ডু নট কপি/ রিবন রায়হান

ডু নট কপি/

ডু নট কপি/

ডু নট কপি/ রিবন রায়হান

 

ঘটনাটা ২০০৭ সালের অক্টোবর অথবা নভেম্বর মাসের হবে। আমি এবং আমার স্ত্রী সবেমাত্র অস্ট্রেলিয়া এসেছি। থাকছিলাম সিডনীতে।  উঠেছি যে বাসায় তারা স্বামী-স্ত্রী একসাথে থাকেন। আমরা তখন ব্র্যান্ড নিউ ইন অস্ট্রেলিয়া! সিডনীতে নিজের নামে বাসা পেতে হলে অনেকরকম কাগজপত্র জমা দিতে হয়। আমাদের সেসব কাগজপত্র ছিল না, মানে তখনও হয়নি। তাই অন্য ফ্যামিলির সাথে থাকতে শুরু করলাম। যাদের সাথে ছিলাম, তাদের বাসার চাবি ছিল তিনটা। একটা চাবি ওই বাসার হাসবেন্ড ব্যবহার করতেন। আরেকটি ওয়াইফ। আর একটা এক্সট্রা চাাবি ছিল। এক্সট্রা চাবি মানে তিন নাম্বার চাবিটা ছিল আমার কাছে। সমস্যা হলো, বাসায় যখন কেউ থাকবে না, তখন আমার স্ত্রী কিভাবে বাসায় ঢুকবেন? তার মানে আরেকটি চাবি দরকার। চাবিতো দরকার, কীভাবে আরেকটা চাবি বানাবো? চাবি বানানোর দোকান কোথায়? ঢাকাতে তো চাবি বানানোর লোকেরা রাস্তায়, গলিতে ঘুরে বেড়াতো। চাবি বানানোর দোকান কোথায় তা জানতাম। এখানে কোথায় চাবিঅলা পাবো? আমি তখন পুরো বেকার। থাকি ওয়ালিপার্কে। মাঝে মাঝে সিডনী  সিটিতে যাই জব খুজঁতে। কেউ একজন বললো, ’সিটিতে টাউন হলে চাবি বানানোর দোকান আছে’। ওয়ালিপার্ক থেকে ট্রেনে চেপে গেলাম টাউন হলে। খুঁজে বের করলাম চাবি বানানোর দোকান। পকেট থেকে বড় আর ভারি চাবিটা তুলে দিলাম চাবি বানানো লোকটার হাতে। যাকে বলে ’লকম্মিত’, তার হাতে। নেড়েচেড়ে দেখে লকস্মিত চাবিটি আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে বললো, ’আই ক্যান্ট কপি দিস কি’! পরিষ্কার ইংরেজি। না বোঝার কোন কারণ নেই। তারপরও অবাক হয়ে বললাম, ’সরি’! তখন ওরকম একটা চাবি বানাতে খুব বেশি হলে ৫ ডলার লাগতো। এবার লকস্মিত ওজি উচ্চারণে বললো, ’ইফ ইউ গিভ মি হানড্রডে  ডলার, আই ক্যান্ট কপি দিস কি’? কথাটা বলে আমাকে চাবিটি ভাল করে দেখতে ইংগিত করলো। আমি আমার দুই চোখ স্থির করলাম  চাবিটির উপর। দেখলাম চাবিটির উপর ইংরেজিতে লেখা, ’ডু নট কপি’! লকস্মিত লোকটা ইয়ার টুয়েলভ শেষ করেছে বলে মনে হলো না। দেশের আইনের প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধ দেখে অবাক হয়ে গেলাম। সে কেন দেশের আইন ভঙ্গ করবে? এরকম একটা চাবি আমি তাকে কপি করতে বলেছি! আমি তাকে একটা বেআইনী কাজ করতে বলেছি, যদিও না জেনে করেছি, এটা ভাবতেই নিজেকে মহা অপরাধী মনে হলো। আমি আর কোন কথা না বলে চাবিটি হাতে নিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে এলাম।

রিবন রায়হান
রিবন রায়হান