জল মাখা জীবন ৫/ আফরোজা পারভীন 

জল মাখা জীবন / আফরোজা পারভীন 

 

বড় চিন্তায় আছে তারামনি। মেয়েটাকে যেন ঘরে ধরে রাখাই দায়।একটু পর পর ঘাটে যাবার বায়না। গোসল করতে ঘাটে যাচ্ছে, পানি আনতে ঘাটে যাচ্ছে, বাসন ধুতে ঘাটে যাচ্ছে। নদীর ঘাট ছাড়া যেন কাছে পিঠে কোন পুকুর নেই। তারামনি বলে,

: তোর ঘাটে যেযে কাজ নেই, সোমত্থ মেয়ে। গোরী কাজকাম সব করে দেবে। তুই ঘরের কাজ কর। দুদিন পর বিয়ে থা হবে। তখনতো ঘরের কাজ তোকেই সব সামলাতে হবে। আর যদি দজ্জাল একখানা শাশুড়ি জোটে তবেতো রক্ষা নেই। এখনই সব ভাল করে শিখে নে। 

হাসে তারামনি। ভাবে একথায় মেয়ে নিশ্চয়ই লজ্জায় নেয়ে উঠবে। বিয়ের কথায় লজ্জা না পায় কোন মেয়ে। কিন্তু ঘটনা ঘটে একেবারে উল্টো। ফোঁস করে ওঠে তারামনি। 

: শ্বশুরঘর করার জন্য কৈবর্ত পরিবারের মেয়েদের ট্রেনিং  এর দরকার হয়না। জন্মের পর থেকে কাজ করতে করতে হাতে কড়া পড়ে গেল। তুমি আমাকে বাইরে যেতে দিতে চাও না ঘরে আটকে রাখতে চাও সেটাই বলো। কিন্তু তা হবে না মা। আমি দিনরাত ঘরে বসে থাকতে পারব না। তুমি যা বলো আর নাই বলো। এই আমি চললাম।

কাঁধে কলসী নিয়ে হাঁটতে তাকে ইন্দু। অবাক হযে যায় তারামনি। তার মেয়ে এত কঠিন কঠিন কথা শিখল কি করে! সেতো কোনদিন পাঠশালাতেও যায়নি। মায়ের মুখের উপর ঠাস ঠাস শুনিয়ে দিয়ে চলে গেল। তারামনি বেশ বুঝেছে ও মেয়েকে আগলে রাখতে পারবে না সে। মথুরটা যে কি করছে। কতবার তাকে বলেছে তাড়াতাড়ি মেয়ের বিয়ের জোগাড় করতে। পাত্র যখন মনে মনে পছন্দ  করাই আছে দেরির দরকার কি। আজ মথুরের সাথে একচোট হবে তারামনির। হয় সে আজই বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করবে না হলে আগুন জ্বালিয়ে দেবে তারামনি। বয়স্থা  মেয়ে নিয়ে কখন কি বিপদ ঘটে তার নেই ঠিক। গরীব বলে কি তাদের মান ইজ্জতও নেই। গরীবের মান বড় সহজে যায়। বড়লোকের মান হাজার অপবাদেও যায় না একথা মা বলতেন। এ কথার চেয়ে সত্যি আর কিছু নেই।

তারামনির মনে শতেক ভাবনা তোলপাড় করে। সে কিছুতেই সুস্থির হতে পারে না। মেয়ে গোরীকে ডেকে বলে, তুই চুপি চুপি দিদির পেছন পেছন যা। সাবধান, ও যেন বুঝতে না পারে। কোথায় যায়, কি করে দেখে এসে চুপটি করে বলবি আমায়। তবে ঠারে ঠোরে যাস। বুঝতে যেন না পারে। 

বেশ মজার একটা কাজ পেয়ে দৌড় দেয় গোরী। দিদির মাত্র দু বছরের ছোট সে। তার বয়সও চৌদ্দ  পেরিয়েছে। দিদিকে নিয়ে মায়ের কিসের ভয় আর দিদির রকমসকম সবই সে বুঝতে পারে। নিশ্চয়ই দিদির কোন মনের মানুষ আছে। সেখানেই সে যায়। 

ঝোঁপের আড়ালে আড়ালে আস্তে আস্তে  চলে গোরী। এ কাজে বিপদও আছে । যদি দিদির কোন ঘটনা সে ধরতে পারে আর মাকে বলে দেয় আর দিদি সেটা  বুঝতে পারে তবে আর রক্ষা নেই গোরীর । কিলিয়ে কাঠাল পাকিয়ে দেবে। কিন্তু  উপায় কি, মা তাকে কাজটা করে দিতে বলেছে। তাছাড়া অনেক দিন ধরে গোরীর একডজন লাল রেশমী চুড়ির শখ। এ সুযোগে যদি মাকে খুশি করে সেটা আদায় করা যায় । বাঁশের খুটিতে গোপনে গোপনে পয়সা জমাচ্ছে মা। গোরীর চোখে ঠিকই ধরা পড়েছে সেটা। ইন্দু  এখন আস্তে  চলছে। হঠাৎ এদিক ওদিক চেয়ে সে চলে এল ঝোঁপের আড়ালে। আর একটু হলে ধরা পড়ে যেত গোরী। আঁচল থেকে ইন্দু বের করল কাগজের ছোট্ট একটা মোড়ক। হাতের তালুতে ঝাঁকিয়ে ঢালল। এরপর কলসীর মধ্যে হাত ডুবিযে একটু পানি এনে বাম হাত দিয়ে ডলতে লাগল। তারপর এদিক ওদিক চেয়ে ঠোঁটে লাগাল সেই জিনিস। গোরী বুঝল গুড়ো লাল রং হাতে ডলে আলতার মতো করে সে আলতায় ঠোঁট রাঙ্গালো ইন্দু। এবার  আলতার কিছুটা সে লেপে দিল পায়ের পাতায়। পায়ে আলতা আগেও ছিল এখন সেটা আরো চকচকে হল। হাতে বেড় দিয়ে নতুন করে এলোখোপা বাঁধল। কাপড়ের নিচে থেকে বের করল একছড়া গাঁদা ফুলের মালা। পূজোর জন্য এ ফুল লাগে তারমনির। সে ফুল চুরি করে মালা গেঁথেছে ইন্দু।  কখন চুরি করল? তারা দুই বোন তো সারাদিন একঘরে একসাথেই থাকে। তার মাঝে কখন এ কাজ করল ইন্দুু। মনে মনে ভীষণ রাগ হল ইন্দুর উপর। সে ছোট বোনকে লুকিযে লুকিয়ে না জানি কতো কিছু করে। কতোভাবেই না সে গোরীকে ঠকাচ্ছে। মায়ের ভয়ে  গাছের একটা ফুলও ধরার সাহস করে না গোরী।  আশ্চর্য দিদি মেজাজ করেই যাচ্ছে  মাও তাকে কিছু বলছে না! মাও যেন দিদিকে ভয় পায়। কেন? পাশের বাড়ির দিদিমা একদিন বলেছিল, একটা বয়সের মেয়েকে বাপ মা সবসময়ই ভয় পায়।  কি করে ফেলে এই ভযে মেয়েদের ঘাটাতে চায় না। ইন্দুর এখন সেই বয়স। তাই যা ইচ্ছা তাই করে চলছে। গোরীর বিয়ের যুগ্যি হতে আর কতো দেরি!  

এবার এদিক ওদিক চেয়ে দ্রুত হাঁটত শুরু করে ইন্দু।  ও যাচ্ছে  কোথায়!  এটাতো ঘাটে যাবার রাস্তা  না। ও যেদিকটাতে যাচ্ছে  ওদিকে দিনের বেলাতেও কেউ যেতে চায় না। মায়ের কাছে শুনেছে ও এলাকাটা দেও দানো ভূত প্রেতের  আস্তানা। অপঘাতে যারা মরে তারাই  ভূত প্রেত হয়ে ও এলাকায় বসবাস করে। মাঝে মাঝে অমাবশ্যার রাতে ঘুটঘুটি অন্ধকারে ওরা  গাঁয়ে ঘুরতে বেরোয় । সে সময়টা গাঁয়ের লোকদের জন্য বড় খারাপ সময়, বড়ই ভয়ের সময়। কারো অসুস্থ ছেলে তখন মারা যায়, কারো স্বামী বুক ধড়ফড় করতে করতে শেষ শ্বাস নেয়, পোয়াতী বউ অসময়ে প্রসব করে ফেলে, গরু  বাছুরের মড়ক লাগে, কলেরা  ডায়রিয়া বেড়ে যায় । সে এক ত্রাহি অবস্থা গরীব জেলেদের! তা ওনাদের নজর এড়াতে সব রকমের চেষ্টা করে গরীব গ্রামবাসীরা। কেরোসিনের অভাব হলেও সারারাত ঘরে আগুন জ্বেলে রাখে । কেউ কেউ কাঠ পুড়িয়ে আগুনের কুন্ড জ্বালায়। সারা  বছর গোবরের ঘুটে দিয়ে রান্নাবান্না চলে । এ এলাকায় জ্বালানী কাঠের বড় অভাব। সারা বছর ডুবে থাকা পানির নিচে কাঠ পাবে কোথায় ।  গাছপালাও তেমন নেই। বড়বড় গাছ ভেসে যায় প্রবল জলস্রোতে । শিকড় বাকড় উপড়ে পড়ে ওরা গড়িয়ে গড়িয়ে পানিতে নামে। কোথায় কতোদূরে চলে যায় কে জানে। এভাবেই একটি দুটি করে উজাড়  হতে হতে গাঁ এখন প্রায় গাছশূন্য। কিন্তু  নিজেদের বেলায় কাঠের অভাব হলেও ওনাদের বেলায় হয় না। তাই সারারাত ঘরে কুপি জ্বলে, কাঠের আগুন জ্বলে , মাথার কাছে লোহার টুকরো রেখে ঘুমাতে যায় কৈবর্ত  পরিবার। ঘরে লোহা থাকলে ওনারা আসন আনেন না। এভাবে ওনাদের হাত থেকে নিস্তার পাবার কতো চেষ্টা ।  সেই দানোদের রাজত্বের দিকে দ্রুত হেঁটে চলেছে ইন্দুু। অথচ গোরী খুবই ভাল করে জানে ইন্দুর ভীষণ  ভূতের ভয়। রাতের বেলা একা সে বাইরেও যেতে পারে না। পেট যখন ফুলে ওঠে তখন কখনও ডাকে তারামনিকে কখনও গোরীকে। ওরা পাহারা দিয়ে নিয়ে গেলে তবেই পেট হালকা করতে পারে ইন্দুু। মাঝে মাঝে রাগ করে তারামনি বলে, 

:আচ্ছা আজতো অমাবশ্যাও না, অন্ধকার রাতও না। বেশতো চাঁদের আলো ফিনিক দিয়ে ফুটেছে। চারদিকে আলোয় ছেয়ে আছে । এ আলোয় মাথার উকুন অবধি কাড়া যায়।  তা তোর ভয় কিসের শুনি? একা যা না। সারাদিন গাধার খাটুনি  খেটেছি ।  একটু ঘুমাতে দে বাছা। 

ওঠেনা ইন্দুু , যায়ও না । তা দেখে হেসে ওঠে গোরী। 

:চল চল দিদি আমি তোর সাথে যাচ্ছি । শেষে ঘর ভাসিয়ে দিবি। গঙ্গাজল তখন  পাবো কোথায়?

তেড়ে আসসে ইন্দু। কিন্তু যতোটা রাগ করার কথা তা করে না। তার তখন পেট ফেটে যাচ্ছে।  দেরি হলে সত্যিই অঘটন ঘটে যাবার সম্ভাবনা। তাই রাগ নিয়ে ধীরে ধীরে ওঠে। গোরী হাসতে হাসতে বলে,

:তা হ্যারে দিদি বিয়ের পর কি করবি? তোর সোয়ামী কি তোরে রাত দুপুরে হাত ধরে বাইরে নিয়ে যাবে?

:তাইতো যাবে।

: কচু যাবে। যখন রাতভোর মাছ ধরবে তখন কে তোকে নিয়ে  যাবে। তখন নির্ঘাৎ ওনারা তোর ঘাড়ে চেপে বসবে । তার চেয়ে এককাজ করিস আমাকে সাথে নিয়ে যাস। 

গোরী হাল্কাভাবে বলে বটে কিন্তু  কথাটা হেসে উড়িয়ে দিতে পারে না ইন্দু। সত্যিইতো কি উপায়  হবে তার বিয়ের পরে! কৈবর্তের মেয়ে সে । নিজ জাতির বাইরে  তাদের বিয়ে হয় না। নিশ্চয়ই তার বিয়ে হবে কোন একজন জেলের সাথে। সে যখন রাত বিরেতে নৌকায় কাটাবে তখন কে ইন্দুকে এমন চরম সময়ে বাইরে নিয়ে যাবে! তাছাড়া অন্যের চেয়ে ইন্দুর চাপেও বারবার।  

একসময় এসব নিয়ে অনেক ভেবেছে ইন্দু। গোরীকে বলেছেও ভয়ে ভয়ে,

: সত্যিরে গোরী আমার কি হবে বল দিনি। আমি নির্ঘাৎ ওনাদের হাতে মারা পড়ব। 

এসব বেশ আগের কথা। আজকাল কিছুই বলে না। কেমন যেন চুপচাপ থাকে আর আপনমনে সারাদিন কি যেন ভাবে। আপন মনে হাসে আর বার বার ঘাটে যাবার বায়না ধরে। কিন্তু  ঘাটেও তো সে যাচ্ছে না। যাচ্ছে  পোড়ো ভিটেয় । ওখানে  একমাত্র পাগলাদিদি ছাড়া আরতো কেউ থাকে না।  মাথাটা  এলোমেলো না হলে, সব ঠিকঠাক না থাকলে ও পোড়ো ভিটেয় সে থাকতে যাবে কেন। ছোট্ট  একখানা ঘরও আছে পাগলীদিদির সেখানে। পাগলীদিদির বয়সের যেমন গাছ পাথর নেই, তার ঘরেরও নাকি নেই।  সারাদিন এ গ্রাম সে গ্রামে ঘুরে বেড়ায় পাগলী দিদি। রাতে  এসে নাকি সে ওই ঘরে ঘুমিয়ে পড়ে। সেই পোড়া ভিটের দিকেই দ্রুত এগিয়ে চলে ইন্দু।   গোরী একবার ভাবে সে ফিরে যাবে । গিয়ে মাকে বলবে দিদি পোড়োভিটের দিকে গেছে তাই ভয়ে ওদিকে যায়নি সে। গোরী জানে একথার পর মা আর কিছু বলবে না। লাল রেশমী চুড়িগুলো পাওয়া যাবে না। না যাক জীবনের কাছে চুড়ি অতি তুচ্ছ জিনিস। কিন্তু  পারলো না। ওকে যেন নিশি পেয়েছে । ইন্দু কোথায় যায়, কি করে দেখার কৌতূহল তাকে পেয়ে বসেছে। না জানি কি বিস্ময় তার জন্য অপেক্ষা করছে। অতি দ্রুত পা চালায় গোরীও। দিদির রকম সকম সে বোঝে না। বাবা মা বিজনদাকে দিদির জন্য পছন্দ করেছে। কি কার্তিক ঠাকুরের মতো চেহারা বিজনদার!একদিন গোরীর হাত থেকে তেল নিয়ে নাইতে গিয়েছিল বিজনদা। ওর চওড়া বুকের দিকে চেয়ে কি এক ঘোরে পড়েছিল গোরী। সারাটা বুক জুড়ে কালো কালো চুলের গোছা। ফরসা রংয়ের উপর গে কালো  পশম যেন কালো জোনাক হয়ে জ্বলছিল। আশ্চর্য ব্যাপার এই ছেলেকে দিদি পছন্দ  করেনা! যেন কোন দেশের রাজপত্তুর পঙ্খীরাাজ সাজিয়ে বসে আছে তার জন্যে।  তাও যদি দিদির রং তার মতো গোরা হতো।  ওই কালো রংয়ের দিদির দিকে যেভাবে চেয়ে থাকে বিজনদা দেখে মনে হয় পৃথিবীর সেরা সুন্দরীকে দেখছে। অথচ দিদির বিন্দুুমাত্র গা নেই। বিজনদা গরীব তাতে কি। এই জেলেদের মধ্যে  বড়লোক কেবা আছে। গায়ে খেটে খাওয়াই  এখানে সম্বল। গোরীকে বললেতো একবারেই বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়ত। কিন্তু বিজনদাটাও যেন কেমন। ইচ্ছে করে ওর দৃষ্টি আকর্ষণের অনেক চেষ্টা করেছে গোরী। মা চায় না তবুও দু একবার জলের গেলাসটা , তরকারির বাটিটা , ভাতের থালাটা বাড়িয়ে ধরেছে। খাওয়ার পর পানটা বানিয়ে দিয়েছে।  কিন্তু  কোন লাভ নেই। ফিরেও তাকায়নি বিজন। লোকটা বোকার হদ্দ।  ভেবেছে ইন্দু তাকে পছন্দ করবে। উহু  মোটেও না। বিয়ে যদিবা করে করবে সম্পূর্ণ অনিচ্ছায়।

 এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে গোরী দেখে ইন্দু  ঢুকে পড়ল পাগলীর ঘরে । গোরীরও ভয়ডর উবে গেল। সে পেছন দিক দিয়ে ঘরের জরাজীর্ণ বেড়ায় চোখ রাখল। না ঘরে কেউ নেই। ইন্দু গিয়ে সরাসরি বসল পাগলীর তেল চিটচিটে কাঁথার উপর। বারে বারে  তাকাচ্ছে বাইরের দিকে। বোঝা যায় কারো জন্য অপেক্ষা করছে সে।  দু চারমিনিটের মধ্যে একজন মানুষ ঢুকল ঘরে। তাকে দেখে কেঁপে উঠল গোরী। রমজান মায়মালের লাফাঙ্গা ছেলেটা এখানে কেন। নিশ্চয়ই দিদি অন্য কারো কাছে এসেছে। তাকে তাকে থেকে ওই বদমায়েশটা ঢুকে পড়েছে এখানে। এখনই দিদির সর্বনাশ করবে! গোরী বুঝে উঠতে পারে না সে চিৎকার দেবে কিনা। চিৎকার দিলে যদি শরীফ দিদির  উপর চড়াও হয়। গোরী একবার ভাবে দৌড়ে গিয়ে কাউকে ডেকে আনবে। কিন্তু  এখানে ধারে কাছে কমপক্ষে আধামাইলের মধ্যে কেউ নেই। এক যদি কপাল গুণে পাগলীদিদি এস পড়ে। কিন্তু  এসব কোন কিছুরই দরকার হলো না। গোরী দেখে অবাক হলো,  শরীফকে দেখে চতুর্দিক আলো করে হাসল দিদি। শরীফ দিদির গা ঘেঁষে বসে পড়ল। মুখে সিগারেট। গাল ভরে ধোয়া ছাড়ল । জিনসের প্যান্টের জন্য বসতে কষ্ট  হচ্ছিল। পা ছড়িয়ে বসে দিদিকে টেনে আনল বুকের উপর । কেঁপে উঠল গোরী। এরপর কি করবে ওই বদমায়েশটা! দিদির কি মতিভ্রম হয়েছে। দিদি কি জানে না ওই বদমায়েশের কীর্তি। শহরে পড়তে গিয়ে অনেকগুলো মেয়ের সর্বনাশ করেছে। ওদের বাড়িতে যে মেয়েই ঝি এর কাজ নেয় দুদিন পরেই সে পোয়াতী হয়। বাপ ছেলে দুজনেই এ বিষয়ে সরেস। সবার চেয়ে বড় কথা তারা কৈবর্ত। ওরা মুসলমান, মায়মাল । এ সম্পর্ক কোনদিনই বিয়ে পর্যন্ত  গড়াবে না। দিদি ওই বদমায়েশের বাইরের চটক দেখে কি মারাত্মক ভুল করল! ঠিক এ সময় ঘরের ভেতর থেকে কথা শোনা গেল, 

:তোমাকে আজ খুবই সুন্দর লাগছে। বাহ খোপায় আবার মালাও দিয়েছ।  আলতায় ঠোঁটও রাঙ্গিয়েছ। জানো ইন্দু এ গায়ে তোমার মতো মেয়ে  দুটি নেই। কি শরীর!  দেখলেই মাথা ঝিমঝিম করে। শাবনাজ, মৌসুমী , পপী কারো শরীর তোমার মতো না। যা কি বাজে কথা বলছি । শুধু ওরা কেন মাধুরী দিক্ষিত, কারিসমা কাপুর, কাজল কেউ তোমার মতো না। না চেহারায় না শরীরে। তাইতো তোমাকে ভালবেসে তোমার জন্য এই জিনিসটা এনেছি। পরোতো দেখি।

 পকেট থেকে জিনিসটা বের করে মেলে ধরে শরীফ। ও জিনিস ব্যবহার না করলেও চেনে গোরী। তাছাড়া ও জিনিস দেখতে এমনই যে বোঝার জন্য চেনার দরকার হয় না। তবে জেলে পাড়ার মেয়েরা এখনও ওসব পরতে শুরু করেনি।

কই ধরো।

কি হল লজ্জায় একেবারে কুঁকড়ে গেলে যে । অতো লাজ লজ্জা আজকের দিনে চলে না।আল্লাহ  জিনিস দিয়েছেন, তা যতন  করার দায়িত্ব তোমার । না হলে অকালে ঝুলে পড়বে, তুলতুল করবে। আর এটা দিয়ে বেঁধে ছেদে রাখলে দেখবে বুড়ো বয়সেও ঠিকঠাক মতো থাকবে ।

:না থাক, ওটা আমার লাগবে না। আমাদের জেলে পাড়ার মেয়েরা এখনও ওসব পরে না। পরলেই নানা কথা হবে, কোথায় পেলাম, কিভাবে পেলাম, কে দিল। নানা সন্দেহ করবে। এমনিতেও তো সন্দেহের  শেষ নেই। ওরে বাপরে পানি নেয়ার কথা বলে এসেছি। নদীতে গিয়ে পানি নিয়ে তবে ফিরতে হবে। কি জন্য ডেকেছ তাই বলো। আমি কিন্তু নানান অসুবিধায় আছি। বাবা মা পাত্র ঠিক করেছে বিজন দাসকে।

:রাখো তোমার বিজন দাস! ওকে এক তুড়িতে উড়িয়ে দেব না।  দিন কয়েকের মধ্যেই বিয়ে করব আমরা  পালিয়ে গিয়ে। বাপের কাছ থেকে ফন্দি  ফিকির করে একটু একটু করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছি ।  ওসব চিন্তা আমার। নাও এখন এটা ধরো। পরে ফেল। এখানে পরলে কেউ দেখবে না। কই ধরো।

হাত বাড়িয়ে ব্রেসিয়ারখানা ধরে ইন্দু। মুখে বলে,

:ঘরে গিয়ে পরব। পরেরবার পরে আসব। 

:না এখনই পরো। আবার কবে কখন দেখা হবে তার ঠিক কি। কতো শখ করে আনলাম তোমার জন্য। 

ইন্দু ঘরের একপাশে উঠে গিয়ে শরীফের দিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে ব্লাউজের বোতাম খোলে। গা থেকে খুলে ফেলে ব্লাউজ। দু চোখে লালসা মেখে ক্ষণেকের জন্য তাকিয়ে দেখে শরীফ। তারপর উঠে  সে জড়িয়ে ধরে ইন্দুকে। মুহূর্তের মধ্যে ঠোঁট  দিয়ে চেপে ধরে ইন্দুর আলতা রাঙ্গানো দু ঠোঁট। ইন্দু  অস্ফুুটে বলে, 

: কি করছ করছ কি? 

:কিছু না কিছুই না। তুমি চুপ করে থাকো। শরীফের দুহাত এখন ইন্দুর বুক আটা ছেনার মতো শধুই ছেনছে। এবার দাঁত বসায় কালো বোটায়। কঁকিয়ে ওঠে ইন্দু । তাকে কাঁথার উপর ফেলে দেয় শরীফ।  ইন্দুর শরীরের নিচের অংশে এখন  আর কিছু নেই। দু উরু দিয়ে ইন্দুর দু উরু  চেপে ধরে শরীফ  । ওর শরীর ঢেকে ফেলে  ইন্দুর শরীর ।  একই সাথে নিজেকে বস্ত্রমুক্ত করতে থাকে। চোখ বন্ধ করে ফেলে গোরী। আর কিছু সে দেখতে চায় না। ঘর থেকে তখন শুধু ইন্দুর গলা ভেসে আসছে।

: করছ কি, করছ কি, বিপদ হবেতো! 

:কোন বিপদ নেই, আজই তোমায় বিয়ে করবো পীরের দরগায় গিয়ে। এরপর অজানা অচেনা বিচিত্র কিছু শব্দ  ভেসে আসতে থাকে ঘর থেকে। গোরীর  শরীর থরথর করে কাঁপছে । সে পাগলের মতো গ্রামের দিকে ছুটতে থাকে।     

আফরোজা পারভীন
আফরোজা পারভীন

 

%d bloggers like this: