পরাবাস্তব কবিতা পাঁচ ছয় /  আমিনুল ইসলাম

পরাবাস্তব কবিতা পাঁচ ছয়

পরাবাস্তব কবিতা পাঁচ ছয়

পরাবাস্তব কবিতা

পাঁচ ছয় /  আমিনুল ইসলাম

 

মনে হয় কোনো একদিন বলেছিলাম-

গন্তব্য একটি ভুল ঠিকানার নাম ।

কেন যে বলেছিলাম সেকথা !

আচ্ছা, যুবতী চাঁদের গন্তব্য কি?

অথবা চাঁদের দুধে চোখ দিয়ে উত্তাল

যে সমুদ্র, তার?

আমি জানি–

সেখানে কোনো সার্কিট হাউস নেই ,

কিন্তু কোনো রেস্ট হাউস আছে কি—

যেখানে উন্মোচিত হয়

অবিবাহিত সৌন্দর্যের ভাঁজ?

চুম্বনের দাগ দেখতে কি সত্যি সত্যি কালো হয়?

 

‘আমার শরীরে কিন্তু অনেক আছে !

দু’একটা তুমিও দেখছো, অনেকেই দেখে,

কিন্তু অন্যগুলো কেউ দেখেনি,

না, না! সেও দেখেনিকো।

বিশ্বাস হচ্ছে না? আল্লার কসম!’

  

আমি জানি, তার গায়ে বেশকিছু কালো দাগ

সেগুলো কলঙ্ক নয়, খুবই দামি

মাত্র একটির জন্যই– আমি নই,

বিশ্বখ্যাত কোনো এক কবি

বিকিয়ে দিতে চেয়েছিলেন

সোনায় রুপায় মোড়ানো

দু’দুটি কসমোপলিটান শহর;

সমুদ্রের চুম্বন যদি অমরত্ব পায়–

কালো দাগের মহিমায়,

এক গরিব কবির বেলা–

তুমিই বলো- কেন তার অন্যথা হবে !

 

শুক্লাপক্ষের অধরে কিংবা কৃষ্ণপক্ষের নাভিতে

সকালের শিশিরসিক্ত খাড়িতে

অথবা সাঁঝের উদ্দীপিত চূড়ায়

অথবা দুপুরের ঢেউ ঢেউ বাঁকে

কালো তিলের গা ছুঁয়ে কবির ঠোঁটের ছাপ-

চিরদিন রয়ে যাবে অচিহ্নিত

একথা ভাবতেই ভুলতে বসি-

ঐকিকে চলিতে ভরা ৮ম শ্রেণির পাটিগণিত।

 

হ্যাঁ, আমাদের মাঝে দূরত্ব ছিল–

সপ্তসিন্ধু তেরনদী নয়,

পাঁচ আর ছয়;

পাঁচের ঝুঁকে পড়া ঠোঁট ভিড়েছিল-

চারে নয়,

হাওয়ায় উদোম ছয়ের নিম্ননাভিতে;

আহা কালো তিল!

হাতের মুঠোয় জোছনার টিলা

গায়ে উত্তাপের উত্তেজনা

অথচ ভিজে যাওয়া!

ও চাঁদ, তিলগুলো ঘেমে উঠেছিল কি?

 

আজ আমি পাঁচ নই

সেও আর ছয় নয়

অথচ আমরা দুজন মিলে সাত আট নয় দশ–

সব ব্যবধান অতিক্রম করে

এগারো হয়ে উঠেছিলাম,

টিকটিকির চোখে চোখ রেখে

আমাদের দেখে তালি দিচ্ছিলো

রাত বারোটার ঘড়ির কাঁটা:

সাবাশ! আর একটু এগোও! আরেকটু…

কিন্তু এগারোর পায়ে চলতে চলতে

আমরা থেমে গিয়েছিলাম

এগারোটা উনষাট মিনিটের দাগে।

 

আমরা কবে অতিক্রম করবো

সেই একটি মিনিট?

এটুকু ভাবতে না ভাবতেই

আহ্নিকগতির ট্রেন ছেড়ে যায় সবক’টি স্টেশন !

আমিনুল ইসলাম
আমিনুল ইসলাম