কালজয়ী পুরুষ  আব্রাহাম লিংকন – মাস্টার ডেভিট

কালজয়ী পুরুষ আব্রাহাম লিংকন - মাস্টার ডেভিট

“আমি জীবনের সর্বোচ্চ সুযোগটা কাজে লাগাতে নিজেকে সব সময় প্রস্তুত রাখি। কারণ আমি জানি, আমার সুযোগ আসবেই এবং সেটা আমাকে সর্বোচ্চ ব্যাবহার করতে হবে। ” – আব্রাহাম লিংকন।

১১২তম জন্মবর্ষ।।

 

লিংকনের জন্ম ১৮০৯ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি , কেন্টাকি প্রদেশের ছোট গ্রাম হার্ডিন কাউন্টিতে। বাবার নাম থমাস লিংকন, মায়ের নাম নান্সি হাঙ্কস লিংকন। আব্রাহাম ছিলেন এ দম্পতির মেজ সন্তান। বড় মেয়ে সারাহ এবং ছোট ছেলে থমাস শৈশবেই মারা যায়। থমাস লিংকন ছিলেন ছুতোর মিস্ত্রী । লেখাপড়া কিছুই জানতেন না। অতি কষ্টে দীন-দরিদ্রের মতো তিনি সংসার চালাতেন। লিংকনের বয়স যখন চার, তার পরিবার কেন্টাকি প্রদেশ ছেড়ে ইন্ডিয়ানা প্রদেশের  অরণ্যঘন অঞ্চল পেরি কাউন্টিতে পাকাপাকিভাবে বসবাস করতে বাধ্য হলেন ভূমি বিরোধের জন্য। জায়গাটা এতোই বন্য ছিল যে, বাড়ির চারদিকে জন্তু-জানোয়ারের হাত থেকে বাঁচার জন্য বড় বড় খুঁটি পুঁততে হতো। কাঠের কাজ আর শিকার করেই লিংকনের বাবা সংসার চালাতেন। আর এসকল কাজে বাবার একমাত্র সহযোগী ছিলেন আব্রাহাম নিজেই। এই প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে বসবাসই লিংকনকে করে তোলে পরিশ্রমী এবং সাহসী।

 

যখন আব্রাহামের বয়স ৯ বছর, তার মা হঠাৎ ট্রিমেটল (দুগ্ধ বিষক্রিয়া) রোগে আক্রান্ত হয়। তখন সে অঞ্চলে কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না । এক গ্রাম্য ডাক্তার থাকতেন পঁয়ত্রিশ মাইল দূরে। প্রায় বিনা চিকিৎসায় সাত দিন পর মাত্র চৌত্রিশ বছর বয়সে মারা গেলেন আব্রাহামের মা , ১৮১৮ সালের ৫ অক্টোবর। মায়ের মৃত্যুর প্রায় এক বছরের মধ্যেই বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করলেন। বিধবা সারাহ বুশ জনস্টোনকে তিন সন্তানসহ ঘরে তুলে আনলেন ১৮১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ।  মায়ের মৃত্যু এবং বাবার দ্বিতীয় বিবাহে আব্রাহাম মানসিকভাবে এতো বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেন যে, বাবার সাথেও দূরত্ব তৈরি হতে শুরু করলো। সব কিছু ভুলে থাকতে আব্রাহাম কাঠ কাটা, ছুতোরের কাজের মধ্যে নিজেকে সব সময় ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করতেন। কিন্তু তার সৎ মা, সারাহ বুশ তার নির্ভেজাল সরলতা আর স্বার্থহীন ভালবাসায় আব্রাহামকে আপন করে নিলেন। তার উৎসাহেই আব্রাহাম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেয়া শুরু করেন। যদিও তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন খুব বেশি ছিল না, সর্বসাকুল্যে ১৮ মাস।

 

আব্রাহামের প্রথম যৌবনটা কাটে উদ্দেশ্যহীনভাবে। গুদামের ম্যানেজার, দোকানের কর্মচারী, পোস্টমাস্টারি এরকম বহু খুঁটিনাটি কাজ করেছেন। এই সময়টাতে আব্রাহাম মানুষের সাথে মিশেছেন। সামাজিকতায় যেমন দক্ষ হয়েছেন তেমনি হয়েছেন গল্প-বলায়।   এই গুণটাই স্থানীয়দের কাছে তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। এ সময়েই তার পরিচয় হয় স্থানীয় সরাইখানার মালিক জেমস রুজলেটের সাথে। তিনিই আব্রাহামকে পরামর্শ দেন রাজনীতিতে যুক্ত হতে। জেমসের সূত্র ধরে তার মেয়ে এ্যানির সাথে পরিচিত হন আব্রাহাম। জীবনে প্রথম নারীর সংস্পর্শে এলেন, ভালোলাগাও তৈরি হয়। কিন্তু কদিন পরেই এ্যানি মারা যান। অনেক ঐতিহাসিকের মতে, এ্যানির মৃত্যুই আব্রাহামকে কিংবদন্তী হওয়ার সোপান  তৈরি করে দেয়। সাময়িক আঘাত পেলেও মন শক্ত করে নিলেন, সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দিলেন। ১৮৩২ সালে যখন ব্ল্যাক হক যুদ্ধ শুরু হল ইউনাইটেড স্টেটস আর নেটিভ আমেরিকানদের মধ্যে, স্থানীয়দের সমর্থনে আব্রাহামকে তাদের ক্যাপ্টেন পদ নিতে হল। সে সময় তাকে কোন যুদ্ধ পরিচালনা করতে হয় নি। কিন্তু অনেক গণ্যমান্য রাজনীতিবিদের চোখে পড়েন তিনি।

 

.

ইলিয়ন প্রদেশে প্রাদেশিক নির্বাচন হলে জনগণের উৎসাহে নির্বাচনে নাম লেখান।  কিন্তু রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকায় পরাজয়বরণ করেন। ১৮৩৪ সালে আবার নির্বাচনে অংশ নিলেন এবং জয়লাভ করলেন। নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসাবে তাকে যেতে হল ইলিয়নে। চেনাজানা মানুষ নেই, অফুরন্ত সময়। স্থির করলেন ওকালতি করবেন। ১৮৩৬ সালে কৃতিত্বের সাথে আইন পাস করে ওকালতি শুরু করলেন। সততা, নির্লোভ মনের কারণে অচিরেই আইনজীবী হিসাবে খ্যাতি অর্জন করলেন। কিন্তু এ সময়ে আইনের থেকে রাজনীতির প্রতিই বেশি আকৃষ্ট হলেন। ১৮৩৮-৪০ দু-দুবার ব্যবস্থাপক সভার সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হলেন। এ সময় আরেক সভা সদস্যের সাথে পরিচয় হল তার, নাম স্টিফেন ডগলাস। এই ডগলাসই পরবর্তী জীবনে সর্বদা আব্রাহামের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল।

.

প্রতিদ্বন্দ্বিতার শুরু এক নারীকে কেন্দ্র করেই,।  নাম তার মেরি টড। ডগলাস ছিলেন সুদর্শন , আব্রাহাম ছিলেন বিপরীত। , শারীরিক ভাষায় ছিল এক আদিম রুক্ষতা। সেই রুক্ষতাকেই বেছে নিলেন মেরি। ১৮৪২ সালের ৪ নভেম্বর তাদের বিবাহ হল। বিয়ের পর বড় পরিসরে আইনের ব্যবসা শুরু করতে চাইলেন কিন্তু মেরির ইচ্ছা ছিল আব্রাহাম কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার সভ্য হোক। পুরোদমে রাজনীতিতে গা ভাসিয়ে দিলেন  এবং ১৮৪৭ সালে ওয়াশিংটন পার্লামেন্টের সদস্যও হলেন।।

 

সংসদ সদস্য হিসাবে প্রত্যক্ষ করলেন হোয়াইট হাউজের অদূরেই গড়ে উঠেছে কালো  দাসদের খোঁয়াড়। সারা দেশের দাসীদের এখান থেকেই চালান করা হতো। তখনই মনে পড়লো নিউ অরলিয়েন্সে নেয়া সেই প্রতিজ্ঞার কথা। পার্লামেন্টে কলম্বিয়া প্রদেশে দাস প্রথা বিলুপ্তির জন্য একটি বিল উত্থাপন করলেন।  কিন্তু বিপুল ভোটে পরাজয় বরণ করলেন। আবার ১৮৪৮ সালে মেক্সিকান-আমেরিকান যুদ্ধে জাকারি টেইলরকে সমর্থন করে বাকিদের রোষানলে পড়েন।

ব্যর্থ মনে স্প্রিংফিল্ডে এসে ব্যবসা শুরু করলেন । কিন্তু তার মনে হল, এই দাসপ্রথা যদি অন্যায় না হয় তবে অন্যায় বলে  আর কিছু নেই। এইবার ভিন্ন পথে আগালেন । দাসপ্রথা যে শুধু নৈতিকতার বিপরীতে তাই নয়, অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে – এইটাই ছিল তার মূল বক্তব্য। ১৮৫৪ সালে কংগ্রেস মিসসউরি কম্প্রমাইস অ্যাক্ট(Missouri Compromise) বাতিল করে কানসাস-নেব্রাস্কা আইন(Kansas-Nebraska Act) পাস করে। যার মাধ্যমে সকল প্রদেশ  বাধ্যতামূলক দাসপ্রথার বদলে নিজেরা হস্তক্ষেপ করতে পারবে। এই রায়ে রাজনীতিতে ঝড় ওঠে, জন্ম হয় রিপাবলিক পার্টির। ১৮৫৬ সালে রিপাবলিক পার্টিতে যোগদান করে আব্রাহাম পুরোদমে রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেন।

.

 

১৮৫৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট বিতর্কিত  স্কট বনাম স্যনফর্ড অ্যাক্ট(Scott vs Sanford) ঘোষণা দেয়। যার মূল বক্তব্য ছিল, আফ্রিকান আমেরিকানরা দেশের নাগরিক নয় এবং কোন অধিকারের অধিভুক্ত নয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আব্রাহাম সোচ্চার হন। ১৮৫৮র  সিনেট সদস্যপদের মনোনয়নে তিনি ব্যাপকভাবে ডগলাস, সুপ্রিম কোর্ট এবং প্রেসিডেন্ট বুচানানের তীব্র সমালোচনা করেন দাসপ্রথা বহাল রাখার জন্য। এ সময় ডগলাসের সাথে ৭টি শহরে আব্রাহামকে বিতর্কে অবতীর্ণ হতে হয়। বিষয়বস্তু ভিন্ন থাকলে বিতর্ক দাসপ্রথাকে কেন্দ্র করেই জমে উঠত। শেষপর্যন্ত সিনেট ভবন ডগলাসকে বেছে নিলেও আব্রাহাম জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালীদের একজনে পরিণত হলেন। ১৮৬০ এ  রিপাবলিকান জাতীয় কনভেনশনে আব্রাহাম তার বক্তব্যে এতোই প্রভাবিত করেন যে, তার জনপ্রিয়তা উইলিয়াম সেয়ার্ড, সেলমন চেসকে ছাড়িয়ে যায়। এক সময় রিপাবলিক দল বাধ্য হয় তাকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করতে। এবং ডেমোক্র্যাটিক দলে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে নামলেন সেই ডগলাসই। দাসপ্রথাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণের রাজ্যগুলো যখন বিভক্ত হতে সোচ্চার হয়েছে, তখন আব্রাহাম তার বলিষ্ঠ কণ্ঠে ঘোষণা দিলেন – একটি রাষ্ট্র কখনও দ্বিধাবিভক্ত  থাকতে পারে না। নিজের কল্যাণেই আমেরিকাকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

 

তার এই আহ্বানে সাড়া দিলো অধিকাংশ নাগরিক। বুঝলেন এই টালমাতালে দেশের হাল ধরতে পারবেন এই আব্রাহামই। ডগলাসকে হারিয়ে আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট হলেন আব্রাহাম লিংকন।

 

৮.

আব্রাহাম লিংকন প্রেসিডেন্ট হওয়াতে দক্ষিণের দাসপ্রথা সমর্থক প্রদেশ এ্যালবাম, টেক্সাস, মিসিসিপি, ফ্লোরিডা এবং জর্জিয়া স্বতন্ত্র বলে দাবি করে জেফারসন ডেভিসকে তাদের প্রেসিডেন্ট হিসাবে ঘোষণা করলো।

 

আব্রাহাম চেয়েছিলেন দাসপ্রথা নির্মূল হোক কিন্তু দেশ বিভক্ত হলে তা কোন দিনই সম্ভব হবে না। “Keep your friends close, but hold your enemies closer”-এ মতবাদে বিশ্বাসী আব্রাহাম  উইলিয়াম সেয়ার্ড, সেলমন চেস, এডওয়ার্ড ব্যেটসর মতো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের নিয়েই তার কেবিনেট গড়ে তোলেন এবং দক্ষিণ প্রদেশগুলার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এই ক্যাবিনেটের সদস্যরাই গৃহযুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দক্ষিণের ধনী সম্প্রদায়, তাদের অস্ত্রের বিপুলতা এবং সেনাপতি লিয়ের চতুরতায় প্রথমে কোণঠাসা হয়ে পড়লেন আব্রাহাম। জনশক্তিকে কাজে লাগাতেই  মাঠে নামলেম আব্রাহাম। ১৮৬৩এর ১৯ নভেম্বর গেটিসবার্গ যুদ্ধ-ময়দানের অদূরে জনসম্মুখেই দিলেন ২৭২ শব্দের আড়াই মিনিটের সেই বিখ্যাত ভাষণ, যা গেটিসবার্গ এড্রেস নামেই বিখ্যাত। তার সেই ভাষণ এতোটাই শক্তিশালী ছিল যে, এই ভাষণে উদ্ভুদ্ধ হয়ে ৭৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক যুদ্ধে যোগ দিলো। যুদ্ধে যোগ দিলেন প্রাক্তন ক্যাপ্টেন গ্রান্ট। গ্রান্টের প্রচণ্ড আক্রমণে পরাজয় হতে থাকল লিয়ে, দক্ষিণের একের পর এক শহর জয় হতে থাকলো। শেষমেশ রিচমন্ড শহরে আত্মসমর্পণ করলেন লী।, শেষ হল ৫ বছরের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ।

 

৯.

ওয়াশিংটনে ফিরে এলেন আব্রাহাম। শত শত মানুষের অভিনন্দন জোয়ারে ভেসে গেলেন। ক্যাবিনেট সদস্যদের সাথে  বসলেন দেশ পুনর্নির্মাণের কাজে। এই ব্যস্ত সময়ে মেরির অনুরোধেই বিজয় লাভের ৫ম দিনে, ১৪ই এপ্রিল সন্ধ্যায় ফোর্ড থিয়েটারে Our American Cousin উপভোগ করতে গেলেন।

সময় তখন ১০টা ১৫, শহরের বিখ্যাত অভিনেতা জন উইলকেস বোথ ঢুকলেন প্রেসিডেন্ট বক্সে এবং তার .৪৪-ক্যালিবার দিয়ে গুলি করলেন প্রেসিডেন্টের মাথার পিছন বরাবর। তারপর প্রেসিডেন্টের সাথে থাকা সিনেট কন্যা ক্লারা হ্যারিস এবং তার বাগদত্তা আর্মি অফিসার হেনরি রাথবোনকে ছুরিঘাত করে লাফিয়ে পড়লেন স্টেজে এবং চিৎকার দিয়ে বললেন,“Sic semper tyrannis!”(Thus ever to tyrants!”- ভার্জিনিয়া প্রদেশের  শ্লোগান)। এরপর ভাঙ্গা পা নিয়েই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ঘোড়ায় চড়ে পলায়ন করলেন। দর্শকগণ পুরোটাই নাটকের অংশ ভেবে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু একসময় তাদের ভুল ভাঙল ফার্স্ট লেডির চিৎকারে। ধরাধরি করে নিয়ে যাওয়া হল পাশের বাড়িতে। আব্রাহামের বলিষ্ঠ দেহ যুদ্ধ করলো নয় ঘণ্টা ধরে। সকাল সাতটায় অজ্ঞান অবস্থায়ই আব্রাহাম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।

 

১০.

মহাপুরুষেরা জন্ম নেয় ক্ষণিক সময়ের জন্য। আব্রাহাম লিংকন তেমনি একজন মহাপুরুষ। সহস্রাব্দের শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে একজন লিংকন।  পূর্বপুরুষের পাপের বোঝা নিজের কাঁধে নিয়ে বিলুপ্ত করেছেন দাসপ্রথা। আধুনিক গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দিয়েছেন। নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন ‘‘জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা ও জনগণের ‘শাসন”-র জন্য। নিজে বিশ্বাস করেছেন এবং মানুষকে বিশ্বাস করিয়েছেন এই আদর্শ কখনো বিলুপ্ত হবে না।

মাস্টার ডেভিট

 

%d bloggers like this: