মেঘ মেঘ আর শঙ্খচিল / অনুপা দেওয়ানজী
বৈশাখী দুপুরে খোলা জানালার ধারে একা দাঁড়িয়ে আছি।
ঝকঝকে পরিষ্কার নীল আকাশ। বাতাসে এতটুকু ধূলোর আস্তরণ নেই বলে দৃষ্টি বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়।
ধূলো নেই গাছের পাতায় তাই ওরাও ঝকঝকে সবুজ।
ওই আকাশে আজ সদম্ভে ওড়ে না কোন বিমান,
রাস্তায় যন্ত্রদানবের গর্জন তুলে ছুটে যাবার শব্দ নেই।
দুপুরের ক্লান্ত রোদে কয়েকটা পায়রা বাড়ির আলসেতে চুপচাপ বসে আছে।
মাঝে মাঝে দু একটা কাক ইতিউতি উড়ে যাচ্ছে।
চারপাশে মানুষের গড়া প্রাসাদ অরণ্য আকাশের দিকে মুখ তুলে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে।
যে অরণ্যে মানুষ আজ নিজেই বন্দী।
হঠাৎ পরিষ্কার আকাশ থেকে একটুকরো আহ্লাদী কালো মেঘ সেই ভরদুপুরে নিচে উঁকি দিয়ে এক পলক কি যেন দেখে নিলো।
এরপর আয়েসি এক ভঙ্গিতে গা ভাসিয়ে দিয়ে আপন মনে চলতে শুরু করলো।
একটা শঙ্খচিল ডানা মেলে গোল গোল চক্কর দিয়ে আকাশে উড়তে উড়তে ওই আহ্লাদী মেঘের প্রায় কাছাকাছি চলে গেলে মেঘটাও শঙ্খ চিলের কাছাকাছি নেমে এলো।
তারপর ওরা দুটিতে ঘুরে ঘুরে আকাশে ভাসতে ভাসতে কথা কইতে লাগলো।
এমন সুন্দর দৃশ্য আমি অনেকদিন দেখিনি।যদিও
ওই মেঘটাকে আমি বহুবার দেখেছি তবে
শঙ্খচিলটাকে দেখে মনে মনে ভাবছিলাম
বহুদিন আমি এ শহরের আকাশে শঙ্খচিল দেখিনি।
ছোট বেলায় আকাশে শঙ্খচিলকে এমন করে উড়তে দেখলে অনেক পুরনারীদের দেখতাম গলায় আঁচল দিয়ে আকাশের দিকে মুখ তুলে প্রণাম করতে।
বলতেন ওরা নাকি শুভবার্তা বয়ে আনে।
ওই শঙ্খচিলটাকে দেখে আমারও আজ বড় বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে ওর ডানায় ভর দিয়ে
কোন শুভবার্তা সত্যিই আসুক।
এই বন্দী জীবন বড় অসহ্য বোধ হচ্ছে।
Facebook Comments Sync