মোহনার পথে / ভারতী বন্দ্যোপাধ্যায়
মোহনার পথে / ভারতী বন্দ্যোপাধ্যায়
অনেকদিন ধরেই রাতে গান শোনার অভ্যাস কৌশিকীর। এই অভ্যাসের জন্য বাবা মা দিদি সবাই বিরক্ত। বলতো ” তার থেকে বই পড়ো, অনেক জ্ঞান বাড়বে’। কৌশিকী ওদের বোঝাতে পারতো না রবি ঠাকুরের গানের কথাগুলোর মানে দিনে আর রাতে কেমন তফাৎ হয়ে যায়। গান শুনতে-শুনতে ঘুম আসতো কৌশিকীর। দুচোখ ভরে নেমে আসতো গানের স্বপ্ন.।
গানের জন্য স্বপ্ন আর স্বপ্নময় গান নিয়েই কৌশিকীর ভরা নৌকায় উঠে বসে ছিল। এই গানের অনুষ্ঠানে আলাপ স্বপ্নময়ের সঙ্গে। আলাপ গড়ালো বিয়েতে। কৌশিকীর মনে হতো জীবনের সবকিছু পাওয়া কেমন অনায়াসে হাতের মুঠোয় এসে যায়। কিন্তু সেই পর্ব স্থায়ী হলো না বেশিদিন। দু এক বছরের মধ্যেই স্বপ্নময়ের স্বপ্নভঙ্গ হলো।
ঘরের আলোগুলো নিভিয়ে দিয়ে নিজের মনে গুন গুন করে গান ধরল কৌশিকী। বৃদ্ধাশ্রম এর এই ঘরগুলো কটেজ টাইপ। দুটো ঘরের মাঝখানে গলিপথ সন্ধে আটটা থেকে নির্জন হয়ে যায়।
গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে পেছনদিকে হাটে কৌশিক। সহাবস্থান ক্রমে অসহ্য হয়ে উঠেছিল দুজনের কাছেই। অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরে বেডরুমের হালকা আলোয় কোনদিন অফিসের সেক্রেটারি মৌমিতা, কোনদিন এক পরিচারিকা পেয়ারি।
অনিবার্যভাবেই বেডরুম আলাদা হয়ে গেল। অন্যদিকে স্বপ্নময় ভুগছিল ইগো প্রবলেম এ, বাড়ির বউ এখন প্রতিষ্ঠিত সুরকার ও শিল্পী। অনেক ছেলে বন্ধু আর রোজই অনুষ্ঠান।
সমস্যা একটু বেঁধেছিল ছেলে ইন্দ্রনীলের অধিকার নিয়ে। বন্ধুদের হস্তক্ষেপে তার শান্তিপূর্ণ সমাধান হয় ইন্দ্রনীলকে কনভেন্ট হোস্টেলে পাঠিয়ে। আকাশে আজ একটুও মেঘ নেই। তারাগুলো বড্ড উজ্জ্বল।
” দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ওপারে’— কৌশিকী আপন-মনে গুনগুন করতে থাকে।
Facebook Comments Sync