রবীন্দ্রনাথের রস-রসিকতা ৬/ রক্তবীজ ডেস্ক 

রবীন্দ্রনাথের রস-রসিকতা/ রক্তবীজ ডেস্ক

সাতাইশ

 ঘরের জানালা খোলা। ঘুমাচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ। ফুটফুটে জ্যোৎস্নায় ভরে গেছে ঘর। আলোতে ঘুমাতে কষ্ট হচ্ছে কবির। তিনি ভৃত্য মহাদেবকে ডেকে বললেন, ‘ওরে মহাদেব, চাঁদটা একটু ঢাকা দে বাবা।’ আদেশ শুনে মহাদেব হতভম্ব। কিভাবে চাঁদকে ঢাকা দেবে সে? বুঝতে পেরে গুরুদেব হেসে বললেন, ‘জানালাটা বন্ধ কর, তাহলেই চাঁদ ঢাকা পড়বে।’

 

আঠাশ

 বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তখন খুবই অসুস্থ। শান্তিনিকেতন থেকে কবিকে কলকাতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। ঠিক সে সময় একটি ফুটফুটে ছোট্ট মেয়ে বায়না ধরে বসল কবিকে তাঁর অটোগ্রাফ দিতে হবে। রবীন্দ্রনাথ তার খাতায় কাঁপা হাতে অটোগ্রাফ লিখে দিলেন। তবু মেয়েটির মন ভরলো না। মেয়েটি কেঁদে কেটে বায়না ধরল-কবির অটোগ্রাফের পাশে কবিতা লিখে দিতে হবে। ছোট্ট মেয়েটিকে নিরাশ করলেন না কবি। তিনি তাৎক্ষণিক লিখলেন-

 মোর কাছে চাহ তুমি পদ্য

চাহিলেই মিলে কি’তা সদ্য।

তাই আজ শুধু লিখিলাম

নিজের নাম,

এর বেশি কিছু নহে অদ্য।

 

ঊনত্রিশ

একদিন সকালবেলায় জলখাবার খেতে বসেছেন রবীন্দ্রনাথ। প্রমথনাথ এসে  পাশে বসলেন। উদ্দেশ্য গুরুদেবের খাবারে ভাগ বসানো। ফল, লুচি, মিষ্টি সব কিছুরই ভাগ পেলেন তিনি। কিন্তু তার নজর এক গ্লাস সোনালি রঙের  শরবতের দিকে। সেটা তাকে দেওয়া হয়নি। তাকে লক্ষ্য করে কবি বললেন, কী হে এই শরবত চলবে নাকি? প্রমথ তো রাজি হয়েই আছে। অমনি গুরুদেব বড় এক গ্লাসে সেই শরবত প্রমথকে দেয়ার আদেশ দিলেন। শরবত এলো বড় গ্লাস ভর্তি হয়ে। প্রমথনাথ এক চুমুক খেয়েই বুঝলেন সেটা চিরতার শরবত। রবীন্দ্রনাথ তার দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসছেন। ভাবখানা যেন, ‘কেমন জব্দ’!

 

ত্রিশ

 

রবীন্দ্রনাথের তখন শেষ সময়। তাঁকে নিয়ে আসা হল জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে তাঁর নিজের ঘরে ।

তখন তাঁর চেতনা সামান্য ফিরেছে ।

পুত্রবধুকে জিজ্ঞেস করলেন, এ কোথায় আমাকে আনলে বউমা? 

প্রতিমা বললেন, এ যে আপনার পাথরের ঘর ।

রবীন্দ্রনাথ উত্তরে বললেন, হ্যাঁ, পাথরেরই বটে । কী কঠিন বুক ! একটুও গলে না !

প্রতিমা নীরবে তাকিয়ে রইলেন ।

 জোড়াসাঁকোর বাড়িতে দু-মাস নিদারুণ অসুখের সঙ্গে লড়াই করলেন রবীন্দ্রনাথ ।

প্রকাশিত হল পুজোর ‘আনন্দবাজার’ ।

তাতে বেরিয়েছে রবীন্দ্রনাথের ‘ল্যাবরেটরি’ গল্পটি !

 

কবির একটা অপারেশন হবে শ্রাবণ মাসে। ডাক্তার বললেন, অপারেশনটা করিয়ে নেওয়াই ভাল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। সাবধানের মার নেই ।

রবীন্দ্রনাথ হেসে বললেন, মারেরও সাবধান নেই !

এমনই প্রখর রসবোধ ছিল কবির। মৃত্যু শয্যাতেও তিনি রস করে গেছেন, হাসি-ঠাট্টা করে  গেছেন। স্বনামধন্য রাজনীতিবিদ, প্রথিতযশা সাহিত্যিক, ছাত্রছাত্রী, ভৃত্য সবার সঙ্গেই চলতো তাঁর বিশুদ্ধ হাস্যরস।

%d bloggers like this: