এক অনিন্দ্য সুন্দর শরত / রোকেয়া ইসলাম

এক অনিন্দ্য সুন্দর শরত

এক অনিন্দ্য সুন্দর শরত

এক অনিন্দ্য সুন্দর শরত / রোকেয়া ইসলাম

 

নীল রঙের সাদা পাড় শাড়িটাকে বেছে নেয় আজকের জন্য।

বর্ষার পর এখনও বেলী আছে গাছে,  সকালে মালা গেঁথে ফ্রিজে রেখে দিয়েছে।

দুপুর বিকেলের শরীরে আয়েসি হেলান দিতেই বেড়িয়ে পড়ে নিপা।

রিক্সার ঝাঁকুনিতে নীল রেশমী চুড়ি টুংটাং আহ্লাদী বাজতে থাকে।

হাঁটতে থাকে নিপা, না কোথায়ও নেই সাহান। যতবার ফোন দেয় ততোবারই সুইচড অফ পায়।

আশেপাশের লোকগুলো যেন সং দেখছে এমন কৌতুকে তাকাতেই মুহূর্তে চোখগুলোতে আসন গেঁথে বসে কামুক লোভ। সুঁচালো ঠোঁটের কুটিল হিসহিস শব্দটা গভীর হয়ে ওঠে।

ওদের ভার্চুয়াল গ্রুপ থেকে কাশবনে যাচ্ছে । নিপা জানে দূরের কাশবন এতোই সফেদ ঘন যেন সমুদ্রের ঢেউ উথলে আসছে,  যতই বনের গভীরে ঢোকা যায় ততোই প্রেমের মত ফাঁকা হয়ে সামনে আসে।

তবুও কোমল কাশফুল মোহন ইশারায় কাছে ডাকে ।

দাদী ওদের কাশফুল নিয়ে মাতামাতি দেখে হাসে।

-তোরা বলিস কাশফুল আমরা বলতাম কাইশা। । আমরা ছোটবেলায় নদীর পাড় থেকে তুলে এনে তুলোর মত উড়িয়ে খেলতাম।  তখন তো তোদের মত ফেসবুক ছিল না, হাতের মোবাইল দিয়ে ফটোও তোলা যেত না। যতসব আদিখ্যেতা। ফাঁকিবাজি ফুল।

– দাদী তুমি তো তাহলে কাশফুলের আসল সৌন্দর্য বুঝতে পারোনি। খালি বকা দিচ্ছো।

– বকা কি সাধে দেই,  দূর থেকে এমন ঘন দেখায়, আর কাছে সব ফকফকা। মনে হয় তোর দাদার ভালবাসার মত,  মুখে মুখে পিরিতের কথা  আসল বেলায় ঠনঠনাঠন।

হাসতে হাসতে নিপা জড়িয়ে ধরে দাদীকে।

আড্ডাবাজি ছবি তোলার পর  চটপটির দোকানটায় দল বেঁধে হৈ হৈ করে বসে ওরা।

কেউ টক ঝাল বেশি দিয়ে ফুচকা কেউ ঝালেটকে চটপটি।

এক প্লেট সাবড়ে শুষিয়ে শুষিয়ে অন্য প্লেটের জন্য হাত বাড়ায়।

নাকের জলে চোখে জলে মুখ টকটকে হয়েও ফুচকা মুখে পুরতে ভোলে না।

ফুচকা মুখে পুরতে গিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে  থাকে,  কাকে দেখছে নিপা!  একটা বছর কতই না খুঁজেছে অন্ততঃ একটিবার মুখোমুখি দাঁড়াতে চায় নিপা।  কী অপরাধ ছিল ওর,  কেন এমন করলো সাহান!

সাহানের হাত ধরে আছে নীল শাড়ি পরা এক তরুণী।

তরুণীটি হেসে হেসে কথা বলছে  । কী আনন্দময় অভিব্যাক্তি! নিপা দলের পেছনে নিজেকে আড়াল করে বসে তাকিয়ে থাকে সাহানের দিকে।

হঠাৎ একটু দূরে  সেদিনের  একজোড়া পুরুষ্ট সুচালো ঠোঁটের কামুক পুরুষকে দেখতে পায়। একটু দূরে পুরো দলটা ঘোরাঘুরি  করছে চোখে লালসা নিয়ে

সমস্ত শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে নিপার।

সাহান তরুণীকে একা দাঁড় করিয়ে আড়ালে চলে যায়, 

বাতাসে উড়ছে তরুণীর দীঘল চুল।  সবার চোখ এড়িয়ে তরুণীকে ডেকে  ফুচকার দোকানের আড়ালে দাঁড়ায় নিপা। দল ওর কাছাকাছি থাকে।

তরুণী অবিশ্বাসী দৃষ্টিতে মুখিয়ে ওঠে।  মোবাইল থেকে ছবি দেখাবার পরও তরুণীর বিশ্বাস অটুট থাকে। নিপাকে যা তা  বলতেই থাকে।

নিপা ওকে সেদিনের পুরো ঘটনা বলে হাত উল্টিয়ে সিগারেটের দাগ দেখায়।

এবার মেয়েটি  অসহায়ের মত নিপার হাত জড়িয়ে ধরে।

দলের পেছনে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে দুজন। সুঁচালো ঠোঁটের পুরুষটি ঘুরে ঘুরে তরুণীকে খোঁজে এদিক ওদিকে তাকিয়ে। না পেয়ে অস্থির পায়চারি করতে থাকে।

ম্লান সন্ধ্যার সময়টুকু খুব দ্রুত ফুরিয়ে যায়। লাইট জ্বলে উঠে। নিপার হাত ধরে গাড়িতে ওঠার সময় দেখতে পায় অনতিদূরে কামুক কাপুরুষের দল দাঁড়িয়ে আছে। ওদের দিকে তাকাতেই হকচকিয়ে যায়।

তাদের বিস্ফোরিত দৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই গাড়ি চলতে থাকে।

নিপার বুকে যখন বেদনা আর অপমানের পাথর জমতে শুরু করেছিল তখনই জানতে পারে সেদিনের ঘটনার মূল নেপথ্য কারিগর সাহান ।

প্রেমের অভিনয় করে একটা মেয়েকে কাশবনে এনে  ওরা গ্রুপ সেক্স করে।

সেদিন জ্ঞান হারাবার পূর্ব মূহূর্তে চেনা একজোড়া চোখ ঠিক ওর চোখের উপর দেখেছিল।

কে সাহান!!!

অবিশ্বাস্য সত্য ! পাথরটি চলতে ফিরতে জানিয়ে দিতো প্রেমের নামে এতো বড়  প্রতারণা  বয়ে চলা মৃত্যুর সামিল।

বাঁধে গাড়ি ওঠতেই বুঝতে পারে দীর্ঘ লালনের অসম্ভব ভারী  পাথরটি গলতে শুরু করেছে…

রোকেয়া ইসলাম
রোকেয়া ইসলাম
%d bloggers like this: