। মুরগি না মোরগ বোঝার উপায় নেই ।
মৃদুল বললো,
“এটা তো দেখতে মুরগির মতো । “
“কি করে বুঝলি? “
” মনে হচ্ছে দেখে। “
বুঝতে পারলি মুরগি বিশারদ? মেঘ মৃদুলকে রসিকতা করে বললো।
মৃদুল আরেকটি ঢিল ছুঁড়তে যায় । মেঘ মৃদুলকে থামিয়ে দেয় ।
“ইস ইস থাম। সুহাসিনী । “
সুহাসিনীর হাতে ছোট্ট বালতি একটা ।
সে মুরগিগুলোকে ডাকছে,
“এই আয় আয়, খাবি । আয় আয় । “
সে খাবার ছিটিয়ে দিচ্ছে ।
” এগুলো সবই মুরগি । মোরগ তো দেখছি না ।”
:হুম ঠিক । মোরগ নেই । “
“আমি তো এইমাত্র এটাই বললাম ? “
“দাঁড়া ভালো করে দেখি । তাদের মধ্যে একটাও ঝুটিওয়ালা দেখছি না । “
“আরে এদিকে আয় । খা খা । খাওন খা । “
সুহাসিনী আদুরে গলায় ডাকছে মুরগিগুলোকে।
” মোরগের ডাক শুনতে পেলি? মেঘ মৃদুলকে ফিসফিস করে বলে ।
” হুম আমিও তাই শুনলাম । মোরগের ডাকের মতোই লাগল । দেখ খুব ভালো। রঙ লাল। ঝীটি আছে নাকি।”
“আমি নিশ্চিত । মোরগ নেই । “
মেঘ রাতের খাবারের টেবিলে খেতে বসে বাবাকে বললো,
“সব মুরগি । “
আলম সাহেবকে কিছু বলতে দেয়ার সুযোগ না দিয়ে তার বাবা বললেন,
তোমার জন্য গর্ব হচ্ছে মেঘ । এখন কি তোমার ভয় কেটেছে? তিনি ছেলেকে বললেন । অর্থাৎ মেঘের বাবাকে।
তিনি এবার নাতির দিকে তাকিয়ে বললেন,
” তুমি মেয়েটির সাথে কথা বলেছো, হুম? “
তার মুখে তৃপ্তির হাসি ।
” এটা কোনো ব্যাপার নয় দাদাজান । “
আলম সাহেব রাগে ফাটছেন । মোরগ নেই । এই সংবাদে তিনি খুশি হননি । তিনি রাগী স্বরে ছেলেকে প্রশ্ন করলেন ,
“মেয়েটি তোমাকে তাই বলেছে? সেগুলো সব মুরগি? “
মেঘ মাথা নেড়ে হাঁ সূচক উত্তর দেয় । তোমরা
দুজনেই বিরাট জ্ঞানী । ওগুলো সব মুরগি । গাধা একটা ছেলে আমার । সবই মুরগি সেটা ঠিক ।
কিন্তু আমার প্রশ্ন ছিল সেখানে পুরুষ মুরগি ছিল কি না?
মেঘ চিন্তায় পড়ে যায় । বাবা ভয়ানক রেগে যাবার কারণ তার কাছে অজানা ।
মুরগি? মুরগির কথা কে বললো । সে তো মোরগ আছে না নেই সেই খবর দিল । তাহলে বাবা না বোঝার ভান করলেন কেনো? সে দুঃখ পেল ।
“মোরগের কি ঝুটি আছে?”
আলম সাহেব ছেলের কাছে জানতে চাইলেন ।
“আছে । “
দাদাজান শুনে বললেন,
“তাহলে তো পরিষ্কার ঐ বাড়িতে মোরগ নেই । “
“ওগুলোর মধ্যে একটাও মোরগ নেই?
আলম সাহেব পুনরায় ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন ।
“না নেই । “
মিসেস ফাহমিদা বললেন,
“বেশ , ডিমগুলো তাহলে ভালো । “
বৌমার সাথে সুর মিলিয়ে শ্বশুরমশাই বললেন,
“এখন সমস্যা নেই আর । সমাধান হলো সব ।”
মেঘ বললো,
” আমার জন্য শেষ হয়নি । “
মনে মনে ভাবছে, কোনোভাবেই সে এই ডিম খাবে না । বিশেষত সুহাসিনীর কাছ থেকে । মেঘ তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো ,
“আমি এসব ডিম খাবো না মা । “
মা এক নলা ভাত মুখে দিয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“ভালো কথা , কেনো খাবে না? “
” তুমি কি তাদের উঠোন দেখেছ? খুবই নোংরা ।
আর সারা উঠোন জুড়ে মুরগির মল ।
বিশ্রী একটা গন্ধ ।”
ভালবাসা ফট করে বলে বসলো,
“তার মানে কি, উঠোনে বিষ আছে নাকি? “
ভালবাসা এক কথায় সবার মনোযোগ আকর্ষণ করে নিল । মিসেস ফাহমিদা মেয়েকে ধমকের স্বরে বললেন,
“তোমার কাছে কি তাই মনে হয়? তাদের উঠোনে বিষ তৈরি হয়েছে? “
“দাদাজান এবার বললেন,
“আমার তা মনে হয় না । কেনো তারা এমন করবেন।”
ডিম একটি পুষ্টিকর স্বুস্বাদু খাদ্য। কিন্তু্ এ বাড়ির মানুষের আচরণে তা মনে হচ্ছে না।
“এতগুলো ডিম কি করবো? মিসেস ফাহমিদা বললেন । “
আলম সাহেব স্ত্রীকে বললেন, ” তাদের ফেরত দিয়ে দাও । “
মেঘ ভয়ার্ত চোখে বললো,
“ফেরত পাঠাবে সুহাসিনীকে?”
আলম সাহেব বললেন,
“অবশ্যই । তুমি তার সাথে কথা বলেছ । তাই না?
ফেরত দিলে তো সে তোমাকে খেয়ে ফেলবে না । “
“ভালো কথা, কি বলে ফেরত পাঠাব ? “
” বলবে যে আমরা ডিম খাই না । আমাদের এলার্জির সমস্যা আছে । অথবা কিছু একটা ।
আরে মাথা খাটাও । “
মেঘ মিথ্যে বলতে পারবে না । তাছাড়া একটা পরিবারে কি করে সব মানুষের একসাথে এলার্জি হয়? খামখা স্কুলের সবাই কে জানানো হবে ।
বাবা বলেছেন মাথা খাটাতে । বরং আমি মাথা খাটাই । ডিমগুলো ফেলে দিলে কেমন হয়? সেও জানল না । কষ্টও পেল না । সুতরাং ফেলে দেয়া ছাড়া তার আর উপায় নেই ।
মেঘ দরজা খুলে সতর্কভাবে চারদিকে দেখে নিল । না কেউ নেই । ডিমের বাক্সটি ময়লার বাক্সে ভরে রাখল । এ এক মৃত্যুর মতো অভিজ্ঞতা !
সুহাসিনীর সাথে আমার চলমান কাহিনি অত্যন্ত সফলতার সাথে পাশ কাটিয়ে যেতে পারলাম ।
এক সপ্তাহ পরে , দরজায় বেল বাজে । মেঘ দরজা খোলে।
” কেমন আছ । তোমাদের জন্য আরো একটু বেশি করে ডিম নিয়ে এলাম । “
ওমা, কতোগুলো ! ধন্যবাদ । মেঘ হাত বাড়িয়ে ডিমের বাক্সটি নেয় সুহাসিনীর হাত থেকে ।
তার ভাবসাব এমন যে সে ডিমগুলো দেখে মহাখুশি!
“আগেরবার যে ডিমগুলো দিয়েছিলাম তা তোমাদের বাসার সবাই খেয়ে কি বললেন?
“ও ভুলেই গিয়েছিলাম বলতে । দাদাজান খুব খুশি হয়েছেন । এমনকি আমরা সবাই । “
” আচ্ছা, তাই ! খুশি হলাম জেনে । দেখা হবে স্কুলে । “
আমি ভাবছিলাম হয়তো এটাই হবে শেষবার ডিমগুলো ফেলে দেয়া । কিন্তু না কেবল শুরু আমার জীবনকে মিথ্যে, গুপ্ত কৌশল ও কুটিল বুদ্ধির সাথে নিয়ে চলা। যে মিথ্যেকে আমি এড়িয়ে যেতে চাই,
সুহাসিনীর কারণে তা আঠার মতো আমার সাথে লেগে আছে। প্রতিদিন সকালে শুরু হলো আমার সুহাসিনীর জন্য অপেক্ষা । সে ডিম নিয়ে আসে । তার চলে যাবার পর ডিমগুলো ফেলে দিই বাড়ির প্রধান ফটকের পাশে রাখা ময়লার ড্রামে ।
আমি যখনই দেখি সে আসছে, তার দরজা টোকা দেওয়ার আগেই দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাকি ।
তাকে ধন্যবাদ দিয়ে ডিমের বাক্সটি তার হাত থেকে নিই । তারপর দরজা বন্ধ করে দিই । সুহাসিনী চলে যেতেই ডিমগুলো ময়লার ড্রামে চলে যায় ।
কেনো আমি বলতে পারছি না, ধন্যবাদ ডিম লাগবে না । এগুলো চাই না । এগুলো প্রয়োজন নেই । সাপকে দিয়ে দাও খেতে ।
আমি কি আসলেই তাঁর অনুভূতিতে আঘাত দিতে ভয় পাচ্ছি?
মেঘ ময়লার ড্রামে ডিমগুলো ফেলছে আর ভাবছে ।
Facebook Comments Sync