হে করোনা তুমি মোরে করেছ মহান/ ফিরোজ শ্রাবন

ফিরোজ শ্রাবন

পরিসংখ্যান, টকশো কোন কিছুই আমাদের কে কোন স্বস্তি দিতে পারছে না । করোনার সমস্ত দায়ভার সরকারকে চাপিয়ে দিয়ে অনেকেই মাস্ক ছাড়া রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে আর ভাবছে কি করে অর্থনৈতিক মুক্তি পাওয়া যায়। একদিকে ডাক্তার বলছেন, প্রটেকশন ছাড়া রোগি কিভাবে দেখবো আর অন্যদিকে রোগিরা বলছেন, যদি চিকিৎসা না করেন তাহলে ডাক্তার কেন হইলেন? জবাবে অবশ্য দু একজন ডাক্তার দেখলাম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, ডাক্তার হয়েছি নিজের টাকায় কারো বাপের টাকায় নয়। এ যেন সন্তান শিক্ষিত হয়ে বা প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাবা-মাকে ভুলে যাওয়ার মতো। কারণ সে ডাক্তার বোধহয় জানে না যে একজন ডাক্তার এর পেছনে সরকারের কত টাকা লগ্নি করতে হয়। আর সরকারের টাকা মানে কিন্তু সেই জনগণের টাকা। যাই হোক তিনি সদ্য ডাক্তার হয়েছেন অল্প বয়স, হয়ত মেধার সাথে তার বুদ্ধির সংযোগটা এখনও পুরোপুরি ঘটেনি। কিন্তু অবাক হই যারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ স্থানে বসেও আজ সমালোচনার পাত্র। আমি ভাবছি এখন যদি আবার ৭১ ফিরে আসতো আর সবাই যদি বলতো,  প্রিয় নেতা অস্ত্র ছাড়া কিভাবে যুদ্ধে যাব? যুদ্ধে যাওয়া সম্ভব নয়। তারা কিন্তু সে প্রশ্ন তোলেনি। তার মানে কি তাদের জীবনের কোন মুল্য ছিল না?  নাকি তারা মারা গেলেও দেশের কোন ক্ষতি হয়নি। সন্মানিত ডাক্তারগণ নিজেদের যদি এত দুর্বল ভাবেন তাহলে কিভাবে আপনারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে দাবি করেন? তাহলে কি সত্যিই চিন্তার বিষয় যে আমাদের করোনায় আসলে কি ঘটতে চলেছে? অনেকেই তেমনি করোনায় করনয় টকশোতে মুখে ফেনা তুলে আর হাসপাতালে গেলে দেখা যায় ভিন্নরুপ। অনেক ভন্ডকে দেখেছি টকশোতে ফেরেশতা আর কর্মস্থলে কসাই। যারা এই চরম দুর্দিনে পালিয়ে গেছেন অথবা কর্তব্যে অবহেলা করে দুরে সরে আছেন দোয়া করি তাদের যেন কোনদিন মৃত্যু না হয়। আর যারা লড়াই করে যাচ্ছেন তাদের মৃত্যু হলেও ইতিহাস যেন তাদেরকে অমর করে রাখে। অনেক ডাক্তার হয়তো বলবেন আমার এমন সস্তা ইতিহাসের দরকার নাই। তারা হয়তো রাজাকারের মত আবারও ভুল করবেন। মুক্তিযোদ্ধারা যে সত্যিই কত মর্যাদার কত মহান তা তারা বারবার বুঝিতে দিয়েছেন তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে মুল্যায়নের মাধ্যমে। অন্যদিকে যারা রাজাকার তারা বারবার ঘৃনিত হয়েছেন সাধারন মানুষের অভিষাপে। সাধারনত আমরা কোন অসুখ হলে ডাক্তারের কাছে যাই, কেউ ঢাকা মেডিকেল কেউ-বা স্কয়ারএ। কৃপন মনে করে সামান্য জ¦র-শর্দি এর জন্য টাকা খরচের কি দরকার ঢাকা মেডিকেলে যাই। আবার যার অনেক টাকা সে ভাবে যদি স্কয়ার এ না যাই তাহলে সন্মান থাকেনা। যে ডাক্তার বা হাসপাতাল টিভিতে ঘোষনা দিতো এখানে যতœ সহকারে চিকিৎসা করা হয়, রোগ আপনার কিন্তু চিন্তা আমাদের। আজ তারা তাদের সমস্ত চিন্তা ভাবনা পেছনে ফেলে,  ডাক্তার নেই বলে চেম্বারে  সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে গ্রামে লুকিয়ে আছে। একবার আমি আমার ফ্যামিলিকে নিয়ে এক গাইনি ডাক্তারের কাছে গেলাম ডাক্তার আমাকে বললেন আপনি কি কাজ করেন। তার মানে দাড়ায় আমার অর্থনীতি কি আছে নাকি অর্থহীন দিন যাপন করিতেছি। আমার ধারা বর্ননা শুনে তিনি মন খারাপ করলেন তবে আশাহত হলেন না আমাকে মোটামুটি একটা বাজেট দিলেন। কিন্তু বর্তমানে সেই ডাক্তারই বলছেন দয়াকরে ঘরে থাকুন। তার মানে, আমরা যদি এখন অসুস্থ হই আর রক্ষা নাই। এতদিন আমি আপনি চিৎকার করছি এত টেষ্ট এর কি দরকার আর ডাক্তার ভিজিট বেশী কেন ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই আমরা এখন বলছি আমাকে একটা ভেন্টিলেটার দাও না হলে আমি তোমাকে আমার জিবনটাই দিয়ে দেব। করোনা ভাইরাস যেন কোন ভাবেই আমাদেরকে ছাড়বে না তা আমরা বুঝে গেছি। সমস্ত নাস্তিকরাও আজ মহান আল্লাহর উপরে নিজের জিবন সঁপে দিয়েছে। ভন্ড পীর, তাবিজ ব্যবসায়ী, আর মাজার পুজারিরা গা ঢাকা দিয়েছে তারা জানে করানা চলে গেলে আমরা আবার ফিরে আসবো পৈত্রিক ব্যবসায়। আর আমরা মূর্খরা আবারও তাদের মেনে নেব অবলিলায়।  ইতি মধ্যে যারা করনায় মারা গেছেন তারা হয়ত বেচেঁ গেছেন কারন তাদের সৌভাগ্য যে তারা কবরের মাটি অন্তত পেয়েছেন আমরা পাব কি না জানিনা? অনেকের ধারনা যারা মারা গেছেন তারা পাপী বান্দা, তাই করনায় মারা যাচ্ছেন আমরা ভালো মানুষ আমাদের  কিছুই হবে না। আমি ভাবছি যারা পাপী তারা তো ভয়ে আল্লাহর কাছে প্রতিনিয়ত ক্ষমা চাচ্ছেন আর নিশ্চয়ই আল্লাহ রব্বুল আলামিন ক্ষমা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি যদি আলাহ রব্বুল আলামিনের ক্ষমা পেয়ে যান তাহলে তো সে সৌভাগ্যবান। আর আমরা যারা স্বঘোষিত ভাল মানুষ তারা যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমা না চাই আর যদি মারা যাই তাহলে  আমাদের ভাগ্যে কি আছে ধারনা করতে পারছেন নাকি পারছেন না। আমরা শুধু চিন্তা করছি কে জান্নাতে যাবে আর কে জাহান্নামে যাবে। দয়াকরে এইসব  চিনÍা না করে নিজের কৃতকর্মের  জন্য যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই আর আল্লাহর হুকুম মেনে চলি তাহলে মনে হয় বেশী ভাল হয়। মহান আল্লাহ যদি আমাদের ক্ষমা করে দেন তাহেল আমাদের সৌভাগ্য নয়ত অন্যের চিন্তা করতে করতে গরুর মতো জিহবা কামড়ে মরতে হব্।ে গরুর গল্পটা যদি জানা না থাকে তো তাদের বলছি গরু রোজ ঘাস খেতে খেতে এমন একটা ঘাসের কাছে যায় যে, সেই ঘাস খেলে সে অমরত্ব লাভ করবে। গরু প্রতিদিনই ভাবে আজকে না কালকে খাব কালকে তো আসছি, তো কালকেই খাই। প্রিয় ভাইসব কালকে কখনও আর গরুর জিবনে আসে না আর সে জিহবা কামড়ে মারা যায় আর আফসোস করে আহারে আমি যদি গতকাল ঘাসটা খেয়ে নিতাম। অনেকেই হয়ত ভাবছেন করনা আমাদের শেষ করে দিয়ে যাবে। প্রিয়ভাইসব, আপনাকে তো করনা কি করতে হবে আর কি করতে হবে না তা সব কিছু বলে দিয়ে যাচ্ছে, কে আপন কে পর সবকিছু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে যাচ্ছে তার পরেও যদি বুঝতে না পারেন তাহলে আপনি অন্ধ নন আপনি হচ্ছেন উচ্চমানের হতভাগা যার বিবেক বুদ্ধি হয়তো আর কোনদিনই হবে না। আমাদেও কারো কারো অভ্যাস আছে মাজারে মানত করা যে আল্লাহ আমি ভালো হয়ে গেলে মসজিদে বা মাজারে শিন্নি দিব । এমন এক ঝড়ের দিনে নৌকার যাত্রি আল্লাহর কাছে ওয়াদা করছেন ইয়া আল্লাহ যদি ঝড় থেমে যায় তো আমি মসজিদে দশকেজি জিলাপি দিব। ঝড় তো থামেনা। অবশেষে একমন জিলাপির ওয়াদার পরে ঝড় থেমে গেল। তো মাঝি মনে করলো এত জিলাপি আমি নিশ্চয়ই পাঁচ বা দশ কেজি ভাগে পাব। নৌকা পাড়ে ভিড়লে যাত্রি যখন নেমে যাচ্ছে তখন মাঝি বললো স্যার জিলাপি দিবেন না উত্তরে যাত্রি বললো সে যত ভয় দেখাইছে আমি তত লোভ দেখাইছি। প্রিয় ভাইসব, লোভের মোহে আমি আপনি পড়ে আছি আল্লাহ নয়। আপনি ওয়াদা করছেন এই বাড়িটা দখল করেই ভাল হয়ে যাব আর কোন অন্যায় করবো না কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না যে সেই স্বল্প সময়ও আপনার হাতে নেই। সময় থাকতে ভাল হয়ে যান আর না হলে গরুর মত মরলে তখন আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।