একুশের সংগ্রাম – সৈয়দ জিয়াউল হক

একুশের সংগ্রাম - সৈয়দ জিয়াউল হক

পাকিস্তান হওয়ার পূর্বে ১৯৪৬ সালে যে নির্বাচন হয়, সে নির্বাচনে বাংলার মানুষ ব্যাপকভাবে মুসলীম লীগের পক্ষে অর্থাৎ পাকিস্তানের পক্ষে ভোট প্রদান করে। কারণ মুসলীম লীগের নেতৃবৃন্দ পূর্বেই এই নির্বাচনকে পাকিস্তান ইস্যুর উপর নির্বাচন বলে ঘোষণা করেছিলেন। পাকিস্তানেও বাঙালিরা ছিল শতকরা ৫৬ ভাগ। কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সকল বিচার বিবেচনা এমনকি চক্ষুলজ্জাও বিসর্জন দিয়ে ঘোষণা করেন যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র সাড়ে চার বছর পর বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবির কারণে এদেশের ছাত্র জনতার উপর গুলি চালানো হয় এবং এতে বেশ কয়েকজন শহীদ হন। সে দিন সারা জাতি শোকে মুহ্যমান এবং বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। তার পর থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের শহীদ দিবস। অবশেষে ১৯৫৬ সালে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। কিন্তু পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী সেখানেই থেমে থাকেনি। যার ফলশ্রুতিতে এদেশের মানুষকে ১৯৬২ সালের  শিক্ষা আন্দোলনে, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনে, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে রক্ত দিতে হয়। প্রতিটি আন্দোলনে একুশ ছিল আমাদের প্রেরণা। প্রথম প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারি মূলত শোক দিবসে সীমাবদ্ধ থাকলেও ক্রমাগত একুশ হয়ে ওঠে প্রতিবাদের প্রতীক থেকে প্রতিরোধের প্রতীক এবং প্রতিশোধের প্রতীক। এ কারণে প্রতিবছর একুশে আমরা আমাদের চেতনাকে শানিণ করেছি নতুন নতুন সংগ্রামের আলোকে, নতুন নতুন শত্রুদের মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যে। স্বাধীনতা ও স্বাধিকারের আন্দোলন একটি অবিচ্ছিন্ন সংগ্রাম, এতে কখনও ছেদ পড়ে না। আমরা দেখতে পাচ্ছি আজ আর রাষ্ট্রভাষা বা বাঙালি সাহিত্য সংস্কৃতি নয়, আজকের আঘাত আরও অনেক গভীরে। আজ আঘাত আসছে খোদ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার গোড়ায়। একে সম্পূর্ণ ধ্বংসের পাঁয়তারা চলছে। তাই একুশের সংগ্রাম আজও শেষ হয় নি। শহীদ স্মৃতি অমর হউক।