গল্পের মতো / সুলতানা রিজিয়া

গল্পের মতো

গল্পের মতো

গল্পের মতো / সুলতানা রিজিয়া

 

ইদানিং প্রায় প্রতি রাতেই নির্ঘুম চোখের পাতায় পিঁপড়ের সারির মতো হেঁটে আসে কথামালা, ধোঁয়াশে অস্পষ্টতার মাঝেও সে দেখতে পায় শৈশবের পরন্ত বিকেল, স্কুলের এসেম্বেলির লাইন, পরিচিত চেনামুখ। চারপাশে ভিড় করে -লাল ফিতে, পুতির মালা, কাঁচের চুড়ি, টেপা পুতুল, মার দেয়া টিনের বাক্সে মেয়েলি টুকিটাকি, চকমকি পাথর, ঝরণা কলম, প্রিয় বই- শোনো শোনো গল্প শোনো, একপাশে রঙিন কাগজে মোড়ানো দাদীর দেয়া উপহার ছোট্ট সোনার নাকফুল আর মার দেয়া লাল জর্জেট শাড়ি। অন্যপাশে সযত্নে রাখা হিরন ভাইয়ের দেয়া গোলাপের শুকনো পাঁপড়ি।

 

কিশোরী বুকের মাঝে তোলপাড় অভিমান ওকে ছুটিয়ে নিয়ে যায় জলার ধার, হিজলতলার ছায়া পেরিয়ে রেল কলোনীর লাল রং বাড়ির সিঁড়িতে। আচম্বিত দরজার সামনে এসে দাঁড়ায় দ্বিধার দেয়াল, সে দেয়াল পেরুতে পারেনা। অথচ দরজার ওপাশে সবকিছুই তার চেনা। বিশেষ করে একজন, যার কথা ভাবলে বুকের মাঝে জমে ওঠে লজ্জার আবির। তার কথা ভেবেই আজ এখানে ছুটে আসা। সজোরে দ্বিধার দেয়াল সরিয়ে দরজায় হাত বাড়াতেই খুলে যায় কপাট। সামনে কেউ নেই, শুধুই অন্ধকার! হঠাৎ নেশালাগা প্রিয় কন্ঠস্বরে ওর শ্রবণতট কেঁপে ওঠে- 

ঘরে সন্ধ্যের আলো জ্বালানো হয়নি, বাড়িতেও কেউ নেই। আচ্ছা মেয়েতো তুমি, আজ বাদে কাল তোমার গায়ে হলুদ! এই ভরসন্ধ্যায় একা একা কেউ এভাবে আসে?

মূহুর্তে সব অনুভূতি পাথরের মতো জমে যায়, বুকের মাঝে ঝড়ের তান্ডব আর আকন্ঠ তৃষ্ণায় দম বন্ধ হয়ে আসে। উপেক্ষার দহনে ঘুরে দাঁড়াতে গিয়ে হুমড়ি খেযে পরে কঁকিয়ে ওঠে -উফ, মাগো—

 

অস্বচ্ছ দৃষ্টি মেলে দেখে ভোরের আলোয় ভেসে যাচ্ছে চারপাশ্। একটু পরেই কোলাহলে ভরে উঠবে দিনমান। সেই একই জীবন যাপন, মৃত্যুর প্রতিক্ষা, আর—বুকের মাঝে সেই একই অভিমানের ঢেউ আছড়ে পরা। মনে মনে বলে-

বাড়িতে কেউ নেই এই অজুহাতে ফিরিয়ে দিয়ে ভালোই করেছিলে হিরন ভা্ই-, সে রাতে আমার জন্য বাড়ির দরজা খোলা থাকলেও হলুদের রঙ আর লাগেনি। তুমিই বলো, রঙিলা মনে অন্যের রঙ কি লাগে??

সুলতানা রিজিয়া
সুলতানা রিজিয়া