অসমাপ্ত পরিভ্রমণ/ দিলারা মেসবাহ

অসমাপ্ত পরিভ্রমণ

অসমাপ্ত পরিভ্রমণ

অসমাপ্ত পরিভ্রমণ/ দিলারা মেসবাহ

 

সত্যি রাতের ঘুম হয়েছে চমৎকার। আড়মোড়া ভেঙে দেখি সদ্য সকাল শিথানে! মনোরম শান্তিময়। আজ পুরো দিন আমার কব্জায়। আহ্লাদের দিন — আহা ছুটির দিন। প্রতিটি মুহূর্ত হিসেব করে কঞ্জুসের মতো খরচা করতে চাই।

বিশ বছরের খালাবুয়া পুতলির মা আমবাতের হাতে নিজেকে সঁপে দিয়ে শয্যাগত। আর পারি না! দিক সঁপে চলে যাক যেদিকে সাধ। দিন কাটছে,  তবে হেসে খেলে রসে বশে নয়। বিজলি নামে এক নও যুবতী আসেন সগৌরবে, ছুটাবিবি। কেন সে গোড়ালি ফাটা হাঁসের পায়ে রুপার নূপুর বাজায়, বুঝি না বিলকুল। ঝিকিমিকি বোরকা তার,দোপাট্টায় নানা কিসিমের গহনাদি। একজোড়া শুঁয়াপোকা, দুই   ভ্রু নাচিয়ে বিজলি ঘোষণা দিল আজ। আমার সহাস্য সকালে,’ টাইম সর্ট কইলাম মেডাম।বান্দবীর পোলার বাতডে।কালিয়াকৈর যাওন লাগব।’..

বাতাসে কানকথা ওড়ে। কান দেবার সময় নেই। ঘরের মানুষ ভেড়া। ডজনখানেক মর্দামানুষের সাথে আশনাই তার।

ডেমোক্রেসি শব্দটি ব্যপক। আমার রাজত্বে ধারণাটি বিপাকে পড়ে টিকে আছে বটে।

আমি মানুষটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকল্যাণ বিষয়ে পড়াই। মহিলাদের আত্মজাগরণের উপরে আমার নিত্য ফোকাস। ভারী ভারী নিবন্ধ লিখি। সভাসমিতিতে ডাক পড়ে।মাঝেমধ্যে সহি উচ্চারণে বক্তব্য রাখি। করতালি মুহুমর্হু,এটম বোমা।

জানালার ওপারে জারুল গাছটি পুষ্পময়।দুটো চন্দনা টিয়া ডালে বসে হিব্রু ভাষায় প্রেমালাপ করছে। 

তারস্বরে বেজে ওঠে রিংটোন। আজ ওটার গলা টিপে রাখব ভেবেছিলাম। বেমালুম ভুলে গেছি। মোহসিনা মনি,দেবর কন্যা।আবুধাবি থেকে ভেসে আসে তার ক্রন্দসী কন্ঠ। মুহূর্তে সকালটুকু ঝামা পাথর। ‘ চাচিমা মা হসপিটালাইসড। সিরিয়াস কন্ডিশন। আইসিইউতে আছেন।আরোগ্যনিকেতন, গ্রীনরোড। একবার যদি যেতেন। আপনি মাকে খুব ভালো.’..  মনির স্বর স্তব্ধ হয়ে গেছে। আল্লাহ ভরসা আওড়াতে আওড়াতে তৈরি হয়ে গেলাম। আপন জা। বিবেক বিবেচনা না থাকলে মানুষ আর অমানুষে ফারাক কোথায়?  পুরনো স্বামীবাগ সেকেন্ড লেনে একান্নবর্তী পরিবারে কাটিয়েছি একযুগ।  ভুলি কেমনে! সেই যত পুরনো কাসুন্দি!

শাহ আলমের বিবি বৌবেলা থেকে রোগাভোগা। চিররুগ্ন। বেচারির ফ্যাকাসে মুখ। নিরাসক্ত ভাবভঙ্গি। সহস্র নিন্দামন্দ স্রেফ তার মাথার উপর দিয়ে যায়। হজমশক্তি নেহায়েত কাহিল। কিন্তু ভালমন্দ খেতে  চায়। ও মোটামুটি হোপলেস। আহা কয়দিন ইলিশ পাতুরি খেতে চেয়েছিল। বলেছি একটু  ফ্রি হয়ে নেই। সংসারের গুরুদায়িত্ব কাঁধে। কেমন করে সামাল দিয়েছি জানি না।

তিনজন রায়বাঘিনী ননদিনী। জানতাম শ্বশুর শাশুড়ির খেদমত করা লাগে। কিন্তু ননদিনীদের ভালোমন্দ, রুটিন মাফিক গরম ভাত  ব্যাঞ্জন,সেও সিলেবাসের মধ্যে পড়ে।  স্বামীধন বাণ চিরন্তনী শোনাতেন, সোনা পুড়ে পুড়ে খাঁটি হয়।

প্যাচাল পাঢ়ার স্বভাব দিন দিন বাড়ছে। আমার দুই বাচ্চা রুনু,ঝুনু। গরুর কাঁধের জোয়াল আর কত ভারী! দৃশ্যমান, তাই সভ্য সমাজ আহারে উহুরে করে।  প্রথম বছরের মাথায় শাহ আলমের পুত্র হলো। তারপর আরও দুই কন্যা। শিং,মাগুর, আমলকি, কাঁচাকলা,পেঁপের আমদানি পাকের ঘরে।

শাহ আলম বৌপাগল নয়, কিন্তু সন্তানের মাতৃদুগ্ধ পান বিষয়ে কড়া নজর। যে কারণে পথ্য, বিশ্রামের আয়োজনে ঘাটতি নেই।

হিরা,চুনি,মনির মায়ের  প্রতি এক  অভাবিত করুণাময়  স্নেহ উথলে ওঠে আমার। বদরাগী দেবর প্রসঙ্গ তোলা থাক। এত গীবতবাক্য ভালো না। আলম শিং মাছের থলে ঢেলে দিয়ে নসিহত করে, ‘কাঁচাকলা দিয়ে ঝোল করে দিয়েন। হিরার  ব্রেস্ট ফিডিং ঠিক মতো হচ্ছে না।’

হিরার মা ঘুমিয়ে থাকে ঘুমন্ত শিশুর পাশটিতে। সারাদিন কি এত ঘুমায় বেচারি নাকি সংসার থেকে পালিয়ে থাকে।

আমি মরিয়া হয়ে ডাকি, ‘ওঠ গোছল সেরে নাও। তোমার একটু বেশি সময় লাগে। পরে ওরা ক্লাস থেকে ফিরলে লাইন লম্বা হবে।’ বেচারি পাশ ফিরে শোয়। ‘উঠমুনে, রাইতে হিরা  জ্বালাইছে। গুম হয় নাই।’

আরে এমন কত বিনিদ্র রজনী কেটেছে মানিক।মাফ নাই। সকালে জোয়াল কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে।

গেরস্থালি চলছে। তক্কে তক্কে রোকেয়া রচনাবলি মুখস্ত করি।আমার আইকন,সমুজ্জ্বল দীপাবলি। তখনো প্রভাষক হিসেবে জয়েন করিনি।

আরোগ্য নিকেতনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই।এখন আমরা বসুন্ধরায় সংসার পেতেছি।মেয়েরা আমার মেধাবী মাশাল্লাহ। ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্সে পড়ে। ওহ্ বলা হয়নি আমার ছেলে আনন্দের কথা। রুনু ঝুনুর পর আনন্দ এসেছে কোলে।ও এখন মেডিক্যাল কলেজের  ফার্স্ট ইয়ার।

করোটি জুড়ে হাজার স্মৃতির জোনাক। মনির মায়ের ফ্যাকাসে মুখে কোন সুদূরের চিহ্ন আঁকা থাকত জানি না।

মনির মা ইলিশ পাতুরি খেতে চেয়েছিল। আমি  ফ্রি হতে পারিনি। আবদার রাখতে পারিনি। আচ্ছা আইসিইউ থেকে মানুষ ফিরেও তো আসে! আহারে! 

হাইওয়ে জুড়ে মান্ধাতার জ্যাম। অনিঃশেষ পথ। ভর করে হিরা চুনি মনির মা।  শ্রাবণের এক দুপুরে বলেছিল ‘,আপনের হাতের চিনিগুড়া চালের ভুনি খিচুড়ি খাইছি কবে। এহনো মুকে লাইগা আছে। রানবেন,ভাবী। হিরার আব্বুরে বলবনে খাসির গোসত আনতে।’

সে পর্বও মুলতবি রয়ে গেছে।  

স্বামীবাগ সেকেন্ড লেনের একান্নবর্তী পরিবারে মনের কথা বলার মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। আলমের বৌয়ের ভাবলেশহীন অবয়ব। আর তিন ওয়াক্তের আহার্যের চিন্তায় ব্যাকুল মানুষটার সাথে কি আলাপ চলে। তারচেয়ে পুতলির মায়ের লড়াইয়ের গল্প,  স্বামীর তিন নম্বর বিয়ের বিবরণ শোনা অনেক কিছু। ওর গল্পে জীবনের ঝাঁজ খুঁজে  পেতাম। আমার কাঁচামাল। 

ঘুরে ফিরে কেবল মনির মায়ের নির্জলা চিত্রচিহ্ন দেখছি।কবেকার আমাদের যৌথযাপনের ইতিকথা। ফিরে এসো মনির মা। আসতেই হবে। ইলিশ পাতুরি খাওয়াব। আমি এখন অনেকটা  ফ্রি। ভুনা খিচুড়ি তুলসীমালা চালের। অনলাইনে কিনেছি।

সেই যে তুমি!  নার্সিসাস প্রেমের দেবী? মনে পড়ে পাকের ঘরের কানচি কোনায় একটা তক্তপোষ পাতা ছিল, ওখানটায় তুমি শিং মাছের থানকুনি  ঝোল মেখে চোয়াল নেড়ে নেড়ে ভাতের গ্রাস চিবুতে। প্রায় একঘন্টা পেরিয়ে যেত। কোন খবর নেই। আহা বেচারি! মায়া আর বিরক্তি দুটোই জাগত বটে।

এদিকে খানার টেবিলে মৃদু হল্লা।বাকি নয়জন ফ্যামিলি মেম্বারের আহার পর্ব। কলকাঠিটি আমাকেই নাড়তে হতো।ননদিনীরা হাত ধুয়ে খেতে বসত। শুঁটকি বিচিভরা সিমের ঘাঁটি। রুই মাছ বেগুন দিয়ে। ঘন মাসকলাই ডাল ইত্যাদি।  বেচারি বোনটি তুমি বাথরুম আটকে সিনান করতে, সেও ঘন্টার কাঁটা পেরিয়ে যেত। সবাই ওৎ পেতে থাকত। উনি কি ঘুমিয়ে গেছেন।কে কি বলল কি ভাবল এসব বিষয় নিয়ে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ ছিল কি তোমার? তুমি কেমন গো! সংসারে থেকেও নেই। 

হিরা চুনি মনিকে শাশুড়ি মা একরকম বাধ্য হয়ে নাওয়া খাওয়া করাতেন। তাঁর ছোট ছেলের  মাথা গরম। 

অবশেষে হসপিটালের কাছাকাছি। করোটিতে তখনও গুপ্তঘাতকের মতো স্মৃতির বল্লম। চোখ ভরে যাচ্ছে অশ্রু দানায়। আহা আমার সন্তানদের বেলায় ননদেরাও হাততোলা নবাব। পুতলির মা আমার রক্ষাকবচ। পড়ার নেশা ছিল খুব। রাত জেগে পড়তাম পুরনো পাঠ প্রাগৈতিহাসিক,  অতসী মামী,কবি,শেষের কবিতা, কপালকুণ্ডলা। 

ও বাড়ির কারো শরৎচন্দ্র পড়ার নেশা ছিল বলে মনে হয়নি। আহারে আলমের বৌটা।ফিরে আসো বোনটি। গলার কাছে কেমন ধরে আসে।

ছিমছাম আধুনিক হসপিটাল। আইসিইউ ১১ তলায়। হুড়মুড় করে লিফট ধরলাম। মাক্স টেনে দিলাম আবারও।  পাদুটো একটু কাঁপছে কেন জানি। আমার নার্ভ শক্তপোক্ত নয়। 

আজ আমার কি হয়েছে জানি। নাক পর্যন্ত স্মৃতি জলে ডুবে যাচ্ছি। নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। বয়স বাড়লে মানুষের নানা বাতিক বাড়ে।

শাহ আলমের ব্যবসা এখন দাঁড়িয়ে গেছে।  বৌটি ফিরে এসো। নিজের হাতে পাত পেতে খাওয়াব। আস্তে আস্তে ভালো করে চিবিয়ে খেও। তারপর একটা হজমি বড়ি খাইয়ে দেবো। লিফট বোঝাই দর্শনার্থী। তাদের চেহারায় লেপ্টে থাকা অস্থিরতা চুয়ে চুয়ে পড়ছে। সবার ভীষণ তাড়া। একমুহূর্তের অপচয় করতেও  নারাজ।  ঠ্যালাধাক্কায় আমি পিছিয়ে পড়লাম। চিরকালই আমার এমন দশা।মেনে নিতে পারি। 

হসপিটালের করিডোর পার হচ্ছি। পা দুটো একটু একটু কাঁপছে। হাঁটছি আইসিইউ বরাবর। শুনশান ঝকঝকে তকতকে করিডোর। কেমন একটা নিস্তব্ধ শূন্যতার বুদবুদ চারপাশে। মনির মায়ের এনিমিক মুখখানি, সেই মগ্ন নিরাসক্ত ভাবভঙ্গি ডকুমেন্টারি ফিল্মের মতো করোটির মনিটর জুড়ে বসেই আছে।

দ্রুত হেঁটে যাই আরেকটুখানি সামনে। ধোপদুরস্ত সুদর্শনা নার্স কথা বলছিল মোবাইলে। নাকের ডগা লাল,গালের চারপাশও। প্রেমালাপ হতে পারে। মেয়েটি হাসছে, কপট রাগ দেখাচ্ছে। আমি খানিক অপেক্ষা করলাম।কথা যেন ফুরায় না তার।একসময় দয়া করে চোখ তুলে তাকাল সে।

আমি বিনীত অনুরোধ করে বললাম, ‘সিস্টার আমার  দেবরের ওয়াইফ, আইসিইউতে এডমিটেট। আমি তাকে একনজর দেখতে চাই। মিসেস শাহ আলম। ড. রাব্বানির পেশেন্ট। কাইন্ডলি একটু দূর থেকে দেখার পারমিশন দিন।’ 

‘পেসেন্টের নাম বলুন। ‘

‘ নাম? ‘

আমি থতমত খেয়ে গেলাম। কোন শব্দ খুঁজে পেলাম না সহসা।শাহ আলমের বৌ।হিরা চুনি মনির মা।ব্যাস।এটুকুই পরিচয়। নাম?  ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল শুভ্রবসনা সেবিকা। ঘাবড়ে যাচ্ছি। আমার জবান বন্ধ।

কথা বলাই যার কাজ। সভাসমাবেশে আমার কদর কম! 

আমি পুচকে মেয়েটিকে ভাইবা দিচ্ছি। অন্ধকার তলিয়ে যাচ্ছি।

আমি আমতাআমতা করে বললাম, ‘ না মানে গতরাতে উনি এডমিশন নিয়েছেন। ব্রেন স্ট্রোক। মিসেস শাহ আলম।’

‘ সরি। এভাবে সম্ভব নয়।’

আমি চুপসে গেছি। পা নড়ছে না।মনে হয় প্রেশারটা এক লাফে বেড়ে গেছে। 

সেবিকা হাইহিলের শব্দ তুলে গটগট করে হেঁটে গেল। দিশেহারা অধ্যাপিকা আমি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম।

একজন মাঝবয়েসী ডাক্তার সাহেব হেঁটে আসছিলেন। আমি প্রায় দৌড়ে তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। একনজর চোখ তুলে বললেন,’ বলুন’। আমি বললাম সমীহ করে,’ স্যার আমার দেবরের ওয়াইফ এখানে এডমিটেড। মিসেস শাহ আলম।গতরাতে স্ট্রোক করেছিল। ওর হাসবেন্ড ঢাকার বাইরে। একনজর দেখার পারমিশন দিন স্যার। চিরকৃতজ্ঞ থাকব। ওর মেয়ে আবুধাবীতে। বসে থাকবে আমার কথা শোনার অপেক্ষায়। স্যার আমি অধ্যাপনা করি।’

‘ পেসেন্টের নাম বলুন’

‘ ও ও আমার প্রিয় জা। হিরা চুনি মনির মা। ‘

বোকা বোকা কথাগুলো আমি বললাম!  আবার রিপিট করলাম, ‘মিসেস শাহ আলম। আমার আপন জা।’

রিস্টওয়াচ দেখলেন একনজর।  ভ্রু কুচকে তাকালেন। ঠান্ডা শীতল লুক দিলেন, স্মিত হেসে বললেন,’ দেখুন আমাদের হসপিটালের গুডউইল আছে। ডিসিপ্লিন কড়া। আপনি পেসেন্টের নামই বলতে পারছেন না। এক্ষেত্রে আপনি কি আশা করতে পারেন।’

ডঃ দ্রুত হাঁটতে লাগলেন। আমি কেন জানি পিছু নিলাম।

স্বগতোক্তির মতো বললেন,’ নরমাল কমনসেন্সের বালাই নেই।’ বাতাসে ভাসতে লাগল কথার ঝাপটা।  অপমানের লজ্জায় আমার সকল বালখিল্যপনা পাথর হয়ে গেল।

ঘাড় ঘুরিয়ে তিনি জোরে জোরে বললেন,’ প্লিজ ডোন্ট বি সিলি।এটা রেস্ট্রিকটেড এরিয়া। আপনি আসুন’।

ভগ্ন মানুষের বুদবুদ বুকে নিয়ে মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম। 

আমরা একসাথে দশবছর কাটালাম। আমরা পরস্পর বিছিন্ন দ্বীপ ছিলাম। হিরা চুনি মনির মা, শাহ আলমের স্ত্রী  এর বাইরে তার কি পরিচয় দরকার?  কী দরকার? 

শাশুড়ি ডাকতেন,’ ও হিরার মাও।’ নামগোত্রহীন এক চিররুগ্ন জননী। 

আমার ঘাম গোছল  আর সমাপন হয় না। এত সাহিত্য পাঠ করেছি, জনপ্রিয় অধ্যাপক আমি। রাত জেগে কত চরিত্রের সাথে একাত্ম হয়েছি। ত্রিভুবনের বিচিত্র বেঢপ,অনিন্দ্যসুন্দর নানা চরিত্রের নাম ধরে ধরে পরিচিত হয়েছি। অক্ষরের স্রোতের তোড়ে যাপিত জীবন দেখেছি। নামধাম জেনেছি। 

আমি দাঁড়িয়ে থাকি। দাঁড়িয়েই থাকি।বিড়বিড় করে অন্য মন, ওগো আত্মীয়া তোমার নাম কি?

উদভ্রান্তের মতো আমি নিজের নামটির গায়ে হাত বুলাতে থাকি। বুলাতেই থাকি।

দিলারা মেসবাহ
দিলারা মেসবাহ