জল মাখা জীবন ৮/ আফরোজা পারভীন
আট
বাড়িতে এসে হাঁফাতে থাকে গোরী। তারামনি কাজ করতে করতে ব্যস্ত চোখে তাকান।
: কি হল তুই অমন করে হাফাচ্ছিস কেন? মনে হচ্ছে কেউ তাড়া করছে।
গোরী কথা বলে না। ওর বুক এমনভাবে ওঠানামা করে যে মনে হয় এখনই ঘরের চালে যেয়ে স্পর্শ করবে ।
তারামনি বলেন,
:আরে হলো কি । তোকে পাঠালান ইন্দু কোথায় যায় দেখতে আর তুই কিনা এসে হাঁফাচ্ছিস ! একটু জল খেয়ে নে, তাতে বুকের ধড়ফড়ানিটা কমবে।
বলতে বলতে তারমনি নিজেই একগ্লাস জল নিয়ে আসেন।
: এই নে জল। দেখিস রয়ে সয়ে খাস। ঢক ঢক করে খেতে যাসনে যেন। গলায় আটকে যাবে।
গোরী ঢক ঢক করে জল খায় । জল খেয়ে যেন প্রাণ ফিরে পায় ।
তারামনি বলে ,
:কিরে তোর দিদি কই ?
যা দেখেছে বলবে কিনা ক্ষণকাল ভাবে গোরী । বললে দিদিকে আস্ত কেটে ফেলবে বাবা মা। আবার দিদিও তার উপর রেগে যাবে। কিন্তু যদি না বলে এই ঘটনা চলতেই থাকবে । দিদির ভয়ানক বিপদ হয়ে যাবে। এমনিতেই আজ যে ঘটনা ঘটেছে তাতেই কি হয় কে জানে! গোরী নিশ্চিত এমন ঘটনার জন্য দিদি প্রস্তুত ছিল না। কাজেই কোন প্রস্তুতির ব্যাপারও ছিলো না। তাছাড়া এই অথৈ হাওড়ের গরীব কৈবর্তের মেয়ে প্রস্তুতির কি জানে । দু এক ঘরে রেডিও আছে । সেথানে কিসব মায়াবড়ির কথা বলে । ওসব বড়ি কৈবর্তের মেয়েরা কখনও চোখেও দেখেনি। গোরী ভেবে ঠিক করে, প্রথমে সে দিদিকে বলবে সব জানে । তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করবে। এখন ভগবানের দয়ায় দিদির কোন বিপদ না হলেই হয়। আর জানাজানি না হলে হয়। গোরীর চোখ ছলছল করে । হঠাৎ করেই বুঝতে পারে দিদিকে সে কতো ভালবাসে। আহারে দিদি কতো সরল। ওই লাফাঙ্গা ছেলেটার মিষ্টি কথায় ভূলে সে সব দিয়ে বসল। গোরীকে হাজার মিষ্টি কথায় ভুলালেও গোরী কখনও শরীফের ফাঁদে পা দিতো না। তার যে দিদি অন্ধকারে বাইরে বেরোতে পারে না , ভূতের ভয়ে পেট ফেঁপে মরার অবস্থা হয় সে কিনা চলে গেল ওই ঘুটঘুটি অন্ধকার ঘরে, পাগলীর ডেরায়। তার দিদি নিশ্চযই প্রেমে পড়েছে । প্রেমের কি এমনই যাদুকরী শক্তি!
তারামনি বলে ,
:কিরে তথা বলিস না কেন। ইন্দু কোথায়? সন্ধ্যা হয়ে এলো এখনও কি ওর পানি নিয়ে ফেরার সময় হলো না? সেয়ানা মেয়ে, না জানি কি অঘটন ঘটিয়ে বসে। আর মেজাজ কি! মাটিতে কথা ফেলা যায় না। ফোঁস করে ওঠে । বিয়ের যুগ্যি মেয়ের মা হয়ে আমি যেন মহা অপরাধ করে ফেলেছি। আজই তোর বাবাকে বলব বিজনের সাথে বিয়েটা লাগিয়ে দিতে । সামনের লগ্নেই শুভ কাজটা হয়ে যাক। কিন্তু মেয়েতো বিয়ের কথা শুনতেই চায় না। যেন তার ফাঁসির কথা বলা হচ্ছে এমন ভাব করে।
:সেই ভাল মা, দিদির বিয়েটা যতো তাড়াতাড়ি পারো দিয়ে দাও। বিজনদা বড় ভাল ছেলে। বলতে বলতে মৃদু একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে গোরীর বুক চিরে!
:এতোদিনে তুই আমার মনের কথাটা বললি। আমাকে নয় বোনকে একটু বুঝিয়ে বলিস। অমন স্বামী সাত জন্মের পুণ্যে ভাগ্যে জোটে। ঝাড়া হাত পা। বউই সব…….. ।
কথা শেষ হবার আগেই উঠোনে পা ফেল ইন্দু । কাঁখে কলসি । তাকে দেখে কেঁপে ওঠেন তারামনি। ওকে এমন দেখাচ্ছে কেন। ছুটে যান ইন্দুুর কাছে ,
: তোকে দেখতে এমন লাগছে কেন মা? কি হয়েছে?
:কিছু না, বলে দ্রুত বারান্দায় পানির কলসি রেখে ঘরে ঢোকে ইন্দু। তারামনির চোখে পড়েও পড়ে না কি যেন লুকায় ইন্দু ।
:তুই বললি না, কিন্তু আমার মায়ের মন বলছে কি যেন একটা হয়েছে। মায়ের মনের কথা কখনও মিথ্যে হয় না । মায়ের মন কখনও মিথ্যে বলে না। যাকগে তোর ঘাটে যাওয়া, উসখুস আজই খতম। তোর বাবা এলে বলব আজই বিয়ের ব্যবস্থা পাকা করে ফেলতে।
তারামনি বলেই চলে। কিন্তু আশ্চর্য ইন্দুমতি নিশ্চুপ! অন্য সময় একটা কথার পিঠে সে দশটা কথা শুনিয়ে দেয়। বরং তারামনির অবিশ্রাম কথা শুনতে শুনতে গোরী বলে,
:আহ মা থামো না। দিদিকে একটু জিরোতে দাও।
:কেন ওর আবার জিরোবার কি দরকার পড়ল। এমন কি পরিশ্রমের কাজ ও করে এলো?
মুখ ফসকে কথাটা বলে ফেলেই গোরী বুঝল বেফাঁস কথা বলে ফেলেছে সে । গোরী ধীরে ধীরে খাটে গেল । বিছানার উপর উপুড় হয়ে শুয়ে আছে ইন্দু । গোরী তার পিঠে হাত রাখল ।
চমকে ওঠে ইন্দু । আরক্ত চোখে তাকায় ।
:তুই এখান থেকে যা । আমার কিছূ ভাল লাগছে না।
:আমি যাচ্ছি দিদি । একটা কথা শুধু বলি, বিজনদাকে তুই বিয়ে কর। ও বড়ো ভাল ছেলে। তোকে সুখে রাখবে। নিষুতিরাতে তোর হাত ধরে পেট হালকা করতে নিয়ে যাবে দিদি । এমন আর কেউ করবে না।
:না কোনদিন না। কোনদিন ওকে আমি বিয়ে করবো না। তোর ইচ্ছে হলে তুই কর।
গোরী বলতে পারে না তার ইচ্ছে ষোলআনাই আছে । ইচ্ছে নেই বিজনের। তার ইচ্ছে ইন্দুকে বিয়ে করার ষোলআনা। একজনের ইচ্ছেতে কি আর বিয়ে হয়।
:তুই বিরাট ভূল করেছিস দিদি।
ইন্দু কি যেন বলতে যায় , বলে না। ঠোঁট চেপে উপুড় হয়ে শোয়।
মধ্যরাতে ফিরে আসে মথুর। তারমনি কুঁপি নিবিয়ে ভূতের মতো ঘাপটি মেরে বসেছিল । গোরী স্পষ্ট বুঝেছিল পাশে শুয়ে দিদি ইন্দু উসখুস করছে । ঘুম ছিলো না গোরীরও চোখে। গোরী বার কয়েক মাকে ডেকেছে ।
:মা তুমি অমন চুপটি করে বসে রইলে কেন। এসো শোও। বাবা এলে আমি উঠে দুয়ার খুলে দেব।
:ঘুম আসে না । দুদুটো সোমথথ মেয়ে ঘরে। একটা আবার দিনভর উড়ু– উড়ু– । খালি ঘাটে যাবার বায়না। ওসব কি আর আমি বুঝিয়না। ও বয়সতো আমারও ছিল।
রাতের প্রহর গড়িয়ে চলে। মধ্যপ্রহরে দূরে পায়ের শব্দ শুনে উঠে কূপি জ্বালায় তারামনি। হাতে খালই নিয়ে ঘরে ঢোকে মথুর।
:আজ বেশ ভাল মাছ পড়েছে জালে । ছিপে কয়েকখান গোলসা উঠেছিল । নিয়ে এলাম। মাছ খালি ধরি, খেতে তো পাইনে।
: বিজনকে সাথে আনলে না কেন?
:বলেছিলাম । বলল পরনের কাপড় বড় নোংরা । আজকাল ছেলেটার পরিষ্কার অপরিষ্কারের বোধ জন্মেছে । অমন হয়। তোমাকে বিয়ে করার আগে আমারও হয়েছিল। তোমাদের বাড়ির সীমানা ডিঙ্গোতাম না আমি ময়লা কাপড়ে।
‘শোন কাল খুব ভাল করে ঝাল দিয়ে মাছ রাঁধব। তুমি বিজনকে নিয়ে এসো। আর কালই বিয়ের কথাটা পাকা করে ফেল । কাল লগ্ন নেই । থাকলে কালই শুভ কাজটা শেষ করে দিতাম।
অবাক চোখে তাকায় মথুর।
: তুমি হঠাৎ অমন অস্থির হলে কেন? কিছূ ঘটেছে ?
: হঠাৎ কোথায় ! এ সম্বন্ধের কথা কি নতুন নাকি?
:কিন্তু মেয়ের মত?
‘মত আছে ধরে নাও। তোমার সাথে বিয়ের সময় আমার মত কে নিয়েছিল ?
পরদিন বিকেল হওয়ামাত্র উঠোনে দাঁড়ালো ইন্দু । দিদির দিকে তাকিয়ে গোরী বুঝল কালকের সেই জিনিসটা পরেছে ইন্দু। ইন্দু বলল,
:মা জল নিয়ে আসি ।
:আজ জল আনা লাগবে না। জল নিজেই সব এনে রেখেছি ।
:কই এই কলসি যে খালি, বলে বারান্দার একটা খালি কলসি কাঁখে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো ইন্দু । তারামনি অবাক! দুপুরে এই কলসি ভরে জল তিনি নিজেই এনেছেন। তার মানে তার অতি চতুর মেয়ে সে জল নিজেই ঢেলে ফেলেছে। মায়ের সাথে এ চতুরতার মানে কি ! কি আছে নদীর ঘাটে!
আজ আর গোরীকে বলতে হলো না। সে নিজেই লুকিয়ে চলল ইন্দুর পিছু পিছু। কালকের মতো আজও ঠোঁট আর পা রাঙালো ইন্দু , খোপায় জড়ালো ফুলের মালা। অতি দ্রুত হাঁটতে শুরু করল পাগলীর কুঁড়ের দিকে ।
পাগলির তেল চিটচিটে কাঁথার উপর ইন্দু বসে আছে তো আছেই , শরীফের দেখা নেই। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে শুরু করল । ইন্দু বার বার উঠে বাইরেটা দেখে আসছে। বেড়ার ফুঁটোয় চোখ লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গেরী। অনেকক্ষণ পর পাগলীর তেল চিটচিটে কাঁথার উপর শুয়ে পড়ল ইন্দু। ফুলে ফুলে কাঁদতে শুরু করল। তার কান্নার শব্দ ভেসে আসছে বাইরে। আহারে দিদি বড় কষ্ট পাচ্ছে । গোরীর চোখে জল আসে । সে দিদিকে বড় ভালবাসে। কতো ভালবাসে আজই সে বুঝতে পারলো । ধীরে ধীরে ঘরে ঢুকল গোরী । দিদির পিঠে হাত রাখল। চমকে উঠল ইন্দু । গোরী বলল, :লুকোসনে দিদি। আমি সব জানি , সব দেখেছি ।
ও আর কোন দিন আসবে না । ও একটা লম্পট ।
ব্যাকুলভাবে গোরীকে জড়িয়ে ধরল ইন্দু। ডাক ছেড়ে কেঁদে উঠল।
:আমার কি হবে গোরী ।
:কিছুই হবে না । তুই বিজনদাকে বিয়ে করে ফেল।
:ওকে যে আমার ভাল লাগে না।
খাঁটি মানুষ তোর ভাল লাগবে কেন। তোর তো ভাল লাগে যতো সব মুখোশধারী মানুষ । বিজনদা বড় ভালরে। তাছাড়া দিদি আমাদের কৈবর্তের মেয়েদের বিয়ে হওয়াই ভাগ্যের কথা। আল মন্দের বাছ বিচার কেউ করে না।
:কিন্তু এতোসব জেনে কি বিজন…
:বিয়ে করবেনা বলছিস। না করাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে জেলে পললীতে বিয়ের পাত্রীর আকাল পড়েনি , কিন্তু পাত্রের সত্যিই আকাল। তবে কেন জানি আমার মনে বলছে সব জেনেও বিজনদা তোকে বিয়ে করবে । কারণ ওর চোখে তোর জন্য ভালবাসা আছে।
গোলসা মাছের তরকারি রাঁধল তারামনি বড় যতন করে। মথুরকে বার বার বলে দিল, সে যেন অবশ্যই বিজনকে সাথে নিয়ে আসে। মেয়ের মতিগতি ভাল না। আজও সে কলসির পানি ঢেলে ফেলে ঘাটে গেছে। ঘাটে কি আছে কে জানে।
মাঝরাতে বিজনকে নিয়ে ফিরল মথুর। গোরী মাকে বলল,
:আজ আমি হবু জামাইবাবুর সব কাজ করব । খাবার দেয়া, জল দেয়া, বসানো সব কাজ করবো আমি । বিয়ের কথাটাও পাড়বো । তোমাদের মুরোদ তো দেখলাম। সেই কবে থেকে বিয়ে দেব বিয়ে দেব করছ কিন্তু মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারছো না। আজ আমি একদিনে সব ঠিক করে দেব।
মা কি ভেবে যেন রাজি হলেন। তার এই মেয়েটি তেমন একটা বাজে কথা বলে না। বুদ্ধি শুদ্ধি ইন্দুর চেয়ে ঢের বেশী।
দাওয়ায় পানি ছিটিয়ে পিঁড়ি পেতে খাবার জোগাড় হলো । বিজন ইন্দুর সন্ধানে বার বার ঘরের দিকে তাকচ্ছে । ইন্দু কোথায়? সেকি গোরীর হাতে খাবার জন্য এখানে এসেছে নাকি!
গোরী বলল,
:অতো ইতি উতি তাকানোর দরকার নেই গো হবু জামাইবাবু। আজ দিদি নয় আমাকে দেখো। ওকে তো দেখবে জীবনভোর। মা বাবা তোমরা একটু ভিতরে যাওগো । আমি ঘটকালিটা সেরে নি। কিগো জামাইবাবু কেমন বোধ করছ? আমাকে কিন্তু একডজন লাল রেশমী চুড়ি দিতে হবে গো। এটা কিন্তু নগদ। বিয়ের পর তুমি বউ নিয়ে মেতে রইবে। আমার কথা তখন মনেও পড়বে না।
তারামনি আর মথুর ভিতরে সরে যায়। মেয়েটা বিয়ের কথা পাকা করতে চাইছে, করুক। শালী আর জামাইবাবু রঙ্গরসের মথ্যে দিয়ে যদি কথা পাকা করতে পারে মন্দ কি!
গোরী বলে,
:তোমাকে একটু উদার হতে হবেগো জামাইবাবু। অনেক কিছু শুনেও বিশ্বাস যাবে না । অনেক অকথা কুকথা কানে নেবে না ।
:কি বলো বুঝতে পারিনে?
:তাহলে বুঝায়ে বলি। বোন আমার বোকার হদ্দ। বড় লোকের লাফাঙ্গা পোলা দেখে ভিমরতি হয়েছিল তার । তোমার ভালবাসা ভরা চোখ দেখেও দেখে নাই। এখন তার চোখ খুলেছে , ভুল বুঝেছে । তোমার দিকে ভালবাসার চোখ মেলে চেয়েছে।
:বুঝলাম না । আরো একটা খোলসা করে বলো।
:শরীফ, রমজান মায়মালের ছেলে তারে বিশ্বাস করেছিল দিদি। ভুল বিশ্বাস। এখন আর তারে বিশ্বাস করে না দিদি । তোমাকে বিশ্বাস করে। আজ সাঁঝে আমারে বলেছে সে কথা।
কুঁপির স্বল্প আলোয় বিজনের চোখে হীরের দ্যুতি খেলা করে । পরক্ষণে তা দপ করে নিভে যায় । :সম্পর্ক কতোদূর?
:অনেকদুর। কিন্তু মানুষই তো সম্পর্ক গড়ে, ভাঙ্গে আবার নতুর সম্পর্কের জাল বোনে। আগের সম্পর্কের জাল ছিঁড়েছে । এখন থেকে শুধু তোমার সাথেই সম্পর্ক। তুমি কি বল? এটুকু উদার হতে পারবে না? সামনের বুধবার লগ্ন আছে।
বিজন কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে কি যেন ভাবে। তারপর দৃঢ়ভাবে মাথা তোলে।
: মানুষ না জানিয়ে কতো কিছু করে। তোমরা জানালে, তোমরা ভাল মানুষ। আমি রাজি।
:ওই কথা বলে দিদিকে খোটা দেবেনাতো কোনদিন?
:খোটা দিলে শোধ নেয়ার জন্য, আমাকে শায়েস্তা করার জন্য দিদির বুদ্ধিমান বোনতো রয়েইছে।
পরের লগ্নে বিয়ে হয়ে যায় ইন্দু আর বিজনের। বিজন তার কথা রেখেছে । বিয়ে উপলক্ষে সে গোরীকে হাত বোঝাই রেশমী চুড়ি কিনে দিয়েছে।
Facebook Comments Sync