কুয়াশার দেওয়ালে যে সূর্য /তাহমিনা কোরাইশী

তাহমিনা কোরাইশী

তাহমিনা কোরাইশী

সিগারেটে সুখটান দিতে দিতে ঊর্ধ্বমুখী ধোঁয়ার কুন্ডলী ছড়ায় আলতা বানু। আড়চোখে শ্যেনদৃষ্টিতে ঋতুকে যেনো পড়ে নেয় একজন বিশেষকের মতো। ভ্রু দুটো কপালে তুলে জানতে চাইল, কী চায় সে এই পতিতালয়ে। ইন্টারভিউ? কার? আলতা বানুর? কিন্তু কেনো? ত্রিশ বছর আগে যে পর্বের পালা শেষ করে ঠাঁই খুঁজে নিয়েছে এই নিশাচর পল্লীতে তাকে আর কেনো পিছু ডাকা! বীরাঙ্গনা রাজকীয় নাম ভূষণটির খোলসমুক্তি ঘটিয়েছে সেই কবে। যে মনের চিতাভস্ম হয়ে গেছে সেখানে কোনো মণিমাণিক্য খুঁজে পাওয়া যায় কি? এ ভস্ম তো স্বর্ণকারের আগুনের নয় যে খুঁজলেও কিছু প্রাপ্তি ঘটবে। ছিটেফোটা স্বর্ণ হাতে এসে যেতেও পারে হয়তো। এতোকাল পর আয়ুক্ষয়ে দেহে-মনে অবশিষ্ট কিছু আনন্দ আর বেঁচে নেই, যা দিয়ে কিচ্ছা কাহিনি রচনা করা যায়। আলতাবানু চায় না এই দেহে আর পোস্টমর্টেম হোক।

নিবিড়ভাবে আলতাবানুকে পর্যবেক্ষণ করছে ঋতু। চেহারায় ভদ্রঘরের বলেই মনে হয়। যদিও বয়সের ভারে সময়ের যাঁতাকলে বীরাঙ্গনার জীবন আজ ক্ষয়িষ্ণু। দেহপসারিণীর জীবনে কি আর শেষ পরিণতি আছে? কত জনমের বেদনার করাঘাতে বলিরেখা ঐ কপাল জুড়ে। শরীরের সৌন্দর্য কালের ঘাত-প্রতিঘাতে ব্লটিং পেপার যেন শুষে নিয়েছে। তবুও ছিমছাম দেহের গড়নে সৌন্দর্য কিছুটা হলেও অনুমেয়। অবশ্য আজ তার যতটুকু অবশিষ্ট আছে তা হলো মুক্তিযুদ্ধের এক বীরাঙ্গনার “ফসিল” ছাড়া আর কিছুই নয়।

যতক্ষণ দেহে প্রাণ আছে, সেই প্রাণের স্পন্দনটুকুর বহিঃপ্রকাশ নির্জীব দেহে কেবল শ্বাস ওঠানামা। ধূমপানের কু-অভ্যাসে ভীষণ বিব্রতকর এক কাশি থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছে না আলতা বানু। যতক্ষণ না সিগারেটের আগুনের আঁচ আঙ্গুলের ডগায় ছ্যাকা দেয় ততক্ষণ চলে সুখটান। আলতা বানুর এ জীবন নয়তো আঁচলে বাঁধা চাবির গোছা। যাকে যতনে আগলে রাখবে; সাত রাজার ধন প্রাপ্তির আশায়। মৃত্যুর দ্বার পর্যন্ত যত্নহীন জীবন শুধু টেনে চলা।

শীতের সকাল কাঁচামিঠে সোনা রোদ উঠোনে। এক প্রান্তে আলতা বানু তার জীবনের বিড়ম্বনার ইতিহাসের ঝুলি নিয়ে, তার পাশে মোড়ার নিবিষ্ট মনে ঋতু। মন ছুঁয়ে যায় মনকে। এই সেই ঋতু যে দেখেনি একনায়ক আইয়ুবের শাসন, দেখিনি স্বৈরাচারী ইয়াহিয়ার পতন, গণজাগরণ, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, দেখেনি একাত্তর, বিজয় ও স্বাধীনতা। তবুও সব কিছুই মনের দর্পণে উজ্জ্বল। বাবা মায়ের মুখের স্বাদে সব কিছুই প্রতিস্থাপিত হয়েছে ওর হৃদয় জুড়ে। মুক্তিযোদ্ধা বাবা তার বোধটুকু ইথারের মত ছড়িয়ে দিয়েছে শিরা-উপশিরায়। মননে চিন্তায় বোধে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পলল জমে উর্বর হয়েছে অভিজ্ঞতায়, এক স্বাধীন মানবিক সত্তা। সময়ের কাঁধে পা ফেলে শিখেছে চলা। দেশ-বোধের বীজ বপন করে দিয়েছিল ওর বাবা-মা।  সে বীজ আজ মহীরুহ ঋতুর মননে চৈতন্যে। যদিও জন্ম ঋতুর একাত্তরের কিছু পরে। তবুও হৃদয়ে ধারণ করেছে মুক্তিযুদ্ধের বীরগাথা। বাবা-মায়ের ইচ্ছে অনুযায়ী ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হয়নি। হয়েছে সাংবাদিক। কাজ করছে একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার নিষিদ্ধ পল্লীর পতিতাদের বিষয়ে। বোধের জমিনে নিজের ইচ্ছের ফসল চাষ করবে বলে।

হঠাৎ এই আলতাবানুকে পেয়ে উর্বর হয়েছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বীরগাথা, পৈশাচিকতার শিকার কিছু নারীর মর্মবেদনার ইতিহাস। জাতীয় দৈনিকের পাতা থেকে জেনেছে আলতা বানুর কথা। যারা নিজের চোখের জলে পিদিম ভাসিয়েছে স্বাধীনতার গাঙে। দুর্বার আকর্ষণ ঋতুর মনে এই যে এই আলতা বানুর জন্য। এই তো সেই একাত্তরের নির্যাতিত সত্তা। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর পাশবিকতার শিকার এ দেশের দুই লক্ষ নারী। এ দেশের নিরীহ মানুষ, মনুষ্যত্ব, মাটিকে করেছে ক্ষতবিক্ষত। আলতা বানুর মত কত নারীর সতীত্ব হরণ করেছে ওরা। জন্ম নিয়েছে কত যুদ্ধশিশু। কালের সাক্ষী হয়ে আলতা বানুও জন্ম দিয়েছে একটি যুদ্ধশিশু।

এই আলতা বানুর ছোট্ট সংসার ছিল। বাবা-মা, ভাই-বোন ছিল। ছোট্ট ঘর ছিল। উঠোনে ছিল সোনালি ধান। ক্ষেতভরা ফসল। ঘরগুলো গায়ে গায়ে লাগোয়া। পাখিদের কাকলিতে মুখরিত ছিল ওদের সারাটা গ্রাম। তখন কতই বা বয়স হবে আলতা বানুর, চৌদ্দ কি পনের, বড় ভাইয়ের বিশ কি বাইশ। 

সেই একাত্তর। মাঝামাঝি মাসগুলোর কথা। হঠাৎ একদিন খবর এলো গঞ্জে আর্মি এসেছে। দিন থাকতে থাকতেই পুরুষশূন্য হয়ে যায় মহলাগুলো। এ দিকে রেড করতে পারে হানাদাররা মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজে। গ্রামকে গ্রাম চষে ফেলেছে মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজে। তমসাচ্ছন্ন কালাকাল গাঢ়কাল রাতের আঁধার। হানাদার বাহিনী সার্চ লাইটের আলোতেই খোঁজাখুঁজি করছে মুক্তিযোদ্ধাদের। সারা গ্রামের মানুষ ভয়ে তটস্থ। তারপর ঘরে ঘরে পড়ে যুবতীদের খোঁজে। খোঁজ তাদের লালসা মিটানোর খোরাক। জীপে তুলে নিলো ওদের মতো কয়েকজনকে। অবশেষে আগুন ধরিয়ে দিল সারা গ্রাম। রাইফেল, বেয়নেট, এস. এম. জি এর ভয়ে কাচুমাচু হরিণ শাবক ওরা কয়েকজন। রাতের আঁধারে বিদীর্ণ চিৎকার, বাঁচাও বাঁচাও। প্রতিবাদ প্রতিরোধের হাতিয়ার নেই কাছেপিঠে কোথাও। শব্দের মাঝে নিঃশব্দরা হাহাকার করে। ক্যাম্পের চার দেয়ালে মৃত্যুর প্রহর গুণে মাথা কুটে। প্রতিরাতের পাশবিক অত্যাচার ওদের করেছে ছিন্ন ভিন্ন তছনছ। পালাক্রমে পর্যায়ক্রমে শারীরিক- মানসিক অত্যাচারের করুণ কাহিনি চার দেওয়ালের বীভৎসতায় দাগ কাটে। আলতা বানুর শরীর মন ঘৃণায় যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে ওঠে। রাতের পর রাত দেহের সাথে চলে হোলি খেলা। এ যেন হরিণ শাবককে কামড়ে ছিঁড়ে খায় ক্ষুধার্ত ব্যাঘ্র। উলঙ্গ শরীর লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। তবুও চেষ্টা করে আত্মহননের। মাথা কুটে দেয়ালে রক্তে রক্তাক্ত শরীর আচ্ছন্নের মত পড়ে থাকা। শুধু রাত আর রাত-কখন সকাল, কখন দুপুর, কখন সন্ধ্যা একাকার হয়ে গেছে ঐ রাতের গুহায়। পাহারার সিপাইিটার একজোড়া শকুন দৃষ্টি গিলে খায় ওদের শরীরের ভাঁজে ভাঁজে। কিছুদিন পর পর ক্যাম্প বদল। এভাবেই বেশ কিছু দিন কেটে যায় ওদের জীবনের পাতা থেকে।

অবশেষে আলতা বানুর শরীর স্থুল হয়ে ওঠে। সারা শরীরে সাপের মত কী যেন কিলবিল করে। আঁধার প্রকোষ্ঠে জন্ম নেয় আর এক শরীর। নরপশুর দল ক্যাম্প ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। বাইরে খোলা আকাশ উঁকি দেয়। বেরিয়ে পড়ে ওরা নিজ বাড়ি নিজ গ্রামের উদ্দেশ্যে। নেই কিছুই নেই। বাবা-মা, ভাই-বোন কেউ নেই। আলতার মনে পড়ে ডাক্তার মহিউদ্দিনের কথা। তার মাধ্যমেই আলতা বানুর থাকার ব্যবস্থা হয় আশ্রয় শিবিরে। ওর ভিতরে যে শিশুটি বেড়ে উঠছে তাকে বের করতে হবে নতুবা পাপ মুক্তি হবে না। ডাক্তার বুঝিয়েছে বেশ দেরী হয়ে গেছে। এখন কিছু করা যাবে না। কয়টা মাস আরো ধৈর্য ধর। দেশ স্বাধীন হবে। বীরাঙ্গনার নামে রাষ্ট্র তোমাদের সম্মান দেবে, পুনর্বাসন দেবে। সম্মানিত হবে তোমরা।

অবশেষে ঘনিয়ে এলো সেই দিন। দেশ স্বাধীন হলো। আনন্দের বন্যায় ভাসিয়ে সুখ এলো। তার কয়েক মাস পরে আশ্রয় শিবিরে আলতা বানু জন্ম দিল এক যুদ্ধশিশু। একদলা রক্ত-মাংসের পিন্ড তীব্র আর্তনাদে বেরিয়ে এলো খোলা বাতাসে। আলতা বানু কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে, না ডাক্তার সাহেব ঐ পিশাচের সন্তান আমারে দেখাবেন না। ওরে দেখলেই ঐ নরপশুদের মুখ আমার সামনে ভাইস্যা উঠবো।

ডাক্তার বলেছে ওকে জীবন দিয়েছো। তোমার শরীরের ভেতরের রক্ত মাংস দিয়ে সে বেড়ে উঠেছে। একটু দেখ। না না কখনোই না। ডাক্তার সাহেব ওরে কোথাও দিয়া দেন। ডাক্তার মহিউদ্দিন শিশুটিকে তুলে দিয়েছে কোন এক সংগঠনের হাতে। কখনও জানবার চেষ্টা করেনি কোথায় আছে, কেমন আছে?

 আলতা বানুর বীরাঙ্গনা জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতের শুরু। ঈশান কোণে কত যে মেঘ জমে ছিল দুঃখের শ্রাবণ ঝরাবে বলে জানা ছিল না ওর। মৃত্যু ওকে গ্রহণ করেনি বলে জীবন ওকে শান্তি দেয়নি এক দণ্ডও। গাল ভরা ‘বীরাঙ্গনা’ নামটি ওকে আরও উটকো ঝামেলায় ফেলেছে। জুটেছে নানা জাতের ফেউ। সাংবাদিক এবং আরও নানা ধরনের মানুষের মুখোমুখি হতে হয় প্রতিনিয়ত। সতীত্ব হরণের ঘটনা বলতে হয় সারাক্ষণ। পৌরাণিক কাহিনির দ্রৌপদী হতে হয় বার বার। এভাবে উত্ত্যক্ত করেছে অনেকেই। এই নাম শব্দে নেই কোন প্রশান্তি বা স্বস্তি। আলতা বানু বাঁচতে চায়, জীবনের গান শুনতে চায়। ভুলতে চায় সেই আতংকিত দিনগুলোর কথা। এদেরই একজন মধু ওর কাছের মানুষ হয়ে যায়। সবসময় আগলে রেখেছে আলতাকে। ও জানে কোন বস্তু কতটুকু গুড়ে কত মিঠা হয়। ভালোবাসে আলতাকে। ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখায়। ভুলিয়ে দিতে চায় আলতাকে- সে একজন বীরাঙ্গনা। মধুর প্রতি আসক্ত হয়। শরীরের জমিনে আবার ফসল বুনতে চায়। ভালোবাসার ফসল। ভালোবাসার নদীতে সাঁতার কাটবে। ডুব সাঁতারে মাছরাঙ্গা বালিহাঁস হবে। ভুলে যাবে কিছুটা হলেও সেই বীভৎস দিনগুলো। পশুদের পৈশাচিকতার স্মৃতিগুলো। মধুর বিশ্বাসের নৌকায় জীবনের বাকি পথটুকু পাড়ি  দেবে। আশা বুকে নিয়ে মধুর সাথে আলতা বানুর বিয়ে হয়। মধুচন্দ্রিমা রাত সোহাগে-সম্ভোগে আরো মধুর হয়। ছোট্ট বেড়ার ঘরে চাঁদের আলোর প্লাবন। মনে মনে শুধু মধু নামটি জপবে আর কিছু নয়। এভাবেই দিন কাটে। তবে বেশী দিন নয়। এই সুখের ঘরে ওৎ পেতে বসে আছে বিপদ। যেমন বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা। কে জানতো তা?

হঠাৎই এক রাতে মধু ফিরছে না। অপেক্ষায় রাত জেগে আলতা বিছানায় তন্দ্রাচ্ছন্নভাবে পড়ে আছে। দরজায় খুট খুট শব্দ। আলো আঁধারীতে কে যেনো ঘরের ভেতর ঢোকে। তার পাশে এসে বসে। চোখ বুজে আলতা ভাবে, মধুই এসেছে । তাই জানতে চায়, এতো দেরী কেন হইছে? ভাত খাইবা না? রা নাই ক্যান? আলতার শরীরে হাত বুলিয়ে যায় আলতোভাবে। আলতার শরীর হিম হয়ে আসে। চমকে ওঠে সে? মধু? এক ঝটকায় হাত সরিয়ে ওঠার চেষ্টা করে। না পারে না।

আলতা বানু স্তম্ভিত। এখানেও পাক-হানাদার বাহিনীর পশু! শব্দহীন অসাড় আলতা বানু শুধু হাত-পা ছোড়াছুড়ি করে। রেহাই পাই না। সে তার পৌরুষ চরিতার্থ করে শেষ আশাটুকু পূরণ করে উঠে পড়ে। ডাকে- মধু, মধু আয়, আমি যাই। 

আলতা বানুর চৈতন্যে ঝড়। আর্তনাদ করে। ওর বুঝতে অসুবিধা হয় না। মধুই মাগীর দালাল। এ কেমন স্বামী? নিজের স্ত্রীকে পরের হাতে তুলে দিতে দ্বিধা বোধ করে না। রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে, অপমানে সারাটা দিন কেঁদেছে আলতা বানু। অপমানের তীব্র জ্বালায় নিজেই নিজের পথ বেছে নিয়েছে।

শরীর বেইচ্যাই যদি খাওন লাগবো তায় অইন্যের মর্জিতে না। নিজেই নিজের শরীরের মালিক। আইজ থাইক্যা শরীরই বেচুম। নিজের পছন্দ মত খদ্দের পাইলে এই পোড়া শরীরটা দিমু- না পাইলে নাই। আর করুম না সংসার নামের এই পতিতাবৃত্তি।

চলে যায় বানিয়াশান্তা পতিতালয়ে। সেই থেকে ওটাই ওর ঠিকানা। যে নর্দমায় পা ফেলেছে তা থেকে আর উত্তরণের উপায় নেই। বিশ্বাস নামের বস্তুটির মৃত্যু সেদিনই আরো নিশ্চিত করেছে আলতা। আশাও করে না সুদিনের সুবাতাসের। ও জেনেছে সব ফুলই তো দেবতার পূজায় পূর্ণতা পায় না। সব ফুলই তো পরিপক্ক ফলে রূপান্তর হয় না। ফুলের অজান্তেই সেই ফুলে কীট বসতি গড়ে। সময়ের আগেই সে ঝরে যায়। তাতে কি অন্য ফুলেরা ব্যথিত হয়?

ঋতু ওকে ডেকেছে মা বলে। প্রণম্যা, আমি তোমারই সন্তান বলে কত সেধেছে আলতাকে তার কাছে নিয়ে যাবে। আলতার বিশ্বাসের ঝুড়িতে কিছু বিষধর সাপ জমা আছে। না, যাবে না সে এ বানিয়াশান্তার শান্তির নীড় থেকে। নিজের ভিত, এখানেই গড়েছে নিজেকে নিজের বিশ্বাসে। যদিও ঋতুকে কিছুটা বিশ্বাস করা যায়। যায় না করা বিশ্বাস ওর আশপাশের মানুষগুলোকে। বিশ্বাসের ঘর আগুনে পুড়েছে তাই আকাশে সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায় আলতা বানু।

ফিরে এসেছে ঋতু খালি হাতে। হৃদয়ে বপন করেছে আলতা বানুর করুণ কাহিনি। যা তাকে প্রতিনিয়ত দহন করছে। অহর্নিশ পীড়ন করছে আলতা বানুর মত আরো অনেকের কাহিনি। আলতা বানুর মত ঋতুর বিশ্বাসের বেড়িবাঁধে ধরেছে ফাটল। হাজারও আলতা বানু ঋতুর চৌহদ্দি জুড়ে আর্তচিৎকার,  আমাকে বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও। আমি সেই একাত্তরের আলতা বানু। আমিই আলতা বানু। আমিই একাত্তর। সংবেদনশীল কোন কোন মন দুঃখের বোঝা ভার বহনে অনুভূতির চাকার স্পোকগুলো কেটে যায়। হয়তো কখনও জোড়া লাগে ভালোবাসার যতনের ছোঁয়ায়। ঋতু নামের মেয়েটির চৈতন্যে আলতা বানুর গ্রহণ লেগে যায়, রাহু মুক্তি ঘটার আশায় অপেক্ষার দিন গোনা।

%d bloggers like this: